ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ বনাম হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়া) এর তুলনা

This page was last updated on 07-Jul-2024 03:54am , By Shuvo Bangla

১৫০ সিসির প্রিমিয়াম বাইকের কথা বললেই সবার আগে ইয়ামাহা আর হোন্ডার নাম চলে আসে। কারণ বাংলাদেশে ইয়ামাহা আর১৫ ও হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ব্যাপক জনপ্রিয়। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, মানুষ ধন্দে পড়ে যান কোনটা কিনবেন! যদিও দুটি বাইকই পারফরমার, তার পরও এরা বেশ ভিন্ন। আর সম্প্রতি বাংলাদেশের বাজারে ইন্দোনেশিয় সিবিআর১৫০আর চলে আসায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে গেছে। সেজন্যই এই বাইক দুটির মধ্যে ধন্দ দূর করতেই আমাদের আজকের আয়োজন—

আর১৫ ভি২ বনাম সিবিআর১৫০আর ২০১৬ এর ‍তুলনামূলক বিশ্লেষণ

ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ বনাম হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়)পরিচিতি

ইয়ামাহার ঐতিহ্যবাহী মটোজিপি মডেল ইয়ামাহা আর১ এর কনিষ্টভ্রাতা ইয়ামাহা আর১৫ ভি২। এই বাইকটির পরিচিতি নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। কারণ বাইকটি এমনিতেই বাজারে বেশ পরিচিত। এখনো দেশের বাজারে প্রচুর আর১৫ দেখা যায়, যেগুলো ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে আনা হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, আর১৫ পুরোপুরি একটি ট্র্যাক রেসিং পারফরমেন্স বাইক।

অপরদিকে হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়া) ১৫০ সিসির রেসিং বাইক যেটা হোন্ডা ইন্দোনেশিয়া বাজারজাত করে। এটা সিবিআর১৫০আর সিরিজের সবচেয়ে আধুনিক বাইক, যেটা ইন্দোনেশিয়ায় নতুন করে মানোন্নয়ন ও ডিজাইন করা হয়েছে। এটা থাইল্যান্ডের মডেলের চেয়ে প্রযুক্তিগত দিক থেকে ভিন্ন। অবশ্য এটাতেও সেই ঐতিহ্যবাহী সিবিআর (ক্রস বিম রেসিং) রেসিং ডিএনএ ব্যবহার করা হয়েছে, তবে বেশ ভিন্ন উপায়ে। এটা আসলে হোন্ডা ইন্দোনেশিয়ার ডিজাইন করা ট্র্যাক রেসিং ও স্ট্রিট বাইকের একটি সংমিশ্রণ।

এটা তো জানা কথা, বাংলাদেশের প্রিমিয়াম বাইক মানেই হলো আর১৫ বা সিবিআর১৫০আর। আর এই দুইটির প্রতিযোগিতায় নতুন সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া আরো চাঞ্চল্য এনে দিয়েছে। এবার তাহলে বাইক ‍দুটির তুলনা করা যাক।

ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ বনাম হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়)বাহ্যিক তুলনা

তুলনা করতে গেলে দেখা যাবে, ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ আর হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়া) উভয় বাইকই দেখতে বেশ অ্যাগ্রেসিভ ও গর্জিয়াস। দুই বাইকেই সর্বোচ্চ অ্যারোডাইনামিক নিশ্চিত করতে পুরোপুরি ফেয়ারিং করা হয়েছে।

ইয়ামাহা আর সিরিজের অন্য বাইক মূলত ইয়ামাহা আর১ এর মতো একই দৃষ্টি আকর্ষণী থিমের ওপর ভিত্তি করেই ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ তৈরি করা হয়েছে। এর দৃষ্টি আকর্ষণী জ্বালানি ট্যাঙ্ক ও শার্প ডুয়েল হেডল্যাম্প রয়েছে। বাইকটির সিট স্প্লিট প্রকৃতির, যা একে আরো বেশি অ্যাগ্রেসিভ লুক দিয়েছে। তবে এটাতে কোনো গ্র্যাব রেইল না থাকায় কিছুটা ভয়ঙ্করও বটে!

উল্টোদিকে হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ ইন্দোনেশিয় ভার্সনেও হোন্ডার রেসিং ডিএনএ ও হোন্ডা সিবি সিরিজের সংমিশ্রণ ঘটেছে। এতে আবার ডাবল পিট এলইডি হেডল্যাম্প রয়েছে, সঙ্গে আইব্রো এলইডি ডিআরএলও রয়েছে।

ইন্দোনেশিয় সিবিআর সিরিজের জ্বালানি ট্যাঙ্কও বেশ আকর্ষণীয়। এটার সিটও স্প্লিট এবং আর১৫ এর মতো অ্যাগ্রেসিভ ডিজাইনের। তবে সিবিআর প্রেমীরা একটা ক্ষেত্রে আর১৫ প্রেমীদের একহাত নিতে পারবে—সিবিআর এ দৃশ্যমান গ্র্যাব রেইল না থাকলেও সিটের নিচে রয়েছে সেটা।

উভয় বাইকই রেসিংয়ের জন্য ডিজাইন করা। সেজন্যই এর বসার ভঙ্গিটাই রেসিংয়ের মতো এবং দেখতে ও গঠনে রেসিং বাইক। তবে তুলনামূলকভাবে ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ দেখতে বেশি আকর্ষণীয়। এর বডির ডিজাইন পুরোই কৌণিক ও অ্যাগ্রেসিভ। এতে মূল লক্ষ্যই রাখা হয়েছে ট্র্যাক রেসিংয়ের ওপর।

অপরদিকে ইন্দোনেশিয় হোন্ডা সিবিআর১৫০আর এখন অনেক অ্যাগ্রেসিভ করা হয়েছে এর আগের থাইল্যান্ড ভার্সনের চেয়ে। এর গোটা বডিতেই কাটিং এজ প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে। এবং দেখা যাবে এর প্রতিটি অংশই খাঁজকাটা ও বিষমাত্রিক। তাছাড়া এর ফ্রেমও থাইল্যান্ড ভার্সন, এমনকি আর১৫ এর চেয়েও আলাদা।  এই সিবিআর১৫০আর ডিজাইন করা য়েছে মূলত স্ট্রিট রেসিং ও ট্র্যাক রেসিংয়ের জন্য।

ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ বনাম হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়)– কাঠামোগত তুলনা

ইয়ামাহা আর১৫ ভি২-তে টুইন টিউব ডেল্টাবক্স ফ্রেম ব্যবহার করা হয়েছে। সঙ্গে ট্রাস স্ট্রাকচার অ্যালুমিনিয়াম সুইং আর্ম লাগানো হয়েছে এতে। এর ফ্রেমটি ইয়ামাহা আর সিরিজের অনুকরণেই বানানো হয়েছে, যা অধিক দৃঢ়তা, ভালো হ্যান্ডেলিং ও পিছনের চাকায় অসাধারণ ট্র্যাকশন দিতে পারে।

বিপরীতে ইন্দোনেশিয় সিবিআর১৫০আর এ সর্বাধুনিক ডায়মন্ড ট্রাস ফ্রেম ব্যবহার করা হয়েছে। এটা ব্যবহারের কারণ বাইকটিকে অধিক হালকা ও স্পোর্টিং করে তোলা। তবে এর সুইং আর্মগুলো আগের মতো আয়তাকার স্টিল টিউব হলেও ভালো স্ট্যাবিলিটি নিশ্চিত করার জন্য মানোন্নয়ন করা হয়েছে।

উভয় বাইকেই সামনে ও পিছনে প্রায় একই ধরনের সামনের ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি নতুন সিবিআর১৫০আর  এ ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ এর মতো প্রোলিঙ্কড সাসপেনশন লাগানো হয়েছে। তবে আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ এর চেয়ে সিবিআর১৫০আর এর সাসপেনশন বেশি আরামদায়ক।

অন্য অংশগুলোর মাঝে হ্যান্ডেলবার, সিটিং পজিশন, ব্রেক, কন্ট্রোল সুইচগুলো মোটামুটি এক রকমেরই। তবে নতুন সিবিআর১৫০আর ওডো মিটারটি অনেক বেশি দৃষ্টি আকর্ষণী। এই ওডোটিতে অনেক নতুন ফিচার যোগ করা হয়েছে। ফলে এটা নিয়ে সিবিআর প্রেমীরা আর১৫ ব্যবহারকারীদের কথা শোনাতেই পারেন!

ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ বনাম হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়)– স্পেসিফিকেশনের তুলনা

ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ ও হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়া) এর তুলনামূলক বিশ্লেষণে যাওয়ার আগে বাইক দুটির স্পেসিফিকেশন দেখে নেওয়া দরকার।

স্পেসিফিকেশনইয়ামাহা ওয়াই জেড এফ আর১৫ ভি২হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়া)
ইঞ্জিনসিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪ স্ট্রোক, লিকুইড কুলডসিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪ স্ট্রোক, লিকুইড কুলড এসআই ইঞ্জিন
ডিসপ্লেসমেন্ট১৪৯ সিসি১৪৯.১৬ সিসি
বোর x স্ট্রোক৫৭ মিমি x ৫৮.৭ মিমি৫৭.৩ মিমি x ৫৭.৮ মিমি
কম্প্রেশন রেশিও১০.৪ : ১১১.৩ : ১
ভাল্বসিঙ্গেল ওভারহেড ক্যামশ্যাফট (এসওএইচসি) বিশিষ্ট ৪ ভাল্বডাবল ওভারহেড ক্যামশ্যাফট (ডিওএইচসি) বিশিষ্ট ৪ ভাল্ব
সর্বোচ্চ ক্ষমতা১৭ পিএস @ ৮,৫০০০ আরপিএম১৭.১ বিএইচপি (১২.৬ KW) @ ৯০০০ আরপিএম
সর্বোচ্চ টর্ক১৫ নিউটন মিটার @ ৭৫০০ আরপিএম১৩.৭ নিউটন মিটার @ ৭০০০ আরপিএম
জ্বালানি সরবরাহইসিইউ নিয়ন্ত্রিত ফুয়েল ইঞ্জেকশনইসিইউ (পিজিএম-এফআই) নিয়ন্ত্রিত ফুয়েল ইঞ্জেকশন
ইগনিশনটিসিআইসম্পূর্ণ ট্রানজিস্টরাইজড
স্টার্টিংইলেকট্রিক
এয়ার ফিল্টারপেপার
ট্রান্সমিশন৬ স্পিড, ১-নিউট্রাল-২-৩-৪-৫-৬

ফ্রেমডেল্টা বক্সডায়মন্ড (ট্রাস)
আয়তন (দৈর্ঘ্য x প্রস্থ x উচ্চতা)১,৯৭০ মিমি x ৬৭০ মিমি x ১০৭০ মিমি১৯৮৩ মিমি x ৬৯৪ মিমি x ১০৩৮ মিমি
হুইল বেজ১৩৪৫ মিমি১৩১১ মিমি
ভূমি থেকে উচ্চতা১৬০ মিমি১৬৬ মিমি
স্যাডল হাইট৮০০ মিমি৭৮৭ মিমি
কার্ব ওজন১৩৬ কেজি১৩৫ কেজি
জ্বালানি ধারণ ক্ষমতা১২ লিটার১২ লিটার

সাসপেনশন (সামনে/পিছনে)টেলিস্কোপিক / লিঙ্কড টাইপ মনোক্রসটেলিস্কোপিক / স্প্রিং লোডেড হাইড্রলিক (মনোশক)
ব্রেক (সামনে/পিছনে)হাইড্রলিক ডিস্ক ব্রেক
টায়ার সাইজ (সামনে/পিছনে)১০০/৮০-১৭ // ১৩০/৭০-১৭; টিউবলেস

ব্যাটারি১২ ভোল্ট, ৩.৫ অ্যাম্পিয়ার  আওয়ার১২ ভোল্ট, ৫ অ্যাম্পিয়ার আওয়ার (এমএফ)
হেডল্যাম্প১২ ভোল্ট, ৩৫ ওয়াট/ ৩৫ ওয়াট (ডাবল ইউনিট)৬ পিট এলইডি (ডাবল ইউনিট)
স্পিডোমিটারসম্পূর্ণ ডিজিটাল, অ্যানালগ রেভ কাউন্টারসম্পূর্ণ ডিজিটাল, ডিজিটাল রেভ কাউন্টার
জ্বালানি সাশ্রয়+/- ৩৫ কিমি/লিটার+/- ৪০ কিমি/লিটার
সর্বোচ্চ গতি+/- ১৩৫ কিমি/ঘণ্টা+/- ১৩৫ কিমি/ঘণ্টা




*এখানে প্রদত্ত সকল স্পেসিফিকেশন যেকেোন সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়ম, অফার ও প্রমোশনের কারণে পরিবর্তন হতে পারে। বাইকবিডি এরূপ পরিবর্তনের জন্য দায়ী থাকবে না।

ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ বনাম হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়)– অন্তঃসারীয় তুলনা

