মোটরসাইকেলে নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা (পর্ব-১)
This page was last updated on 08-Jul-2024 08:33am , By Saleh Bangla
স্বপ্ন কাশ্মীর যাব!!! মানুষ স্বপ্ন নিয়েই বেচে থাকে। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষেরও জীবনে একটা স্বপ্ন সেটা হলো এই ছোট্ট একটা জীবনে একবার হলেও কাশ্মীর যাব। তেমনটি স্বপ্ন ছিল আমরও সেই ছোট বেলার যখন থেকেই বড়দের মুখে কাশ্মীরের নাম শুনেছি। কাশ্মীর কে নাকি ভূস্বর্গ বলা হয়ে থাকে। যাই হোক সেই স্বপ্ন ২০১৬ এর মার্চ মাসেই পূরণ করা হয়ে গেছে কিন্তু বাকি ছিল কাশ্মীরের অনেকটা। ওখানকার এক কাশ্মীরির কাছে শুনলাম যে কাশ্মীর প্রত্যেক ঋতুতেই পরিবর্তন হয় একেক সময় কাশ্মীরের একেক স্থান একেক রকম।তখন ঠিক করে নিয়ে ছিলাম আবার কাশ্মীর যাব আমি। অফিস শেষে বাসায় এসে শুধু ইউটিউব আর গুগল ম্যাপ নিয়েই রাতের বেশি সময় কেটে যেতে কাশ্মীর কিভাবে যাওয়া যায় তা দেখে। ইউটিউবে শুধু দেখতাম ইউরোপ আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া আরও অন্যান্য দেশ দেখে মানুষ গাড়ি, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল নিয়ে কি সুন্দর বিদেশির মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন আমিও ইন্টারনেটের উপর সুনামির মত ঝড় চালায় দেই। অনেক ইনফো পাই কিন্তু তার সবই ছিল থিউরি। কারন বাংলাদেশ থেকে কেউ মোটরসাইকেল অথবা গাড়ি নিয়ে দেশের বাইরে গেছে এই রকম কোন নজির দেখি নাই।
মোটরসাইকেলে নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা (পর্ব-১)
আসলে তখন জানতামই না বাংলাদেশের দুজন মানুষ কাশ্মীর এর খারদুংলা পাস জয় করে এসেছেন। ২০১৬ এর নভেম্বর এ ফেসবুকে হটাৎ দেখি মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের পেইজে একটা রিপোর্ট। আব্দুল মোমেন নামের এক লোক নাকি বাংলাদেশ থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে প্রথম বাঙালী হিসাবে জাম্মু-কাশ্মীর প্রদেশের লাদাখের খারদুংলা পাস(১৮৩৮০ ফুট) জয় করেছেন। পরে জানতে পারলাম সাথে আবু সাইদ নামের আরেকজনও ছিলেন। সাথে সাথে ফেইসবুকে নাম লিখে খুজা শুরু করি মোমেন ভাইটা কে। তারপর তাকে স্বাগত জানাই পরবর্তিতে তার কাছ থেকে যা জানলাম আমার সেই থিউরির সাথে সবই মিলে যাচ্ছে।তখনতো খুশিতে আত্নহারা আমি। যেদিন মোমেন ভাইইয়ের সাথে দেখা হলো সেদিন শুনলাম তার সেই করুন ইতিহাস। আমাকে উনি বলে দিল প্রস্তুতি নেওয়ার আগে যেন আমি দুই তিন জোড়া জুতা ভাল মানের জুতা কিনি। তখন আমার বুঝা হয়ে গেছে যে ব্যাপারটা কি হতে পারে।২০১৭ এর ফেব্রুয়ারি থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি যে আগস্ট/সেপ্টেম্বর এর দিকে কাশ্মীর যাব। এপ্রিলের শেষের দিকে হটাৎ মোমেন ভাইয়ের সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করি তখন তিনি বলেন যে উনার কারনেট এর মেয়াদ আগষ্টে শেষ হয়ে যাবে গেলে এর আগেই যেতে হবে।
