ভয়ংকর সুন্দর (দ্য রাঙামাটি রাইড) ভ্রমন অভিজ্ঞতা - লিখেছেন: রাজীব
This page was last updated on 07-Jul-2024 08:45pm , By Shuvo Bangla
Hello World. আমি রাজীব মিস্ত্রী, পেশায় DevOps ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকার বসবাস। কিছুদিন পূর্বে ঈদের ছুটিতে আমি কাপ্তাই রাঙামাটি রাইড দেই, এবং এই রাঙামাটি ভ্রমনের অভিজ্ঞতা নিয়েই আজকের গল্প।
ভয়ংকর সুন্দর (দ্য রাঙামাটি রাইড) ভ্রমন অভিজ্ঞতা
প্রথমেই বলে রাখি, আমিই প্রথম ব্যক্তি না যে বাইক নিয়ে রাঙামাটি রাইডে গিয়েছে, এবং অবশ্যই আমি শেষ ব্যক্তি না। কিন্তু এই রাইডটা আমার প্রথম পাহাড়ি এলাকায় রাইড এবং রাঙামাটিতে প্রথমবারের মতো যাওয়া। এছাড়া আমি কখনো এতটা পথ শুধু একা পাড়ি দেই নাই। (একা সবথেকে লম্বা বাইক জার্নি ছিল ঝালকাঠী-ঢাকা অথবা ঢাকা-ময়মনসিংহ) অনেক কিছুই প্রথম। যাই হোক, যাত্রা শুরু করা যাক। আমাদের মূল প্ল্যান ছিল ঈদের পরদিন খুব ভোরে ঢাকা থেকে রওনা দেবো। কিন্তু সব কাজ শেষ হওয়ায়, ঈদের দিন বিকালেই আমরা (আমি & Rasel) আমাদের যাত্রা শুরু করি। প্রথম গন্তব্য চট্টগ্রাম। ঘড়ির কাটায় ঠিক যখন সন্ধ্যা ৬:১৫, তখন আমরা কলাবাগান থেকে রওনা দেই। রাস্তা ছিল সেই রকম ফাঁকা। কাঁচপুর ব্রীজ পার হবার আগেই বৃষ্টি শুরু হয়, আর তার ১৫-২০ মিনিটের মাঝেই শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। সেখানে মিনিট ১০-১৫ এর বিরতি। আবার শুরু পথ চলা। এবার বৃষ্টির মাঝেই যাওয়া শুরু। মনের মধ্যে ভয়, চট্টগ্রাম পৌঁছাতে ১২ টার বেশি বাজলে রাস্তায় হয়তো অনেক প্যারা খাওয়া লাগতে পারে।
Lifan KP150 এর ভিডিও রিভিউ দেখতে এখানে ক্লিক করুন
রাস্তা ফাঁকা থাকায় খুব বেশি প্যারা খেতে হয় নাই। গতবার কক্সবাজার যাওয়ার আগে বাইকে MotoLed লাগাইয়া নিছিলাম। এবার ট্যুরে এই বাতিটার বেশ সুফল পেয়েছি। দিন হোক বা রাত, হাইওয়েতে আমার স্বাভাবিক গতি থাকে ৮০ - ৯০ কিঃমিঃ। এবারো তার ব্যতিক্রম হয় নাই। আমার বিশ্বাস এই অভ্যাসটাই যে কোন বাইক ট্যুরে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে নিজের বাসায় ফেরত আনে। চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাদের রাত ১১:৫০ বেজে যায়। সেই অবস্থায় হোটেল পেতে আরো আধাঘন্টা নষ্ট হয়। বাইক পার্ক করে “Hotel Miskha”-য় রুম ভাড়া নেই। সাধারন মানের বাজেট হোটেল। ১০০০ টাকা, টুইন বেড, নন-এসি। এর আগে কক্সবাজার থেকে ফেরার সময় ছিলাম হোটেল গোল্ডেন-ইন এ।
Also Read: একজন শিক্ষানবিশ বাইকারের কক্সবাজার-টেকনাফ ভ্রমন কাহিনি
