হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস টেস্ট রাইড রিভিউঃ টিম বাইকবিডি
This page was last updated on 03-Jul-2024 12:13pm , By Shuvo Bangla
হিরো বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজারে অন্যতম একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। কয়েক মাস আগে আমরা টিম-বাইকবিডি হিরো এক্সট্রিম বাইকটি টেষ্ট-রাইডের মাধ্যমে নিরীক্ষা করেছিলাম। আর তাতে সবাই স্বীকার করেছিল যে বাইকটি সুসমন্বিত এবং প্রাত্যহিক জীবনের কাজে দারুন উপযোগী; তবে বিশেষ কিছু একটা যাকে বলা যায় এক্স-ফ্যাক্টর, তার কমতি ছিল; আর সেটা হয়তো সেই বিশেষ এক্স-ফ্যাক্টর যা কিনা হিরো মোটরসাইকেলকে অন্য সবার কাছ থেকে আলাদা করে।
তাই আমরা যখন আমাদের টিম-বাইকবিডি টেষ্ট-রাইডের জন্য হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটিকে পেলাম তখন পর্যন্ত গুটিকয়েক তথ্যের তুলনায় আমাদের কাছে বহু প্রশ্ন জমা হয়ে ছিল। আসুন দেখা যাক আজকের হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস টেস্ট রাইড রিভিউ তে আমাদের সামনে জমা প্রশ্নগুলোর উত্তরগুলো পওযা যায় কিনা।
Hero Xtreme Sports এর ফার্স্ট ইমপ্রেশন ভিডিও
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটি বাংলাদেশের বাজোরের জন্য এই বছরের গত ৯ই জুন উম্মুক্ত করা হয়। আমরা বাইকবিডি দাপ্তরিকভাবে নিটল নিলয় গ্রুপ ও হিরো মোটোকর্প (ভারত) উভয় প্রতিষ্ঠানের উচ্চ কর্মকর্তা দ্বারা আলাদাভাবে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। এটা আসলেই অত্যন্ত সম্মানের; আর অনুষ্ঠানটি দারুন আড়ম্বরপুর্ণ ছিল, যার অংশ হতে পেরে আমরাও অত্যন্ত আনন্দিত।
অনুষ্ঠানটিতে হিরো মোটোকর্প এর উচ্চ কর্মকর্তারা আমাদের জানিযেছেন যে, তারা বিশ্বাস করেন যে হিরো এক্সট্রিম বাইকটি একটি এক্সট্রিম ব্র্যান্ড এর দর্শন অনুসরন করে ডিজাইন করেছেন যেখানে সাধারন চালকদের প্রয়োজন আর পছন্দের বিষয়গুলোতে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছিল। তাঁরা আরো জানান যে হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটি হবে সম্পুর্ন নতুন একটি বাইক যাতে কেবলই নামে বা চেহাড়ায়-নকশায় পরিবর্তন থাকবে না। তাহলে চলুন দেখা যাক আসলে আমরা আমাদের টেষ্ট-রাইডের মাধ্যমে হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস এর আসল বৈশিষ্ট্য কতটুকু খোলসা করতে পেরেছিলাম।
ইঞ্জিন:
প্রথমত আপনি যখন হিরো এক্সট্রিম আর হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইক দুটিকে পাশাপাশি রেখে তুলনা করতে চেষ্টা করবেন তখন দেখবেন দুটি বাইকেরই চেহাড়া ও গঠনে বিস্তর তফাৎ, তবে মুল পার্থক্যটা পাবেন বাইক দুটির ইঞ্জিনে। দুটো বাইকেই রয়েছে প্রায় একই ধরনের ১৫০সিসির ইঞ্জিন, তবে হিরোর প্রকৌশলীরা এক্সট্রিম স্পোর্টস এর ইঞ্জিনে বেশ কিছু কারিগলী ফলিয়েছেন; যেমন: ইঞ্জিনের ঘূর্নণ ও কম্প্রেশন রেশিও বাড়িয়ে দিয়েছেন, যার ফলে ইঞ্জিনটি থেকে আরো ১বিএইচপি বেশি শক্তি ও ০.৭এনএম টর্ক অতিরিক্ত পাওয়া সম্ভব হয়েছে। ফলশ্রুতিতে হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস এখন ১৫.২বিএইচপি শক্তি ও ১৩.৫এনএম টর্ক উৎপন্ন করে। এখানে উল্লেখ্য যে কেবলমাত্র বাজাজ পালসার আর হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ই কেবল বাংলাদেশে আমদানীকৃত তাদের বাইকের শক্তি এরকমভাবে বাড়িয়েছিল।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে প্রচলিত এয়ার-কুলড শ্রেনীতে সবচেয়ে শক্তিশালী বাইক। এই বাইকের সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আপনার নজর কাড়বে তা হলো এর চমৎকার লুক। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যে বিষয়টি আমাদের আলোড়িত করেছে তা হলো, আপনি যখন হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস এর থ্রটল ধরে মোচড় দেবেন তখন একটি বাড়তি শক্তি অনুভব করবেন। এর ইঞ্জিনটাকে মনে হবে যেন প্রস্তুত হয়ে থাকা সসস্ত্র শিকারী, যা একদম নতুন হলেও একটু খানি তেতে উঠলেই নিশ্চিতভাবে নিজের শ্রেনীর বাকি প্রতিযোগীদের এর রিয়ার ভিউ মিররে স্থান দেবে বলা যায়। বাইকটির ইঞ্জিনে আপনি অনেকের মতো বাড়তি কোন ভালভের ছিদ্র বা কোন বাড়তি কোন স্পার্ক প্লাগ পাবেন না, তবে যা পাবেন তা হলো নিখাদ শক্তির নির্যাস; আর আপনি নিশ্চিতভাবে এটার প্রেমে পড়ে যাবেন।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস এর ইঞ্জিন যথেষ্ট পরিশীলিত, তবে আমরা ৬০০০-৭০০০আরপিএম এ কিছুটা ঝাঁকুনি পেয়েছি, যা হ্যান্ডেলবারের মাধ্যমে শরীরে অনুভুত হয়। আমাদের মনে হয় বাইকের গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-ইন পিরিয়ড পার হলে ইঞ্জিন আরো বেশী পরিশীলিত হয়ে যাবে। বাইকটির ট্রান্সমিশন তথা গিয়ার আগের তুলনায় অনেক ভালো, তবে একদম নতুন বাইক বিধায় প্রথম দিকে গিয়ার বদলে খানিকটা অস্বস্তি পেহাতে হয়েছে। তবে প্রথম সার্ভিসের পর তা অনেক আরামদায়ক হয়ে গিয়েছিল।
নির্মানশৈলী:
হিরো মোটোকর্প আমাদের আশ্বস্ত করেছিল যে হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস কেবলমাত্র নাম বদলকৃত অন্য একটি বাইক হবেনা; বরং বাস্তবে দেখা গেছে যেভাবে তারা এর ইঞ্জিনটিকে বদলে দিয়েছে সেভাবেই এর নির্মানশৈলী নিয়ে খুব নিবেদিতভাবে কাজ করেছে। এর নতুন ডিজাইনের হেডলাইটের কারনে এটাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দেখায়, আর সত্যিকার অর্থে রাতে একে আসাধারন দেখায়; যা কিনা আমাদের বলতে বাধ্য করছে যে হিরো অসাধারন কিছু কাজ করেছে বাইকটির ডিজাইন নিয়ে। নতুন এই বাইকটিতে তারা বিভক্ত সিট বসিয়েছে যেটা যথেষ্ট বিস্তৃত ও আরামদায়কও বটে।