মনে মনে বলি ভাই আমারতো এখনও লাইসেন্সই নাই কেমনে কি ? তার উপর বাইকের কোন কাগজপত্র ও নাই সব কেস খাইয়া এখন ট্রাফিক পুলিশদের অফিসে শীতের শুকনো পাতার মত উড়তেছে। মোমেন ভাইকে বললাম ভাই আমার কিছু সময় লাগবে এই পেপারস গুলি রেডি করার জন্য তারপর অফিসে ছুটির জন্য দরখাস্ত দিব।তড়িঘড়ি করে লাইসেন্স করতে দেই এবং তন্ময় ভাইকে বলি ব্যাপারটা উনি বললেন টেনশন নিয়েন না জামান ভাই আছে উনি ব্যবস্থা করে দিবে। তারপর সেই জামান ভাই এর কাছে দৌড়ে যাই জামান ভাইইয়ের কাছে।জামান ভাইকে বললাম ভাই আমি এই সময়ে যেতে চাচ্ছি কিন্তু আমার পেপারস তো রেডি নাই কেস খাইছি তাও অনেক দিন এখন মামলা হয়ে গেছে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে গেছে কোর্ট থেকে কেস তুলা লাগবে। উনি উনার ডিউটির ফাকে আমার সেই কাজটি করে দিয়েছিলেন।হটাৎ করে মোমেন ভাই ফোনে বলল ওমর যাবে আমাদের সাথে কাশ্মীর। ওমরের দরখাস্তটাতে তুমি হেল্প কইরো। অনেক প্রশ্ন করলাম উনি কথার মাজে বলে ফেলল ঝামেলা একটাই ওমরের পাসপোর্ট নাই করতে দিবে। হায়রে খোদা একি শুনি।
তড়িঘড়ি করে অফিসের ফাকে একদিন বি আর টি এ আরেক দিন হেড অফিসে দৌড়াইতে থাকি। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই সব গুছিয়ে তারপর ২১ মে ২০১৭ তে বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সুপারিশ এ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান স্যার এর পিএস স্যার এর কাছে আমাদের তিন জনের দরখাস্থ দিয়ে রিসিভ করাই।আর পিএস স্যার যেতে আমাকে রেফার করলেন শুল্ক বন্ড ও রপ্তানী শাখার দ্বিতীয় সচিব মুহাম্মদ ইমতিয়াজ হাসান এর কাছে উনার কাছে দরখাস্থ গুলি নিয়ে গেলাম প্রথমেই উনি একটা লুক যে দিলেন মনে হলো যে উনার অফিসে আমি আসসি কেন।মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার রেফারেন্স এ গেছি দেখে তেমন কিছু বলতে পারলেন না আবার বলার বাদ ও রাখলেন নাহ “সরকারী চাকুরী করেন ভালো কথা এত ঘুরাঘুরি করার দরকারটা কি, আর ঘুরবেন যখন মোটরসাইকেল এ কেন এমনি ঘুরে আসেন” । পেপারস সব দেখে আমাকে বললেন আপনিতো সরকারী চাকুরী করেন আপনার ছুটির জিও কোথায় আমি বললাম স্যার ছুটির জন্য অফিসে দরখাস্ত দিয়েছি ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। উনি বললেন আগে জিও নিয়ে আসেন।
আবারও স্যারকে অনুরোধ করলাম যে স্যার আপনারা আমাদের দরখাস্ত গুলির প্রক্রিয়া শুরু করে দিলে তত দিনে আমার অফিস থেকে জিও হয়ে যাবে আর জিও ছাড়া তো আমি যেতেও পারবো না আপনারা অনুমতি দিন আর না দিন। তিনি তার কথায় অনড়। মোমেন ভাইকে বললাম ভাইয়া এই কথা বলে। মোমেন ভাই কয় ভাইরে আমি গত বছর কুমিল্লা থেকে প্রতি সপ্তাহেই আসতাম আমাকে তো যাচ্ছে তাই বলছে।আমি কই ভাই আমারেও কইছে কিন্তু বেশি কিছু কইতে পারে নাই। আর আমি কিছু কইতে পারি নাই সরকারি চাকুরি করি দেইখা অন্যতায় । দিন যায় আর রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় কাশ্মীর এর কথা চিন্তা করে। যেতে পারব তো। এক দিকে টাকা পয়সা জোগাড় করা অন্য দিকে তো কাগজপত্র আছেই। মোমেন ভাইয়ের অফিস কুমিল্লাতে তাই উনি আমাদের মত হুটহাট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যেতে পারেন না।একদিন অবশ্য ওমর গিয়েছিল। ওমরকেও অনেক কথা শুনিয়ে দিয়েছিল। আর আমি যেতে পারছিলাম না কারন আমার তো জিও হয় নি এখনও হবে কি করে আমাদের একটা জিও হওয়া আর কয়েকটা দেশের ভিসা পাওয়া যে সমান কথা। প্রথমে আমার বসকে বুঝিয়ে বলতেই ২-৩ দিন চলে গেলো কারণ উনি টেবিল এ কম আর ফিল্ড এ বেশি থাকতে হয়। আর যতক্ষণ টেবিলে থাকেন লোকজন হুমরি খেয়ে উনার সাতে সাক্ষাতের জন্য ।