ঢাকা থেকে চিটাগং যাওয়ার পথে আমরা প্রতিটা ব্রেক দেই কোন না কোন বাজারে। আর যতবারই বাজারে নামি, ততবারই একই প্রশ্নের জবাব দিতে হয়। কি যাবেন, কি থেকে আসছেন, এইটা কি (action cam), এইগুলা কি (সেফটি গার্ডস), এত দূর যাবেন ? প্রশ্নগুলো শুনলে আগে একটু বিরক্ত হতাম। এখন আর হইনা। একই উত্তর বারবার দিতে এখন ভালোই লাগে। আসলে ওনাদের সাথে কথা বলার সময় কিছু একটা দেখতে পাই ওনাদের চোখে (সমীহ টাইপ কিছু একটা)।আমরা রাঙামাটি যাবো শুনে, রাসেলের বোন-দুলাভাইও যেতে চায় আমাদের সাথে। তাদের টিকিট কাটা হয় রাতের বাসে। সকালে কাপ্তাই পৌঁছেই তাদের ফোন :P ... হোটেল পাচ্ছে না. আসলে ওনাদের নামিয়ে দেয়া হয়েছিল কাপ্তাই ড্যামের কাছে। উনাদের প্যারা দেখে আমরাও প্যারা খেতে শুরু করি।
অন্য দিকে বাইরে তুমুল ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। কিচ্ছু করার নাই রওনা দিয়ে দেই। উদ্দেশ্য হোটেল নাদিসা, রিজার্ভ বাজার, রাঙামাটি। তার আগে সকাল সকাল ফার্মেসিতে যেতে হবে। রাস্তা যেহেতু চিনি না, তাই ম্যাপ দেখতে হবে। আবার বৃষ্টি। (এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেই দুই দিন আগে “দুই চাক্কা”য় তুমুল পচানি খেয়েছি, তাই আর পুনরাবৃত্তি করলাম না )যাই হোক, পরের দুই ঘন্টার মাঝে রির্জাভ বাজার। কপাল ভালো, ওই দিন (৩ সেপ্টেম্বর) রাঙামাটিতে বৃষ্টি হয়নি। পথে অসাধারন দৃশ্য । এক দিকে পাহাড় অন্য পাশে বিশাল খাদ তারপর আবার পাহাড়ের সারি। ইহার উপর আবার হালকা মেঘের চাদর। কয়েকটা সেল্ফির জন্য একটু বিরতি। অতঃপর রিজার্ভ বাজারের উদ্দেশ্যে আবার যাওয়া শুরু।ফেরার আগ পর্যন্ত রাঙামাটির কাজকর্মগুলো বাইকার হিসাবে খুব একটা তাৎপর্যপূর্ণ ছিল না। একটা বাইক আর চারটা মানুষ … তাই ট্রলার-সিএনজিই ভরসা। তাই সেই ঘটনাবলী বর্ণনা থেকে বিরত থাকলাম।
দুই দিন দুই রাত রিজার্ভ বাজারে কাটানোর পর এবার ফেরার পালা। লেকিন পিকচার আভি বাকি হেয় মেরা দোস্ত। সাধারনত কোথাও যাওয়ার সময় আমি গুগল ম্যাপ ফলো করি। এবারও করলাম। সকাল ৬টায় আমরা ফুল গেটাপে রওনা দিলাম। ম্যাপ বাবাজী আমাদের রাস্তা দেখালো মহালছড়ি-জালিয়াপাড়া হয়ে ফেনীর ভিতর থেকে ঢাকা-চিটাগং হাইওয়ে। দূরত্ব মাত্র ৩০৩ কিলোমিটার। আমরাও এই ফাঁদে পা দিলাম আর জীবনের সবচে বড় দুঃসাহসিক ভুলটা করলাম ।মানিকছড়ি থেকে মহালছড়ি, ৩৮ কিলোমিটার রাস্তা ঠিক যেন ছবির মত। পুরাই মাক্ষন (শুধু মাখন না)। দুইদিকেই পাহাড়ের সারি। কোথাও এক দিকে আবাদি জমি। কোথাও বা এক দিকে পাহাড় আর অন্য দিকে গভীর খাঁদ। দুয়েক জায়গা আবার “সেল্ফি ব্রেক” না নিয়ে পারলাম না। খালি পেটে রওনা দেয়ার দরুন আবার একটা দোকানে চা-বিস্কুট খেতেও থেমেছি। মাত্র পাঁচ টাকায় এমন চা শেষ কবে খেয়েছি মনে করতে পারবো না ।
