খুলনার দর্শনীয় স্থান - Khulna Division - জানুন বিস্তারিত

This page was last updated on 28-Jul-2024 02:23am , By Raihan Opu Bangla

বাইক নিয়ে যারা ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন তারা অনেকেই বিভিন্ন বিভাগের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে চান। আজ আমরা খুলনার দর্শনীয় স্থান নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। খুলনার দর্শনীয় স্থান একেবারে কম না, এর মধ্যে যে স্থানগুলো বাইকাররা বেশি পছন্দ করে এমন ১৪ টি স্থান আজ তুলে ধরা হলো।খুলনার দর্শনীয় স্থান

খুলনার দর্শনীয় স্থানঃ


১- সুন্দরবনঃ ( Sundarbans )

খুলনার দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে সুন্দরবন ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো ( UNESCO ) বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এর বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ বস্তুত একই নিরবচ্ছিন্ন ভূমিখণ্ডের সন্নিহিত অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে; যথাক্রমে 'সুন্দরবন' ও 'সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান' নামে।সুন্দরবন Sundarbans

সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল।

dhaka to sundarban distance >> 242 km

বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ( royal bengal tiger ) ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। জরিপ মোতাবেক ১০৬ বাঘ ও ১০০০০০ থেকে ১৫০০০০ চিত্রা হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায়।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার

১৯৯২ সালের ২১ মে সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দার্যে মুগ্ধ। সুন্দরবন ভিজিট করার মাধ্যমে তার প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করে।


২- কটকা সমুদ্র সৈকতঃ ( Kotka Sea Beach )

সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। তবে বনে বাঘের দেখা মেলা কষ্টকর। আর তার ওপর বাঘের দেখা মিললেও নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি তো আছেই। সুন্দরবনের দক্ষিণ পূর্ব কোণে খুলনা ও বাগেরহাটে অবস্থিত কটকা সমুদ্র সৈকত। এটি মংলাবন্দর ( Mongla ) থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং সুন্দরবন পূর্ব অভয়ারণ্যের মধ্যে প্রধান কেন্দ্র।কটকা সমুদ্র সৈকত

বন কার্যালয়ের পেছন দিক থেকে সোজা পশ্চিমমুখী কাঠের তৈরি টেইলের উত্তর পাশের খালটির ভাটার সময় ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদের ঘন শ্বাসমূল দেখা যায়। এছাড়া একটু শান্ত থাকলে বা নিরিবিলি যেতে

dhaka to kotka sea beach distance >> 227 km

পারলে এখানে দেখা মিলতে পারে চিত্রা হরিণেরও। ট্রেইলের শেষ মাথায় হাতের ডানে সোজা দক্ষিণে মিনিট হাঁটলে পাবেন টাইগার টিলা। এ টিলায় প্রায়ই বাঘের ছাপ দেখতে পাওয়া যায় বলেই টিলাটির এমনতর নামকরণ। টাইগার টিলা থেকে সামান্য পশ্চিমে বয়ার খাল। দুইপাশে কেওড়া, গোলপাতা আর নানান পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে জায়গাটি।করমজল পর্যটন কেন্দ্র

৩- করমজল পর্যটন কেন্দ্রঃ

খুলনার দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে সরকারীভাবে পরিচালতি একমাত্র লবন পানির কুমির ও বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ (বাটাগুড় বাল্কা) প্রজনন কেন্দ্র। এটি বানিশান্তা ইউনিয়ন সংলগ্ন সুন্দরবনে অবস্থিত। এখানে পর্যটক সরাসরি পূর্বানুমতি ছাড়া যেকোন সময় সুন্দরবন সম্পর্কে সম্মক ধারনা ও জ্ঞান লাভ করতে পারেন। প্রাকৃতিক পরিবেশে চিত্রল হরিণ, বানর ও কুমির দেখার সুযোগ রয়েছে।

সুন্দরবনের অভ্যন্তরীন চিত্র অবলোকনের জন্য দেড় কিলোমিটার কাঠের ট্রিল আছে। উপরের চিত্র দেখার জন্য ৪৫ ফুট উচু একটি আরসিসি টাওয়ার আছে। জলজ প্রাণী সম্পর্কে জানার জন্য ডলপিন ডিসপ্লে, চিত্রল হরিণের চামড়া, বাঘের কঙ্কাল, কুমিরের ডিম, বিবিধ শ্রেণীর উদ্ভিদ চেনার জন্য আঞ্চলিক, প্রচলিত ও বৈজ্ঞানিক নামের নেমপ্লেট, সুন্দরবনের মানচিত্র, ৩টি বড় কুমির যথাক্রমে রোমিও (পুরুষ), জুলিয়েট ও পিলপিল (নারী) রয়েছে।

করমজল - karamchal khulna

দায়িত্বপ্র্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার তত্বাবধানে এই মুহুর্তে ২১৭টি বিভিন্ন বয়স ও আকারের কুমির রয়েছে। ২ মিটার দৈর্ঘ্য হলে কুমিরের বাচ্ছা নদীতে অবমুক্ত করা হয়। পর্যটক ওঠা নামার জন্য রয়েছে ২টি সুদৃশ্য আধুনিক ঘাট।দাকোপ উপজেলা সদর থেকে করমজলের দুরত্ব ৩০ কি:মি:, জেলা শহর থেকে ৫৫ কি:মি:। এখানে নৌপথ ও সড়ক পথে সহজেই ভ্রমন করা যায়।

তাছাড়া রাত্রিযাপন করার জন্য নিকস্থ রিসোর্ট রয়েছে। স্বল্প খরচে প্রকৃতির এই লীলাভূমি খুব সহজেই ভ্রমন করা যায়। দাকোপ উপজেলা সদর থেকে করমজলের দুরত্ব ৩০ কি:মি:, জেলা শহর থেকে ৫৫ কি:মি:। এখানে নৌপথ ও সড়ক পথে সহজেই ভ্রমন করা যায়।

আরও পড়ুন >> রাজশাহী বিভাগের ১৪ টি দর্শনীয় স্থান । জানুন বিস্তারিত

৪- বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডঃ ( Bangabandhu Island )

১৯৭৬ সাল থেকেই স্যাটেলাইট ইমেজে দ্বীপটির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর পর দ্বীপটি মাঝে মধ্যে জেগে ওঠে আবার ডুবে যায়। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের পর থেকে দ্বীপের আকার ধীরে ধীরে স্থিতিশীল অবস্থায় আসতে থাকে। এর পর থেকে না ডুবে ক্রমেই বড় হচ্ছে দ্বীপটি।

২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নতুন করে জেগে ওঠা দ্বীপটিতে যায়। সেখানে তারা টানা তিনদিন অবস্থান করে দ্বীপটির অভ্যন্তরীণ মৃত্তিকা, ডিসিপি জরিপ ও ভিজিবিলিটি অ্যানালাইসিসসহ বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান চালান।বঙ্গবন্ধু দ্বীপ

বঙ্গবন্ধু দ্বীপ সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে পরেছে। সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট থেকে ১৫ কিলোমিটার ও দুবলারচর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের বুকে দ্বীপটি অবস্থিত। যা বঙ্গবন্ধু চর, বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড নামেও ডাকা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই মিটার উচ্চতায় অবস্থিত নতুন এই দ্বীপ ( Island ) প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের অনন্য উদাহরণ।

১৯৯২ সালে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে প্রথম নতুন জেগে ওঠা একটি চরের দেখা পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের একনিষ্ঠ ভক্ত, মালেক ফরাজী নামের এক মৎস্য শিকারী। এ সময় তিনি জনমানবহীন এ দ্বীপের নাম দেন ‘বঙ্গবন্ধু দ্বীপ এবং সেখানে একটি সাইন বোর্ড লাগিয়ে দিয়ে আসেন।খান জাহান আলী সেতু Khan Jahan Ali Bridge রূপসা সেতু

৫- খান জাহান আলী সেতুঃ ( Khan Jahan Ali Bridge )

খুলনা ( Khulna ) শহরের রূপসা থেকে ব্রিজের দূরত্ব ৪.৮০ কি.মি। এই সেতুকে খুলনা শহরের প্রবেশদ্বার বলা যায় কারণ এই সেতু খুলনার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলির বিশেষত মংলা সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৬০ কি.মি.। সেতুটিতে পথচারী ও অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য বিশেষ লেন রয়েছে। বর্তমানে এটি খুলনার একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। রাতে সেতুর উপর থেকে খুলনা শহরকে অপূর্ব সুন্দর মনে হয়। খানজাহান আলী সেতু রূপসা নদীর উপর নির্মিত একটি সেতু। এটি রূপসা সেতু নামেও পরিচিত।

dhaka to khan jahan ali bridge distance >> 255.4 km

হিরণ পয়েন্ট Hiron Point Bangladesh

৬- হিরণ পয়েন্টঃ ( Hiron Point Bangladesh )

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের দক্ষিণাংশে খুলনা রেঞ্জে প্রমত্তা কুঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি সংরক্ষিত অভয়ারণ্যের নাম হিরণ পয়েন্ট (Hiron Point)। ইউনেস্কো ঘোষিত অন্যতম বিশ্ব ঐতিহ্য হিরণ পয়েন্টের অন্য নাম নীলকমল।

অভয়ারণ্য হওয়ার কারণে হিরণ পয়েন্ট সহজেই বানর, হরিণ, বাঘ সহ নানা প্রজাতি বন্যপ্রাণী, সরীসৃপ ও পাখির নিরাপদ প্রাকৃতিক আবসস্থলে পরিণত হয়েছে। ফলে এখানে সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, লার্জ এগ্রেট, কাঁদা খোঁচা, ধ্যানী বক প্রভৃতি পশুপাখির দর্শন মিলে।হিরণ পয়েন্ট

dhaka to hiron point  distance >> 242 km


হিরণ পয়েন্টে কাঠের তৈরি সুন্দর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হরহামেশাই হরিণ, বানর, গুইসাপ, কুমির প্রভৃতি প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়। এছাড়া হিরণ পয়েন্ট থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে কেওড়াসুঠি নামক স্থানে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে হিরণ পয়েন্ট সহ সুন্দরবনের একাংশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

আরও পড়ুন >> সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ । ২৭ টি মনোরম জায়গা । বাইকবিডি

মধুসূদন দত্তের বাড়ি মধুপল্লী

৭- মধুসূদন দত্তের বাড়ি মধুপল্লীঃ ( Modhu Shudon House )

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পরবারের সাগরদাঁড়িস্থ আবাসস্থলটি ঘিরে মধুপল্লী স্থাপিত হয়েছে। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি এ বাড়িতে মাইকেল মধুসূদন দত্ত জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রপিতামহ রামকিশোর দত্ত খুলনা জেলার তালা উপজেলার গোপালপুর গ্র্রামের অধিবাসী ছিলেন।

তাঁর পিতামহ রামনিধি দত্ত ছোট ভাইদের নিয়ে মামার বাড়ি সাগরদাড়িতেঁ চলে আসেন। রামনিধির চার ছেলের মধ্যে রাধামোহন আদালতের সেরেস্তাদার, মদনমোহন মুন্সেফ, দেবীপ্রসাদ ও রাজনারায়ণ উকিল ছিলেন। রাজনারায়ণ দত্ত কলকাতায় উকালতি করে প্রচুর অর্থশালী হয়েছিলেন। তিনি সাগরদাড়িতেঁ জমিদারি ক্রয় করেন ও বাড়িতে কিছু অট্টালিকা ও দেবালয়টি স্থাপন করেন।মধুপল্লী যশোর

অপূর্ব নির্মাণশৈলীর দেবালয়টিতে প্রতিবছর দুর্গাপূজা হয়। এ বাড়ির পূর্ব-পশ্চিম পার্শ্বে তার জ্ঞাতিদের বাড়ি ও জমিদারির কাছারি রয়েছে। পশ্চিম পার্শ্বের বাড়িটিতে জন্ম নিয়েছেলেন মধুসূদনের ভ্রাতুষ্পুত্র্রী কবি মানকুমারী বসু। ১৯৬৮ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বাড়িটি সংস্কার করে এবং ১৯৯৬-২০০১ সালে এলাকাটি দেয়াল বেষ্টিত করে একটি কুটিরের আদলে গেট, একটি মঞ্চ, দুটি অভ্যর্থনা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়।

বেনাপোল স্থল বন্দর

৮- বেনাপোল স্থল বন্দরঃ ( Benapole Border )

যশোরের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেনাপোল স্থলবন্দর যা শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম বেনাপোলে অবস্থিত। ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের সিংহভাগ এর মাধ্যমে সংঘটিত হয়। সরকারি আমদানী শুল্ক আহরণে বেনাপোল স্থল বন্দরটির ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ।

এখানকার মানুষের জীবিকার অন্যতম সূত্র বেনাপোল স্থল বন্দরের কাস্টমস্‌ ক্লিয়ারিং এজেন্টের কাজ।বেনাপোল মূলত বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম যেখানে একটি সীমান্ত তল্লাশী ঘাঁটি ও আন্তর্জাতিক স্থল বন্দর অবস্থিত।

distance from dhaka to benapole >> 228.8 km

এই স্থল বন্দরের শুল্ক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ। স্থল বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ। বেনাপোল রেলস্টেশানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত রেল চলাচল অনুষ্ঠিত হয়।দুবলার চর

৯- দুবলার চরঃ ( Dublar Char )

দুবলার চর মূলত জেলে গ্রাম। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শোকানোর কাজ। বর্ষা মৌসুমের ইলিশ শিকারের পর বহু জেলে চার মাসের জন্য সুদূর কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা থেকে ডেরা বেঁধে সাময়িক বসতি গড়ে সেখানে।

মেহেরআলীর খাল, আলোরকোল, মাঝেরচর, অফিসকেল্লা, নারিকেলবাড়িয়া, মানিকখালী, ছাফরাখালী ও শ্যালারচর ইত্যাদি এলাকায় জেলে পল্লী স্থাপিত হয়। এই চার মাস তারা মাছকে শুঁটকি বানাতে ব্যস্ত থাকেন। এখান থেকে আহরিত শুঁটকি চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের পাইকারী বাজারে মজুদ ও বিক্রয় করা হয়।

সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের সদর দপ্তর বাগেরহাট থেকে মাছ সংগ্রহের পূর্বানুমতিসাপেক্ষে বহরদার ও জেলেরা দুবলার চরে প্রবেশ করে থাকেন। দুবলার চর থেকে সরকার নিয়মিত হারে রাজস্ব পেয়ে থাকে। প্রতি বছর বিএলসি বা বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট, ডিএফসি বা ডেইলি ফুয়েল (জ্বালানি কাঠ) কন্‌যাম্পশন ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় বন বিভাগকে রাজস্ব প্রদান করে মৎস্য ব্যবসায়ীগণ সুন্দরবনে ঢোকার অনুমতি পান, এছাড়া আহরিত শুঁটকি মাছ পরিমাপ করে নিয়ে ফিরে আসার সময় মাছভেদে প্রদান করেন নির্ধারিত রাজস্ব।মংলা বন্দর

১০- মংলা বন্দরঃ ( Mongla )

মংলা বন্দরটি পণ্য খালাসের জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে, এখানে সর্বোচ্চ ২২৫ মিটার লম্বা জাহাজ প্রবেশ করতে পারে। প্রতিবছর মংলা বন্দরে প্রায় ৪০০ টি জাহাজ নোঙরের মাধ্যমে প্রায় ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন পন্য আমদানি-রপ্তানি করে।

এই বন্দরে পণ্য বোঝাই ও খালাসের জন্য এগারোটি জেটি, সাতটি শেড এবং আটটি ওয়্যারহাউজ রয়েছে। এছাড়াও নদীর গভীরে ভাসমান বারোটি নোঙর স্থান আছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টে নাবিকদের থাকার কথা ভেবে একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণ করেছে।

শুরুতে মংলা বন্দরটি চালনা থেকে পশুর নদীর ১৮ কিলোমিটার উজানে গড়ে উঠে, এরপর ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর বিদেশি জাহাজের জন্য বন্দর উন্মুক্ত হলে জাহাজ নোঙরের অধিক সুবিধার কথা ভেবে ১৯৫৪ সালে বন্দরটি মংলায় বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়।

বিশ্বের প্রায় সকল বন্দরের সাথে এই মংলা বন্দরের সংযোগ থাকলেও এখানে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা থেকেই বেশিরভাগ জাহাজ আসে।কচিখালী সমুদ্র সৈকত

১১- কচিখালী সমুদ্র সৈকতঃ

খুলনা, চাঁদপাই এবং শরণখোলা রেঞ্জের মধ্যে কটকা জেটির পাশে ওয়াচ-টাওয়ার সবচেয়ে উঁচু। এখানে উঠলে সামনের খোলা ভূমিতে দেখা যাবে পাল পাল হরিণ। এর ঠিক আগেই রয়েছে একটি মিঠাপানির পুকুর- হরিণ, বাঘ ছাড়াও অন্যান্য বন্যপ্রাণী এখানে জল খেতে আসে।

টাওয়ার থেকে পূবে কটকা-কচিখালী সমুদ্র সৈকতের দিকে যত যাওয়া যাবে- ততই ঘন হয় আসবে বন, সরু হয়ে যাবে ট্রেল। খোলা ভূমির লম্বা ঘাসের ভেতর দিয়ে তাই সজাগ দৃষ্টিতে এগুতে হয়। জামতলী হয়ে গহীন বনের ভেতর দিয়ে সরু পথ গিয়ে উঠেছে কটকা সৈকতে। সেখান থেকে বাঁ-দিকে সৈকত ধরে ঘণ্টা দুই হাঁটলে কচিখালী।মান্দারবাড়ী সমুদ্র সৈকত

১২- মান্দারবাড়ী সমুদ্র সৈকতঃ (Mandarbaria Sea Beach)

বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষের কাছে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত অজানা একটি স্থান। সাতক্ষীরা ( Satkhira District ) জেলার বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর নৌঘাট থেকে এই সৈকতের দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। সাতক্ষীরা থেকে নীলডুমুর পর্যন্ত গাড়ীতে এসে বাকি পথ ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা স্পীড বোটে করে যেতে হয়। সুন্দরবনের বুক চিরে বয়ে যাওয়া নদীগুলিই হচ্ছে ৭৫ কিলোমিটার যাত্রা পথের একমাত্র উৎস।

নীলডুমুর ঘাট থেকে খোলপেটুয়া-কপোতাক্ষ নদের মোহনা দিয়ে অতিক্রম করে মান্দারবাড়িয়ায় যেতে কলাগাছিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, মালঞ্চ নদী বেয়ে যেতে হয়। যাত্রাপথে নদীর উভয়পাশে চিরসবুজ সুন্দরবনক মোহিত করবে। সাথে দেখা মিলবে হরিণ সহ নানা প্রজাতির প্রাণীর চলাচল এবং পানকৌড়ি, বালিহাস সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির উড়ে যাওয়ার দৃশ্য।লালন শাহ সেতু

১৩- লালন শাহ সেতুঃ ( Lalon Shah Bridge )

পদ্মার কোলে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ছেয়ে থাকা দক্ষিণ জনপদের দ্বারপ্রান্তর ভেড়ামারা ও পাকশী বেড়ানোর এক অপরূপ নিসর্গে পরিণত হয়েছে। এখানে এলে রূপসী পদ্মার ঢেউয়ের কলধ্বনি, চারদিকে সবুজের বেস্টনী ও উত্তাল হাওয়ার পরশে যেমন হৃদয় ভরিয়ে দেয়। তেমনি এ এলাকায় রয়েছে ইতিহাস ও প্রাচীন কীর্তিসহ বিংশ শতাব্দীর প্রথম ও দেশের বৃহত্তম রেল সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ( hardinge bridge ) এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লালন শাহ সেতু।

সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্মৃতিচিহ্নে সমৃদ্ধ ভেড়ামারা পর্যটনের মনোরম স্পটে সমৃদ্ধ হয়েছে। দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরো একটি অন্যতম স্থান। প্রতিদিন শত-সহস্র দর্শনাথীর ভিড়ে মুখর হয়ে থাকে ভেড়ামারা-পাকশীর উভয় পাড়। সকাল-বিকাল মনে হয় যেন এক মিলনমেলা। স্ব-চোখে না দেখলে বুঝা যাবে না।লালন শাহ

dhaka to Lalon Shah Bridge distance >> 223.4 km

ভেড়ামারার অন্যতম কীর্তি হলো হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দক্ষিণ পাশে লালন শাহ সেতু। যমুনা সেতুর অনুরূপ লালন শাহ সেতু বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়ক সেতু। প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর ১ হাজার ৭৮৬ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৭.৫ মিটার দুই লেন বিশিষ্ট এ সেতুটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সরাসরি সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করেছে। সেতুর উভয় পাড়ে দুটি টোল প্লাজা যেন আরো শ্রীবৃদ্ধি করেছে। এই সেতুর পূর্ব প্রান্তে ১০ কি.মি. ও পশ্চিম প্রান্তে ৬ কি.মি. রাস্তাটি সৌন্দর্য কেড়েছে।মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স

১৪- মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সঃ ( Mujibnagar Complex Museum )

মেহেরপুর ( Meherpur District ) জেলার মুজিবনগর বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর উপজেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূতিকাগার মুজিবনগরে সৃষ্টি এই ইতিহাসকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছে দিতে শপথ গ্রহণের স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স ।

মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের ( mujibnagar sriti complex ) বাইরের অংশে ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, প্রথম অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ এবং পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দৃশ্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পরিক্রমা জানতে এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক এ স্থান দেখতে পর্যটকরা ভিড় করেন মেহেরপুরে।

সব সময় হেলমেট ব্যবহার করুন এবং নিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক রাইড করুন।

কৃতজ্ঞতাঃ উইকিপিডিয়া , বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন , বাংলাদেশ টাইমস , ভ্রমণ গাইড , প্রথম আলো