অনেক ধৈর্য্য ধরে বসকে আগে রাজি করালাম বললাম স্যার আপনি যদি রাত বলেন তো রাত দিন বললে দিন, শুক্রবার শনিবারও অফিস করব তাও স্যার ছুটী লাগবেই আমার। বস ও আমার সেই সুযোগ টাই নিয়েছিল। শূক্রবার শনিবার অফিসে দেকে আনত।সচিব মহোদয় মিটিং করবে টেকনিক্যাল লোক নাই আমাকে দেকে আনত আমারও যেতে হত কারণ আমার ছুটি লাগবেই। রোজার সময় মনে হয় হাতে গনা কয়েকদিন বাসায় ইফতার করছি। বন্ধু বান্ধব আরও অনেকেই বলে আরে ভাই সরকারী চাকুরি ছুটি চাইলেই পাওয়া যায়। এই তার নমুনা ভাই।এই ধাপ তো পার করলাম এবার আমার বস আমার ছুটির দরখাস্থ তার উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে ফরওয়ার্ড করবে। এভাবে আরও দুইজন বড় কর্তার দপ্তর ঘুরে শেষ মেষ গেল অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কাছে। প্রধান প্রকৌশলী মহোদয়ের নির্দেশ কোন বহিঃ বাংলাদেশ ছুটি মঞ্জুর হবে না শুধু মাত্র হজ্জ আর চিকিৎসা ব্যতিত কিন্তু তারপরও কিভাবে যেন উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের বহিঃ গমন ছুটি পাস হয়ে যায়।শুধু প্রেসার কুকারের প্রেসার আমাদের উপরই। কথায় আছে মরার উপর খারার ঘা সেই দশা আর কি। ছুটি পাস তো দূরের কথা এপ্লিকেশন ফাইলে পুট আপই দেওয়া হয় না প্রধান প্রকৌশলী আর অতিঃ প্রধান প্রকৌশলীর নির্দেশ ব্যতিত। এ কেমন বিচার।
পরে সেই দপ্তরের এক সিনিয়র কর্মকর্তার কাছে থেকে পরামর্শ পেলাম যে আমি যেন অতিঃ প্রধান প্রকৌশলীর সাতে দেখা করি এবং তাকে কনভিন্স করি। অনেক প্রস্তুতি নিয়ে গেলাম প্রায় তিন সাড়ে তিন ঘন্টা বসে থাকার পর তার পিএ বলে আজকে স্যার এর সাথে সাক্ষাত সম্ভব হবে না। দাঁত কিড়মিড় করে হাসি মুখে বলি তাহলে কালকে কখন আসবো ? তিনি জবাবে বললেন সকাল সাড়ে দশটার দিকে আসো।পরদিন অফিসে খুব জরুরী কাজ ফেলে আসার কোন উপাই নাই যদিও আমার অফিস থেকে হেড অফিস এর দূরত্ব দশ মিনিটের হাটার পথ মাত্র। আসতে আসতে বারোটা বেজে গেলো। ততক্ষণে স্যার এর রুম এ অনেক নামি দামি ঠিকাদারদের সিরিয়াল জমে গেছে চোখের সামনে একটা আড়াই কোটি টাকার কাজের ফাইল ছিল সেইটা দেখেই বুঝতে পারলাম যে আজকেও মনে হয় হবে নাহ। সে দিন ও দেখা হয় নি।এভাবে অনেকদিন যাবার পর পিএ সাহেব আমাকে দেখে করুনা করে আমার নাম এ একটা স্লিপ লিখে স্যার এর রুমে পাঠালেন। স্যার একটু পরেই কলিংবেল টিপে পিয়ন কে দিয়ে আমাকে ভিতরে যেতে বললেন।
আমি গিয়ে স্যারকে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি। স্যার আমার কথা শুনে মনে হচ্ছিল যেন আমি ঠাকুর মার বুড়ি উনাকে আমি রুপকথার আজগবি গল্প শুনাতে গিয়েছি। সব শুনে বললেন মোটরসাইকেল এ বিদেশ যাবা তাও আবার কাশ্মীর মানুষ তো এমনিই যাইতে পারে না।তোমার ছুটি আমি পাস করবো না প্রধান প্রকৌশলী মহোদয় করবেন তুমি উনার সাথে দেখা কর দেখো স্যার কি বলে। আসলে আমার চাকুরী জীবনে এই একটা জিনিস শিখা হয়ে গেছে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মুখে কখনই আমি না শুনি নাই উনারা খুবই চতুর, না করেনই না কিন্তু এমন পথ অবলম্বন করতে বলবেন যেটা করতে করতে আপনার আর ধৈর্যের বাধ থাকবে না।