হিরো এক্সট্রীম টীম বাইকবিডি রিভিউ
This page was last updated on 07-Jul-2024 07:45am , By Shuvo Bangla
হিরো এক্সট্রীম টীম বাইকবিডি রিভিউ
একটা সময় ছিলো , যখন আমাদের দেশে টু-স্ট্রোক বাইকের জয়জয়কার ছিলো। সময়ের সাথে সাথে আমাদের দেশে ফোর-স্ট্রোক বাইকও আসা শুরু করলো , তবে তার বেশিরভাগই লোকজনের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পেতে ব্যর্থ হয়েছিলো। কিন্তু তৎকালীন একটি ফোর-স্ট্রোক বাইক অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো , এবং বিক্রি হয়েছিলো অনেক টু-স্ট্রোক বাইকের চাইতেও বেশি। বাইকটি ছিলো হিরো হোন্ডা স্প্লেন্ডর। তৎকালীন সময়ে ভারতীয় কোম্পানি হিরো , জাপানি কোম্পানি হোন্ডার সাথে একত্রে কাজ করছিলো। এবং বর্তমানে হিরো এককভাবে Hero MotoCorp Ltd নামে নতুনভাবে তার যাত্রা শুরু করেছে । এই রিভিউতে আমরা হিরোর অন্যতম সেরা ও জনপ্রিয় বাইক হিরো এক্সট্রীম এর সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানাবো।
হিরো মোটর সাইকেলের ইতিহাস
হিরো ১৯৬৬ সাল থেকে হিরো সাইকেলস এর পাশাপাশি ম্যাজেস্টিক অটো লিমিটেড নামে নিজেদের যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৩ সালে তারা হোন্ডা মটরস এর সাথে একত্রে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয় ও ১৯৮৪ সালে হিরো হোন্ডা এর যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৫ সাল থেকে তারা হিরো হোন্ডা নামে বাইক তৈরি করা শুরু করে। এবং ধীরে ধীরে তারা বিক্রির রেকর্ডের দিক দিয়ে ভারতের সর্ববৃহৎ দ্বিচক্রযান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
২০১০ সালে উভয় কোম্পানি আলাদা হয়ে এককভাবে পথ চলার সিদ্ধান্ত নেয় । সেই ক্রমধারাতেই ২০১২ সালে হিরো নিজেদেরকে হিরো মটোকর্প নামে রূপান্তরিত করে। হোন্ডা থেকে আলাদা হয় যাওয়ার পর ২০১৩ সালে হিরো তাদের নতুন ব্র্যান্ড নামের অধীনে ১৫ টি আপডেটেড বাইক দিয়ে নিজেদের নতুন প্রোডাক্ট লাইনআপ ঘোষনা করে। এই ক্রমধারাতেই ২০১৪ সালে মধ্যদিকে হিরো মটোকর্প লিমিটেড বাংলাদেশের নিটোল-নিলয় গ্রুপ এর সাথে তাদের যাত্রা শুরু করে।
টেস্ট রাইডের উদ্দেশ্য
আপনারা সকলেই হয়তো জানেন যে পূর্ববর্তী হিরো-হোন্ডা এর প্রোডাক্ট লাইনআপ বাংলাদেশে অনেক সাফল্য লাভ করেছিলো , এবং হিরো-হোন্ডা সিবিজেড এক্সট্রীম ছিলো হিরো-হোন্ডার অন্যতম ব্যাবসাসফল ও জনপ্রিয় একটি বাইক। বর্তমান হিরো মটোকর্প তাদের প্রোডাক্ট লাইন অনেক আপডেট করেছে , এর ফলে আগের সিবিজেড এক্সট্রীম তাদের প্রোডাক্ট লাইনআপ থেকে বাদ পড়লেও সেখানে স্থান করে নিয়েছে সেটার আপডেটেড ও নতুন ভার্শন , হিরো এক্সট্রীম ।
যখন হিরো সকলের সামনে তাদের নতুন হিরো এক্সট্রীম উপস্থাপন করলো , তখন আমাদের দেশের বেশিরভাগ বাইকাররা দ্বিধায় পরে গিয়েছিলেন যে এটা কি আসলেই আগের সিবিজেড এক্সট্রীম এর কোয়ালিটি ধরে রেখেছে ? নাকি এটি আগের চাইতে নিন্মমানের ? এটা কি আগের হিরো হোন্ডার মতই নির্ভরযোগ্য ? এই প্রশ্নগুলো বাকি সবার পাশাপাশি আমাদের মনেও এসেছিলো , তাই এসকল প্রশ্নের জবাব পেতে ও এই বাইকটি সম্পর্কে সকল কৌতূহল মেটাতে আমরা টীম বাইকবিডিকে নিয়ে এই বাইকটি কয়েকদিনের জন্য টেস্ট রাইড করি।
এক্সট্রীম লুক
আমরা সকলেই জানি যে আগের সিবিজেড এক্সট্রীম ছিলো হিরো হোন্ডার একটি অন্যতম আকর্ষণীয় মডেল। চলুন দেখে নেয়া যাক নতুন হিরো এক্সট্রীম এ ব্যাপারে কতটা এগিয়ে।
নতুন হিরো এক্সট্রীম এর প্রতিটি ভাঁজ , প্রতিটি পরতে রয়েছে আগের মডেলের তুলনায় ভিন্নতা। নতুন কাটিং এজ ডিজাইন বাইকটির প্রতিটি কর্নারে বুলিয়েছে ছুরির তীক্ষ্ণ পরশ। সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইনের ফুয়েল ট্যাংকের বাইরের দিকে কোন কাউলিং না থাকলেও কাউলিং এর আভা রয়েছে। এর হেডলাইটের দুপাশের টার্নিং লাইট আগের সিবিজেডের মতো নয়, বরং নতুন ডিজাইনের ফ্রন্ট ইন্ডিকেটরগুলো হেডলাইটের পাশে আলাদাভাবে রয়েছে।
বাইকটির একটি অন্যতম আকর্ষণ হলো এর “V” শেপের পার্কিং লাইট, যা অন্ধকারে অন্য গ্রহের কিছু মনে হতে পারে। এছাড়াও বাইকটিতে রয়েছে নতুন ডিজাইনের রিয়ার ভিউ মিরর বা লুকিং গ্লাস , যা বাইকটিকে দেয় অন্যান্য অনেক বাইক থেকে আনকমন একটা চেহারা। সর্বোপরি বাইকটির সামনের দিকের চেহারা অনেকটাই স্লিম ও সিম্পল , তবে আনকমন।
বাইকটির সামনে ও পেছনের চাকার মাডগার্ড সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইনের ও সাইড প্যানেলও নতুন আকৃতির । তবে আমাদের দৃষ্টি কেড়েছে অর্ধ আবৃত চেইন কভার ও বাঁকানো ও প্রশস্ত গ্র্যাব রেইল – যা সহযাত্রী খুব সহজেই শক্ত করে ধরতে পারে ও নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। হিরো এক্সট্রীমের আরেকটি বিষয় আমাদের নজর কেড়েছে , তা হলো এর সিটিং পজিশন। পাইলিয়নের জন্য সিটিং পজিশন অনেকটা সাধারন তবে আরামদায়ক হলেও রাইডারের সিটিং পজিশন অন্য সকল বাইক থেকে ভিন্ন।
এই বাইকে রাইডারের সিটটা অনেক আরামদায়ক ও রাইডারের সিটিং পজিশন অনেকটা রিল্যাক্সিং , যা রাইডারকে দ্রুত ক্লান্ত হতে বাধা দেয়। রাইডার অনেকটা রিল্যাক্স মুডে রাইড করতে পারেন।
বাইকটির পেছনের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়েছে এর ব্যাতিক্রমধর্মী এলইডি টেইল লাইট। এছাড়াও বাইকটির ফ্রন্ট ও রিয়ার – উভয় ইন্ডিকেটরই বাইকটির শরীর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এর এক্সহস্ট এর ওপরে নতুন প্রযুক্তির মাফলার দেয়া হয়েছে যা পাইলিয়নের পা কে উত্তাপ থেকে সুরক্ষা দেবে। বাইকটির আরো একটি বড় আকর্ষণ হলো এর নতুন ডিজাইনের ড্যাশবোর্ড – যা দেখতে অন্য সকল বাইকের থেকে ব্যাতিক্রম। এছাড়াও এতে রয়েছে নীল ইলুমিনেশন লাইট , যা রাতে একে পরিনত করে অন্যতম সুন্দর ড্যাশবোর্ডে ।
ফিচার
নতুন হিরো এক্সট্রীমে এমন কিছু নতুন ফিচার রয়েছে যা সেগমেন্টের বেশিরভাগ বাইকেই নেই। চলুন দেখে নেয়া যাক সেসকল ফিচার সম্পর্কে –
* বাইকটির হেডলাইট সম্পূর্ণ নতুনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে , যা অন্ধকারে অত্যান্ত সুন্দর দেখায়। * হিরো এই বাইকটির ইগনিশন সিস্টেমে একটি নতুন প্রযুক্তি ব্যাবহার করেছে যার নাম এএমআই (অ্যাডভান্সড মাইক্রোপ্রসেসর ইগনিশন সিস্টেম) * হিরো এক্সট্রীমের কন্ট্রোল প্যানেল সম্পূর্ণ নতুনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। নীল আলোসমৃদ্ধ প্রশস্ত ডিজিটাল ড্যাশবোর্ডে রয়েছে ডিজিটাল স্পীডোমিটার , অ্যানালগ আরপিএম মিটার , ফুয়েল গজ , ঘড়ি , এবং আরো অনেকগুলো লাইট , যা আপনাকে বাইকের কন্ট্রোলিং সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করে। এছাড়াও ড্যাশবোর্ডে অন্যতম দুটি ফিচার হলো সাইড স্ট্যান্ড ইন্ডিকেটর ও সার্ভিস রিমাইন্ডার লাইট । রাইডারের যাত্রাপথের বেশকিছু সমস্যা থেকে প্রতিকার পেতে এই ফিচারদুটি অনেক কার্যকর । * এই বাইকটিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সিকিউরিটি সিস্টেম রয়েছে। সাধারন সকল সিস্টেমের পাশাপাশি এতে রয়েছে ইঞ্জিন ইমমোবিলাইজার নামক একটি সিস্টেম । এতে করে আপনি যদি কোনভাবে বাইকের অরিজিনাল চাবি হারিয়ে ফেলেন , তবে আপনি ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে বাইকটি স্টার্ট করতে পারবেন না । ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে বাইকটি স্টার্ট করতে চাইলে আপনার বাইকটির সম্পূর্ণ ওয়্যারিং ও ইলেকট্রিক সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। ঠিক এই কারনেই চোরের হাতে আপনার বাইকটি খোয়া যাওয়ার ভয় কম থাকে। *হিরো এক্সট্রীম এর অন্যতম একটি ফিচার হলো, এর সিটের নিচে একটি বিল্ট ইন মোবাইল চার্জার রয়েছে। এর ফলে আপনি যেকোন সময় সেখানে আপনার ফোন চার্জ হতে দিয়ে বাইক চালাতে পারবেন , ট্যুর দিতে পারবেন। আপনার ফোনের চার্জ শেষ হওয়ার ভয় থাকবে না। এছাড়াও সেখানে বাড়তি অনেক জায়গা রয়েছে , আপনি ফোনের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন কাগজপত্র , টুলবক্স , ইত্যাদি ছোটখাট কিন্তু প্রয়োজনীয় জিনিস বহন করতে পারবেন। *হিরো এক্সট্রীমের সিটগুলো নতুন ডিজাইনের ও অত্যান্ত আরামদায়ক। রাইডার এবং পাইলিয়ন – উভয়ের জন্য সিটটি পারফেক্ট। শহরের জন্য তো বটেই , লং ট্যুরের জন্যও এটা চমৎকার । * পেছনের সাসপেনশন গ্যাস চার্জড ও প্রয়োজনের সময় ওজন ও রাস্তার ধরনের ওপর ভিত্তি করে এটাকে এডজাস্ট করা যায়। *পেছনের টেইললাইট অনেক আপডেটেড ডিজাইনের ও এলইডি বাতি সমৃদ্ধ। * হিরো এক্সট্রীমের উভয় চাকার টায়ার টিউবলেস , ও পেছনের চাকার সুইং আর্মের সাথে ভেতরে একটি মাডগার্ড লাগানো রয়েছে , এতে করে ভেতরের বিভিন্ন পার্টস কাদা-মাটি ও পানির হাত থেকে রক্ষা পায়।
শক্তিশালী ইঞ্জিন
