Bajaj Pulsar 150 ৩৩,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - আলিফ

This page was last updated on 29-Jul-2024 03:32am , By Shuvo Bangla

আমি আশফাকুর রহমান আলিফ। প্রথমে ধন্যবাদ BikeBD.com কে আমার বাইক নিয়ে মনের মত কিছু লেখা শেয়ার করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য। আজ আমি আমার Bajaj Pulsar 150 বাইকের মালিকানা রিভিউ শেয়ার করবো । 

মূল বিষয় শুরু করার আগে আপনি যদি  pulsar 150 price in bangladesh এর সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে আমাদের ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল  এবং ফেসবুক ফ্যান পেজ ঘুরে দেখুন।  তাছাড়া বাইক সম্পর্কিত যেকোন তথ্য পাবেন আমাদের ওয়েবসাইটে।

Bajaj Pulsar 150 ৩৩,০০০ কিমি মালিকানা রিভিউ

আমি একজন ছাত্র। আমার বর্তমান ঠিকানা হাজারীবাগ, বিজিবি ৫ নম্বর গেট, ঢাকা । আমার বাইকের মডেল Bajaj Pulsar 150 । বাইকটি ২০১৭ সালে উত্তরা মটরস মোহাম্মদপুর শাখা থেকে ক্রয় করি । তখন বাইকটির দাম ছিল ১,৭৮,০০০ টাকা ।

Bajaj Pulsar 150 বাইকটিতে দেওয়া হয়েছে একটা ১৫০ সিসির ইঞ্জিন । বাইকের ওজন ১৪৪ কেজি । সামনের টায়ার ৮০/১০০-১৭ টিউবলেস । পেছনে ১০০/৯০-১৭ টিউবলেস । সামনে ডিস্ক ব্রেক । পেছনে ড্রাম ব্রেক ।বাইক ভালোবাসার কারণ-

  • আমার ঘুরতে যেতে অনেক ভালো লাগে।
  • আমি মনে করি বাইকে কোথাও গেলে পরিবেশটা উপভোগ করা যায় ভালো।
  • ঢাকার যানজট থেকে বাঁচার জন্য বাইকের ভূমিকা অত্যন্ত বেশি।
  • খুব সহজেই যেকোন জায়গায় যাওয়া যায়।

আমার কাকার একটা Bajaj Pulsar 150 বাইক ছিল। সেই থেকে পালসার এর উপর আলাদা একটা আগ্রহ ছিল। আমার বাবার ইচ্ছে ছিল একটা বাইক কেনার পরিবারের অনেক কাজে লাগতে পারে।

হঠাৎ করে একদিন বাবা ফোন করে বলেছে যে বাইক কিনেছি । তখন আমি আমার এক আপুর বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলাম। হঠাৎ এরকম কথা শোনার পর আমি সত্যিই খুবই উত্তেজিত হয়ে গেছিলাম। জিজ্ঞেস করলাম যে কি বাইক কিনেছো? বাবা বলল Bajaj Pulsar 150। হয়তো আমি সেদিন বাইক কিনতে যায়নি তবুও সেদিন সত্যি খুব ভালই লাগছিলো। বাইকের সার্ভিস-Bajaj Pulsar 150 কেনার পর থেকে এখন এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো সার্ভিস পাচ্ছি। ভালো সার্ভিস পেতে হলে অবশ্যই বাইকের যত্ন নিতে হবে। নতুন কেনার পরপর ব্রেক ইন পিরিয়ড শেষ হওয়ার আগেই আমি বেশ কয়েকবার ৯০+ চালাই। যার জন্য কিছুটা সাউন্ড সমস্যা হয়েছে। 

১০,০০০ কিলোমিটার এর মধ্যে আর কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। বর্তমানে ৩৩,০০০ কিলোমিটারের বেশি বাইক রাইড করতেছি । এর মধ্যে চেইন স্পোকেট পরিবর্তন করেছি। পরিবর্তন করার কারণ আমি বাইকের রেসপন্স বেশি পেতাম না। রাস্তায় দেখলাম সবাই আমার আগে চলে যাচ্ছে, কারণ ছিল আমার বাইকের চেইন স্পোকেট ক্ষয় হয়ে গেছে। এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করি। কারণ এয়ার ফিল্টার এর অনেক ময়লা জমে ছিল। টায়ার চেঞ্জ করতে হবে ,কারণ ৩০,০০০+ চালানো  হয়ে গেছে। এতে টায়ার ক্ষয় হয়ে গেছে। আর তেমন কিছুই পরিবর্তন করতে হয়নি।মাইলেজ নতুন অবস্থায় পেয়েছি ৩৬-৩৮ । ঢাকার যানজটের মধ্যেও ৩৮-৪০ আর হাইওয়েতে ৪০-৪২ মাইলেজ পাই। বেশি মাইলেজ পাওয়ার জন্য অবশ্যই ভাল পাম্প থেকে ভালো তেল ব্যবহার করতে হবে ।

বাইকে অকটেন, পেট্রোল ২ টাই ব্যবহার করা যায়। পেট্রোল বেশি ভালো মনে করি। শো-রুম থেকে আমাকে তিনটা ফ্রি সার্ভিস দিয়েছে । বাংলাদেশের যেকোন জায়গায় বাজাজের যে কোন পার্টস সহজে পাওয়া যায় । তবে পার্টস কেনার সময় অবশ্যই শো-রুম থেকে কিনলে সবথেকে ভালো হয়। ইঞ্জিন অয়েল Bajaj DTSI  ব্যবহার করছি।

Bajaj Pulsar 150 বাইকের কিছু ভালো দিক -

  • সর্বপ্রথম এর হর্ন কোয়ালিটি খুব ভালো। যানজটের মধ্যে খুব ভালো শোনা যায়।
  • সুইচ এর লাইট গুলো মনোমুগ্ধকর। বর্তমানে রেসিং বাইকে এরকম দেখা যায় না।
  • শক্তিশালী চেসিস ,দুইবার দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পরেও আমি আমার বাইক চালিয়ে আবার বাসায় চলে আসতে পেরেছি।
  • এর ইন্জিন এর শব্দ কখনোই কোন বাইকের শব্দের সাথে মিলানো যাবে না। ইঞ্জিন শব্দ যা খুবই আকর্ষনীয়।
  • হ্যান্ডেল বার ও পজিশন খুব ভাল।
  • টার্নিং রেডিয়াস ভালো।
  • বাইকের আরেকটি আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে সিঙ্গেল স্ট্যান্ড এর সাথে সেন্সর লাগানো, স্ট্যান্ড নামানো থাকলে মিটারে স্ট্যান্ড নামানো আছে নির্দেশ দেওয়া থাকে।

বাইক চালানোর চেয়ে বাইকের যত্ন করা খুবই প্রয়োজন। বাইকটি যখন আমি চালাই আমার নিজের কাছে খুব ভালো লাগে। কারণ আমি আমার বাইকের যত্ন নেই, আর সেও আমাকে ভালো সার্ভিস দেয়। Bajaj Pulsar 150 বাইকে টপ স্পিড পেয়েছি  ঢাকায় ৩০০ ফিটে ১১০ । বাইক থেকে সার্ভিস ভালো পাওয়ার মূলমন্ত্র হচ্ছে বাইকের যত্ন নেওয়া। আমি সাধারণত ১০০০ কিলো চালানোর পর আমার বাইকের ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি। 

Bajaj DTSI ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি যার মূল্য ৫০০ টাকা  প্রতিমাসেই বাইক ওয়াশ করি। বাইকের ক্যাবল গুলো লুব্রিক্যান্ট করিয়ে থাকি। প্রতিদিন সকালে বাইক স্টার্ট করার সময় কিক দিয়ে থাকি।আমার বাইক মডিফিকেশন এর দরকার হয়নি। কারণ পালসার ২০১৬-২০১৭ মডেল এর লাল এবং কালো এডিশনের বাইক খুবই ডিজাইনেবল। এর মধ্যে আর কিছু মডিফাই করার ইচ্ছে নেই । 

Bajaj Pulsar 150 বাইকের কিছু খারাপ দিক-

  • অনেক সময় পিছনের চাকা স্লিপ করে।
  • টায়ারের সাইজ একটু ছোট দেয়া, কিন্তু বর্তমানে ইউজি ফাইভ এর টায়ার সাইজ বাড়িয়েছে।
  • হেড লাইটের আলোর পরিমাণ কম থাকে অন্যান্য বাইকের  তুলনায়।
  • বর্তমানে পালসার বাইকের ইঞ্জিন অনেকটা দুর্বল হয় আগের পালসার বাইকের তুলনায়।
  • মাইলেজ খুব ভালো পাওয়া যায় না।

আমি বাইক কেনার পর এই সেই বছর বরিশালে নিজের গ্রামের বাড়িতে বাইক নিয়ে যাই। খুব সুন্দর একটা ভ্রমণ ছিল । প্রথম প্রথম নতুন বাইক খুব উত্তেজিত ছিলাম আমি। বরিশালের বিভিন্ন জায়গায় আমি ঘুরেছি। তখন অবশ্য আমার মামার বিয়ে ছিল তাই বরগুনা যাওয়া হয়। Bajaj Pulsar 150 বাইক নিয়ে প্রথম লং ট্যুর ছিল বরগুনা যাওয়া-আসা । প্রত্যেকটা সময় প্রত্যেক মিনিট আমি বাইকে উপভোগ করেছি। খোলা আকাশ মুক্ত বাতাস চারদিকের প্রকৃতি আমায় পাগল করে তোলে।প্রত্যেক ঈদে আমি বাড়িতে আমার বাইক নিয়ে যাই। সত্যি কথা বলতে যারা বাইকার তারা বাইক ছাড়া কোথাও যেতে পারে না এটা আমি নিজে প্রমাণ। এছাড়াও আরো বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আসা হয়েছে।

সর্বোপরি আমি বলতে পারি, আমরা যে বাইক চালাই না কেন বাইকের যত্ন নিলে তা অবশ্যই ভালো থাকবে এবং সার্ভিস ভালো দেবে। ভালো সার্ভিস দিতে হলে অবশ্যই মূলমন্ত্র হচ্ছে বাইকের যত্ন নেওয়া এবং সুন্দরভাবে মেনটেনেন্স করা। সেই ২০০২ - ২০০৩ থেকে বাজাজ পালসার ১৫০ তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে । আশা করি সামনে এভাবে রাখবে । কারণ এর সার্ভিস পেয়ে আমরা পালসার ইউজাররা খুবই আনন্দিত। ধন্যবাদ ।     

লিখেছেনঃ আশফাকুর রহমান আলিফ   

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।