যাই হোক আমি পরবর্তিতে চীফ স্যার এর সাথে সাক্ষাত করি সেই একই ভাবে কয়েকদিন ঘুরপাক খাওয়ার পর দেখা পাই। মজার ব্যপার হলো চীফ স্যার ও আমকে না করেন নাই উনি বলছেন আচ্ছা যাও আমি দেখব।এখন প্রশ্ন হলো যে চীফ স্যার যে দেখবেন দেখতে হলে তো আমার এপ্লিকেশন খানা উনার টেবিলে যাওয়া লাগবে। উনাদের তাতক্ষনিক হুকুম ছাড়া সেকশন এর কেউ এপ্লিকেশন ফাইলে পুট আপ দেওয়ার সাহস রাখেন না। তাহলে কিভাবে উনি দেখবেন।পরে শুনলাম যে আমার ছুটি হবে না কারন উনারা না করেন না। আমিও নাছোড়বান্দা এই কথা এসে অতিঃ প্রধান প্রকৌশলীকে বললাম স্যার বললেন যে ঠিক আছে তুমি তোমার এপ্লিকেশন পাঠাও। কিন্তু উনি উনার পিএ কে কিছু বললেন না সেকশন এ গিয়ে বললাম স্যার বলছে এপ্লিকেশন পাঠাইতে সেকশন থিকা কয় আমাদের কাউকে বলে নাই তো পিএ সাহেব কেউ বলে নাই। স্যার না বললে কেউ ফাইল ধরেই না।
কি আর করা আরও কয়েকদিন গেলে আবার গেলাম তখন আমার এই নাছোড়বান্দা গিড়ি দেখে পিএ কে দেকে ততক্ষণাত আমার ফাইল নিয়ে যেতে বললেন। ব্যস এপ্রুভ করে দিলেন কিন্তু এখনো বাকি আছে ভাই চীফ স্যার যদি না দেই তাহলে তো আর হলো না। অবশেষে চীফ স্যার ও এপ্প্রুভ করে দিয়েছিলেন কিন্তু জিও এর চিঠি হাতে পেতে আরও সময় লাগবে।খুশি আমি কিন্তু এর মধ্যে মোমেন ভাই আর ওমর ভাই এর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে থেকে অনুমতি নিয়ে উনারা ট্যুরে চলেও গেছেন।আর আমি উনাদের পিক দেখি আর হা হুতাশ করি। যাই হোক যখন আমার জিও হাতে পেলাম এবার বুকে সাহস হলো যে এবার আমার অফিস আমকে ছুটি দিসে এবার ঠেকাবে কে। গেলাম জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে। দ্বিতীয় সচিব ইমতিয়াজ হাসান উনার সাথে দেখা করি।উনি বললেন আমাদের মেম্বার স্যার এ এফ এম শাহরিয়ার মোল্লা (শুল্ক বন্ড রপ্তানী ও আইটি) উনি নাকি এখন আর কারনেট এর ফাইল দিতে মানা করেছেন আমি বলি আপনি তো তখন বললেন যে জিও নিয়ে আসতে আর আমরা এক সাথে তিন জন এপ্লিকেশন করছি বাকি দুই জনকে তো পারমিশন দিয়ে দিছেন তাহলে এখন আমার বেলায় কেন এই কথা।
তখন উনি আমাকে অনেক নয় ছয় বুঝ দিলেন। বুঝ ঠান্ডা মাথায় শুনলাম ঠিকই মনের মধ্যে তো তীব্র ঝড় চলতেছে। তারপর প্রথম সচিব, চেয়ারম্যান স্যার এর পিএস সবার সাথেই দেখা করি আবার সবাই পজেটিভ কিন্তু কাজ হচ্ছে নাহ। চেয়ারম্যান স্যার এর পিএস উনি বললেন মেম্বার স্যার এর সাথে দেখা করতে। আমি নিজেও সরকারী চাকুরী করি চাকুরির বয়স ৬ বছর হলো।এই পর্যন্ত এই রকম বদ মেজাজী কর্মকর্তা আমি দেখি নাই যদিও উনার কথা মোমেন ভাইয়ের কাছে অনেক শুনছি(নেগেটিভ)। তারপরও মনে হচ্ছিল যে মোমেন ভাই আর ওমরের এপ্লিকেশন যখন পাস করছে আমারটাও করার কথা কারন আমার তো জিও আছে আমি সরকারী চাকুরি করি।তারপর হানা দেই সেই কুক্ষ্যাত মোল্লা স্যারের দপ্তরে। উনার দপ্তরের পিএ বলে কি ব্যপারে যখনই বললাম যে কারনেট এর ফাইল তখনই কয় হবে না। আমি কই হোক না হোক দেখা করতে দিন। সেই দিন ঘন্টা তিনেক বসে থেকে দেখা করতে পারি নাই। তারপরের দিন আবার গেলাম। যাওয়ার পর গিয়ে পরিচয় দিয়ে বললাম স্যার আমার একটা এপ্লিকেশন ছিল কারনেট এর আমরা তিন জন এপ্লিকেশন করেছিলাম এক সাথে ইমতিয়াজ স্যার যানেন বিষয়টি উনি আমকে বলেছিলেন জিও নিয়ে আসতে। আমি স্যার জিও নিয়ে আসসি।