মহালছড়ি থেকে জালিয়াবাজার পর্যন্ত যে পথটুকুকে ম্যাপ “মোটরেবল” বলে দাবী করছিলো, তার কমপক্ষে ৩-৪ কিলো আদৌ কোনধরনের রাস্তা না, কোন এক আমলে রাস্তা ছিল, কিন্তু এখন আর নাই। ঐখানে জায়গায় জায়গায় পরে থাকা ইটের টুকরাগুলো (একটাও পূর্ণ ইট না) পূর্বে কোন এক প্রাগৈতিহাসিক রাস্তার ফসিল হিসেবে সাক্ষী দেয়। এর বাইরেও মোট ২২ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ৮-১০ কিলোমিটার রাস্তা জঘন্য রকমের ভাঙা। সেই ৩-৪ কিলোর “নো রোড”-এ অবস্থা যে এত্ত ভয়াবহ, তা যদি আমরা আগে জানতাম, মনের ভুলেও ঐমুখো হতাম না। পথে বেশ কয়েকজন পাহাড়িদের সাথে আমরা কথা বলছি। উনারা বারবার বলতে ছিলেন এই রাস্তায় আমরা যেতে পারবো না (সুস্হভাবে অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসলেও উনাদের কথা যে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি, তা পরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি)।
কিছু কিছু জায়গা এমন যেখানে আমরা কোনো চাকার দাগ খুঁজে পাই নাই (কাঁচা মাটিতে যান চলাচলের চিহ্ন তো থেকেই)। কোথাও কোথাও শুধু এক হাত জায়গা, একপাশে খাঁদ আর অন্য পাশে পাহাড়। কিভাবে যে পার হয়েছি আমি নিজেও জানি না। শুধু মাথায় কাজ করতেছি মনে যেতে হবে। যে ভয়াবহ রাস্তা পিছনে ফেলে এসেছি সেখানে আর ফেরত যেতে চাই না। কিন্তু বিধি বাম। সামনে যত যাই রাস্তা ততই খারাপ হতে থাকে। একটু পরপরই এমন রাস্তা পড়ছিলো যেখানে আমার পক্ষে একা বাইকটা উঠানো অসম্ভব ছিল। তাই মাঝে মাঝে রাসেলকেও হাত লাগাতে হয়েছে। আর রাসেলকে অনেক ধন্যবাদ পুরো পথে আমাকে মানসিক সাপোর্ট দেয়ার জন্য। এই সাপোর্ট যে কত সহায়ক, সেইটা খালি আমিই জানি। অবশেষে আমরা সিন্দুকছড়ি বাজারে পৌঁছাই।
এরপর থেকে জালিয়াপাড়া পর্যন্ত রাস্তা ভাঙা হলেও অন্ততঃপক্ষে আমরা “রাস্তার” স্বাদ পাই। সিন্দুকছড়ি বাজারে আমরা বিধ্বস্ত অবস্থায় একটা চায়ের দোকানে থামি। ইতিমধ্যে কাদায় বাইক, ব্যাগ ও আমরা দুজন … সবই একাকার। তার উপর ব্যাগ খানিকটা ছিঁড়ে গেছে + ব্যাগ শাড়িগার্ড থেকে একটু নিচেও নেমে গেছে। তাই আমি ব্যাগটা সোজা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এই বাজারে মূলত বাঙালি সেটেলারদের দোকানই আমার চোখে পড়ছে। সেখানকার লোকজন তো আমাদের দেখে অবাক। কিভাবে আমরা মহালছড়ি থেকে সিন্দুকছড়ি আসলাম। রাস্তা খারাপের কথা না হয় বাদ।