হিরো তাদের এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটির ইঞ্জিনের সামনের দিকে একটি স্পোর্টি ডিজাইনের মাড-গার্ড লাগিয়েছে। হিরো এক্সট্রিম বাইকটির ফুয়েল ট্যাংকের চারিদিকে কিছু না থাকায় বাইকটি কিছুটা ছোট দেখাতো; হয়তো সেজন্যই হিরো তাদের এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটির ফুয়েল ট্যাংকের দুপাশে বাড়তি এরোডায়নামিক ডিজাইন করেছে, যা এর ধারালো শ্রী বৃদ্ধির সাথে সাথে এরোডায়নামিক বৈশিষ্ট অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া তারা পুরাতন হিরো গ্ল্যামার বাইকটির মতো বডি-ফিটিং ইন্ডিকেটর না রেখে তা আলাদা করে দিয়েছে যেটা আসলেই বাইকটির ডিজাইনের সাথে যথার্থভাবে মানানসই। আর বাইকটির পাশের বডি কভার সহ সার্বিক ডিজাইনই তারা নতুনভাবে করেছে এমনকি একজষ্ট পাইপের ডিজাইনটাও যথেষ্ট স্পোর্টি, আর উপোরোন্ত পেছনের নতুন ডিজাইনের বাড়তি মাড-গার্ড ও ধারালো ডিজাইনের টেইল ল্যাম্প সহ পুরো পেছন প্যানেল নতুনভাবে ডিজাইন করা যা বাইকটির আবেদন অনেকগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটির সামনে আপিনি পাবেন টেলিস্কপিক সাসপেনশন আর পেছনে আছে পাঁচ ধাপে সমন্বয় করার মতো গ্যাস চার্জড ডাবল সাসপেনশন। আমাদের ভালো লেগেছে যে হিরোর অন্য সকল বাইকের মতোই এর সাসপেনশন বেশ ভালোভাবেই পথে চলার ঝাঁকুনি সয়ে ফেলে, আর তা চালকের অনুভবের মাত্রা খুবেই কম। তবে আমরা মনে করি হিরো যদি এর স্পোর্টস ট্যাগের সাথে মিলিয়ে এতে মনো সাসপেনশন আর সামনে আরো খানিকটা ভারী সাসপেনশন লাগাতো তবে তা আরো অসাধারন হতো, কেননা বাংলাদেশের রাস্তা-ঘাট দিনকে-দিন আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটির কন্ট্রোল-প্যানেল দেখে আমরা বেশ হতাশই হয়েছি যেটা মুলত এর পুরাতন মডেল সিবিজেড একট্রিম হতে ধার করে নেয়া। এক্ষত্রে বরং হিরো এক্সট্রিম এর কন্ট্রোল-প্যানেলটা লাগানো হলে তা খুবই উপযুক্ত হতো। এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটির চাবির খোপটা এর ঘাড়ের সাথে ঠিক স্পিড-মিটারের পেছনে বসানো, যেটা দৃশ্যত যথেষ্ট হতাশাজনক। এটা ডানদিকের ইন্ডিকেটরের সাথে বসানো ফলে আপনি যখন রাতে কখনো চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে বাইকে চড়ে বসে চাবির খোপটা খুঁজতে যাবেন তখন তা খুঁজে পেতে বেশ সমস্যায় পড়বেন।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটিতে কোন ইঞ্জিন কিল সুইচ নেই। ফলে যখন আপনি কোন জ্যামে পড়বেন তখন বার বার তেল বাচানোর জন্য এর ঘাড়ে বসানো চাবি দিয়ে ইঞ্জিন অন-অফ করতে হবে যেটা সত্যিকার অর্থে যথেষ্ট বিরক্তিজনক। এছাড়াও স্পিড-মিটার আর হেডলাইটের মাঝে বেশ বড় ফাকা জায়গা রয়েছে যেটা দেখতে যথেষ্ট বেখাপ্পা, আর বৃষ্টিতে চালানোর সময় অথবা বাইক ধোয়ার সময় সহজেই তা দিয়ে পানি ভেতরে প্রবেশ করে যেতে পারে, যেটা হয়তো এর ইলেকটিক সংযোগ সমূহেও বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
বাইকটির স্পিড-মিটারটি নীল আলোয় আলোকিত আর কন্ট্রোল প্যানেলটি অনেক কিছুই নির্দেশ করে যেটা আপনাকে বাইকটি নিয়ন্ত্রনে অনেক সাহায্য করবে। আর এর সাইড ষ্ট্যান্ড ইন্ডিকেটরটি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত একটি চমৎকার ফিচার।
এছাড়াও বাইকটির হ্যান্ডেলবারটি ক্লিপ-অন টাইপের যেটা দেখতে বেশ সুন্দর, তবে উচ্চ আরপিএম এ এতে কিছুটা ঝাঁকি অনুভুত হয়।
পারফর্মেন্সঃ
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটি টেষ্ট-রাইডে চালানোর পর আমাদের টেষ্ট-রাইডারের মুখ থেকে প্রথমত একটি শব্দ বের হয়েছিল যে ওয়াও! আপনি আসলেই এর শক্তিটা অনুভব করবেন; আর যে বিশেষ বিষয়ের জন্য হিরো বাইকগুলো পরিচিত তা হচ্ছে এর রেডি-পিকআপ। আর এর RAW পাওয়ার ডেলিভারী আপনাকে অভিভুত করে দেবে। হ্যাঁ এতে আপনি কিছুটা ঝাঁকুনি পাবেন, তবে একজন রাইডার হিসেবে এর অনেক গুনের মাঝে কিছু সমস্যা আপনি ভুলেই যাবেন। আর আপনি নিশ্চয়ই জানেন এই পৃথিবীর কোন কিছুই তো আর ১০০ভাগ নিখুঁত হতে পারেনা।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটির নিয়ন্ত্রনযোগ্যতা আগের মডেলটির চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাইকটি দিয়ে আপনি কর্নারগুলোতে আরো গতি ধরে রাখতে পারবেন, আর সেই সাথে ব্রেকও চমৎকার স্বমন্বিতভাবে কাজ করে। আমরা আমাদের চালনার সময়গুলোতে উচ্চগতিতে চালানোর সময় ব্রেকিং এ পেছনের চাকায় বা সামনে কোন ধরনের স্কিডিং বা স্লাইডিং পাইনি বরং এর ডিস্ক ব্রেকগুলো চমৎকার কর্মদক্ষতা দেখিয়েছে।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটিতে আমরা সর্বোচ্চ ১২২কিমি/ঘন্টা গতি তুলেছিলাম। এখানে উল্লেখ্য যে আমরা যখন টপ-স্পিড টেষ্ট করি তখনও বাইকটি এর ব্রেক-ইন পিরিয়ড পার করেনি, কেবলমাত্র ৬০০কিমি পার করেছিল। আর আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে কোন বাইকের ১২০০-১৫০০ কিমি পার না হওয়া পর্যন্ত এর আসল পারফরমেন্স পাওয়া যায় না।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটি আপনি শহর বা গ্রামের যেকোন ধরনের রাস্তাতে তো বটেই মহাসড়কেও খুব ভালোভাবে চালাতে পারবেন। বাইকটির শক্তির প্রবাহ বেশ ভালোই কিন্তু তার সবটুকু আপনি সবসময় ব্যবহার করতে পারবেননা। রাজপথে আপনি হয়তো কেবল এর অর্ধেকটা ব্যাবহার করবেন, তবে মহাসড়কে চাইলেই আপনি আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এর সবটুকু ব্যবহার করে সবাইকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারবেন।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটিতে আমরা মাইলেজ হিসেব করে দেখেছি ঢাকা সিটিতে প্রায় ৩২-৩৫কিমি/লিটার। এখানে আবারো উল্লেখ করতে হয় যে বাইকটির ব্রেক-ইন পিরিয়ড পার হলে এই সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে। এছাড়া আমরা আমাদের নিরীক্ষাকালে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে এর মাইলেজ পেয়েছি ৪০কিমি/লিটার এর উপরে।
আরো কিছু বিষয়:
আমরা টিম-বাইকবিডি পূর্বে হিরো এক্সট্রিম বাইকটি নিরীক্ষা করেছি আর মাত্র হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটি দুই-সপ্তাহে প্রায় ৭০০কিমি এর মতো চালিয়ে দেখলাম। আমরা এই বাইটির কিছু বিষয়ের সাথে আগে থেকেই কিছুটা পরিচিত বিধায়, কিছু ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে নিরীক্ষনের জন্য আমরা বিভিন্ন রাইডারদের বাইকটি দিয়েছিলাম চালিয়ে দেখতে। আর সকলের অনুভুতি, বিবেচনা ও মন্তব্য মিলিয়ে আমরা পক্ষে বিপক্ষে বেশ কিছু মূল্যায়ন পেয়েছি। চলুন দেখা যাক বিষয়গুলো বিস্তারিত ভাবে।
- বাইটির ইঞ্জিন আসলেই অসাধারন! হ্যাঁ এতে আপনি হয়তো কিছুটা ঝাঁকুনি বা একটু ভারী গর্জন পেতে পারেন, তবে যখন আপনি এর থ্রটল ধরে মোচড় দেবেন আমরা নিশ্চিত যে আপনি ওসবকিছুই ভুলে যাবেন।
- ইন্সট্যান্ট এক্সিলারেশন, স্বমন্বিত পাওয়ার ডেলিভারী এর অন্যতম গুনগত বৈশিষ্ট্য; আর সেটা সম্ভব হয়েছে এর প্রথম তিনটি গিয়ারের স্বমন্বয়ের কারনে।
- গিয়ার কিছুটা সংবেদনশীল তবে তা ব্যবহারে কোন ঝামেলা পোহাতে হয়না।
- আমরা এক কিমি পথে সর্বোচ্চ ১১৭কিমি/ঘন্টা গতি তুলেছিলাম এবং এক কিমি পর ১২২কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত তুলে ধরে রেখেছিলাম, আর তা ছিল এর ব্রেক-ইন পিরিয়ড সময়ে। তাই আশা করা যায় এর পর বাইকটি আরো বেশী গতি দিতে পারবে।
- বাইকটির ক্লিপ-অন হ্যান্ডেলবার টি বেশ ভালো তবে আরো একটু ভালো হতে পারতো। আর সিটিং পজিশন ও যথেষ্ট ভালো এবং তা চালক ও যাত্রীর জন্য বেশ আরামদায়ক।
- সাসপেনশন বাংলাদেশের রাস্তায় চালানোর জন্য যথেষ্ট ভালো ও আরামদায়ক।
- বাইকটির সামনের পেছনের দুটো চাকাতেই ডিস্ক ব্রেক লাগানো। আর ব্রেকগুলো ভালো-খারাপ যেকোন রাস্তাতেই অত্যন্ত কাযকর। আর এর টায়ারও অত্যন্তভালো যা কিনা খুব ভালোভাবে রাস্তা আঁকড়ে ধরে, আর কোনভাবেই চাকা পিছলে যেতে দেয়না।
- টায়ার গুলো অফ-রোডে চালানোর জন্যও যথেষ্ট উপযোগী আর তা টিউবলেস হওয়ায় যখন তখন যেখানে সেখানে লিক হয়ে ঝামেলায় পড়ার সুযোগ নেই।
- বাইকটিতে একটি সাইড-স্ট্যান্ড ইন্ডিকেটর রয়েছে যেটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটা বৈশিষ্ট্য। যেমন বাইকটির সাইড-স্ট্যান্ড নিচে নামানো থাকলে গিয়ার দেওয়া অবস্থায় কখনোই এর ইঞ্জিন স্টার্ট নেবেনা। আবার বাইকটির সাইড-স্ট্যান্ড নিচে নামানো অবস্থায় ইঞ্জিন নিউট্রাল থাকলে ইঞ্জিন স্টার্ট নেবে তবে গিয়ার নেবে না। আবার চালানোর সময় দুর্ঘটনাবশত এর সাইড-স্ট্যান্ড নিচে নেমে গেলে এর ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে।