মোল্লা স্যারের বক্তব্য ছিল “ আই ডোন্ট গিভ আ ডেম এবাউট ইউওর জিও” । ভাগ্যবসত ইমতিয়াজ হাসার উনি সামনেই বসা ছিল উনাকে জিজ্ঞেস করল যে আগের দুইটা কি দেওয়া হয়েছে কিনা। ইমতিয়াজ উনি বললেন জি স্যার দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তখন আমকে বললেন যে আচ্ছা আমি দেখতেছি। আমি রুম থেকে বের হতে না হতেই ইমতিয়াজ স্যার বাইরে এসে কারনেট এর ফাইল নিয়ে গেলেন ভিতরে। তখন মনে হলো আমারটা মনে হয় দিয়ে দিবে খুব খুশি খুশি লাগতেছিল। পরে শুনলাম যে আমার ফাইলে নেগেটিভ কমেন্টস লিখে চেয়ারম্যান স্যার এর কাছে ফরওয়ার্ড করছে। পরে অবশ্য আমি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেই চিঠির জবাব পাই আমার যাওয়ার দুই দিন আগে। এখন প্রশ্ন হলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমাকে পার্মিশন দেই নি তাহলে আমি গেলাম কিভাবে? সেই দিন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এসে একটা ক্লাস টুয়ের বাচ্চার মত কান্না কাটি করছি।
রাতের ঘুম নাই আমার এত দিনের স্বপ্ন এত দিনের চেষ্টা সব গেল আমার। এর সাথে অর সাথে সবার সাথেই আলাপ করি ভাই আপনার পরিচিত কোন মন্ত্রী অথবা সচিব আছে ? অনেক মন্ত্রণালয়ের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার রুমের বাইরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেছি শুধু ২ মিনিট তাদের সাক্ষাত পাওয়ার জন্য। মোমেন ভাইকে তখন জানালাম তিনি আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে। “মাহি হাল ছেড়োনা হবে তুমি পারবা” । আলামগীর ভাইরে নক দিলাম। আলামগীর ভাই রোজার ঈদের আগে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের সহযোগিতায় বাংলাদেশের ট্যুরিজমকে প্রমোট করতে উনি আর দিপালী আপা ওয়েষ্ট বেঙ্গল গিয়েছিলেন। উনাকে নক দেই উনাকে জানাই উনিও একি ভাবে আমাকে সান্তনা ও অনুপ্রেরনা দিয়েছেন।
অবশেষে অর্থ মন্ত্রনালয়ের বাড়ান্দায় বাড়ান্দায় দৌড়া দৌড়ি শুরু করি। ইন্টারনাল রিসোর্স ডিভিশন এর যুগ্ম সচিব পারভীন ম্যাডাম এর কাছে গেলাম শুনছি উনি নাকি খুব ভাল। উনাকে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি। উনি শুনার পর ইমতিয়াজ হাসান কে ফোন করে উনার পরিচয় দিলেন তারপর বললেন তোমরা কি কারনেট এর পারমিশন দিচ্ছ? অপার থেকে অনেক আম পাতা জাম পাতা বুঝ আসা শুরু করল, ম্যাডাম বলেন তোমাদের ব্যাপার এই রকম কনফ্লিক্টিং কেন বাণিজ্য মন্ত্রণাল্যের আইনে আছে আর তোমরা দিচ্ছ না এই রকম কেন? তখন জবাব এলো যে শাহরিয়ার মোল্লা মেম্বার স্যার নাকি দেই না। উনি তখন বললেন তুমি যাবা কোন দিক দিয়ে আমি বলি ম্যাডাম বুড়িমাড়ি দিয়ে। তখন তিনি রংপুরের কমিশনারকে ফোন করেন তাকে বলেন আমার কথা। কমিশনার শুনে বলে যে ম্যাডাম উনাকে বলেন যে আমার এখানে উনার মোটরসাইকেল রেখে ভারত, কাশ্মীর, নেপাল, ভূটান ঘুরে আসতে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে মোটর সাইকেলের কিচ্ছু হবে না আমার লোকজন দেখে রাখবে। ম্যাডামের উত্তর ছিল উনি মোটরসাইকেল ছাড়া যাবেন না মোটোরসাইকেল সহ যাবেন কি করতে হবে সেইটা বলেন সব শুনে বললেন যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটা অনাপত্তি অথবা অনুমতি এনে দিলেই হবে। সচিবালয়ে কাজ করার সুবাদে মুটামুটি অনেক অফিসারদেরকেই আমি চিনি তারাও আমাকে খুব স্নেহ করেন। কিন্তু আমার ব্যাপারটা তো ছোট খাটও বেপার না যে যে কেউ পারবে মন্ত্রী না হয়ে সচিব পাস করবে অন্য কারও এখতিয়ার নাই।
অবশেষে এক বন্ধুর কথা মনে পরে গেলো তার দুলা ভাই এক সময় মন্ত্রী মহোদয়ের এপিএস ছিলেন সেই সুবাদে উনাকে সবাই চিনেন। মন্ত্রী মহোদয়ের দপ্তরে আমাকে যেতে বললেন এপ্লিকেশন নিয়ে। উনি ফোন করে দিলেন। মন্ত্রী মহোদয়ের এপিএস উনাকে এপ্লিকেশন দেখালাম আর বললাম যে রংপুরের কমিশনার স্যার বলছেন যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পারমিশন লাগবে। তখন তিনি সচিব(সুরক্ষা ও সেবা) মহোদয়ের দপ্তরে পাঠালেন এবং ফোন করে দিলেন। সেখানে যাওয়ার পর তারা বলে এই কাজ তো এখানে হয় না। এর আগে কখনো হই নাই। আমি বললাম যে আপনি রিসিভ করেন সচিব মহোদয় দেখে যদি না দেয় না দিবে আগে আপনি রিসিভ করেন। অবশেষে রিসিভ হলো। তারপর ফাইল উপর থেকে নিচে নামতে শুরু করল আর আমি প্রতিদিন দুই তিন বার করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পায়চাড়ী করতাম আমার ফাইলের গতি বিধি লক্ষ্য করার জন্য। যুগ্ম সচিব স্যার মার্ক করলেন উপ-সচিব(বহিঃ গমন-২) কে। কিন্তু সেই দপ্তরে ফাইল নিয়ে যাওয়ার পর কেউ রিসিভ করে না বলে এইটা আমাদের কাজ না। ঐদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব শাখাতে গেলাম একে একে কেউ রিসিভ করে না।
অবশেষে সেই ফাইল ফেরত দিলাম যুগ্ম-সচিব স্যার এর কাছে এবং যানতে চাওয়া হলো যে স্যার কি করব এখন ? স্যার খুব রাগান্নিত হয়ে বলে এবং মার্ক করে দিলেন আমি নিতে বলছি নিবে ফেরত দিছে কেন? পরে ফারজানা জাফরীন উপ-সচিব ম্যাডাম এর শাখাতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফাইল রিসিভ করেন। পরের দিন ম্যাডাম এর সাথে দেখা করে ম্যাডামকে বিস্তারিত বলার পর ম্যাডাম ফাইল ফাইলে নোট দিয়ে দেওয়ার জন্য এও কে তাগিদ দেন। তারপর দিন গুনা শুরু করি কবে পাব সেই কাংক্ষিত চিঠি। চিঠি যেদিন পাই হাতে সে দিন চিঠি দেখে খটকা লাগে চিঠি দেওয়ার কথা কাস্টমসকে দিল অতিঃ মহাপুলিশ পরিদর্শককে? পরে দুইদিন পর আমাকে রাজারবাগের এসবি অফিস থেকে এস পি এবং এ এস পি স্যার ফোন দিয়ে পরদিন পেপারস নিয়ে দেখা করতে বললেন। এস পি মিজানুর রহমান স্যার উনার দপ্তরে যেতেই কর্তব্যরত কয়েকজন পুলিশ আমাকে জিজ্ঞেস করলো আপনি কি স্যারের কোন আত্মীয়? আপনার সাথে স্যারের অনেক মিল আছে। শুনে মনে মনে খুশি হলাম যে যাক এবার মনে হয় ভালো কিছু হবে। স্যার সব দেখে পেপারস ফটোকপি করার জন্য নির্দেশ দিলেন পিয়নকে আর আমার ফাইল নিয়ে আসার জন্য তাগিদ দিলেন ততক্ষণাৎ অতিঃ মহাপুলিশ পরিদর্শক স্যার এর ফোন ফোনে মিজানুর রহমান স্যার বলছেন যে হ্যা মোটরসাইকেল ওয়ালা আমার সামনেই আছে উনার পেপারস সব ঠিক ঠাক আছে স্যার উনি যেতে পারবে। কোন সমস্যা নাই। আরও অনেক পজেটিভ কথা বলে দিলেন। শুনে খুব খুশি লাগতেছিল।
