হিরো গ্ল্যামার এর মালিকানা রিভিউ - লিখেছেন: হাবিবুর রহমান
This page was last updated on 06-Jul-2024 10:03pm , By Shuvo Bangla
আমি হাবিবুর রহমান। আমার বাসা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। আমি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়(IUB)তে এমবিএ করছি। আমি অনেক দিন ধরেই হিরো গ্ল্যামার বাইকটি চালাচ্ছি। প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার চালানোর পর মনে হল একটা রিভিউ দেয়া দরকার।
হিরো গ্ল্যামার ৩০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ
ছোটবেলা থেকেই বাইক ও সাইকেল এর প্রতি একটা নেশা ছিল। হয়তো এই নেশার কারণ ছিল দুই চাকার যান বলেই। খুব অল্প বয়সেই সাইকেল চালানো শিখলেও বাইক চালানো শিখার জন্যে আমাকে ২১ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। আমি প্রথম বাইক চালানো শিখি ডিসকভার ১০০ সিসি দিয়ে(সময়টা ২০১৩সালে)। বাইক চালানো যে কতটা আনন্দদায়ক সেদিন আরো ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছিলাম। এরপর ডিসকভার ১৩৫সিসি মাঝে মাঝে চালাতাম। কিন্তু অনেক সমস্যা ছিল আমার চলানোয় যেমন স্ট্যার্ট বন্ধ করে দেয়া, ২নাম্বার গিয়ারে ক্লাচ পিকআপ সমন্বয় না করা ইত্যাদি। তারপর ২০১৫ সালের শেষদিকে আমার কাজিন এর পালসার ১৫০ সিসি নিয়মিত বসুন্ধরা /৩০০ফিট চালানোর পর হাত মোটামুটি ক্লিয়ার হয়।
তারপর ২০১৬ সালের জুন মাসে অনেক কষ্টে আব্বু আম্মুকে রাজি করাই। বাজেট কম ছিল তাই বাধ্য হয়েই ১২৫ সিসি কিনার প্লান করলাম। অনেক কিছুই যাচাই বাছাই করার পর মনস্থির করলাম হিরো গ্ল্যামার কিনব। ( যদিও অনেক মানুষ বলে হিরো ফালতু কোম্পানি। হোন্ডার থেকে আলাদা হওয়ার পর থেকেই খারাপ হয়ে গেছে)। বাইক কেনার ১ সপ্তাহ আগে থেকে তেজগাও তে যত বাইক শো-রুম আছে, আমি সব গুলো শো-রুম ঘুরে দেখি।
যদিও টিভিএস মেট্রো প্লাস ডিস্ক ব্রেক ব্লাক কালারটা ভালো লেগেছিল। কিন্তু দাম অনেক বেশি মনে হয়েছে। হোন্ডো সিবি শাইন এর দাম ছিল বেশি আর টিভিএস ফিনিক্স এ মন সায় দেয়নি। যাই হক সম্ভবত শুক্রবার ছিল সেইদিন, যেদিন বাইক কিনব। আগের রাত ঘুমাতে পারিনি। সকালে আমি আব্বু আর আমার এক বড়ভাই তিনজন গিয়েছিলাম তেজগাঁ শুরুম এ। আমিই অইদিন প্রথম ক্রেতা ছিলাম।
হিরো গ্ল্যামার স্পেসিফিকেশন
হিরো গ্ল্যামার বাইকের ১২৪.৭ সিসি এয়ার কুলড সিংগেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন আছে। পাওয়ার ৯.১ পিএস ৭০০০ আরপিএম, টর্ক ১০.৩৫ nm ৪০০০ আরপিএম। কিক এবং সেল্ফ স্টার্ট আছে। সামনে ডিস্ক ব্রেক আছে। ফ্রন্ট সাসপেন্সশন টেলিস্কোপিক হাইড্রোলিক শক অবজারভার এবং পিছনে হাইড্রোলিক শক অবজারভার এর সাথে সুইং আর্ম।
হিরো গ্ল্যামার কেনার কারণ:
১. সম্ভবত ১২৫ সিসি সেগমেন্টে সবচেয়ে সুন্দর ডিজাইন। ২. হোন্ডা সিবি সাইন এবং টিভিএস ফিনিক্স থেকে দাম অনেক কম ছিল। ৩. ৭০০০০ কিমি অথবা ৫ বছর ইন্জিন ওয়ারেন্টি। ৪. বাইকটির এনালগ+ডিজিটাল মিটার কন্সল খুবই এ ভাল লাগে। বিশেষ করে ইনডিকেটর লাইটের সিগনালটি অসাধারন। ৪. গ্ল্যামার বাইকের কোনো জায়গায় ১২৫সিসি লেখা নেই। তাই অনেক মানুষ মনে করে এটা ১৫০ সিসি বাইক। ৫. টাংকি তে রিজার্ভ সহ ১৪.৬ লিটার তেল ধরে। যেখানে রিজার্ভ ১ লিটার। বাইকের দাম কাগজ করা সহ খরচ পরছে (রমজানে ২০০০০টাকা ছাড় ছিল)= ১৩৭৫০০+১৩৫০০= ১৫১০০০।
হিরো গ্ল্যামার কেনার পর ৪০০ কিলো চালানর পর প্রথম সার্ভিসিং করি। এই চারশ কিলো আমি তেমন মজা পাইনি। ৫৫+ স্পিডে কিছু ভাইব্রেশন ছিল। গিয়ার কিছুটা হার্ড ছিল। কিন্তু প্রথম সার্ভিসিং এরপর সব কিছু ঠিক হয়ে যায় এবং বাইক অনেক স্মুথ হয়। আমি ব্রেক ইন পিরিয়ড খুবই ভালভাবে মেইনটেনই করেছি। এই সময় আমি ৫০/৫৫ এর উপর স্পিড তুলি নাই। হাই আরপিএম এ বাইক চালাইনি। আমি প্রথম থেকেই হিরো সুপার ফরটি মবিল ব্যবহার করি। প্রথম ২০০০ কিলোতে আমি ৪ বার মবিল চেঞ্জ করি। ২০০০ কিলো এর পর হাভোলিন ব্যবহার করেছি। পারফরমেন্স হিরো থেকে ভালছিল। এখন মতুল(৩০০০ ১০w৩০) ব্যবহার করি। মতুল আবার হাভলিন থেকে ভাল মনে হচ্ছে।
এই সময়ের মধ্যে আমি কোনো সমস্যা ফেস করি নাই। প্রথম ২০০০ মাইলেজ ছিল ৪৫/৪৮ কিলো লিটার। ২০০০ কিলো পর ৫২/৫৫ পেয়েছি ঢাকা সিটিতে। এই ৩০০০ কিলো এর মধ্যে আমি সবোচ্চ স্পিড ৮৫ উঠিয়েছিলাম। কারন বেশি স্পিডে বাইক চালানো আমার পছন্দ না কিন্তু আমার ভাই ৩০০ ফিট রাস্তায় ৯৫ উঠিয়েছিল যখন আমার বাইক ২৪০০+ রানিং। ০- ৮০ স্পিডে আমি কোনো ভাইব্রেশন পাইনি। ইঞ্জিন সাউন্ড স্মুথ ছিল। আমি আলাদা ভাবে ইঞ্জিন কিল সুইচ লাগিয়ে নিয়েছি।
হিরো গ্ল্যামার এর খারাপ দিকঃ
এখন আমি কিছু খারাপ দিক নিয়ে বলতে চাই। ভাল দিক বলব না কারন খারাপ দিক গুলো ছাড়া আমার কাছে সবই ভাল লেগেছে। ইঞ্জিন পারফরমেন্স, কন্ট্রোল,সাসপেনশন,টায়ার, গ্রিপ নিয়ে কোন কমপ্লেইন নেই। ১. বাইকের হেড লাইট এসি যা পিক আপ এর সাথে বাড়ে কমে এবং রাতে খুব এ সমস্যা করে। ২. পিছনের চাকা ডিসকভার, টিবিএস ফিনিক্স স্ট্রাইকার এর মত হলে ভাল হইত। ৩. টিউবলেস টায়ার না হওয়াটা খুবই হতাশাজনক। ৪. বাইকের ওজন ১২৯ কেজি হওয়ায় খুব ভারি কাওকে নিয়ে চালালে স্পিড উঠতে এক টু সময় লাগে।আর এমনিতে পাওয়ার একটু কম তাই এমন টা হয় বলে আমি মনে করি। ৫. লুকিং গ্লাসগুলা আমার কাছে কিছুটা ছোট মনে হয়।
পরিশেষে বলতে চাই, হিরো গ্ল্যামার বাইকটি তাদের জন্য না যারা অনেক স্পিড এ চালাতে ভালবাসেন কিংবা পাওয়ার চান। যারা অসাধারণ লুক এর পাশাপাশি ভাল পারফরমেন্স চান তাদের জন্য এই বাইক। তাই আমার কাছে এইটা ১২৫ সিসি সেগমেন্টে একটা গ্লামারাস কমিউটার বাইক। সবাই দোয়া করবেন, যেন সুস্থ-সবল ভাবে বাইক চালাতে পারি। ধন্যবাদ ভাল থাকুন।
লেখক: হাবিবুর রহমান