হাইওয়ে রাইডিং টিপস - ১৫ টি বিষয় যা জানা দরকার। বাইকবিডি
This page was last updated on 04-Jul-2024 12:09pm , By Shuvo Bangla
হাইওয়ে রাইডিং টিপস - ১৫ টি বিষয় যা জানা দরকার।
বাইকে ভ্রমন এখন একটি ঝোঁকে পরিণত হয়েছে। একটি নিরাপদ ভ্রমনের জন্য আমি “হাইওয়ে রাইডিং এর জন্য ১৫ টি টিপস্, যা একজন সত্যিকার বাইক চালকের জানা উচিত” লেখাটি তৈরি করেছি। যদিও বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ কিন্তু এখানের মানুষ হাসতে এবং মজা করতে পছন্দ করে। আর এই সংস্কৃতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, আবহাওয়া ও সময় অনুসারে পরিবর্তিত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রত্যেক মোটরসাইকেল মালিকেরা চায় তার প্রিয় বাইকটি নিয়ে হাইওয়ে রাইডিং করতে। যুবকেরা হাইওয়ে রাইডিং এর সময় দ্রুত গতিতে বাইক চালাতে পচ্ছন্দ করে।
প্রত্যেক ঈদে, নতুন বছর উদযাপনে অথবা ছুটিতে বাইকাররা চেষ্টা করে তাদের গ্রামে কিংবা কিছু পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে যেতে। স্বাধীনতা, রাস্তার অবস্থা এবং গতিময়তার কারণে বাংলাদেশে সবচেয়ে ভালো এবং পছন্দের বাহন হল বাইক। আমি একজন বাইকারকে চিনি,যে প্রতি ঈদে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত প্রায় ৫০০ কিমিঃ পথ তার বাজাজ পালসার ১৫০(Bajaj Pulsar 150) বাইকটি করে যায়।
এই লেখাটি দীর্ঘ পথের চালকদের জন্য। একটি নিরাপদ ভ্রমণের জন্য মোটরসাইকেলে দীর্ঘ পথ ভ্রমণের এই টিপস্ গুলো আপনাকে সম্ভবত সাহায্য করবে।
১) অনেকে মনে করেন সার্ভিসিং এর প্রয়োজনীয়তা নেই কিন্তু আমি সার্ভিসিং করার পরামর্শ দেব। আপনার দেখায় আপনি অনেক সমস্যা দেখতে পাবেন না কিন্ত একজন ভালো মেকানিকের চোখ অনেক সমস্যা দেখতে পাবে। তাই সঠিকভাবে আপনার বাইকটি সার্ভিস এবং পরিষ্কার করুন। যদি ইঞ্জিন অয়েল অনেকদিন ব্যবহৃত হয় তাহলে তা পরিবর্তন করুন। এটি আপনার ইঞ্জিনকে একটি ভালো কার্যক্ষমতা দিবে। দেখুন বাইকের সিস্টেম, চেইন, কার্বুরেটর, চাকার চাপ এবং বৈদ্যুতিক অংশ।
২) আপনার ব্যাগে সবসময় একটি আরমি গিয়ার সুইচ রাখুন।
৩) আপনার ব্যাগটি বাইকের পিছনে বসার জায়গায় অথবা পাশের বক্সে বেঁধে রাখার চেষ্টা করুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভর্তি বড় ব্যাগ নিবেন না এবং এটি আপনার কাঁধে নিবেন না। যদি এটি করেন, চালানোর এক ঘণ্টা পর এটি আপনাকে ব্যাথায় কাতর করে দিবে। বরং এটি পিছনে বসার স্থানে বেঁধে রাখুন।
৪) ভালো একটি হেলমেট ব্যবহার করুন। ভ্রমনের আগের দিন হেলমেটটি সূর্যের নিচে রাখুন। খেয়াল করুন হেলমেটটির ভেতরের দিকে বেশী সূর্যালোক পাচ্ছে কিনা। এটি আপনার হেলমেটের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস এবং দূর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করবে।
৫) পোলারাইজড রোঁদচশমা ব্যবহারের চেষ্টা করুন। একটি ভালো রোঁদচশমা প্রখর সূর্যালোকে আপনাকে ভালো দৃষ্টিশক্তি দিতে সাহায্য করবে এবং আপনার চোখকে সবসময় বালি, মাটি, পোকামাকড় হতে রক্ষা করবে। রোঁদচশমাটি আপনার চোখের উপযুক্ত এবং চোখের নিচের অংশ ঢেকে দিতে পারে এমন হওয়া উচিত। আপনি একটি ভালো রোঁদচশমা পেতে পারেন ১৫০০ টাকা বা এর চেয়ে বেশী দামে।
৬) গরমে আমি কলার ছাড়া সম্পূর্ণ হাতার উজ্জ্বল রঙের টি শার্ট এবং জিন্স শ্রেয় মনে করব। কলার ছাড়া কারণ বাতাসে কলারটি আপনার পিছনের দিকে ভিতরে ঝুলে পরবে এবং ৭০+ গতিতে যাওয়ার পর কলারের কারণে আপনার কাঁধে বারবার গরম অনুভূত হবে। যেটি আপনার চালানোতে সমস্যা করবে। রাস্তার সব বালিও আপনার কলারটির মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হবে। সম্পূর্ণ হাতার উজ্জ্বল রঙের টি শার্ট কারণ এটি রাস্তার অন্য চালকের দৃষ্টি আকর্ষণে সাহায্য করবে ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে আর আপনার হাতকে রোঁদে পোড়া হতে রক্ষা করবে। এজন্য অধিকাংশ বাইক চালকেরা দেখবেন তাদের হাতের আঙ্গুল থেকে বাহু পর্যন্ত অংশটি কালো কিন্তু এর পরের অংশের রঙ কিছুটা ভিন্ন। শীতকালে বাইক চালকের একটি চামড়ার জ্যাকেট অথবা শরীরের সাথে শক্তভাবে লাগানো এমন যেকোন গরম জামা পরা উচিত।
