বাইক নিয়ে কেওক্রাডাং এর চূড়ায় - প্রথমবারের মত বাইক নিয়ে কেওক্রাডাং এর চূড়ায়

This page was last updated on 07-Jul-2024 08:33am , By Saleh Bangla

ছোট বেলা থেকেই বাইক নিয়ে মাতামাতি অবশেষে বড় হয়ে বাইক নিয়ে বাংলাদেশের রাস্তায় রাস্তায়, বাইক প্রেমের নিদর্শন স্বরুপ চাকার দাগ ফেলানোটাই এখন লক্ষ এবং আজ তা বাস্তবে। ইতিমধ্য আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছি এবং আমাদের মধ্যে কারো কারো ৬৪ জেলায় ঘুরাও সর্ম্পূন হয়ে গেছে। এবার বাইক নিয়ে কেওক্রাডাং জয়। যাই হোক গল্পে আসি।

বাইক নিয়ে কেওক্রাডাং এর চূড়ায় - প্রথমবারের মত বাইক নিয়ে কেওক্রাডাং এর চূড়ায়

বাইক নিয়ে কেওক্রাডাং

আমরা ৯ জন বাইকার প্ল্যান করি, আমাদের এক প্রবাসী বন্ধু Mohammad  Ali Ashraf Khan (hero) ভাইকে নিয়ে ডিম পাহাড়ে যাব। প্ল্যান মোতাবেক ৩১ জানুয়ারী বুধবার আমরা ৮ জন বাইকার Mohammad Ali Ashraf Khan (hero),MRK Mamun, Mehedi Hassan Jewel, Kawsar Khan,AB Istiaqe, Naveed Ishtiyak Toru, MD. Wali, Rafiqul Islam কক্সবাজার এর উদ্দেশ্য রওনা দেই। যাত্রা শুরু করার পূর্বেই Mohammad  Ali Ashraf Khan (hero) এবং MRK Mamun ভাইয়ের র্নিদেশে ও সবার মতামতের ভিত্তিতে , Naveed IshtiyakToru এই ট্যুরে লিড থাকবে এবং AB Istiaqe সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে। দায়িত্ব মোতাবেক আমরা ঝাপিয়ে পড়ি তবে মাটিতে নয় দায়িত্ব এ। শুরু হয় যুদ্ধ ! রাস্তার ঘন কুয়াশার সাথে যুদ্ধ করে আমরা কক্সবাজারে পৌছাই। হোটেলে উঠে সাথে সাথে চলে যাই সমুদ্রের সাথে জলকেলি খেলায়।

পরদিন ২ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার সকালে শিডিউল ও প্ল্যান মোতাবেক ডিম পাহাড় যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে ঠিক তখন পাগলা ছোট ভাই Sakawat Hossain Rakib সারারাত বাইক রাইড করে হাজির হয়। ওকে নিয়ে নাস্তা টাস্তা করে স্টার্ট টু গো ডিম পাহাড়। অনেক আকা বাকা-বাকা আকা পাড় করে পৌছালাম ডিম পাহাড়ে। ডিম পাহাড়ে ডিম ডুম দেখে চলে গেলাম থানচি। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারী শনিবার Mehedi Hassan Jewel শারিরীক অসুস্থার কারনে এবং তাকে সংগ দিতে Kawsar Khan, MD. Wali কে বিদায় দিতে হয়। রইলাম আমরা ৬ জন। 

lifan kpt price in bangladesh

 এরপর চা টা খেতে খেতে একজন মুখে থেকে পেটে জমে থাকা বগায় যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করল সাথে সাথে সবাই এক পায়ে দাঁড়িয়ে ভেড় ভেড় করে বলেই ফেললো বগায় যাওয়ার কথা। ওকে ডান অপারেশন বগা। ডিম পাহাড়ে ইতিমধ্যে আমাদের অনেকবার যাওয়ার অভিজ্ঞতা থাকায় কোন সমস্যা হয়নি বগায় যেতে।  কিন্তু বগা লেক পুরোটাই অচেনা অজেনা। আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করলাম, ওয়াই জংশন থেকে বগার উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। তারপর ৬ জন বাইকার ভুম ভুম করে পাহাড়ি আকা-বাকা রাস্তায় গোল খেতে খেতে রুমা পৌছালাম। রুমা গিয়ে আর্মির পার্মিশেন ও পুলিশের পার্মিশন এবং গাইড অভিজ্ঞ সুমন দত্ত ভাইকে নিয়ে সোজা চলে গেলাম কমলা বাজারে। রাস্তার নির্মান কাজ চলছিল। পুরো রাস্তা জুড়ে গোল গোল পাথড় বাইকের চাকা কোন ভাবে স্ট্রেট থাকতে দিচ্ছিল না।

অনেক কষ্ট করে কমলা বাজার। এরপর শুরু হল বগা যাওয়ার আসল রাস্তা বাইক থামিয়ে সোজা আকাশের দিকে ঊঠে যাওয়ার রাস্তার দিকে তাকিয়ে গলা যেন শুকিয়ে আসছিল আমাদের সূর্য মামা তখন আমাদের মাথার বরাবর কিরণ দিয়ে যেন আমাদের ভয়ার্ত মুখ দেখার চেষ্টা করছিল তাকালাম নিজেদের পায়ের দিকে। চোখ বন্ধ করে এক অজানা শক্তি নিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে বাইক স্টার্ট করে দিলাম। শুরু হল খেলা। প্রায় ১ ফুট জমে থাকা রাস্তায় অচিন নেশায় ভুম ভুম করে চলছি উপরের দিকে। যখনি বিপদজনক মনে হয়েছে আস্তে আস্তে করে বাইক গিয়ারে রেখে ইঞ্জিন অফ করে আস্তে আস্তে ছেড়ে দিয়েছি। পাগলামো ছিল কিন্তু হুশও ছিল। আদিম নেশা ছিল কিন্তু গাজীর সাধটাই বেশি ছিল। কোন প্রকার দূর্ঘটনা ছাড়াই আমরা পৌছে যাই বগায়। 

lifan kpr 150 price in bangladesh

 ধুলোয় ধুলোয় বরণ করে নেয় আমাদের বগা লেক। বগা লেকের শীতল পানি যেন আদর করে গালে শীতল ছোয়া দিয়ে আদর করে আমাদের কোলে তুলে নেয়। চোখের পাশ দিয়ে জমে থাকা ঘামগুলা হারিয়ে ফেলে ঠোটের কোনে চলে আসে আমাদের বিজয়ের হাসি। জী আমরা বগা বিজয় করেছি। অভিজ্ঞতার ভান্ডারে যুক্ত হল ভয়ানক বগার রাস্তা বিজয়। বগার ভয়ানক রোড পাড়ি দিয়ে আমাদের কলিজা গুলো যেন বড় হয় যেতে থাকে। গাইড সুমনের দিকে চেয়ে আমরা বললাম ভাই যেকোন মূল্যেই আমরা কেওকারাডং যেতে চাই। সুমন ভাই আমাদের চোখে মুখে তাকিয়ে একটু ভেবে বললেন আপনাদের যে অদম্য সাহস এবং রাইডিং দক্ষতা, জি ভাই আপনারা পারবেন। অনেক ভাল চালিয়েছেন আপনারা। ভয় পাবেন না। 

পরদিন ৪ তারিখ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বগায় এতগুলো কটেজের জন্য মাত্র দুইটা বাথরুম ! অনেক ধৈয্যের সাথে সিরিয়াল ধরে প্রাকৃ্তিক কাজ কর্ম সেরে চা নাস্তা করে আমরা শুরু করলাম যাত্রা কেওকারাডং এর দিকে। বাইক নিয়ে কেওক্রাডাং জয় করতেই হবে। একটু-খানী রাস্তা যাওয়ার পরই রাস্তা দেখে আমরা একবারেই থ। কারন এত সুউচ্চ রাস্তা প্রচুর ধুলা আর একটু পর পর বড় বড় পাথড় যারা হেটে হেটে পাহাড়ে উঠেছেন তারাই যেন অনেক কষ্টে ছোট বাশ হাতে ভর দিয়ে তারা খুবই কষ্ট করে উপরের দিকে বেয়ে যাচ্ছেন। যাইহোক আমরা কোন ভাবে কষ্ট করে সবাই কম বেশি একটু আকটু হোচট খেয়ে এক পর্যায়ে আমরা কেওকারাডং এর উপর চলে আসলাম। প্রচন্ড ক্ষুদা পেটে। ঊঠেই পেট ভরে ভাত খেলাম। তার পর গেলাম নিয়োজিত যথাযথ কতৃপক্ষের  কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমরা চলে গেলাম কেওকারাডং এর চূড়ায়। বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল আমরা পেরেছি এত কঠিন রাস্তা এত ভয়ানক রাস্তা। আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া জানাই যে আমরা পেড়েছি। বাইক নিয়ে কেওক্রাডাং জয় করতে পেরেছি আমরা। 

ফটোশেসন

ফটোশেসন করে আবার শুরু করি সরাসরি ঢাকার উদ্দেশ্য যাত্রা। ভেবে ছিলাম আমাদের নামতে কষ্ট হবে কিন্তু না, আমরা প্রতিটা রাইডারই ছিলাম যথেষ্ট সাহসী তাই নামতে আমাদের কোন সমস্যা হয় নাই। অনেক অনেক অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা ৫ই ফেব্রুয়ারী ভোর ৬ টায় ঢাকায় পৌছাই। বাংলাদেশে টুরিস্ট বাইকার হিসেবে আমরাই প্রথম বাইক নিয়ে কেওক্রাডাং জয় করলাম। এর চূড়ায় উঠতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। আমাদের এই বিজয় বাংলাদেশের সকল বাইকারদের উৎসর্গ করে দিলাম। এই বিজয় আমাদের একার নয় সকল বাইকারদের। জয় হোক বাইকারদেরও, জয় হোক মানবতার। 

লিখেছেনঃ নাভিদ ইশতিয়াক তরু