হিরো হাঙ্ক ৩,৫০০কিমি মালিকানা রিভিউ - কিশোর কুমার
This page was last updated on 18-Jul-2024 05:22am , By Saleh Bangla
আমি কিশোর কুমার সরকার। বর্তমান বয়স ২৫ বছর।আমি ফরিদপুর জেলার মধুখালীতে বসবাস করি। আমি আজ আপনাদের সাথে আমার হিরো হাঙ্ক বাইক নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। আমি ৮ম শ্রেনী থেকে বাইক চালানো শিখি আমার প্রথম হাতে খড়ি আমার বড় ভাই এর ইমা ১০০ সিসি। বাইক বাসার নিচে থাকতো আর আমি চাবি চুরি করে বাইক চালানোর চেষ্টা করতাম। এমন করি দেখে বড় ভাই হাতে ধরে বাইক চালানো শেখায়। তবে পরবর্তিতে বাবা আমাকে কিনে দেন হিরো হাঙ্ক।
তার পর থেকে মাঝে মাঝে চালাতাম।ভাইয়া বাইক টি বিক্রয় করে দেয়। বাইকটির প্রতি ভালোবাসা ছিলো অন্য রকম তাই আমি আবার ঐ বাইকটি কিনে আনি এবং ১ বছর পর আমি ও বিক্রয় করে দেই। তার পর কিনি Bajaj KB 125 cc ওটা ও কিছুদিন পর বিক্রয় করে দেই তার পর থেকে আর বাইক চালাতাম না। আমার বন্ধুরা বাইক নিয়ে বিভিন্ন জায়গা যায় আমি যেতে পারতাম না আমার মা এটা খেয়াল করতো।
হটাৎ একদিন বাবা বললো তোর একটা বাইক দরকার আমি বুজি আমি কিনে দেবো কিন্তু তা ১ লক্ষ ৮০হাজার এর ভিতর আমি তো অবাক আমি নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলামনা। যাই হোক বাইক বিডি তে শুধু পোষ্ট দেখতাম তখন ভাবলাম এবার আমার ও পোষ্ট দেবার সময় এসেছে। আমার আর্থিক অবস্থা খুব বেশি ভালো না আমাকে এমন একটি বাইক নির্বাচন করতে হবে যা মাইলেজ, আরাম,স্পিড,এবং ভালো স্থায়ীত্ব হবে, পচ্ছন্দ তালিকায় রাখি ১)হিরো হাঙ্ক ১৫০সিসি, ২)পালসার১৫০সিসি, ৩)এপাচি আর টি আর ১৫০সিসি, এবং ভোট চেয়ে বাইক বিডি তে পোষ্ট করি এবং হাংক বেশি ভোট পাই তার পর বাইক বিডি এর নাদিম উৎস ভাই এবং ওয়াসিফ আনোয়ার ভাই ও হাংক নেবার পরামর্শ দেন।
ডিসিশনস নিয়ে ফেললাম হিরো হাঙ্ক কেনার। ৭ নভেম্বর আমার সেই সুযোগ আসলো দুপুর এ মা, বাবা,আমি চলে গেলাম ন্যাশনাল মটরর্স, ফরিদপুর হিরো এর শোরুমে। লাল, সাদা, সবুজ,এর ভিড়ে আমার সবুজটা ই বেশি ভালো লাগলো। বাবা কে বললাম সবুজ হিরো হাংক ডিডি টা নিবো। বাবা ওনাদের সবুজটা রেডি করতে বললো তখন আমার মনে হচ্ছিলো আমি পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ। বাবা তখনই বললো আগে হেলমেট কিনে তারপর বাইক ধরবা যথারিতী হেলমেট কিনে তারপর বাবাকে নিয়ে বাইক এ করে বাসায় আসি।
প্রথম হিরো হাঙ্ক রাইডঃ
প্রথমবার যখন বাইকটি রাইড করলাম মনে হচ্ছিলো আমি কোন ষাড় এর উপর বসে আছি আর তা লাগামহীন ভাবে ছুটতে চাচ্ছে তার গর্জন ই বলে দিচ্ছে সে কতোটা শক্তিশালী কিন্তু ব্রেকইন প্রিয়ড বলে একটা কথা আছে তাই ৩০০০কিমি পর্যন্ত ৪০০০আর পি এম বা ৫০কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টা চালাতে হবে তাই মাথা ঠান্ডা করে চালালাম।
হিরো হাঙ্ক এর ফিচারঃ
হিরো হাংক সিঙ্গেল সিলিন্ডারের এয়ার কুলড ১৪৯.২ সিসি এটিএফটি ইঞ্জিন যা সর্বোচ্চ ৮৫০০ আরপিএম ১৪.৪ পিএস উৎপন্ন করতে সক্ষম এবং সর্বোচ্চ টর্ক হচ্ছে ১২.৮০ এনএম এবং ৬৫০০ আরপিএম যা ৫স্পিড গিয়ার সম্বলিতো এ থেকেই বলা যায় সে কতোটা শক্তীশালী।
এর সামনের অংশে টেলিস্কপিক হাইড্রলিক শক এবজরবার এবং এর পেছনের অংশে সুইং আর্ম নিট্রক্স জি আর এস বা গ্যাস রিজারভার সাস্পেশন রয়েছে। এবং এর সামনে পিছনে রয়েছে ডিক্স ব্রেক যা বাইক এর গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে যথেষ্ট সক্ষম।এর ট্যাংকটি ১২.৪ লিটার পর্যন্ত ফুয়েল ধারণ করতে সক্ষম এর মধ্যে ২.২লিটার রির্জাভ। সামনে ও পিছনে আছে টিউবলেস টায়ার । হাংক বিভিন্ন রং এ বাজার এ আছে।
হিরো হাঙ্ক মেইনটেস্ঃ
আমি আমার বাইকটিতে প্রথম থেকে মতুল 10w30 গ্রেড ব্যাবহার করেছি ৪০০ কিমি তারপর ৮০০কিমি তারপর ১৫০০ কিমি তারপর ২৫০০ কিমি তারপর ৩৫০০কিমি তে মবিল পরিবর্তন করেছি এবং ১০০০কিমি তে প্রথম সার্ভিসিং এবং ৩০০০কিমিতে দ্বিতীয় সার্ভিসিং করিয়েছি। এখন পযন্ত কিছুই পরিবর্তন করিনি কোন রকম সমস্যা ছাড়া ৩৫০০কিমি পার করেছি।
হিরো হাঙ্ক মাইলেজঃ
আমি ২৫০০কিমি পর্যন্ত প্রতি লিটার পেট্রোল এ ৪০ কিমি পেয়েছি এবং ২৫০০কিমি পর থেকে প্রতি লিটার পেট্রোল এ শহরে ৪৭/৪৮ কিমি এবং হাইওয়েতে ৫২ কিমি পেয়েছি। এই মাইলেজ নিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট।
হিরো হাঙ্ক সর্বোচ্চ গতিঃ
আমি ২৫০০ কিমি পর্যন্ত ৫০/৫৫ কিমি গতি তে রাইড করেছি ২৫০০ কিমি পর ৭০/৮০কিমি গতিতে ৩০০০কিঃমি পর্যন্ত রাইড করছি এবং ৩০০০কিমি ব্রেকিপ্রিয়ড শেষ করার পর ফরিদপুর মাগুরা হাইওয়েতে সর্বোচ্চ গতি ১১৯ কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টা তুলতে সক্ষম হয়েছি।
হিরো হাঙ্ক এর ভালো দিক সমূহঃ
১। সিটিং পজিশন ভালো।
২। ব্রেকিং সিস্টেম ভালো।
৩। ভ্রমন এর জন্য বেশ ভালো।
৪। টিউবলেস টায়ার ফলে পাংকচার হলে ও ভয় নেই।
৫। ১৫০সিসি সেগমেন্টে মাইলেজ অসাধারন।
৬। দ্রুত গতি তুলতে সক্ষম।
৭। বাইকটির সাউন্ড খুব স্মুথ।
৮। স্পেয়ার পার্স সহজ লভ্য।
৯। গ্রাউন ক্লিয়ারেন্স ভালো।
১০। শহরে চালানোর জন্য উপযোগী।
হিরো হাঙ্ক এর খারাপ দিক সমূহঃ
১। ওজন এ ভরী ফলে সরা নড়া করতে বিরক্ত বোধ হয়।
২। স্পেয়ার পার্স এর অত্যাধিক মূল্য।
৩। পিছন এর চাকা বেশ চিকন।
৪। সামনের হেড লাইট এর আলো এক্সেলেটর এর সাথে ওঠা নামা করে ফলে রাতে চলা চলে অসুবিধা।
৫। ইন্জিন কিল সুইচ নেই।
৬। বাইক এর তুলনায় হর্ন টা মানায় না।
মতামতঃ
আমি ৫ফুট ৬"ইঞ্চি ফলে বাইকটি বড় হওয়াতে আমার কোন প্রবলেম হয় না।হিরো হাংক বাইকটি আমার এক প্রকার সকল চাওয়া পূরন করতে পেরেছে। মাইলেজ, টপ স্পিড, ব্রেকিং নিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট।
পরামর্শ ঃ
যারা বাইকটি নিতে চাচ্ছেন অবশ্যই 10w30গ্রেড এর ইন্জিন অয়েল ব্যাবহার করবেন। সময় মতো তা পরিবর্তন করবেন। এবং ব্রেকিংপ্রিয়ড ৩০০০কিঃমিঃ রাইড করবেন। সময় মতো বাইক সার্ভিস করাবেন।
পরিশেষঃ
পরিশেষ এ এটুকু বলতে পারি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে উপরের সবকিছুর সাথে আপনি মানাতে পারেন তাহলে হিরো হাংক বাইকটি আপনার জন্যই অপেক্ষা করছে।
সতকর্তাঃ
কথায় আছে যতো গতি ততো ক্ষতি তাই অধিক গতি পরিহার করুন। সময় এর থেকে জীবন এর গুরুত্ব বেশী। সর্বদা হেলমেট ব্যাবহার করুন।
লিখেছেন - কিশোর কুমার