স্পেসিফিকেশন তুলনা দেখার পর এবার দেখা দরকার ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ বনাম হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ ইন্দোনেশিয়া) এর অন্তঃসারীয় তুলনা। যান্ত্রিক দিক থেকে উভয় বাইকই ১৫০ সিসিতে প্রিমিয়াম পারফরমার।

বাইক দুটির ইঞ্জিন মোটামুটি ১৪৯ সিসির।ইঞ্জিনগুলো ৪ স্ট্রোক ও সিঙ্গেল সিলিন্ডার। দুটির ইঞ্জিনই ওয়াটার কুল্ড। জ্বালানি সরবরাহ করা হয় ইএফআই প্রযুক্তিতে এবং উভয়টিই ৪ ভাল্ব বিশিষ্ট।

যান্ত্রিক দিক থেকে বাইক দুটির মূল পার্থক্য হলো ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ এর ইঞ্জিন সিঙ্গেল ওভারহেড ক্যামশ্যাফট, অর্থাৎ এসওএইচসি বিশিস্ট। অপরদিকে হোন্ডা সিবিআর১৫০আর এরটি ডুয়াল ওভারহেড ক্যামশ্যাফট বা ডিওএইচসি।

আর এটা তো জানা কথা যে, এসওএইচসি’র চেয়ে ডিওএইচসি বেশি ভালো। এই ইঞ্জিনে অধিক চাপ ও দীর্ঘ ব্যবহারেও ভাল্ব স্মুথলি চলে। তাছাড়া ডিওএইচসি’তে আওয়াজও কম হয়। যার কারণে ইয়ামাহা আর১৫ ভি২’র চেয়ে হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ বেশি নীরব।

অন্যান্য যান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বলতে গেলে, উভয় বাইকেরই সিলিন্ডার অর্থাৎ বোর ও স্ট্রোক প্রায় সমান। অবশ্য নতুন ইন্দোনেশিয় সিবিআর১৫০আর এ বোর ও স্ট্রোক পুরোই পরিবর্তন করা হয়েছে।

এখনকার ইঞ্জিনটি স্কয়ার, আগেরগুলোর মতা ওভার স্কয়ার নয়। আমাদের মতে, এই রকমের ইঞ্জিন বেছে নেওয়া হয়েছে হোন্ডা সিবি সিরিজ থেকে, যাতে নিম্ন আরপিএমেও ভালো অ্যাক্সিলারেশন পাওয়া যায়। তাছাড়া এটা জ্বালানিও সাশ্রয় করে। তবে এটি থাইল্যান্ডের সিবিআর১৫০আর, যার ইঞ্জিন ওভার স্কয়ার, সেটার চেয়ে কম গতিসম্পন্ন।

ফলে এবার নতুন সিবিআর১৫০আর ও ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ এর সর্বোচ্চ গতি ও অ্যাক্সিলারেশন সমান সমানই হবে! ইন্দোনেশিয় সিবিআর১৫০আর যেকোনো আরপিএমে র’ অ্যাক্সিলারেশন বিশেষত নিম্ন আরপিএমে ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ এর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে।

ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ বনাম হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়)– পারফরমেন্স

সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও টর্কের দিক থেকে হিসাব করলে ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ ও হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়া) এখন মোটামুটি একই অবস্থানে রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আর১৫ ভি২ কিছুটা বেশি সুবিধা পাবে।

ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ এর প্রতিযোগী হোন্ডা সিবিআর১৫০আর এর চেয়ে ০.১ পিএস কম শক্তি উৎপন্ন করে, যেটা আপনি হয়তো গুণতিতেই ধরবেন না! কিন্তু টার্কের দিক থেকে আর১৫ ভি২ বেশ এগিয়ে আছে, কারণ এটি ১৫ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। কিন্তু সিবিআর১৫০আর মাত্র ১৩.৭ নিউটন মিটার! সুতরাং আর১৫ ভি২ দ্রুত অ্যাক্সিলারেট করতে পারবে।

কিন্তু তাই বলে সিবিআর১৫০ ব্যবহারকারীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ নতুন সিবিআর১৫০আর এর কম্প্রেশন রেশিও আর১৫ ভি২ এর চেয়ে অনেকখানি বেশি। সিবিআর১৫০আর এর কম্প্রেশন রেশিও ১১.৩ : ১; যেখানে ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ এর মাত্র ১০.৪ : ১। ফলে সিবিআর১৫০আর সহজেই দূরত্বটা কমিয়ে ফেলতে পারবে। এবং আবারো উভয় বা্ইকই রেডি পিকাপ ও র’ অ্যাক্সিলারেশনের দিক থেকে সমানে সমান!

আবার সর্বোচ্চ গতির দিক থেকে হিসাব করলেও দেখা যাবে উভয় বাইকই প্রায় একই অবস্থানে রয়েছে। এখানে বলে রাখা দরকার থাই সিবিআর১৫০আর এর সর্বোচ্চ গতি কিছুটা বেশি হলেও এর অ্যাক্সিলারেশন ও রেডি পিকাপ কিছুটা কম।

তবে জ্বালানি সাশ্রয়ের দিক থেকে ইন্দোনেশিয় সিবিআর১৫০আর বেশ এগিয়ে রয়েছে। এই বাইকে হোন্ডার সিবি সিরিজের সংমিশ্রণ থাকায় এটি জ্বালানি সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে। তাছাড়া অধিক কম্প্রেশন রেশিওর সঙ্গে প্রশস্থ আরপিএমের ঘর থাকায় নিম্ন বা উচ্চ উভয় আরপিএমেই বাইকটি জ্বালানি সাশ্রয়ী।

তবে উল্টোদিকে ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ সকল আরপিএমেই একই জ্বালানি খরচ করে। তবে এটা ইন্দোনেশিয় সিবিআর১৫০আর এর চেয়ে কিছুটা বেশি তেল খায়।

ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ বনাম হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়)– সার্ভিস ও মেইনটেন্যান্স

সার্ভিস ও মেইনটেন্যান্স যেকোনো মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর জন্যই মূল চিন্তার বিষয়। ইয়ামাহা আর১৫ বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে। কর্ণফুলী, বিভিন্ন আমদানীকারক, পরবর্তী সময়ে এসিআই মটরস ও বেশ কিছু বর্ডার ক্রস অবৈধ আর১৫ দেশের বাজারে দেখা যায়। এর ফলে এর খুচরা যন্ত্রাংশও বেশ সহজলভ্য।

কিন্তু মূল সমস্যা হলো ভারতীয় ও থাইল্যান্ডের সিবিআর১৫০আর এর ক্ষেত্রেও একই সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু ইন্দোনেশিয় সিবিআর১৫০আর এর ক্ষেত্রে খুচরা যন্ত্রাংশ ও সার্ভিস করানো এতো সহজ হয় না। অল্প কিছু অভিজ্ঞ মেকানিকরাই এই নতুন সিবিআর১৫০আর এর সার্ভিসিং ও সারাই করতে পারেন। সমস্যা এতোটুকুই!

ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ বনাম হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়)– চূড়ান্ত ফয়সালা

তাহলে পাঠক আলোচনার শেষপ্রান্তে চলে এসেছি। এ পর্যায়ে এই তুলনামূলক বিশ্লেষণের চূড়ান্ত ফয়সালা করে ফেলা দরকার। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই আমরা বাইক দুটির বাস্তব অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবো। কিন্তু তার আগে কিছু হিসাব মিলিয়ে দেখে নিই।

অফিসিয়াল স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী উভয় বাইকই মোটামুটি একই বস্থানে রয়েছে। অ্যাক্সিলারেশন, গতি, কন্ট্রোল ও ডিজাইন সব দিক থেকেই আর১৫ ভি২ ও সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়া) সমান সমান।

তবে নতুন সিবিআর১৫০আর সাসপেনশন, আরাম ও জ্বালানি সাশ্রয়ের দিক থেকে কিছুটা এগিয়ে রয়েছে।

আর এর বিপরীতে ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ দীর্ঘ স্থায়িত্ব, সহজলভ্যতা, সার্ভিস ও খুচরা যন্ত্রাশের সহজপ্রাপ্যতার দিক থেকে এগিয়ে আছে।

পাঠক, আমাদের অফিসিয়াল টেস্ট রাইডের আগে আলোচনা এখানেই শেষ করছি। ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ বনাম হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ (ইন্দোনেশিয়া) এর তুলনা নিয়ে যদি আপনার কোনো জিজ্ঞাসা বা যোগ করার থাকে তবে আমাদেরকে জানান। আমাদের ফেইসবুক পেজ, গ্রুপ কিংবা ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

আর্টিকেলটি পূর্বে ইংরেজিতে প্রকাশ করা হয়েছিলো।