বগালেক ও কেওক্রাডং ভ্রমন এবং কিছু কথা
This page was last updated on 28-Jul-2024 10:59am , By Saleh Bangla
আজ আমি আপনাদের সাথে আমাদের বগালেক ও কেওক্রাডং ভ্রমনের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। আমরা Dhaka Cantonment Bikerz Club থেকে ৫ জন সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমরা কেওক্রাডং যাব, এর ধারাবাহিকতায় ১৭-০১-২০১৯ ইং রোজ বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার সময় বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা হই । আমরা ৫ জন রওনা হলামঃ১। Osman Goni :- ফেজার বাইক, ২।Sohel Iqbal :- পালসার ১৫০, ৩।Tipu Sultan :- পালসার এন এস, ৪ এবং ৫। Bablu Bhai এবং Rakibul Islam Khan :- আর ১৫ ভি২।
বগালেক ও কেওক্রাডং ভ্রমন এবং কিছু কথা
Osman Goni ও Tipu Sultan ভাই আমাদের আগেই রওনা করে ছিলো কারন ওসমান ভাইয়ের কুমিল্লাতে একটু কাজ ছিলো তাতে কি কাজ যদি হয় ভালো কিছুর জন্য তাহলে তো কাজই ভালো আর এই ভালো রেশ ধরেই বরাবরের মতো দেখা হয়ে গেলো Xihan Crz ভাই এর সাথে যদিও ওসমান ভাইয়ের মামা-ভাগিনা সম্পর্ক । Xihan Crz ভাই খুব আন্তরিক একটা বাইকার আমরা যখনি ঐ রাস্তায় যাই ভাই তখনি শত কাজের মাঝেও আমাদের সময় দেয় । ভালো থাকবেন Xihan Crz ভাই।
নারায়ণগঞ্জ এর সাইনবোর্ড নামক এলাকায় আমাদের জন্য অপেক্ষায় ছিলো আমাদের অনেক পছন্দের Arfin Prantor Dee ভাই। Arfin Prantor Dee ভাই আমাদের সাইনবোর্ড থেকে প্রায় মেঘনা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন এবং তার সাথে কিছু সময় অতিবাহিত করলাম চায়ের আড্ডায় । বান্দারবানের হোটেল ও ভালো খাবারের সকল ধরনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন । কিছু বলার নাই শুধু এটুকুই বলি বাইকাররা ভাই ভাই । তারপর কুমিল্লার ছন্দু হোটেলে দুপুরের খাবারের পর্বটা শেষ করলাম ।
সন্ধ্যায় আড্ডা হলো Ohidul Islam Prince এবং ডন ভাইয়ের সাথে ভাটিয়ারিতে। অনেকটা সময় আমরা একসাথে অতিবাহিত করলাম এবং ডন ভাই আমাদের প্রায় কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলেন। ভালো থাকবেন ভাই।তারপর বান্দরবান যেতে ঘড়িতে বেজে গেলো প্রায় রাত ১১টা তবে আমাদের কোন চিন্তা ছিলোনা সব চিন্তা নিয়ে নিলো Arfin Prantor Dee হোটেল ঠিক করে রেখেছে আমাদের জন্য আর রাতের খাবারের জন্য মানসম্মত একটা হোটেলও ঠিক করে রেখেছে আর এই সব কিছু করেছে তার বান্দরবানের মেম্বারদের দিয়ে । যাই হোক রাত পেরিয়ে সকাল হতেই আমরা নাস্তা করে রওনা দিলাম বগালেকের উদ্দেশ্যে । পথের মাঝে পরলো মিলনছরি তাই তো কিছু ছবি ক্যামেরা বন্দি করে রাখলাম। কিছু দূর যেতেই সেই চিরচেনা Y জংশন ।
