Bajaj Pulsar NS 160 ২০১৫ সাল থেকে এই বাইকের অপেক্ষায় ছিলাম - শাকিল
This page was last updated on 29-Jul-2024 08:44am , By Raihan Opu Bangla
আমি শাকিল আহমেদ । আমার বাসা যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানায় । আমি বর্তমানে একটি Bajaj Pulsar NS 160 বাইক ব্যবহার করতেছি । বাইকটি নিয়ে আমি আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
Bajaj Pulsar NS 160 ২০১৫ সাল থেকে এই বাইকের অপেক্ষায় ছিলাম
আমার প্রথম বাইক ছিল Hero Honda Passion + । বাইকটা দিয়ে বাবার হাতে আমার হাতে খড়ি হয়। এরপর আরও অনেক বাইক চালানোর সৌভাগ্য হলেও প্রথম বাইক চালানোর মত অনুভূতি আর কখনও হয়নি।
পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি বাইক কেনার এবং চালানোর সৌভাগ্য হয়েছে, দ্বিতীয় বাইকটি ছিল Bajaj Discover 135 যেটার একজস্টের সাউন্ডের কথা কোনদিন ভুলবো না। তৃতীয় বাইক হিসেবে ছিল Bajaj Pulsar UG2, চতুর্থ বাইক ছিল Bajaj Pulsar UG3, পঞ্চম বাইক ছিল Bajaj Pulsar UG4, ষষ্ট বাইক হিসেবে ছিল Tvs Apache RTR 150 ।
২০১৫ সাল থেকে একটা বাইকের অপেক্ষায় ছিলাম, সারা দিন বাইকটার ভিডিও ইউটিউবে দেখতাম, মোবাইলের ওয়ালপেপারে বাইকটার ছবি সেট করে রাখতাম। অবশেষে ২০১৮ সালের ২৫ শে মার্চ বাইকটা কেনার সৌভাগ্য হয়। সেই কাঙ্কিত বাইকটি হচ্ছে Bajaj Pulsar NS 160 ।
বাইকের লুক - লুকের কথা বলতে গেলে এনএসের লুকটা অনেক গর্জিয়াস। ২ লক্ষ টাকা বাজেটের মধ্যে বাংলাদেশে যত বাইক পাওয়া যায় তাদের মধ্যে এন এস আমার কাছে সব চেয়ে ভালো লাগে। এর হেড লাইট, টেল লাইট, ফুয়েল ট্যংক সব কিছুর একটা সুন্দর সংমিশ্রণ আছে।
ডিজাইন - আমি যতদূর জানি বিশ্ব বিখ্যাত ব্র্যান্ড বিএমডব্লিও বাইক গুলো যিনি ডিজাইন করেন তিনি Bajaj Pulsar NS এর ডিজাইন করেছিলেন। সুতরাং Bajaj Pulsar NS 160 বাইকটির ডিজাইন খারাপ হওয়ার কথা না। আমার কাছে বাইকটির মাসকিউলার ডিজাইনটি যথেষ্ট ভাল লাগে ।
বিল্ড কোয়ালিটি - Bajaj Pulsar NS 160 বাইকের বিল্ড কোয়ালিটি আসলে প্রশংসার দাবিদার। কেননা, বাইকটি আজ পর্যন্ত ২৩,৫০০ কিমি চালিয়েছি এর মধ্যে বাইকটি থেকে আমি প্লাক্টিকের বা মেটালের কালারের কোন সমস্যা পায়নি।
বাইকের প্লাক্টিক গুলো আমার কাছে যথেষ্ট মজবুত বলেই মনে হয়েছে। সুতরাং বলা যায় পেইন্ট কোয়ালিটি এবং বিল্ড কোয়ালিটি যথেষ্ট ভালো।
Bajaj Pulsar NS 160 Test Ride Review In Bangla – Team BikeBD
ব্রেকিং- বাইকটি বাংলাদেশে আসার পর থেকেই সবার একটা কমন অভিযোগ ছিল চিকন চাকা। সবাই ধারনা করতো বাইকটির ব্রেকিং খারাপ হবে, কিন্তু এন এস সেই অভিযোগকে ভুল প্রমান করতে সক্ষম হয়। বাইকটির চাকা চিকন হওয়া সত্তেও বাইকটির ব্রেকিং যথেষ্ট ভাল।
তারপরও সবার অভিযোগের কারনে বাজাজ পরবর্তীতে বাইকটির টায়ার এক সাইজ মোটা করে এবং ডুয়েল ডিস্ক সংযোজন করে। যার ফলে ব্রেকিং আগের তুলনায় অনেক বেশি ভালো হয়। আর এখনতো বাইকটি এবিএস এবং ফুয়েল ইনজেকসন ভার্সনেও পাওয়া যাচ্ছে।
কন্ট্রোল- বাজাজ আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে যতগুলো বাইক নিয়ে এসেছে তারমধ্যে এন এসের কন্ট্রোলিং সব থেকে ভাল। অনেকে হয়তো বিষয়টা নিয়ে আমার সাথে একমত হবেন না, অনেকে বলবেন চিকন চাকা হওয়ার কারনে এন এসের কন্ট্রোলিং ভালো না। তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলবো ভাই বাইকটা একবার টেস্ট রাইড দেন।
