বাজাজ পালসার ১৫০ বনাম টিভিএস ১৫০ আরটিআরঃ একটি তুলনামূলক বর্ণনা
This page was last updated on 03-Jul-2024 11:38am , By Shuvo Bangla
কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজারে ১৫০ সিসি সিরিজের বাইকগুলোকে মনে করা হত প্রিমিয়াম সিরিজের বাইক । বাজাজ পালসার ১৫০ বনাম টিভিএস ১৫০ আরটিআর একটি তুলনামূলক বর্ণনা এর মূল লক্ষ্য হল তরুণ বাইকারদের তাদের পছন্দের বাইক নিতে সাহায্য করা । কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে ১৫০ সিসি সিরিজের বাইকগুলো আমাদের দেশের বাইক চালকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এর মূল কারণ হল এগুলোর পারফর্মেন্স যেটা যাতায়াতের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সুবিধাজনক । যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক বলতে বুঝাচ্ছি এগুলোর যুক্তিসম্মত দাম যা যাতায়াতের খরচের উপর অতিরিক্ত কোন চাপ ফেলবে না । ১৫০ সিসি সিরিজের দুটি বাইকের মধ্যে তুলনা নিন্মে তুলে ধরা হল যেগুলোর মূল্য ১,৯৯,৫০০-২,০৫,০০০ টাকা পর্যন্ত এবং মাইলেজের ক্ষেত্রে এগুলো প্রতি লিটারে ৪৫-৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে ।
বাজাজ পালসার ১৫০ ও নতুন টিভিএস ১৫০ আরটিআর বাজারে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে । একটি সাধারন পর্যালোচনার জন্য বাইকগুলোর সাইড বাই সাইড পার্থক্য বিবেচনা করতে হবে যাতে কোন বাইকটি সেরা সেটা নির্ণয় করা যায় ।
বাজাজ পালসার ১৫০ হল “প্রকৃত পুরুষ” বাইক যেটা সকল বাইকের মধ্যে পুরুষ বাইক হিসেবে প্রথম স্থান দখল করেছে । এই অনন্য অবদানের জন্য একে ধন্যবাদ এবং আজ পর্যন্ত ১৫০ সিসি সিরিজের বাইকগুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে সফল । এটা যদিও কিউবিক ক্যাপাসিটি এর ক্ষেত্রে একটি ছোট অগ্রগতি কিন্তু এর ক্ষমতা ১৪.৯ পিএস @ ৮৫০০ আরপিএম এবং ১৩.১ এনএম টর্ক @ ৬৫০০ আরপিএম নিঃসন্দেহে অত্যন্ত বেশী । অ্যাপাচি সম্পর্কে সকল অজ্ঞতা ঝেড়ে ফেলতে শুধু একবার পরীক্ষামূলকভাবে চালান কারণ এটাই এ মুহূর্তে ১৫০ সিসি সিরিজের রাজা ।
এখন বাইক দুটির মধ্যে সাধারন তুলনা নিন্মে তুলে ধরা হলঃ
বাহ্যিক ধরনঃ বাজাজ পালসার ১৫০ ও টিভিএস ১৫০ আরটিআর
অ্যাপাচি আরটিআর ১৫০ দেখতে নিখুঁত ও পেশীবহুল । যদিও এটা করা হয়েছে অন্যান্য বাইকগুলোর মধ্যে থেকে একে কিছুটা আলাদা করতে এবং এটাই প্রত্যাশিত ছিল ফলে স্বাভাবিকভাবেই অনেক গ্রাহকই এটার প্রতি আকৃষ্ট হবে ও এটা পেতে চাইবে । যদিও আরটিআর এর হুইলবেইস ৪০ মিলিমিটার করা হয়েছে কিন্তু এটা দেখতে প্রায় আগের অ্যাপাচি ১৫০ এর মত । আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি তা হল অধিকাংশ বাংলাদেশীই দেখতে বড় এমন বাইকই পছন্দ করে । আরটিআর এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এটি অবশ্যই মনের উপর একটি প্রভাব ফেলবে,এর ধারগুলো অত্যন্ত চমৎকার করে কাটা হয়েছে যদিও কিছু বাইকারের মতে এটা কোন কাজের নয় । চলার ক্ষেত্রেও নতুন আরটিআর ১৫০ এর সাথে পুরাতন অ্যাপাচি ১৫০ এর তেমন কোন পার্থক্য অনুভূত হয় না । শুধুমাত্র যখনি আপনি পেছনের উজ্জ্বল এলইডি ল্যাম্প জ্বালাবেন বা যখন আপনি দেখবেন অপূর্ব সুন্দর হলুদ রঙের অ্যাপাচি তখনি আপনার মনে হবে যে এটা আরটিআর ১৫০ যেটা আপনার মনের ভেতর আলোড়ন তুলেছে ।
বাজাজ পালসার ১৫০ এর আকার অধিকাংশ বাংলাদেশী বাইকপ্রেমীর মন জয় করেছে । এটা খুব বড় কিংবা এটা খুব ছোট নয় এটা যেন সঠিক আকারের । এর তীক্ষ্ণ লুক ও বাজাজে বিদ্যমান অন্যান্য সুবিধা একে মোটরসাইকেলের বাজারে একটি স্মার্ট ও আবেদনময়ী বাইকে পরিণত করেছে । একমাত্র জিনিস যেটা এর লুকের বিপক্ষে যেতে পারে সেটা হল বাংলাদেশের সর্বত্র সকল শহর, নগর, গ্রাম সবজায়গায় এর ব্যাপক উপস্থিতি । একই ধরনের এত ব্যাপক সংখ্যক বাইকের উপস্থিতি অনেকের মধ্যে ঘৃণার সৃষ্টি করতে পারে। সবশেষে বাজাজ পালসার ১৫০ ও টিভিএস ১৫০ আরটিআর লুকের ক্ষেত্রে যৌথভাবে বিজয়ী।
আরামদায়ক ভ্রমণের ক্ষেত্রেঃ
আরামদায়ক ভ্রমণের ক্ষেত্রে টিভিএস ১৫০ আরটিআর দেখতে অনেক বেশী স্পোর্টিং । কিন্তু টিভিএস সাধারন বাইক ব্যবহারকারীদের জন্য এ ক্ষেত্রে বিশেষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি । কিন্তু টিভিএস এর এই স্পোর্টিং সিট পজিশন দীর্ঘ ভ্রমণে কনুইয়ের ব্যথার কারণ হতে পারে ।
সিট পজিশনের কথা বলতে গেলে বাজাজ পালসার ১৫০ এর ক্ষেত্রে বলা যায় এটা টিভিএস অ্যাপাচি এর মত স্পোর্টিংও ও নয় কিংবা ১৫০ সিসি সিরিজের অন্য বাইকগুলোর মত উঁচুও নয় । এক থেকে দশের স্কেলে একে সাত দেয়া যায় ।
চালানো ও নিয়ন্ত্রণঃ
সকল বাইকের মধ্যে ভ্রমণের ক্ষেত্রে পালসার ১৫০ এর রয়েছে সবচেয়ে মোলায়েম সিট । পালসারে যে গ্যাসপূর্ণ রিয়ার শক অ্যাবজরবার রয়েছে সেটা আসলে প্রত্যেক বাইক চালকের জন্যই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । টিভিএস এর ও গ্যাসপূর্ণ রিয়ার শক অ্যাবজরবার রয়েছে যদিও টিভিএস এই বাইকের ডিজাইন করেছে একটি রেসিং বাইক হিসেবে। ভাল নিয়ন্ত্রণ ও টার্নের জন্য আরটিআর ১৫০ এ রয়েছে খুবই ভাল শক অ্যাবজরবার সেটআপ ।
Also Read: নতুন রূপে আসছে বাজাজ পালসার ১৫০এনএস
এই দুটি বাইকের মধ্যে ভাল নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আরটিআর, পালসার ১৫০ অপেক্ষা অনেক ভাল । স্টিফ সেটআপের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা চালানোর সময় অনুভূত হয় ।