এই অঞ্চলের অনেকেই নাকি সশস্র। এবং এখানে নাকি কোন্দল লেগেই থাকে।পুরো রাস্তায় অবশ্য এসব কিছুই আমাদের চোখে পরেনি। সেই “নো রোড”-এর শুরুতেই একটা বাজার (নাম মনে নেই) আমাদের সামনে পড়েছিল, যেখানে প্রায় সবাই-ই ছিল পাহাড়ি। সেখানে দুই জন পাহাড়ি ভাইয়ের সাথে আমরা কিছুক্ষন কথাও বলেছি, তারা আমাদের রাস্তার বর্ননা দিয়েছিল (যেতে নিষেধ না করলেও বার বার বলতেছিল যেতে অনেক কষ্ট হবে, ওনাদের কথা শুনলে আজকের এই ভ্রমণ কাহিনী হয়তো এত্ত লম্বা হতো না ;) ) এছাড়াও সিন্দুকছড়ি বাজার যাবার আগপর্যন্ত রাস্তায় যার সাথেই দেখা হয়েছে ওনাদের সাথে কথা বলেছি। আর কতখানি রাস্তা খারাপ জানতে চেয়েছি। ওনাদের সাথে কথা বলার সময় কখনোই আমার কাছে আন্তরিকতার কোন অভাব মনে হয় নি। আসলে আদিপত্য বিস্তারের জন্য হানানানি আমি একদমই পছন্দ করি না। অস্তিত্ত্ব রক্ষায় মানুষ অনেক কিছুই করে। পারস্পরিক সহাবস্থানেই যে শান্তি + সমৃদ্ধি … আশাকরি কোন একদিন সৃষ্টিকর্তা আমাদের মাঝে এই বোধের উদয় করবেন।
জালিয়াপাড়া থেকে মিরসরাই পর্যন্ত রাস্তা অসাধারন। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা হাইওয়ে। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যাবার বাসগুলো এই রাস্তাই ব্যবহার করে। উঁচুনিচু, কোথাও ঢালু আবার খাড়া সাথে কিছু ব্লাইন্ড টার্ন তো আছেই। মহালছড়ি থেকে জালিয়াবাজার পর্যন্ত যে পথটুকু পাড়ি দেবার বদৌলতে আমার তখন আকাশ ছোঁয়া কনফিডেন্স ।ফেনী পৌঁছাতে পৌঁছতে প্রায় ১২:৩০ বাজে আমাদের। এরপর প্রথম কাজ বাইক ওয়াশ করা আর চেইনে লুব লাগানো। কারণ সেই “নো রোড”-এর বদৌলতে শাড়িগার্ডে বাধা ব্যাগ ও কাদায় মাখামাখি। আর বাইকের যে কি অবস্থা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশেষে ১:৩০ তে আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু। বাকি পথটুকু কোন ধরনের সমস্যা ছাড়াই পার হয়ে যাই। ফার্মগেইট পৌঁছাই ঠিক ৪:৪৫ এ। মাঝে প্রায় ১৬৫ কিলোমিটার রাস্তা আমরা পারি দেয় মাত্র দুইটা সিগারেটের ব্রেকে (নামার পরপরই সিগারেট জ্বালানো হয়েছে, সিগারেট শেষ করার সাথে সাথে আবার যাত্রা শুরু)।
ওহ এর মাঝে একটা মজার কথা শেয়ার করতে ভুলে গেছি। বাইকের হেডলাইট হিসাবে লাগানো MotoLed এর সামনে একটা ধাতব রিং পড়ানো থাকে। কোন এক কারনে কাপ্তাই থেকে রওনা দেবার আগের রাতে বাইক গ্যারেজে রাখার সময় দেখি সেই রিংটা খুলে গেছে, আর ভিতরেই পরে আছে। তখন সম্ভবত সব রিপেয়ারিং দোকান গুলোও বন্ধ হয়ে গেছিল। তাই পরদিন ওই অবস্থাতেই রওনা দেই। ফেনীর বারৈয়ার হাট এলাকায় বাইক ওয়াসের সময় যখন এই ব্যাপারটা মেকানিককে দেখতে যাবো, তখন দেখি কিভাবে যেন ওই ধাতব রিং নিজে নিজেই আবার তার আগের জায়গায় লেগে গেছে ।