একটা বাইকের কন্ট্রোলিং শুধুমাত্র টায়ারের উপর নির্ভর করেনা। একটা বাইকের কন্ট্রোলিং নির্ভর করে বডি ফ্রেম, চ্যাসিস, টায়ার, রিম, হুইলবেজ, হ্যান্ডেলবার, গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স সবকিছুর উপর।
বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে প্যারিমিটার ফ্রেম, যার ফলে টায়ার চিকন হওয়া সত্তেও বাইকটির কন্ট্রোলিং অসাধারন।
কম্ফোর্ট- Bajaj Pulsar NS 160 বাইকের রাইডার সিট যথেষ্ট আরামদায়ক, কিন্তু পিলিয়ন সিটটি একটু হার্ড। তাছাড়া হ্যান্ডেল বারের পজিশনটা একটু আপরাইড হওয়াই ঘন্টার পর ঘন্টা কম্ফোর্টের সাথে রাইড করা যায়।
তবে যাদের হাইট ৫.৮" এর কম তারা টেস্ট রাইড না দিয়ে বাইকটা কিনবেন না, এই বাইকটির আসল মজা তারাই পাবেন যাদের হাইট ৫.৮" এর বেশি।
দীর্ঘ ভ্রমন- বাইকের সিট হাইট কিছুটা বেশি, ৭০৫ এমএম। আমার হাইট ৫.৭'', বাইকটা সিটি রাইডে আমি কিছুটা সমস্যা অনুভব করি। কিন্তু হাইওয়েতে যখন দির্ঘ সময় রাইড করা হয় তখন এটা কোন সমস্যা মনে হয় না। বাইকটার দীর্ঘ গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এবং লম্বা হুইলবেজের কারনে লং রাইডে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়।
তাছাড়া বাইটিতে রয়েছে ওয়েল কুল্ড সিস্টেম, যার কারনে বাইকের ইন্জিনটি খুব তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায়। যার কারনে বাইকটি থেকে ওভার হিটিং বা পাওয়ার লসের মত সমস্যা গুলোর মুখোমুখি হওয়া লাগেনা।
মাইলেজ- বাইকটি আমি প্রথম ১০০০ কিমি পর্যন্ত সিঙ্গেল রাইড করেছি, এবং ২০০০ কিমি পর্যন্ত আরপিএম ৫ মেইনটেইন করে প্রপার ব্রেক ইন পিরিয়ড মেনেছি। ২০০০ কিমি পর্যন্ত অবিশ্বাস্য ভাবে মাইলেজ পেয়েছিলাম ৪৮ কিমি। কিন্তু ২০০০ কিমি এর পর থেকে যখন বাইকটি নিয়ে টুরে গিয়েছি হায় আরপিএমে রাইড করেছি তখন মাইলেজ টা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে। বর্তমানে বাইকটি থেকে আমি সিটিতে মাইলেজ পাই ৩২ কিমি এবং হায়ওয়েতে ৩৮ কিমি। বাইকটিতে আমি সর্বদা অকটেন ব্যবহার করি।
টপ স্পিড- বাইকটি যেহেতু নেকেড স্পোর্ট সিরিজের বাইক সুতরাং বাইকটি থেকে স্পোর্ট বাইকের মত টপ স্পিড আসা করা যায়না। আমি বাইকটি থেকে সর্বচ্চো গতি পেয়েছি ১২৭ কিমি, তবে আরেকটু জায়গা পেলে হয়তো ১৩০ কিমি ওঠাতে পারতাম। ব্যাক্তিগত ভাবে বেশি স্পিডে বাইক চালানো আমার পছন্দ না, এন এসে আমি ১ দিন টপ স্পিড তোলার চেষ্টা করেছি। মোটামুটি বলা চলে স্পিড নিয়ে আমি সন্তোষ্ট ।
Bajaj Pulsar NS 160 বাইকের কিছু ভালো দিক-
- স্পোর্টি লুক
- ভালো বিল্ড কোয়ালিটি
- ওয়েল কুল্ড সিস্টেম
- টপ স্পিড
- পেরিমিটার ফ্রেম
- শক্তিশালী হেডলাইট
Bajaj Pulsar NS 160 বাইকের কিছু খারাপ দিক-
- ব্যাটারি কোয়ালিটি ভালো না
- সিট হাইট একটু বেশি
- মাইলেজ দিনে দিনে কমে যাচ্ছে
- ডুয়েল হর্ন দিলে ভালো হত
- টপ স্পিডে ৬ নং গিয়ারের অভাব
- হাই স্পীডে ব্রেক করলে সম্পূর্ণ বাইকের ওজন সামনের সাসপেনশন এর উপরে চলে আসে
পরিশেষে বলতে হয়, উপরিউক্ত মতামত গুলো একান্ত আমার ব্যাক্তিগত। বাইকটি আমি দীর্ধ ২.৫ বছর+ ব্যবহার করছি সেই ব্যবহারের আলোকে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। এটা বাইকবিডিতে আমার দ্বিতীয় রিভিউ, ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবার প্রতি একটা অনুরোধ কখনও অধিক গতিতে বাইক চালাবেন না, বাইক চালানোর সময় সব সময় হেলমেট পরিধান করবেন। মনে রাখবেন একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃশাকিল আহমেদ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।