ইয়ামাহা স্যালুটো ১২৫ এর ৫০০০ কিলোমিটার রাইডিং রিভিউ - স্বাক্ষর
This page was last updated on 09-Jul-2024 01:13pm , By Saleh Bangla
আমি স্বাক্ষর,পেশায় একজন প্রকৌশলী। গত মার্চ মাস থেকে আমি ইয়ামাহা স্যালুটো বাইকটি চালাচ্ছি। এখন এই ৫০০০ কিলোমিটার চালানোর অভিজ্ঞতা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
ইয়ামাহা স্যালুটো ১২৫ এর ৫০০০ কি.মি. চালানোর অভিজ্ঞতা
ইয়ামাহা স্যালুটো ব্যাবহারের আগে আমি suzuki samurai 100cc, Bajaj discover 125 এবং honda cb shine ব্যবহার করেছি । বর্তমানে ইয়ামাহা স্যালুটোর মূল্য ১ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা। তবে বিভিন্ন সময়ে অফার হিসেবে আরো ৪০০০ হাজারর টাকা ডিসকাউন্ট এ পাওয়া যাচ্ছে।

এবার চলুন জেনে নিই ইয়ামাহা স্যালুটো সম্পর্কে :
ইয়ামাহা স্যালুটোতে রয়েছে ১২৫ সিসি এর সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ফোরস্ট্রোক এয়ারকুল ইন্জিন। যা সর্বোচ্চ ৮.৩ বিপিএইচ শক্তি ও ১০.১ নিউটন-মিটার টর্ক উৎপন্ন করতে পারে।

ফুয়েল সাপ্লাই সিস্টেম কার্বুরেটর, গিয়ার চারটি এবং সবগুলো পেছনে। বাইকটির ওজন ১১২ কেজি। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৮ সেন্টিমিটার, যা বেশ ভালো। তবে অনেক সময় মাঝারি বা উচু স্পিড ব্রেকার পার হওয়ার সময় লেগস্ট্যন্ড ঘষা খায় যা খুব বিরক্তিকর লাগে। বাইকটির সামনে ডিস্ক বা ড্রাম দুই ধরনের অপশনই রয়েছে,আর পেছনে ড্রাম ব্রেক। আমি ডিস্ক ব্রেকের গ্লোরি গ্রীন ভার্শন ব্যবহার করছি।

ইয়ামাহা স্যালুটোর সবচেয়ে বড় ফিচার হলো এর মাইলেজ। ইয়ামাহা ক্লেইম করে স্যালুটো ১ লিটার ফুয়েলে ৭৮ কিলোমিটার দুরত্ব অতিক্রম করতে পারে। তবে আমি পিলিয়ন সহ প্রতি লিটারে ফুয়েল দিয়ে, শহরে ৫০-৫৮ কিলোমিটার ও হাইওয়েতে ৬০-৬৫ কিলোমিটার মাইলেজ পেয়েছি। যা বেশ ভালো মনে হয়েছে আমার। বাইকটির ডিজাইন সুন্দর, বিল্ড কোয়ালিটি ভালো। বিশেষ করে হেডলাইটের ডিজাইনটা সুন্দর।
ইয়ামাহা স্যালুটোর সিট কিছুটা হার্ড ও কম্ফোর্টেবল না,বেশীক্ষণ রাইড করলে অস্বস্তিকর লাগে। অন্যদিকে হ্যন্ডেলবারটা বেশ ভালো পজিশনে,সুইচের পজিশন ঠিকঠাক। কিন্তু হর্ণ সুইচের পজিশন বেমানান লেগেছে আমার। হর্ণ সুইচের সাথে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগবে।
>>>> ইয়ামাহা স্যালুটো ১২৫ টেস্ট রাইড রিভিউ <<<<
মাইলেজ ছাড়াও ইয়ামাহা স্যালুটোর আরেকটা ভালো দিক আছে। সেটা হলো এর কন্ট্রেলিং। যেটায় আমি দশে দশ দিবো । ইয়ামাহা স্যালুটো নিয়ে আমি সর্বোচ্চ ৯৫ কিলোমিটার/ঘন্টা গতিতে চালিয়েছি। এর থেকেও বেশী গতি তোলা হয়তো সম্ভব কিন্তু আমি সে চেষ্টা করিনি। স্মুথ কন্ট্রোলিং এর পাশাপাশি এর ব্রেকটাও বেশ ভালো। সাসপেনসন যথেষ্ট স্মুথ।
এবার আসি বিক্রয় পরবর্তী সেবায়, এদিক থেকে ইয়ামাহার সার্ভিস অনেক ভালো। আমি জামালপুরের এফ.এম মোটরস নামের ইয়ামাহা শোরুম থেকে বাইকটি কিনেছি এবং তিনবার সার্ভিসিং করিয়েছি। তাদের ব্যবহার ও সার্ভিসিং সেবায় আমি সন্তুষ্ট।
এবার মাইলেজের ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা বিস্তারিত তুলে ধরছি। প্রথম ০-১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাইকের এক্সালেরেশন ছিলো খুব কম ও জড়তা পূর্ণ। মাইলেজ পেয়েছি ৪৫-৫০ কিলোমিটার/লিটার।
ব্রেক-ইন-প্রিয়ডের নিয়ম গুলো সঠিক ভাবে মেনে চালিয়েছি, জ্বালানি অকটেন ও ইন্জিন ওয়েল ইয়ামাহার ইয়ামালুব ব্যবহার করি। এরপর প্রথম সার্ভিসিং করানোর পর ১০০০-২৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ পেয়েছি ৫৫-৫৮ কিলোমিটার। এবং বাইকের পার্ফমেন্সও দিন দিন ভালো হচ্ছিলো।
Also Read: পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ মিয়াকে ইয়ামাহা স্যালুটো মোটরসাইকেল উপহার দিল এসিআই মটরস
২৫০০ কিলোমিটার পরে ইয়ামাহা মাইলেজ চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহন করি এবং প্রতি লিটারে ৬৪ কিলোমিটার/লিটার মাইলেজ পেয়েছি। ৪০০০ কিলোমিটারে ২য় সার্ভিসিং করানোর পরে বাইকের পার্ফমেন্স আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। বিশেষ করে এর এক্সলেরেশন। এখন প্রতিদিনের রাইডে বাইকটিকে আরো স্মুথ ও রিফাইন্ড মনে হয়।
আমার কাছে ইয়ামাহা স্যালুটো যা ভালো লেগেছে :
১. স্ট্যান্ডার্ড ও স্মার্ট ডিজাইন।
২. ইন্জিনের স্মুথ সাউন্ড।
৩. সাশ্রয়ী মাইলেজ।
৪.ভালো কন্ট্রোলিং, ভাইব্রেশন নেই বললেই চলে।
৫.সার্ভিসিং ও বিক্রয় পরবর্তী সেবা।
ইয়ামাহা স্যালুটো যে দিক গুলো ভালো লাগেনি :
১.ইয়ামাহা স্যালুটোর ফুয়েল ট্যাংক ছোট। ফলে মাত্র ৭.৬ লিটার ফুয়েল ধারন করতে পারে ট্যাংকটি।
২.বসার সিট তেমন আরামদায়ক না।
৩.ইন্জিনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা মাত্র ৮.৩ bhp যা বেশ কম। এখন বাজারে অন্যান্য ১০০/১১০ সিসি মোটর বাইকের পাওয়ারও এর কাছাকাছি থাকে।
৪. হেডলাইটের আলো তীব্র না। রাতে চালতে অসুবিধা নাহলেও তেমন স্বস্তিদায়ক না।
৫.বর্তমান বাজারের তুলনায় দাম কিছুটা বেশী মনে হয়েছে। তবে কোয়ালিটির দিক থেকে দাম ঠিকঠাক।
যারা একটু রাফ রাইডিং করেন এবং বেশী পাওয়ারফুল বাইক চান তাদের বলবো ইয়ামাহা স্যালুটো বাইকটি কেনার আগে নিজে অন্তত একবার চালিয়ে দেখুন এরপরে সিদ্ধান্ত নিন। কারন আমার বন্ধুদের অনেকেই বাইকটির পাওয়ার ও এক্সলেরেশন নিয়ে কিছুটা অভিযোগ করেছে।
তবে যারা ভালো মাইলেজ সাথে সুন্দর স্টাইলিশ বাইক চাচ্ছেন তাদের জন্য ইয়ামাহা স্যালুটো একটি ভালো বাইক হতে পারে। সবদিক থেকে বিবেচনা করলে আমি ইয়ামাহা স্যালুটোর পার্ফমেন্স নিয়ে সন্তুষ্ট।
লিখেছেনঃ সালেহ মাহমুদ স্বাক্ষর
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।