সব কিছু মোটামুটী রেডি ইচ্ছে ছিলো যে রহিঙ্গাদের ত্রাণ দিয়ে এসেই দৌড় দিব কিন্তু ইঞ্জিনের অবস্থা ভালো না সাদা ধুয়া মারতেছিল মানে ইঞ্জিনের পিষ্টন উইক। ইঞ্জিনের পিষ্টন সিলিন্ডার সেট চেঞ্জ করে ফেলি আর অফিস করে এসে ব্রেকিং তারাতারি কমপ্লিট করার জন্য হাতিরঝিলে দৌড় দেই প্রতিদিন। দুই দিন সারারাত চালিয়েছি কারন রাতের বেলায় রাস্তা ফ্রি থাকে। অফিসে ঝামেলা চলতেছে আমাকে বদলি করবে। আরও অনেক ইতিহাস তো ভয়ে আছি কবে আমার ছুটি কেনসেল করে দেয়। তাড়া হুরা করে নভেম্বর এর ২৭ তারিখ অর্ধাঙ্গীনিকে ফেলে একাই রওনা দিয়ে দিলাম। রাতের বেলায় রওনা দিব। আর যাওয়ার আগে থেকেই আবু সাইদ ভাই বলতে ছিল আমার সাথে উনি যাবেন। আমি মানা করলাম যে ভাই শুধু শুধু বর্ডার পর্যন্ত গিয়ে কি লাভ। পরে রাতে রওনা দিব দেখে উনাকে অনুরোধ করলাম যে দিনের আলো ফোটার আগ পর্যন্ত আমাকে এগিয়ে দিতে। কাশ্মীর ট্যুরে যাব তাও আবার এই রকম ট্যুর সবাই যাওয়ার আগের দিন আমার বাসার কাছে এসে দেখা করে যাচ্ছে ওমর ভাই এসে ওয়াটার পট দিয়ে গেলেন, আবু সাইদ ভাই খেজুর আর মধু দিয়ে গেলেন, জুনায়েদ খয়েরুল ভাইয়ের কাছ থেকে স্লিপিং ব্যাগ টেন্ট, শাওন ভাই ডলার দিয়ে গেল, খুব ভাল লাগছিল সবার রেস্পন্স দেখে। একটা জিনিশ বাদ পরে গেছে বাংলাদেশের পতাকা কোথাও পাচ্ছি নাহ।
আমার বাসায় একটা ছিল কিন্তু সেটা খুজে পাচ্ছি না অবশেষে বাপ্পিকে বললাম বাপ্পি রাত একটার দিকে এসে সেই পতাকা দিয়ে যায়। ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে বাসা থেকে বিদায় নিব বাবা মার চোখ দুটো ছল ছল করছে। তাকানো যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে আমি যেন দেশের জন্য যুদ্ধ্ করতে যাচ্ছি। যাই হোক রাতে বের হব তাই আর ঘুম হই নি। ঘুম আসসিলো না আসলে। পরে সবার সাথে বিধায় নিয়ে বের হয়ে পরি। আবু সাইদ ভাই আমার বাসার নিচে এলেন। পরে যাওয়ার আগে হাওডিতে আলামগির ভাই ও দিপালী আপু দেখা করতে এসেছিলেন রাত সাড়ে ৩টার সময়। বিদায় দিয়ে ছলছি তো চলছি। আশুলিয়ার রাস্তায় জ্যাম হবে দেখে গাজিপুরের রাস্তায় ধুখে যাই। অত্তেরী রাস্তা তো পুরাই অফ রোড। এই যে শুরু হলো সেই এলেঙ্গা পর্যন্ত খয়েরুল হক ভাইয়ের সেই লাল টুকটূক স্লিপিং ব্যাগ টা ঝাকির চোটে কোথায় খুলে পরে গেছে টের পাই নি যখন টের পাই তখন অনেক দূর চলে এসেছি আমরা। এলেঙ্গা আসার পর রাস্তা ভালো। একটা হোটেলে নাস্তা সেরে নিলাম তখন বাজে ৭টা আবু সাইদ ভাইকে সেখানে বিদায় জানাই এবং ধন্যবাদ জানাই আমার জন্য এই রকম পথে এতদূর আসার জন্য।
তারপর একা চলতে শুরুকরি কাশ্মীর এর উদ্দেশ্যে। যমুনা সেতু খুব আরামে মনের আনন্দে পার করলাম সিরাজগঞ্জ হাতিকুমুল মোড়ের পর রাস্তা শুরু হলো । আর না বলি সেই কথা। রংপুর পর্যন্ত মনে হয় ৪-৫ কিলোমিটার একটানা ফ্রেশ রোড পাই নাই। দুপুর হয়ে গেল। রংপুরের প্রচন্ড জ্যাম এই জ্যাম ঠেলে গেলাম রংপুরের কমিশনার এর অফিসে। সেখানে কমিশনার স্যার এর সাথ দেখা করলাম উনি বললেন যে আমাদেরকে তো এসবি থেকে কোন চিঠি দেই নি। ততক্ষণাত ফোন দেই এ এস পি ম্যাডামকে উনি বলল আপনি বর্ডারে চলে যান ওখানে ইন্সপেক্টরের সাথে যোগাযোগ করুন উনাকে বলা আছে। সাথে সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে চলে যাই বুড়িমাড়ি বর্ডারে তখন ৫টা ৩৩মিনিট। আমার মোটরসাইকেল দেখেই দুইজন পুলিশ চলে এলো বলে তারাতারি আসেন। ইন্সপেক্টরের রুমে গেলাম পেপারস দিলাম আর পাসপোর্ট দিলাম। উনি ইমিগ্রেশনের সব প্রক্রিয়া খুব দ্রুত সম্পন্ন করে ছেড়ে দিলেন। আমার কারনেটের পেপারস নিয়ে ওখানের একজন স্যার স্যার বলতে বলতে হাটা দিল। বলে স্যার আমার সাথে আসেন। বর্ডার গার্ড হা করে তাকায় আছে।