তারপর বামে রুমা রাস্তা ধরে চলতে লাগলাম রুমা বাজারের দিকে। রুমাতে এসেই গাইড হিসেবে নিলাম সিয়াম বম কে তারপর আবার চলতে লাগলাম সেই বহুল প্রতিক্ষিত বগালেকের উদ্দেশ্যে । দেখতে দেখতে চলে আসলাম কমলা বাজারে তখনো বুঝি নাই যে সামনে আছে বিশাল উচু রাস্তা আমি ছিলাম ডাবল আর বাকিরা ছিলো সিঙ্গেল বাইকে Tipu Sultan উঠে গেলো সেই রাস্তা দিয়ে পিছনেই ছিলাম আমি আর ১৫ নিয়ে তবে বেচে গেলাম এই রাস্তায় এবং উঠে গেলাম বগালেকের শেষ পাহাড়ে কিন্তু পিছনেই ছিলো Sohel Iqbal এর পালসার, উচুতে উঠতেই স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেলো পালসারের আর কি যা হবার তাই হলো আর পিছনেই ছিলো Osman Goni আর তার ফেজার তবে পালসার বন্ধ হওয়াতে ওসমান ভাই স্লো করাতেই বাধলো বিপত্তি যা হবার তাই হলো পরে আবার স্টার্ট দিয়ে চলে আসছে বগালেক ।
বগাতে এসেই আর্মি ক্যাম্পে সাইন করে চলে গেলাম বগালেকের নিকটতম একটি কক্ষে।তারপর বগালেকে গোসল করে লারামের হোটেলে দুপুরের খাবার খেলাম। ততক্ষনে বিকেল হয়ে গেলো আর কি একটু এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করতে করতেই আমাদের গাইড সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে রাতে বারবিকিউ করার । লারামের খাবার ভালো লাগলো না তাই রাতের খাবারের অর্ডার করে আসলাম আর্মিদের ওই খানে । আর্মিদের খাবারটা ভালোই ছিলো । যাই হোক এবার আমরা ৫ জন আগামীকালের কেওক্রাডং নিয়ে কথা বলা শুরু করলাম।
প্রথমেই টিপু ভাই বলছে ভাই আপনারা জান আমি বগাতে আছি যদিও টিপু ভাই আগে থেকেই কেওক্রাডং না উঠার পক্ষে ছিলো। রইলো বাকি চার এবার সোহেলের পালসারের সামনের চাকা জ্যাম দেখতে পেলো বাধলো আরো বিপত্তি যদিও সোহেলের কেওক্রাডং যাওয়ার ইচ্ছা আছে কিন্তু বাইক ভালো ভাবে সার্ভিস না দেওয়ার কারনে ও বলতে লাগলো তাহলে টিপু ভাই চলেন আমরা চান্দের গাড়িতে বা হেটে চলে যাই ।
কিন্তু সকাল হতেই আমরা সোহেলের বাইকের পিছনে লাগলাম এবং সবার চেস্টায় এখন বাইকের সামনের চাকা মোটামুটি ফ্রি হয়েছে বলা যায় আর তখন সোহেল ও কেওক্রাডং যাওয়ার জন্য প্রস্তুত এবার টিপু ভাই ও প্রস্তুত টিপু ভাই ও যাবে কেওক্রাডং । তো আর কেনো দেরি? না আর, দেরি না আমরা রওনা করলাম তখন বাজে সকাল প্রায় ১০টা । সবাই একসাথে রওনা করলাম সিরিয়াল ভাবে ১। Sohel Iqbal ২। Tipu Sultan ৩। Osman Goni ৪. Bablu Bhai & Rakibul Islam Khan.বগালেক থেকে রওনা করার অল্প কিছুক্ষনের ভিতর আমাদের চেহারা পালটে গেলো আর সবার চোখে মুখে ভয় ভয় কাজ করছে এই রাস্তা দেখে তারপর ও সামনের দিকে চললাম টিপু ভাই চলে গেলো এই খাড়া রাস্তা পার হয়ে, সোহেল ও চলে গেলো এই ভয়ানক রাস্তা দিয়ে কিন্তু এই যাত্রায় রক্ষা হয়নি ওসমান ভাই আর আমার যা হবার তাই ঘটলো।
ওসমান ভাই কিছুটা ব্যাথা পেয়েছিলো তাই আর সামনের দিকে যাওয়ার আগ্রহ দেখালো না। ওসমান ভাই বলে দিলো আমি এই রিস্ক নিয়ে কেওক্রাডং যাচ্ছি না । আমি ছিলাম নাছরবান্দা আমি যাবোই তাই আবার সামনের দিকে চললাম একাই ওসমান ভাই কে রেখে । সামনের পাহাড়ে যেতেই দেখা মিললো টিপু ভাই আর সোহেলের সাথে তারা আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে ছিলো। এখন টিপু ভাই ও বলে দিলো ভাই আমি ও যাচ্ছি না । আমি বগা চলে যাচ্ছি।
এখন কি করবো বুঝতে পারছি না এখন আমরা আছি দুইটা বাইক আমার আর১৫ ভি২ আর সোহেলের পালসার ১৫০। যাই হোক তারপর ও সোহেল আর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা যাবো কেওক্রাডং আর রাস্তায় পেয়ে গেলাম একজন গাইডকে আমাদের আগের গাইড সিয়াম বমকে আমরা আগেই চান্দের গাড়িতে কেওক্রাডং পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। যাই হোক দুঃখের কথা আর নাইবা বলি একটা সময় কয়েকবার পড়ে গিয়েও, অনেক কস্ট হলেও পৌছে গেলাম দার্জিলিং পাড়ায় । আর একটু পরেই চলে আসলাম সেই বহুল প্রতিক্ষিত কেওক্রাডং । এসেই মনে হলো তখন যদি ওসমান ভাই আর টিপু ভাই এর সাথে চলে যেতাম তাহলে হয়তো এই রকম অবস্থায় পরতে হতো না । যাই হোক আরেকটা কথা বলে রাখি বর্তমানে কেওক্রাডং এর আর্মি ক্যাম্পের সাথে থাকা এই স্থানে ।
বাইক নিয়ে যেতে দিচ্ছে না । জানতে পারলাম কিছু লিজেন্ড বাইকারের কর্মকান্ডের জন্য এই স্থানে এখন বাইক নিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না । কি করবো কোন পথ খুজে না পেয়ে বিকল্প কিছু করতে হলো আমাদের এবং অনেক কষ্টে একটা বাইক উঠানোর উনুমতি নিলাম। আমাদের বাইক আছে দুইটা কিন্তু বাইক উঠাইতে দিবে একটা বন্ধু সোহেল বললো দোস্ত তাহলে আমার বাইকটা উঠাই আমিও রাজি হলাম আর বললাম তাহলে তোর বাইকটা উঠা।
তারপর কেওক্রাডং এ দুপুরের খাবার খেয়ে আবার রওনা করলাম বগার উদ্দেশ্যে । আবারও পল্টি খাইতে খাইতে চলে আসলাম বগাতে । যখন বগাতে আসলাম তখন বাজে প্রায় ৩ঃ৩০ তখন আর দেরি না করে তারাতারি চলে গেলাম আর্মি ক্যাম্পে সেইখানে গিয়ে বলে দিলাম আমরা চলে যাচ্ছি আর রওনা করলাম রুমার উদ্দেশ্যে তবে রুমাতে যেতে যেতে ঘড়িতে বেজে গেলো ৪ঃ৩০। তারাতারি উঠে গেলাম রুমার আর্মি ক্যাম্পে কিন্তু গিয়ে দেখি আরো ৮/১০ জন বসে আছে।
তারা বলতে লাগলো ভাই সময় বেশি বেজে গেছে তাই আজ আর বান্দরবন যাওয়ার পারমিশন দিবেনা । মনটা খারাপ হয়ে গেলো তাই উপায় না দেখে আবার সেই আগের স্টাইলে বিকল্পপথ অবলম্বন করলাম আর মিলে গেলো আমাদের পারমিশন তারা আমাদের নাম্বার দিয়ে দিলো আর বলে দিলো পথে কোথাও দাড়াবেন না বান্দরবান যেয়ে সাথে সাথে আমাদের কল করবেন । রাস্তায় কোন ঝামেলা হলে সাথে সাথে কল করবেন এই নাম্বারটা ডায়াল এ রাখুন । আমরা আর দেরি না করে চলে গেলাম বান্দরবান আর কল দিয়ে বলে দিলাম ভাই আমরা চলে আসছি বান্দরবান । রাতে বান্দরবানের হোটেলে থেকে পরের দিন রাঙ্গামাটি কাপ্তাই ও আসাম বস্তি হয়ে চলে আসলাম ঢাকা।
Also Read: 600 km Odyssey : BichanaKandi - BikeBD