ইঞ্জিনের ক্ষমতা/ পারফর্মেন্সঃ
কাগজেকলমে এ দুটি বাইকের মধ্যে আরটিআর এর ইঞ্জিন অধিক শক্তিশালী । আমাদের একটি পরীক্ষামূলক ভ্রমণের পর আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি আরটিআর শুধু কাগজে কলমে নয় ১৫০ সিসি সিরিজের যতগুলো বাইক রাস্তায় চলে তার মধ্যে ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ এর পর এর ইঞ্জিনই সবচেয়ে শক্তিশালী । এর পরেই রয়েছে পালসার ১৫০ বিদ্যমান বাইকগুলোর মধ্যে বাজাজ পালসার ১৫০ এর রয়েছে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ইঞ্জিন । আরটিআর ১৫০ পুরাতন অ্যাপাচি ১৫০ হতে অনেক উন্নত কিন্তু আমরা আমাদের টেস্ট ড্রাইভে চালিয়ে বুঝতে পেরেছি যে টিভিএস এর কম্পনের মাত্রা কমিয়ে আনতে পারেনি ।
গিয়ারবক্সঃ
অ্যাপাচি আরটিআর ১৫০ এ ক্ষেত্রে পালসার ১৫০ এর চেয়ে এগিয়ে আছে । পালসারের গিয়ারবক্স আগের ভার্সনগুলো হতে অনেক উন্নত করা হয়েছে কিন্তু এতে এখনও বেশ কিছু দুর্বলতা রয়েছে । আমরা পালসারে বড় ধরনের কোন ভুল পাইনি কিন্তু শিফটগুলো মসৃণ হওয়া সত্ত্বেও তেমন কাজের নয় ।
জ্বালানী দক্ষতাঃ
বাজাজ পালসার নিঃসন্দেহে সেরা কারণ এটা নতুন অবস্থায় প্রতি লিটারে প্রায় ৫০ কিলোমিটার যায় । ৫০০০ কিলোমিটার চালানোর পর মাইলেজ প্রতি লিটারে ৪০-৪৫ কিলোমিটারে নেমে আসে । অ্যাপাচি আরটিআর ১৫০ সাধারণত প্রতি লিটারে ৪৮-৫২ কিলোমিটারের কাছাকাছি মাইলেজ দিয়ে থাকে । এই পরিমান মাইলেজ অবশ্যই প্রত্যাশিত কারণ এই দুটির মধ্যে আরটিআর অবশ্যই অনেক শক্তিশালী ।
Also read: কেন বাংলাদেশে বাজাজ মোটরসাইকেল এত বেশি জনপ্রিয়?
সমাপ্তিঃ
বাজাজ নিঃসন্দেহে তাদের অত্যন্ত যত্নের সাথে গড়ে তোলা ব্র্যান্ড “ পালসার” এর সুনামকে কাজে লাগাচ্ছে । এমন অনেকেই রয়েছে যারা বাজাজ পালসার কেনার স্বপ্ন দেখতে দেখতে বড় হয় । বাজাজের শুধুমাত্র এর “পালসার” ব্র্যান্ডটিকে একটু যত্ন করতে হবে, আমি মনে করি বাজাজ এই কাজটি অত্যন্ত সফলতার সাথে করছে। টিভিএসের বাইক উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং তারা বাজাজকে টেক্কা দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ হতে দেখলে আমি এই ভেবে ভয় পাই যে টিভিএস হয়ত তার সামর্থ্যের চেয়ে এক ধাপ বেশী এগিয়ে গেছে । শহরের মধ্যে ভ্রমণের জন্য যারা আরমদায়ক ১৫০ সিসি বাইক খুঁজছেন তাদের জন্য আরটিআর ভাল পছন্দ হতে পারে। আশা করি “বাজাজ পালসার ১৫০ বনাম টিভিএস ১৫০ আরটিআরঃ একটি তুলনামূলক বর্ণনা” লেখাটি আপনাকে সঠিক বাইক পছন্দ করতে সাহায্য করবে ।
ছবি ঃ রিমন