কিছু বলার সাহস পাচ্ছে নাহ মনে করতেছে আমি পুলিশ অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেউ। পরে বাংলাদেশ ভারত বর্ডারের কাছে বাংলাদেশ সাইডে আমার মোটরসাইকেল রাখি সেখানে রাজস্ব কর্মকর্তা কারনেট দেখে আমার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পত্র দেখেও বলে যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমতি কোথায়? আমি বলি এইটাই অনুমতি। উনি তখন কি করবে বুঝতে না পাইরা বুড়িমাড়ী বর্ডারের দায়িত্বে থাকা কাস্টমসের কমিশনারকে ফোন দিলেন বলেন স্যার একজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে আসসে মোটোরসাইকেল নিয়ে ইন্ডিয়া যাবেন কারনেট আসে সাথে। কমিশনার আমাকে তার রুমে ডেকে পাঠালেন। যাওয়ার পর আমার পেপারস দেখে উনি বললেন যে আপনাকে কে অনুমতি দিসে চিঠি দেখালাম তারপর আমাকে ফেরত আসতে দেখে ইমিগ্রেশনের ইন্সপেক্টর কমিশনার এর রুমে চলে আসে। তখন কমিশনার বলে এইভাবে তো যাওয়া যাবে না আমি বললাম স্যার তাহলে কিভাবে যাওয়া যাবে বলেন?
উনি উত্তর দিল আমাদেরকে তো চিঠি দেই নাই। আমি বলি স্যার আপনাদের চিঠি দিয়েছে নাকি দেয় নি সেইটা তো স্যার আমার বিষয় না। আপনার যদি চিঠির সত্বতা যাচাই করার থাকে অতিঃ মহাপুলিশ পরিদর্শক স্যারকে ফোন্ দেন অথবা ল্যান্ড অ্যান্ড সী পোর্টের ইন চার্জ এস পি স্যার মিজানুর রহমান স্যারকে ফোন দেন দেখেন কি বলে। তারপর বলে এইভাবে বাইক নিয়ে যাওয়া যাবে না আইনে নাই। আমি বলি স্যার আইনে আছে আপনি জানেন না তাহলে। তারপর তাকে একে একে বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের সেই রপ্তানি নীতি ২০১৫-২০১৮ এর ২.৬.৪ এর অনুচ্ছেদ দেখায় দেখাই তাকে আব্দুল মোমেন, ওমর ফারুক, আলামগীর ভাইকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ইস্যু করা সেই সব চিঠি পত্র এবং রপ্তানি নীতির ২.৬.৪ এর ধারাটি খুব গুরুত্ব দিয়ে পরার জন্য অনুরোধ করি তাকে। তখন আমি বলি স্যার আইনতো সবার জন্যই সমান তাই না? অবশেষে তিনি বলেন আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু বর্ডার তো এখন বন্ধ হয়ে যাবে তারাহুরা করার দরকার নেই আপনি কালকে সকালে আস্তে ধীরেই যান। সেই রাতও আমি ঘুমাই নাই। অনেক নিদ্রাবিহীন রাত কাটিয়েছি কাশ্মীর যাব এই ভেবে আর না হয় আরেকটা রাত কাটাইলাম কি যায় আসে তাতে।
সকাল সকাল গোসল করে বাসা থেকে দেওয়া পিঠা আর একটু মধু খেয়ে নিলাম ব্যাগট্যাগ নিয়ে চলে যায় বর্ডারে আমাদের সাইডে বলল কমিশনার এখনও আসেন নাই উনি আসলে তারপর আপনাকে যেতে দিব। অবশেষে সাড়ে ১১টার দিকে ভারতের মাটিতে আমার মোটরসাইকেল তথা ঢাকা মেট্রো-ল এর চাকার ছাপ পড়ার সাথে সাথেই জানতে পারলাম এই বর্ডার দিয়ে শুধু বাংলাদেশ থেকে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যাতায়াত করে। শুনে নিজেকে ভি আই পি ভি আই পি লাগতেছিল। অবশেষে স্বপ্ন পূরন হতে যাচ্ছে কাশ্মীর যাবার। মোটরসাইকেলে কাশ্মীর ভ্রমন পর্ব-১ এর সমাপ্তি এখানেই। পরবর্তি পর্বের জন্য দয়া করে অপেক্ষা করুন। সবাই ভালো থাকুন।
লিখেছেনঃ সাজেদুর রহমান মাহি