হাইওয়ে সম্পর্কে ফ্রী জ্ঞান বিতরণ:
- রাস্তায় চলার পথে অবশ্যই সাবধান। ক্লাচ + সামনের ব্রেক চাপার জন্য অবশ্যই সবসময় হাতদুটোকে প্রস্তুত রাখবেন, বিশেষ করে যখন সামনে কোন বাজার, অন্যান্য যানবাহন (বিশেষ করে দুই ও তিন চাক্কা), যেকোন চতুস্পদী + দ্বিপদী প্রাণী ।
- সেইফটি গিয়ারগুলো (হেলমেট, গার্ডস) পরে লং রাইড দেবার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এগুলো পড়তে অস্বস্তি লাগে, কিন্তু আপনি যতক্ষন কোন দুর্ঘটনায় না পড়বেন, ততক্ষন পর্যন্ত এই সেইফটি গিয়ারগুলো আপনার সবথেকে বড় বন্ধুর পরিচয় দেবে ।
- সামনের মোটরযান কি করতে পারে, তার সম্পর্কে একটা ভবিষ্যৎ ধারণা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। Expect for the best, prepare for the worst
- সাধারণত ফাঁকা রাস্তায় আমি চেষ্টা করি রাস্তার মাঝ বরাবর সাদা দাগ ধরে বাইক চালাতে। এতে আমার দুইটা সুবিধা হয়। ১. রাস্তার ভালো আইডিয়া পোয়া যায়, ২. রাস্তার মাঝ বরাবর কেউ যদি আমাকে জ্বালাইতেও আসে, সেই ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সময় পাই।
- হেলমেট একটা বাইকারের মাথার মুকুট। বাইক চালনার সময় সেই মুকুটটা মাথায়ই রাখার চেষ্টা করুন।
- পাহাড়ি রাস্তায় নিজের ডান পাশের লেনের কথা ভুলে যান। তীব্র বাঁকে অবশ্যই হর্ন বাজাবেন।
- আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলে হাইওয়েতে বাসগুলার ড্রাইভার যথেষ্ট ভদ্র। তাদের কে প্রাপ্য সম্মান দিন। কেউ আগে যেতে চাইলে আগে যেতে দিন। (controversial point, let’s agree to disagree)
- ওভারটেকের জন্য পাড়াপাড়ি করবেন না, একটা ওভারটেক একটু পর করলে আপনি হয়তো কয়েক মিনিট পিছিয়ে যাবেন। কিন্তু নিজের গন্তব্যে তো পৌছাতে পারবেন ।
- যারা লুকিং গ্লাস ছাড়া বাইক চালান, অথবা বাউলি না মারতে পারলে বাথরুম ক্লিয়ার হয়না, তাদের কাছে অনুরোধ, হাইওয়ে এড়িয়ে চলবেন। আপনাদের এক্সিডেন্টের ছবি দেখলে আমাদের মতো নিরীহ বাইকাররা নিজেদের উপর কনফিডেন্স হারিয়েফেলে। (controversial point, let’s agree to disagree)
- লম্বা যাত্রার আগে অবশ্যই বাইকের চেকাপ করতে ভুলবেন না ।
- খেয়াল রাখবেন, আপনি বাইক চালাচ্ছেন, বাইক যেন কোন অবস্থাতেই আপনাকে না চালায়। হাইওয়েতে উঠলে ফাঁকা রাস্তা পেয়ে স্পীড যে কত ওঠে তার হুঁশ থাকে না। আমার নিজেরই থাকতো না। রাস্তা যতই ফাঁকা থাকুক না কেন, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া স্পীড ৮০-এর আশেপাশেই রাখা উত্তম।