- বাইকটির কর্নারিং ক্ষমতাও চমৎকার। আমাদের কর্নারিং-পাগল রাইডারও আনন্দের সাথে জানিয়েছে যে বাইকটির কর্নারিং ক্ষমতা এর আগের মডেলের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।
বন্ধুরা আমরা হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস এর ভালো দিকগুলোর সাথে সাথে এর কিছু সমস্যাও তালিকাবদ্ধ করেছি যেগুলো হিরো ভবিষ্যতে উন্নয়নের জন্য বিশেষ বিবেচনায় রাখতে পারে। আর আমরা মনে করি হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটি আরো বেশী গ্রহণযোগ্যতা পবে যদি এই বিষয়গুলো যত্নসহকারে বিবেচনা করা হয়। চলুন দেখা যাক বিষয়গুলো।
- বাইকটিতে কোন ইঞ্জিন কিল সুইচ নেই।
- বাইকটির বিদ্যুতায়ন এসি অপারেটেড, তাই ইঞ্জিন বন্ধ করলে সাথে সাথে এর হেডল্যাম্পও বন্ধ হয়ে যায়। আর এসি কারেন্ট এর জন্য এর থ্রটলের অবস্থানের সাথে সাথে বাতির আলোরও কম-বেশী হয়, যা ধীর গতিতে কোন অন্ধকার স্থানে ঘোরা বা চলাচলে অত্যন্ত ঝামেলাপূর্ন।
- বাইকটির উচু স্যাডল-হাইট আর বিস্তৃত সিটের কারনে ৫’৬” এর খাটো চালকের জন্য প্রথম দিকে নিয়ন্ত্রন করা কঠিন। আর ১৪৭ কেজির ভারী বাইক বিষয়টিকে আরো জটিল করে তোলে যখন রাইডার কোন ঢালু জায়গায় রাইড করেন বা দাড়ান।
- বাইকটির স্পিড-মিটার দেখতে সুন্দর নয়।
- বাইকটির সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয় হচ্ছে এর চাবির খোপ যেটা এর ঘাড়ে বসানো। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মানুষেরা বাইকের চাবির রিং এ আরো অন্যান্য চাবি রাখেন; তাই এই বাইকের চালক যদি তেমন কেউ হন তবে তার বাইকের হ্যান্ডেল ঘোরানোর সাথে সাথে ঝুলন্ত চাবিগুলো বাইকের বডি ও ট্যাংকের সাথে ঘষা খাবে আর রং নষ্ট করবে।
- বাইকটির স্পিড-মিটারের চারদিকে অনেকটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে যেখান দিয়ে পানি-ময়লা প্রবেশ করতে পারে, আর এটা দেখতেও বেশ দৃষ্টিকটু। এই জায়গাটুকু নতুনভাবে ডিজাইন করা দরকার।
- বাইকটিতে ফুল চেইন বক্সের চেয়ে হাফ চেইন কভার ভালো মানাতো।
- আমরা প্রায়ই বাইকটিতে ৬ষ্ট গিয়ারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি।
- কন্ট্রোল প্যানেলে একটা গিয়ার ইন্ডিকেটর থাকা জরুরী ছিল।
- বাইকটির ওজন আরো কম হলে ভালো হতো্।
- বাইকটির পেছনে মনো-সাসপেনশন বাইকটিকে আরো অনেক বেশী সক্ষম করে তুলতো তা নিশ্চিতভাবে বলা যায।
পরিশেষ:
তো বন্ধুরা আমাদের মনে হয় হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটি একটি চমৎকার বাইক। বাজারের বেশ কিছু অসাধারন জাপানী ব্র্যান্ডের বাইকের তুলনায় এর কিছু ক্ষেত্রে খানিকটা কমতি থাকলেও আপনি একে পছন্দ না করে পারবেন না। কেননা হিরো এই বাইকটির মাধ্যমে এর পুরাতন হাংক আর সিবিজেড একট্রিম এর একট্রিম স্বাদ আর পুরোনো্ ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনেছে। আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সার্বিক বিচারে সামান্য কিছু সমস্যা ছাড়া বাইকটি আসলেই খেলুড়ে, আনন্দদায়ক আর যথেস্ট উত্তেজনাপূর্ণ নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস এর কারিগরী বিবরন:
Engine:
Engine Type | Air cooled, 4-stroke single cylinder OHC, Vertical Engine |
Displacement | 149.2 CC |
Maximum Power | 15.2 BHP @8500 RPM |
Maximum Torque | 13.50 NM @ 7000 RPM |
Bore x Stroke | 57.3mm x 57.8 mm |
Compression Ratio | 10 : 1 |
Carburetor | CV Type with Carburetor Controlled Variable Ignition |
Transmission & Chassis:
Clutch | Multi-plate wet clutch |
Gear box | 5 Speed constant mesh |
Chassis Type | Tubular, Diamond Type |
Suspension:
Front | Telescopic Hydraulic Type |
Rear | Rectangular Swing Arm with 5 step Adjustable Gas Reservoir Suspension |
Wheels & Tires:
Rim | Front 18 x 1.85, Rear 18 x 2.15, Both Alloy Rim |
Tire | Front 80 / 100 x 18 – 47 P, Rear 110 / 90 x 18 – 61 P, Both Tubeless |
Electricals:
Battery | 12 V – 4 Ah MF Battery |
Head Lamp | 12 V – 35W / 35W – Halogen bulb, Trapezoidal MFR |
Tail/Stop Lamp | 12 V – 0.5 W / 4.1 W (LED Lamps) |
Turn Signal Lamp | 12 V – 10 W (Amber Bulb) x 4 nos (MFR Clear Lens) |
Lamp | 12 V – Twin Lamp – LED |
Dimension:
Length x Width x Height | 2100 mm x 780 mm x 1080 mm |
Wheelbase | 1325 mm |
Ground Clearance | 145 mm |
Kerb Weight | 146 Kg (Brakes – FR/RR -> Disc/Drum) 147 Kg (Brakes – FR/RR -> Disc/Disc) |
Max Loading | 130 Kg |
- হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাংলাদেশের বাজারে সিঙ্গেল ডিস্ক ও ডাবল ডিস্ক দুটি ধরনে পাওয়া যায়।
- সিঙ্গেল ডিস্ক ব্রেকের এক্সট্রিম স্পোর্টস পাবেন ২,০৯,০০০.০০ টাকায়, আর ডাবল ডিস্ক ব্রেকের এক্সট্রিম স্পোর্টস পাবেন ২,২৫,০০০.০০ টাকায়।
- এছাড়াও রঙের ক্ষেত্রে লাল, কমলা, কালো, আর লাল-কালো ব্লেন্ড কালারে হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাজারে পাবেন।
Hero Hotline No: 01919 098966, 01755 570950 *সকল ধরনের মূল্য ও কারিগরী বৈশিষ্ট্যসমূহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন, নীতি, বিপনন কৌশল অনুযায়ী সময়ের সাথে পরিবর্তীত হতে পারে। বাইক-বিডি এধরনের পরিবর্তনের জন্য কোনভাবেই দায়ী নয়।
Test Rider: Wasif Anowar, Mithun Mridha, Suvro Sen