আপনারা অনেকেই হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে হিরো এক্সট্রীমকে আমরা নতুন বাইক বলে বিশেষায়িত করছি এবং সেখানেই আপনাদের মনে বাইকটির ইঞ্জিন সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে , যে এটা কি সেই হিরো হোন্ডার মতোই ইঞ্জিন নাকি এটা নতুন কিছু ? অনেকেই হয়তো খুশি হবেন এবং অনেকেই হয়তো নিরাশ হবেন এই জেনে যে , এটা ঠিক সেই আগের ১৪৯ সিসি ফোর স্ট্রোক এয়ার কুলড ইঞ্জিন , যেটাতে ঠিক আগের মতোই সর্বোচ্চ ১৪.২ বিএইচপি শক্তি এবং ১২.৮ এনএম টর্ক রয়েছে । তবে এই ইঞ্জিনটাতে কিছুটা উন্নতমানের প্রযুক্তি যেমন এএমআই ( অ্যাডভান্সড মাইক্রোপ্রসেসর ইগনিশন সিস্টেম ) ব্যাবহার করা হয়েছে , এর ফলে এতে আগের চাইতে কিছুটা বেটার মাইলেজ লাভ করা যায় । এছাড়াও এতে স্মুথ ফুয়েল সাপ্লাই এর জন্য ভ্যাকুয়াম টাইপ কারবুরেটর ব্যাবহার করা হয়েছে। এর গিয়ার বক্সে কোনরূপ পরিবর্তন করা হয়নি , এতে সেই সম্মুখী ৫-স্পীড গিয়ারবক্সই রয়েছে।
টেস্ট রাইডের ফলাফল
আমরা জানি যে আপনারা এই বাইকটি সম্পর্কে আমাদের থেকে বিস্তারিত জানতে চান। আমরা এই রিভিউটি লেখার জন্য আগের সিবিজেড এক্সট্রীম ভালোভাবে টেস্ট রাইড দিয়েছি এবং নতুন এক্সট্রীম প্রায় এক সপ্তাহ টেস্ট করেছি ও এটা দিয়ে ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি অতিক্রম করেছি। আমরা বাইকটি সম্পর্কে সকল কিছু জানতে চাইছিলাম তাই আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্টাইলে বাইকটি রাইড করেছি এবং বাইকটির সম্পর্কে সকল তথ্য , বাইকটির বিভিন্ন পজেটিভ ও নেগেটিভ দিক সম্পর্কে জেনেছি। চলুন দেখে নেয়া যাক আমাদের প্রাপ্ত সকল তথ্যের সারাংশ –
• বাইকটির ইঞ্জিন যথেষ্ট নীরব কিন্তু শক্তিশালী , এবং কম্পনমুক্ত। • অত্যান্ত দ্রুত , স্মুথ ও শক্তিশালি এক্সেলেরেশন , যা আগের মডেলের চাইতে সর্বদিক দিয়েই বেটার।
• গিয়ার লিভারে সামান্য শক্ত ভাব রয়েছে , তবে গিয়ার বদলাতে তেমন কোন সমস্যা হয় না।
দেখুন হিরো এক্সট্রিম টপ স্পীড
• সম্পূর্ণ নতুন এবং ইঞ্জিন ফ্রি না হওয়া বাইকটি দিয়ে ১ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তায় আমরা ১১৫কিমি/ঘন্টা এর টপ স্পীড তুলতে সক্ষম হয়েছি। তবে আমাদের বিশ্বাস যে ব্রেক ইন পিরিয়ড শেষ হলে বাইকটি আরো বেশি টপ স্পীড তুলতে সক্ষম হবে।
• আমরা বাইকটিতে প্রতি লিটার ফুয়েলে প্রায় ৩৮ কিমি এর মাইলেজ পেয়েছি। তবে যেহেতু বাইকটি ব্রেক ইন পিরিয়ড পার করেনি , তাই আমাদের ধারনা ইঞ্জিন ফ্রি হলে বাইকটি ৪০কিমি/লিটার এর মতো মাইলেজ দেবে।
• হিরো এক্সট্রীম এর ক্লিপ হ্যান্ডেল হওয়া সত্ত্বেও এর কন্ট্রোলিং আমাদের কাছে চমৎকার লেগেছে। তবে সবচাইতে ভালো লেগেছে এর সিট এবং সিটিং পজিশন, যা অন্যান্য বেশিরভাগ বাইকের থেকে আলাদা এবং অত্যান্ত আরামদায়ক। এছাড়াও বাইকটির সাসপেনশনগুলো অসাধারন। প্রথম রাইড থেকেই সেগুলো অত্যান্ত ভালো পারফর্মেন্স দিয়েছে।
Also Read: হিরো বাংলাদেশে লঞ্চ করল Hero Ignitor 125 2020 IBS ভার্সন!
• যাদের উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির চাইতে বশি , তাদের জন্য বাইকটা পারফেক্ট হবে। • সামনের ও পেছনের চাকার ডিস্ক ব্রেকদুটো অসাধারন , এমনকি সেগুলো অফ-রোডেও চমৎকার পারফর্মেন্স দিয়েছে। এছাড়াও উভয় চাকার টায়ার নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট । রুক্ষ কাচা রাস্তাতেও উভয় টায়ার অসাধারন গ্রিপ দিয়েছে। • বাইকটির সাইড স্ট্যান্ড ওয়ার্নিং ফিচার আমাদের কাছে অত্যান্ত আকর্ষণীয় লেগেছে। যখনই বাইকটির সাইড স্ট্যান্ড নামানো থাকবে , তখন বাইকটি গিয়ারে স্টার্ট দেয়ার চেষ্টা করলেও স্টার্ট হবে না। সাইড স্ট্যান্ড নামানো অবস্থায় বাইকটি নিউট্রালে স্টার্ট হলেও কোনভাবে যদি বাইকটি সামনে-পেছনে নড়াচড়া করে , তবে সাথে সাথে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে। এই ফিচারটি বাইকারকে সাইড স্ট্যান্ডের ব্যাপারে সচেতন রাখবে ও সাইড স্ট্যান্ডের জন্য কোন দুর্ঘটনা ঘটাকে প্রতিহত করবে।
বাইকটির প্রচুর পজেটিভ ফিচার থাকলেও এর কয়েকটা নেগেটিভ দিকও আমাদের চোখে পড়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যে হিরো যদি এসকল দিকে আরো মনোযোগ দেয় তবে বাইকটি বাইকারদের কাছে আরো বেশি গ্রহনযোগ্যতা পাবে।
• বাইকটির কোন ইঞ্জিন কিল সুইচ নেই।
• হিরো এক্সট্রীম এর হেডলাইট এসি (AC) অপারেটেড। এর ফলে ইঞ্জিন বন্ধ থাকলে বাইকের হেডলাইট চালু হয় না। এছাড়াও বাইকের থ্রটল অনুসারে হেডলাইটের আলোর উচ্চতা বাড়ে-কমে। অন্ধকারে বাইকের গতি কমানোর সময় এই ব্যাপারটা অনেক অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে।
• বাইকটির টায়ারের উচ্চতা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে অফ-রোডে টায়ারগুলো ভালো পারফর্মেন্স দিলেও টায়ারের কম প্রশস্ততার জন্য কর্নারিং অতটা ভালো হয় না। এই সমস্যার সমাধান হতে পারে বাইকটিতে কম উচ্চতার অধিক প্রশস্ত টায়ার লাগানো।
• এক্সহস্ট এর শব্দটা ঠিক ম্যানলি নয় , অনেক নিচুলয়ের আওয়াজ । যা বাইকের সাথে বেমানান।
• ফুয়েল ট্যাংকে নতুন শেপের ডিজাইন থাকলেও তা দেখতে অনেকটা ছোট ও চিকন মনে হয়। একই কথা হেডলাইটের শেপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এবং অনেকেই এই বিষয়টা অপছন্দ করছেন।
• উচু এবং প্রশস্ত সিটের ফলে ৫’৬” এর চাইতে খাটো রাইডারদের প্রথমদিকে বাইকটি চালাতে একটু অসুবিধা বোধ হত পারে। এবং বাইকটির ওজন (১৪৬ কেজি) রাইডারকে কর্নারিং এর সময় অসুবিধায় ফেলতে পারে।
• বাইকটি ওজনদার হওয়ায় ও বাইকটির স্যাডল পজিশন উচু হওয়ার ফলে হাইস্পীড ব্রেকিং এর সময় বাইকটা কিছুটা কম স্থির থাকে।
• বাইকটির আরপিএম মিটারটি আমাদের পছন্দ হয়নি।
তো রাইডারস , এই ছিলো হিরো এক্সট্রীম নিয়ে আমাদের সকল পরীক্ষার ফলাফল। আমাদের বিশ্বাস আমাদের এই ফলাফল আপনাকে হিরো এক্সট্রীম সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে সক্ষম হয়েছে।
কি কি রঙে পাওয়া যায়?
বর্তমানে পাঁচটি ভিন্ন রঙের হিরো এক্সট্রীম শোরুমে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো হলো – কালো , রূপালি , লাল , নীল ও কমলা।
হিরো এক্সট্রীমের দাম
বাংলাদেশে হিরো এক্সট্রীমের দুটি ভার্শন রয়েছে। একটি ভার্শনের সামনের চাকায় ডিস্ক ও পেছনের চাকায় ড্রাম ব্রেক রয়েছে , ও অপর ভার্শনটতে উভয় চাকায় ডিস্ক ব্রেক রয়েছে।
হিরো এক্সট্রীম সিঙ্গেল ডিস্ক ভার্শনের মূল্য = ১,৯৭,০০০ টাকা । হিরো এক্সট্রীম ডাবল ডিস্ক ভার্শনের মূল্য = ২,১০,০০০ টাকা।
Hero Xtreme Specification
ENGINE Type Air cooled, 4 – stroke single cylinder OHC Displacement 149.2 cc Max. Power 10.6 KW (14.4 Ps) @ 8500 rpm Max. Torque 12.80 Nm @ 6500 rpm Bore x Stroke 57.3 x 57.8 mm Carburetor CV with CCVI Carburetor Controlled with Variable Ignition Starting Self Start / Kick Start Ignition AMI – Advanced Microprocessor Ignition System TRANSMISSION Clutch Multiplate wet Gear box 5 Speed constant mesh CHASSIS Type Tubular,Diamond Type SUSPENSION Front Telescopic Hydraulic Type Rear Rectangular Swing Arm with 5 step Adjustable Gas Reservoir Suspension WHEEL & TYRES Rim Size Front 18x 1.85, Alloy Wheels Rim Size Rear 18x 2.15, Alloy Wheels Tyre Size Front 80/100 x 18-47 P Tyre Size Rear 110/90 x 18-61 P Brakes Front Disc (240 mm) Brakes Rear Internal expanding shoe type (130 mm) / Optional – Disc (220 mm) ELECTRICALS Battery 12 V – 4 Ah, MF Battery Head Lamp 12V-35W/35W – Halogen Bulb – Trapezoidal Multi Reflector Type Tail / Stop Lamp 12V-0.5W/4.1W (LED lamps) Turn Signal Lamp 10 W x 4nos. [Amber Bulb, Clear Lens Multi Reflector Type] DIMENSIONS Length 2060 mm Width 765 mm Height 1145 mm Wheelbase 1325 mm Ground Clearance 145 mm WEIGHTS Kerb Weight 145 kg (Rear Brakes – Drum) / 146 kg (Rear Brakes – Disc) Fuel capacity 12.1 litre (Min) 1.5 litre (Usable reserve)
আমাদের মন্তব্য
পরিশেষে , আমরা লক্ষ করছি যে আপনারা অনেকেই হিরো এবং হোন্ডার আলাদা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ ও কৌতূহল প্রকাশ করছেন। আমাদের বিশ্বাস, হিরো মটোকর্প এখনও ঠিক আগের মতই তাদের কোয়লিটি ও সার্ভিস মেইনটেইন করছে। এবং হোন্ডার সাথে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর হিরো এক্সট্রীমই তাদের প্রথম আপডেটেড প্রোডাক্ট তাই সত্যি করে বললে , তারা নিরাশ করেনি। এটা এমন একটি বাইক, যা যেকোন ক্ষেত্রেই ব্যাবহারযোগ্য। আপনি চাইলে এটা প্রতিদিন বাসা থেকে অফিসে যাতায়াতে ব্যাবহার করতে পারেন , বা ট্যুরিং করতে পারেন। অথবা শক্তি প্রয়োজন হয় এমন যেকোন কিছুই এটা দ্বারা করতে পারেন , যতটুকু একটি বাইক দ্বারা করা সম্ভব।
হিরো শোরুম নিটোল মার্কেটিং কোম্পানি ৮৮,শহীদ তাজউদ্দীন এভিনিউ , তেজগাঁ , ঢাকা, বাংলাদেশ। ফোন – ০১৯১৯০৯৮৯৬ , ০১৭৫৫৫৭০৯৫০ ইমেইল – evannare100@gmail.com
দেখুন বাংলাদেশে হিরো মোটর সাইকেল এর সব শো রুম ঠিকানা