- যেখানেই ভ্রমণে যাবেন, স্থানীয়দের + তাদের সংস্কৃতিকে সম্মান জানাবেন ।
Lifan KP 150 রিভিউ:
- যাওয়ার পথে আমি মাইলেজ পেয়েছি ৪৫ KMPL
- MotoLed এর আলো হাইওয়ের জন্য যথেষ্ট (৭০-৮০ KMPH)
- Aliexpress থেকে Vnetphone V6 Helmet Communicator আনিয়েছিলাম। এই রাইডে এই কমিউনিকেটরটা অনেক কাজে দিয়েছে। প্রায় সারাটা রাস্তা আমি রাসেলের সাথে কথা বলতে বলতে গিয়েছি। এতে রাইডের একঘেয়েমি অনেকটাই কমে গিয়েছে। ব্যাটারি ব্যাকআপ অনেক। ফেরার পথে প্রায় ৮-৯ ঘন্টা চালু ছিল। এর রেঞ্জও ভালো। কোম্পানী দাবী করে ১২০০ মিটার। রেঞ্জ এর অর্ধেক হলেও মাঝারি গ্রূপের জন্য যথেষ্ট। দেশে অনেক bike accessories shop -ই দেখলাম এখন এটা বিক্রি করে। লং রাইডে যাবার অভ্যাস থাকলে কিনতে পারেন। টাকাটা বিফলে যাবে না।
- KP150 গরম হয় কিন্তু লম্বা সময় ধরে বাইকটা চলতেও পারে (১৬৫ কিলো সোয়া তিন ঘন্টায়, মাত্র দুটো সিগারেট)
- জুলাই মাসে কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে বাইকের স্টক টায়ার ফেটে যায়। জোড়া তালি দিয়ে এই কয় দিন চালালেও রাঙামাটি যাবার আগে না বদলে উপায় ছিল না। TIMSUN sports grip ১১০ টায়ার লাগলাম। পারফর্মেন্স খুবই ভালো।
- Yi Action Camera (প্রথম ভার্শন), ভালো একটা বাজেট অ্যাকশন ক্যাম। গরীবের GoPro বললেও কোন অংশে বাড়িয়ে বলা হবে না। ভিডিও কোয়ালিটি সত্যি অনেক ভালো। এর একটাই খারাপ দিক আছে, কোনো External Microphone Port নাই। তাই চলন্ত অবস্থায় নিজের কথা আর ভিডিওতে শোনা যায় না। শোনা যায় শুধু বাতাসের শো শো শব্দ।
ডিক্লেমারঃ উপরে উল্লেখিত MotoLed, Lifan / Rasel Industies, Timsun / SajuMotors, V6, Yi Technologies … এদের কারো থেকে আমি আর্থিক কোন সুবিধা পাচ্ছি না। আমি ওনাদের একজন সাধারন ক্রেতা অথবা প্রোডাক্ট ব্যবহারকারী, এর বেশি কিছু না। গত এক বছর থেকে বাইকিং মোটামুটি একটা নেশার মতো হয়ে গেছে। আর নিজের ঢোল নিজে পিটাইতে ভালোই লাগে ।
এই রাইডের ভিডিওগুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন
যদি আমার এই লেখা কোন বড় প্লাটফর্মে প্রকাশ করা হয়, আর এই লেখাটা পরে কেউ যদি মহালছড়ি-সিন্দুকপাড়া বাজার রাস্তাটা রাইড দেবার চিন্তা করেন, তাহলে নিজের রিস্কে যাবেন। এই রাঙামাটি ট্যুরে আমার মত আনাড়ির জন্য এবার ভাগ্য অনেক সুপ্রসন্ন ছিল। আপনার জন্য কেমন হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। Ride safe brothers and sisters. Reach your destination safely.
লেখক: রাজীব মিস্ত্রী