দাম কমানোতে বিক্রি বেড়েছে মোটরসাইকেলের
This page was last updated on 18-Aug-2024 03:49pm , By Shuvo Bangla
দেশের মোটরসাইকেলের বাজারে এখন রমরমা অবস্থা। কর ছাড়ের সুযোগ নিয়ে মোটরসাইকেলের দাম কমিয়েছে সংযোজনকারী কোম্পানিগুলো। অন্যদিকে কমে এসেছে নিবন্ধন খরচও। এ দুয়ে মিলে ২০১৬ সালে মোটরসাইকেলের বিক্রিতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিগত বছর থেকে বিক্রি বেড়েছে মোটরসাইকেলের ।
দাম কমানোতে বিক্রি বেড়েছে মোটরসাইকেলের
তারা আশা করছে, চলতি বছরও বিক্রিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হবে। কারণ, শহরে যানজট ও গণপরিবহনের ভোগান্তি এড়িয়ে চলতে পুরুষ ও নারী কর্মজীবীরা মোটরসাইকেল কিনছেন। তরুণদের মধ্যেও মোটরসাইকেল কেনার ঝোঁক তৈরি হয়েছে। গ্রামে সহজ, দ্রুতগামী ও তুলনামূলক কম খরচের ব্যক্তিগত বাহন হিসেবে মোটরসাইকেলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিযুক্ত অবস্থায় (সিকেডি) মোটরসাইকেল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেন। এতে সিসিভেদে মোটরসাইকেলের দাম ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা কমেছে। যেমন টিভিএস এপাচি আরটিআর এর দাম ছিল প্রায় ২ লাখ টাকা। এখন সেটার দাম প্রায় ২০ হাজার টাকা কমিয়েছে টিভিএস। বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স ও ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএএমএ) সভাপতি মতিউর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানান, শুল্ক কমে যাওয়ায় মোটরসাইকেলের দাম কমেছে, এবং আগের চেয়ে বিক্রি বেড়েছে মোটরসাইকেলের ।
মতিউর রহমান ভারতীয় মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড বাজাজের পরিবেশক প্রতিষ্ঠান উত্তরা মোটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর কোম্পানি ২০১৬ সালে মোটরসাইকেল বিক্রিতে প্রায় ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। দেশে ২০১৪ সাল থেকে হিরো মোটরসাইকেল বাজারজাত করছে ভারতের হিরো মোটোকর্প। বাংলাদেশে তাদের পরিবেশক নিটল-নিলয় গ্রুপ। কোম্পানিটি দাবি করেছে, ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৩৮ হাজার ৪০০টি মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে, যা ২০১৫ সালে ছিল ২৯ হাজার ৬০০। এক বছরে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। দাম কমানোর কারনেই বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তাদের ধারনা। নিলয় মোটরসের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) বিজয় কুমার মন্ডল বলেন, আমদানিতে কর ছাড়ের কারণে মোটরসাইকেলের দাম কমেছে। বিক্রি বৃদ্ধির এটি সবচেয়ে বড় কারণ। আর নিবন্ধন ফি কিস্তিতে দেওয়ার ব্যবস্থা করায় বিক্রি বেড়েছে।
ভারতের টিভিএস ২০১৬ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৪৩ হাজার ইউনিট মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে। ২০১৫ সালে টিভিএস বিক্রি করেছিল ২৫ হাজার মোটরসাইকেল। এক বছরে ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বলে কোম্পানিটি দাবি করেছে। টিভিএস অটো বাংলাদেশের বিপণন ব্যবস্থাপক আশরাফুল হাসান বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন খরচ কমে আসায় সার্বিকভাবে মোটরসাইকেলের বিক্রি বেড়েছে। দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে সম্প্রতি নেপালের বাজারে মোটরসাইকেল রপ্তানি শুরু করেছে রানার অটোমোবাইলস। রপ্তানির পাশাপাশি দেশের বাজারে ২০১৬ সালে বেশ ভালো ব্যবসা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিগত বছর প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করেছে ২৬ হাজার মোটরসাইকেল, যা ২০১৫ সালে ছিল ২০ হাজার। কোম্পানিটির দাবি, বিক্রির হিসাবে এক বছরে প্রতিষ্ঠানটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩০ শতাংশ। ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় বিক্রিতে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও ৮০ সিসি ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেলের শ্রেণিতে দেশীয় এ কোম্পানিটির বাজার অনেকটা একচেটিয়া। প্রতিষ্ঠানটির মোট বিক্রির ৫০ শতাংশ ৮০ সিসির মোটরসাইকেল। রানারের জনসংযোগ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক ওয়াহিদ মুরাদ জানান, সেবার মান রানার মোটরসাইকেলের বিক্রি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ব্র্যান্ড হিসেবে রানার আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে, যেটা ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
দেশের মোটরসাইকেলের বাজারে বেশির ভাগ কোম্পানি আমদানি করে বিক্রি করে। গুটি কয়েক কোম্পানি দেশে উৎপাদন করে।আমদানি করা মোটরসাইকেলের বেশির ভাগ ভারত থেকে ও কিছু চীন থেকে আসে। দেশীয় কোম্পানিগুলো ইঞ্জিন আমদানি করে বাকি সব উপকরণ দেশে উৎপাদন করে। চলতি বাজেটে সরকার শুল্ক ছাড় দিলেও দেশের মোটরসাইকেলের উৎপাদনের শর্ত দিয়েছে আমদানিকারকদের। শর্ত অনুসারে তাদের দুই বছরের মধ্যে উৎপাদনে যেতে হবে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, সবার পক্ষে আগামী দুই বছরের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, বাংলাদেশের মোটরসাইকেলের বাজার এখনো সব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনে যাওয়ার মতো বড় নয়। এ অবস্থায় একসঙ্গে উৎপাদনে যাওয়া সবার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বিএমএএমএ সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, সবার স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে দুই বছরের মধ্যে মোটরসাইকেল উৎপাদনে যাওয়ার শর্ত তুলে দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে সহযোগী শিল্প ও দক্ষ জনবল তৈরিতেও গুরুত্ব দিতে হবে।
সংবাদ সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো