ট্রিপল টি রাইড | টেকনাফ-তেতুলিয়া-তামাবিল - Masudul Hasan Joy
This page was last updated on 14-Jul-2024 10:49am , By Ashik Mahmud Bangla
ট্রিপল টি রাইড | টেকনাফ-তেতুলিয়া-তামাবিল
ট্রিপল টি রাইড, স্টোরি অফ ২৭৪৫ কিমি (টেকনাফ-তেতুলিয়া-তামাবিল) । ইচ্ছা থাকলে মানুষ সব কিছুই করতে পারে। এই চিন্তাধারা নিয়ে টিটি রাইডের স্বপ্ন দেখেছিলাম। সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। শেষ পর্যন্ত রাংগুনিয়া বাইক লাভার্সের এডমিন গিয়াস ভাইয়ের সাথে সুযোগ হয়। সাথে জয়েন করে রাংগুনিয়ার সোহান ভাই, ফেনীর এবি চৌধুরী ভাই, আর ঢাকার রিফাত। সেই হিসেবে প্রথম দিন ঢাকা থেকে রওনা দেই আমি আর রিফাত। আমাদের টোটাল রাইড সেদিন ৩২৭ কিমি ।
দিন-১ ২১ তারিখ সকাল ৭ টার দিকে আমি আর রিফাত রওনা দেই কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে। প্রথম ১০০ কিমি যাওয়ার পর আমরা নাস্তা করি। এরপর সোজা একটানে ফেনিতে দাড়াই ভাটিয়ারির রুট প্লান করার জন্য। তারপর সকাল ১০ঃ৩০ এ ভাটিয়ারি হয়ে কাপ্তাই পৌছাই বেলা ১২ঃ৩০ টায়৷ সারাদিন প্রশান্তি পার্কে ঘুরাঘুরি আর আড্ডা দেই। সেদিন রাতে আমাদের সাথে ফেনী থেকে যোগ দেন এবি চৌধুরী সবুজ ভাই।
রাতে হাবিব ভাইয়ের বাসায় আমরা থাকি। ৩২০ কিমি রাইড টোটাল । দিন-২ ২২ সকালে উঠে আমরা রওনা দেই বান্দরবনের উদ্দেশ্য। আমাদের সাথে তখন যুক্ত হন রাংগুনিয়া বাইক লাভার্সের গিয়াস ভাই, সোহান ভাই এবং সামি ভাই। সকাল ১০ টায় আমরা বান্দরবান টাউনে পৌছাই। সেখানে নাস্তা করে সোজা চলে যাই ডিম পাহাড়ে। তারপর ফাইসাখালিতে লাঞ্চ করি বিকেল ৫ঃ৩০ টায়। সেখান থেকে কক্সবাজার রাত ৮ টায়। এরমধ্যে বৃষ্টির জন্য আমাদের কিছু সময় নষ্ট হয়। রাত ৯ঃ৩০ টায় আমরা টেকনাফে চলে যাই। ১০২০ কিমি রাইড পুরো দিনে।
দিন-৩ এবং দিন-৪ ২৩ তারিখ বিকেল ৪ঃ৪০ এ ফেইসবুক লাইভ করে আমি লিড দিয়ে টেকনাফ থেকে রওনা দেই। সেখান থেকে ৬ঃ১০ এ কক্সবাজার ডলফিন মোড়ে পৌছাই। এর কিছুক্ষন পর রিফাতের ব্যাগ লুজ হয়ে যায়৷ যার জন্য সময় নষ্ট হয়। এর কিছুক্ষন পর লোহাগড়ার আগে আমার ব্যাগ খুলে রাস্তায় পরে যায়৷ সবকিছু ঠিকঠাক করে ১০ঃ৩০ এ সিটি গেইট এ যাই৷ সেখানে মাফুজ ভাই আমাদের সাথে দেখা করেন।
১১ টার ওখান থেকে কুমিল্লার জন্য বের হয়। পথে হানা দেয় বৃষ্টি। ফেনী থেকে বগুড়া পর্যন্ত বৃষ্টি ছিল। এর মধ্যে মিয়ামিতে ব্রেক ছিল এক ঘন্টায়। বগুড়া তে গিয়াস ভাইয়ের চাকায় লিক হয়। যা সারাতে ১ ঘন্টা লাগে ৷ ১১ টার দিকে আমরা গোবিন্দগঞ্জ হয়ে দিনাজপুর যাই৷ মোটামুটি ১ টা বেজে যায়। সেখান থেকে তখনো ১৬০ কিমি বাকি ছিল। শেষ পর্যন্ত ২৪ তারিখ বিকেল ৩ঃ২৬ এ আমরা তেতুলিয়া টাচ করি এবং ফেসবুক লাইভে যাই৷ আর ৪ঃ১০ এ বাংলাবান্ধা টাচ করি।
টোটাল ৯৯২ কিমি রাইড ছিল। ২২ঃ৩০ ঘন্টা লাগে টিটি শেষ করতে। পুরা ট্যুর আমার লিডে ছিল। যা আমি কোনদিন ভুলব নাহ। রাতে ভাবি একটু এক্সট্রা কিছু করি। তাই তামাবিল টাচ করার ডিসিশন নেই। কিন্তু বাকি সবার মতামত পাচ্ছিলাম নাহ। তাই একাই যাওয়ার ডিসিশন নেই। দিন-৫ পরদিন অর্থাৎ ২৫ তারিখ সকাল ৭ টায় একাই রওনা দেই তামাবিলের উদ্দেশ্যে।
এর মধ্যে যথাক্রমে ৯ঃ৩০ এ রংপুর, ১১ঃ৪০ এ বগুরা, ১ঃ৩০ এ যমুনা সেতু এবং বিকেল ৪ টায় ভৈরব টাচ করার পর আমি শারিরীক ভাবে এনার্জী পাচ্ছিলাম নাহ। যার জন্য রাত স্টে করি নিজের গ্রামের বাড়িতে। এর মধ্যে রংপুর আর যমুনাতে একঘন্টার ব্রেক ছিল। সেদিন আমার রাইড ৫১০ কিমি।
দিন-৬ ২৬ তারিখ সকালে ৯ঃ৪০ এ তামাবিলের জন্য ভৈরব থেকে রওনা দেই। ১২ঃ২৬ এ সিলেট গিয়ে ব্রেক দেই। এরপর একটানে চলে যাই তামাবিল। তখন বাজে ১ঃ৪৪। কিন্তু সেখানে তামাবিল ০০ কিমি কোন মাইলফলক ছিল নাহ৷ সেটা ভেংগে ফেলা হয়েছে। তাই ফেইসবুক লাইভে যাই প্রমান হিসেবে। এর পর সেখানে তামাবিল ৩ কিমি মাইলফলকে ছবি তুলে ২ টায় রওনা দিয়ে ৪ঃ৩০ এ শায়েস্তাগঞ্জের মিরপুরে ব্রেক দেই।
তারপর একটানে ভৈরব চলে আসি৷ আমার ট্রিপল টি রাইড সাকসেসফুলি শেষ। দিন-৭ ৬ দিনের একটানা লং রাইডের পর ভাবলাম শরীরটাকে বিশ্রাম দিয়ে বাকি রাইড করব। সেই হিসেবে রাত ১০ টায় ঘুমিয়ে সকাল ১০ টায় ঘুম ভাংগে। এর পর নাস্তা করে একটানে ঢাকায় চলে আসি ১ টার মধ্যে। তখন আমার টোটাল ট্রিপ কাউন্ট ছিল ২৭৪৫ কিমি ।
সবার দোয়া ছিল। আহসান হাবিব ভাই অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন। এবি চৌধুরী ভাইয়ের মত মানুষ আমার লাইফে আমি আরেকজনও দেখি নাই। সোহান ভাই আর গিয়াস ভাই তো অসাধারণ মানুষ। খুব আন্তরিক। আর গরিবের আবু সাইদ, রিফাত তো আছেই। সবার দোয়া ছিল বলেই শেষ করতে পেরেছি সুস্থ ভাবে। আগামিতেও এরকম চ্যালেঞ্জিং ট্যুর দেয়ার ইচ্ছা আছে। যদি এরকম সাপোর্ট পাই।
বাইকের ব্যাপারে বলতে গেলে আমি সোজাসাপ্টা একটা কথাই বলব, যে কিছু জায়গায় আমি হাপিয়ে গিয়েছি। মনে হয়েছে আর সম্ভব নাহ। কিন্ত আমার বাইক হার মানেনি। এয়ার কুলড বাইক প্রতি ৮০-১০০ কিমি পরপর ব্রেক দেয়া লাগে।
আমি একটানা ১৮০ কিমিও রাইড করেছি। তাও পাওয়ার লস ফিল করি নি৷ ক্রমাগত ১০৫-১১০ কিমি/ঘন্টা ক্যারি করার পরও মাইলেজ পেয়েছি ৩৯/৪০ যা সত্যিই বিস্ময়কর। হিটিং প্রবলেমও ছিল নাহ। এত লং ট্যুর হলে মানুষের ব্যাক পেইন, রিস্ট পেইন হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমার তা হয়নি। সেই হিসেবে এফ জেড এস কে আমি পার্ফেক্ট ট্যুরার বলব। আর ন্যাকেড বাইক হওয়ার ফলে আমি অনেক ক্লোজ কল এড়াতে পেরেছি। বাইকের সাথে আমার রিলেশন বরাবরই অনেক ভাল ছিল। তাই কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি।
অনেক সময় দেখা যায় ক্লাচ ক্যাবল, এক্সেলেটর ক্যাবল ছিড়ে যায়। কিন্তু আমার তা হয়নি। বিল্ড কোয়ালিটিও অনেক ভাল ছিল। যার দরুন বগুড়া আর তামাবিলের মত ভাংগা রাস্তায়ও বাইক পুরোপুরি ফিট হয়ে বের হয়ে গেসে আমার টোটাল ট্রিপল টি রাইড ২৭৪৫ কিমি। টেকনাফ-তেতুলিয়া-তামাবিল (টিটিটি) টাচ আর আমার সোলো রাইড (৫১০+৪৮০) ৯৯০ কিমি । হ্যাপি বাইকিং ।
লিখেছেন - Masudul Hasan Joy
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন।
মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।