৭) দীর্ঘ ভ্রমণে সবসময় বুট অথবা স্নিকার পরুন। একজোড়া ভালো মানের দস্তানা আপনাকে বাইকের হাতলটি ভালভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে আস্থা দেবে। এটি আপনি তখনই বুঝতে পারবেন যখন এটি পরে আপনি বাইক চালাবেন।
৮) রাস্তায় যতটুকু পারেন খাবার পানি কিংবা ডাবের পানি পানের চেষ্টা করুন। একটি চকলেট যেমন ক্যাডব্যারি সাথে নিন এবং এটি চিবাতে থাকুন। এটি আপনাকে শক্তি দিবে। টিফিনের জন্য আপনার খাবার তালিকায় একটি কলা যোগ করুন। এটি আপনার স্টেমিনা ধরে রাখতে এবং আপনার গলা পরিস্কারে সাহায্য করবে। আপনি অনেক ধরনের রক্ষাকারী জিনিস নিতে পারেন কিন্তু বাংলাদেশে আপনি ধূলিকণা বন্ধ করতে পারবেন না। কলা আপনার গলায় আটকে যাওয়া সব ধুলোবালি শুষে নিবে এবং তা পরিষ্কার করবে।
৯) সাথে রাখুন প্রাথমিক চিকিৎসার বক্স এবং এতে দীর্ঘ ভ্রমণের সমস্যা সম্পর্কিত কিছু প্রয়োজনীয় সাধারণ ঔষধ রাখুন। যদি আপনি শীতকালে ভ্রমণ করেন তাহলে ঠাণ্ডায় লাগে এমন কিছু ঔষধ রাখুন।
১০) যখনই আপনি একটা বিরতি নেবেন চাকার বাতাসের চাপ দেখুন। দ্রুত গতির কারণে চাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় যার ফলে চাকা কিছু বাতাসের চাপ হারায়। তাই বাতাসের চাপটি পরীক্ষা করে দেখুন এবং যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তা পূরণ করে নিন। চাকার বাতাসের সঠিক চাপ আপনাকে ভালো মাইলেজ এবং গতি পেতে সাহায্য করবে।
১১) সবসময় সকালের দিকে জ্বালানি নেওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সময় সকালের দিকে আপনি সঠিক পরিমাণ জ্বালানি পাবেন যতটুকুর জন্য টাকা দিচ্ছেন। গরম আবহওয়ায় জ্বালানি কিছুটা ওজন হারায়।
১২) ভ্রমণ শুরুর চেষ্টা করুন খুব সকালে। কারণ সকালের খালি রাস্তা এবং ঠাণ্ডা আবহাওয়া আপনাকে ভালো আনন্দ দিবে।
১৩) একটি ঠাণ্ডা মাথা আপনাকে রাস্তায় ভালো সিদ্ধান্ত তৈরী করতে সাহায্য করবে। তাই ভ্রমণের পূর্বে যে করে হোক একবার গোসল করুন।
১৪) রাস্তাটি আপনার কাছে অপরিচিত হতে পারে কিন্তু চেষ্টা করুন রাস্তাটি সম্পর্কে যতুটুকু সম্ভব জেনে নিতে। সবচেয়ে ভালো হয় এই পথে আগে ভ্রমণ করছে এমন কাউকে জিজ্ঞেস করলে। সে আপনাকে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা বলতে পারবেন। চেষ্টা করুন সবসময় রাস্তাটির সাম্প্রতিক হালনাগাদ তথ্য রাখতে। যদি আপনি আপনার গন্তব্যস্থলের যেকোন স্থানীয় মানুষের সাহায্য পান তাহলে তার সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করুন। একজন বিশ্বস্থ স্থানীয় লোক আপনাকে সবচেয়ে বেশী সাহায্য করতে পারবে। সাথে একটি মানচিএ রাখুন।
১৫) একটি ছোট পানির বোতল নিন। জরুরী নাম্বারসহ একটি ফোনবুক নিন। আপনার মানিব্যাগে ৫০ টাকার মোবাইল রিচার্জ কার্ড রাখুন। যখন আমি পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণে গিয়েছিলাম এটি আমাকে খুব ভুগিয়েছিল।
পুরো পৃথিবীর বাইক চালকেরা দীর্ঘ পথ ভ্রমণের জন্য মোটরসাইকেল বেছে নিচ্ছে। বাংলাদেশের রাস্তার নিরাপত্তাও দিন দিন বাড়ছে যার ফলে বাহনটি বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। আশা করি হাইওয়ে রাইডিং টিপস আপনাকে সফলভাবে একটি দীর্ঘ ভ্রমণ সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে।