আমার ব্যবহার করা ৪ টি বাইকের রাইডিং অভিজ্ঞতা - রুবায়েত

This page was last updated on 11-Sep-2024 06:36am , By Shuvo Bangla

আমি রুবায়েত মাহমুদ। আজ আপনাদের সাথে আমার ৪ টি বাইকের রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো । আমি ছোট থেকে স্কুল জীবন শেষ করেছি আমার গ্রামে। আমার গ্রাম এর বাড়ি মিরসরাই , যেটা কিনা চট্টগ্রাম জেলার এর বিখ্যাত একটি উপজেলা একটি । 

ঢাকা - চট্টগ্রাম হাইওয়ে এর যে প্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম এর শুরু ঐটাই মিরসরাই উপজেলা। বর্তমানে আমি চট্টগ্রাম শহর এর বহু পরিচিত টুরিস্ট স্পট ফয়েজলেক এ থাকি। যেহেতু গ্রামে জীবনের স্বর্ণসময় টা কাটিয়ে এসেছি , সেহেতু বাইক এর প্রতি আগ্রহ থাকা টা অস্বাভাবিক কিছু না । 

ছোট থেকেই বাবার বাইক দেখছি , আর কিছু সময় পর পর গিয়ে বাইকে উঠার চেষ্টা করতাম , বাবা বলতো যেদিন আমি ২ পায়ে বাইকের নাগাল পাবো তখন আমাকে বাইক চালানো শিখাবে। এরপর থেকে অপেক্ষা আর অপেক্ষা কবে যে লম্বা হবো , কবে যে দু পায়ে বাইকে উঠে বসবো। 

সময়ের সাথে সাথে বড় হতে থাকি এমন সময় আমি নিজে নিজে টুক টাক বাইক এর ধারণা নিয়ে বড় হচ্ছিলাম। যখন আমি দশম শ্রেনী তে পা রাখি তখন একদিন সাহস করে বাইক চালানোর চেষ্টা করলাম, যদিও ১ম গিয়ার থেকে ক্লাস ঠিক ঠাক ভাবে রিলিজ করতে নাহ পারার কারণে বাইক ধাক্কা দিয়ে অফ হয়ে যেতো। 

এরপর আস্তে আস্তে আরও জ্ঞান নিলাম একদিন আবার চেষ্টা করলাম অবশেষে আমার বাইক চলনো শুরু করলাম । এরপর থেকে আমার বাইকিং জগতে পা রাখা এখন পর্যন্ত আমার বাইক চলছে তার উদ্দোম গতিতে। 

এখন আসি আমার জীবনের প্রথম বাইক নিয়ে কিছু কথায়। আমার জীবনের প্রথম বাইক ছিলো TVS Apache 4V যেটাকে সবাই পাগলা গোড়া হিসেবেই চিনে। আমার পূর্বের বাইকিং অভিজ্ঞতা থাকার কারণেই আমি এই বাইকটি পছন্দ করি। যদিও আমার জীবনের প্রথম বাইক টা কেনা হয় সেকেন্ড হ্যান্ড হিসেবে।  আমি নিয়ে ছিলাম ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে সেটি মাত্র ৬৫০০ কিলোমিটার অডো মিটার রিডিং ছিলো।  

তখন বাজারে ভ্যালু ফর মানি বাইক ছিলো TVS Apache 4v। তার পাশাপাশি আকর্ষণীয় ডিজাইন, স্পোর্টি লুকে সবারই নজড় কাঁড়ার মতো বাইক ছিলো এটি তার উপর কালো রঙ।  আর কি লাগে একটা বাইক পছন্দ হওয়ার জন্য ! এই বাইকটি মোটামুটি ১ বছর চালিয়েছিলাম এরপর কেনো জানি মনের ভিতর আগ্রহ জাগলো যে অন্য কোন বাইকে শিফট হই এরপর আমি Tvs 4v টা বিক্রি করে দিলাম।

এইবার অনেক রিভিউ ভিডিও দেখে মনস্থির করলাম যে এইবার একটা ভদ্র বাইকে শিফট হবো, ভদ্র বাইক মানে ত সবাই Pulsar কেই বুঝে। এরপর টাকা গুছিয়ে নিয়ে ফেললাম Pulsar 150 DD। এক কথায় আমি পুরোপুরি লোহার একটি বাইকে শিফট হলাম। Pulsar UG5 বাইকটি আমি ক্রয় করি ২ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা দিয়ে তাও একটি অফার প্রাইসে, যেটা কিনা ক্রয় করি আমার নিকটস্থ বাজাজ বাংলাদেশ এর শোরুম থেকে। 

এরপর থেকে শুরু নতুন বাইক এর সাথে আবার নতুন করে পথচলা, এই পথচলায় আমি বুঝতে পারলাম যে বাইকের রেডি পিকাপ যত কম যেটা তত ভদ্র বাইক।  এইছাড়া নিজেকে বুঝ দেয়ার আর কোন উপায় তো নেই! Pulsar বাইক এর আসল দিক হলো এর বিল্ড কোয়ালিটি, যেটা এক কথায় অসাধারণ। তার উপর বাইকের লুকস টা। যদিও পুরনো লুকস তাও অনেকের সোনালি অতীত এই বাইক।

আমার বাইকের সম্পর্কে জ্ঞান মোটামুটি থাকার কারণে আমি আমার বাইক সব সময় টিপটপ কন্ডিশন এ রাখার চেষ্টা করতাম, যার কারণে আমি কখনোই কোন ধরনের সমস্যায় পড়িনি বাইক নিয়ে। কারণ আমি বিশ্বাস করি টাইম টু টাইম সার্ভিস করালে বাইক এর কোন মেজর সমস্যা দেয় নাহ সহজে।  

এইভাবে ১ বছর ৫ মাস চালানোর পর ১২৮০০ ওডো তে আমি আমার বাইকটা সেল করে দেই । কারণ আমার সব বাইক এর মালিক পর্যায়ে টেস্ট নেয়ার ইচ্ছা আছে । এরপর আমি অনেক ঘাটাঘাটি করে Hero  এর সব চেয়ে আপডেট বাইক Hero Thriller 160R DD টা কেনার সিদ্ধান্ত নেই । যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শেষমেশ কিনেও ফেলি আমার নিকটস্থ Hero এর শোরুম থেকে যেটা কিনা ফেনী তে অবস্থিত। 

Hero Thriller এর সব চেয়ে ভালো দিক হলো এর কম্ফোর্ট + দাম।  এই সেগমেন্ট বিবেচনায় ভ্যালু ফর মানি বাইক একমাত্র Hero thriller এই আছে।  মাইলেজ, ব্রেকিং দুর্দান্ত। এর কন্ট্রোলিং ও অনেক ভালো অন্যান্য বাইকের তুলনায়। সিটি রাইডিং এ বেশ মজা পাচ্ছি বলতে গেলে। 

তবে Hero Bangladesh এর আফটার সেলস সার্ভিস আসলেই ভালো। উনারা ৫ বছরের ইঞ্জিন পার্টস ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে যা আসলেই অনেক সাপোর্টিভ বলতে গেলে। আমি অনেক কিছুর জন্য ওয়ারেন্টি ক্লেইম করে ছিলাম যেমন ফুয়েল পাম্প- থ্রটল পিস্টন ইত্যাদি।

উনারা কথা দিয়ে কথা রাখে এইটা মানতে হবে।  এরপর আমার অনেক দিনের শখ ছিলো একটা ADV বাইকের যা অবশেষে পরিপূর্ণতা পায়।  গত মাসে আমি একটা Lifan KPT 4V বাইক ক্রয় করি, যেটি কিনা সেকেন্ড হ্যান্ড নিয়েছি যেটা খুঁঁজে পেতে আমাকে সাহায্য করে BikeBD এর অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ। বর্তমানে আমি ২টা বাইক চালাচ্ছি একটা Hero Thriller  & Lifan KPT 4V।  

ভালো খারাপ দিক বিবেচনা করলে আমি কখনোই বাইকের খারাপ দিক গুলো নজরে নি নাহ। যতটুকু সম্ভব নিজের মতো করে বাইকের ল্যাকিংস গুলো কে সমাধান এর চেষ্টা করি, খারাপ দিক মাথার রেখে কখনোই বাইক চালানো সম্ভব না আসলে।

কোন বাইকই একবারে পারফেক্ট হয়ে কোম্পানি থেকে আসে নাহ, দিন শেষ এ নিজের বাইক নিজেকে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ভাবে নিজের মতো করে তৈরি করে নিতে হয় !ইঞ্জিন অয়েল আসলে আমি একটা সময় Motul এর অনেক বড় ফ্যান ছিলাম যদিও সময়ের বিবর্তনে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে Motul Authentic পাওয়া টা অনেক কষ্ট সাধ্য হয়ে গেছে। তাই সকল দিক বিবেচনায় আমি বর্তমানে Shell Advance Ultra 10w40 ব্যবহার করছি আমার ২টা বাইকেই। যদিও দাম টা একটু বেশি হয়।  

লং ট্যুর এর বিষয়ে আসলে আমি আমার Hero Thriller বাইকটা দিয়ে চট্টগ্রাম এর সব জায়গা ভ্রমন শেষ। কাপ্তাই, রাঙামাটি, সাজেক, বান্দরবান, কক্সবাজার, টেকনাফ সব বাইক নিয়ে ভ্রমন শেষ। সময়ের ব্যস্ততার কারণে আমি এখনো পর্যন্ত চট্টগ্রাম এর বাহিরে যেতে পারিনি।  

Lifan KPT দিয়ে আমার এখনো বড় কোন ট্যুর করা হয়নি। কাপ্তাই রাঙামাটি যাওয়া হয়েছে অনেক বার। ঈদ এর পর ইইনশাল্লাহ বড় কিছুর প্লানিং আছে। Lifan KPT বাইক টা আসলে রেডি টু রাইড বাইক থাকে নাহ, কোম্পানির উচিত কিছু ছোট খাটো বিষয় গুলো মাথায় নেয়া। যেমন- চেইন, সাসপেনসন আর বাইকের থ্রটল ল্যাগ। 

যদিও আমি যতটুকু সম্ভব নিজের মতো করে সমাধান করেছি। তবুও একটা বাইক সমস্যা ছাড়া তৈরি করে দেয়া কিন্তু কোম্পানির দায়িত্ব এবং কর্তব্য। 

টপ স্পিড এ ব্যপারে আসলে আমি আসলে অতো রাশ রাইড করি নাহ তবে মাঝেমাঝে রাস্তা একদমই ফ্রি থাকলে চেষ্টা করা হয়।  Hero Thriller 160R বাইকটিতে আমি টপ স্পিড পেয়েছিলাম ১২৭ , টপ রানে বাইকটি দুর্দান্ত পারফর্ম করে। মাইলেজ এর দিক বিবেচনা করে আমি সিটিতে ৪০ এবং হাইওয়েতে ৪৫+ পেয়েছি Hero Thriller বাইকটি থেকে।

পাশাপাশি আমি আমার বাইক এর ব্রেকিং আরও শক্তিশালী করার জন্য Yongli ব্রেক প্যাড ব্যবহার করি অনেক আগে থেকে। বর্তমানে আমার Hero Thriller & Lifan KPT 4V ২ টা তেই Yongli এর ব্রেক প্যাড ইন্সটল করা আছে। Yongli ব্রেক প্যাড এর পারফরম্যান্স এর বিষয়ে নতুন করে কিছু বলা লাগে নাহ। ইতিমধ্যে আমাদের BikeBd YouTube চ্যানেল এর এইটার একটা বিস্তারিত ভিডিও আছে। 

Lifan KPT 4V এর টপ স্পিড একবার ট্রাই করেছিলাম 138KMPH পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিলো।  KPT এর মাইলেজ যদিও একটু কম ৷ সিটি তে ৩০-৩২ / হাইওয়ে তে ৩৫-৪০। যদিও মাইলেজ নির্ভর করে রাইডার রাইডিং স্টাইল এর উপর, তবুও আমি একটা ভদ্র রাইডিং এর মাইলেজ টা জানালাম। KPT 4V এর মজার বিষয় হলো এটির ইঞ্জিনের পাওয়ার।

অসাধারণ পাওয়ার ডেলিভারি করে এই বাইক।  কখনোই ১৫০ সিসির বাইক মনেহয় নাহ। অসাধারণ একটু বাইক বলতে গেলে, এইসব বিষয় দেখলে মাইলেজ কোন ম্যাটার এই করে নাহ বলতে গেলে।  যে পরিমান পাওয়ার ডেলিভারি করে সে তুলনায় মাইলেজ বলতে গেলে ঠিকই আছে। এই বাইকটিতে আমি হর্নেট এর মনোশক এবং গিয়ার এক্স এর ও রিং চেইন ইন্সটল করি। এর পর থেকে সব কিছু ঠিকঠাক, চালিয়ে বেশ মজা পাচ্ছি।  

আর তাছাড়া বাইকটি আমি শুধু মাত্র হাইওয়েতে, সিটিতে রাতে এবং ট্যুরে গেলে রাইড করে থাকি। তাছাড়া আমি রেগুলার আমার Hero Thriller বাইকটি রাইড করে থাকি।বলতে গেলে Hero Thriller বাইকটি রেডি টু গো থাকে, এখনো পর্যন্ত আমি এই বাইকে কিছু চেঞ্জ করতে হয়নি। এখনো পর্যন্ত সব কিছু স্টক এই আছে, তবে এই বাইকের ফুল পারফরম্যান্স এর জন্য অবশ্যই ভালো ফুয়েল ব্যবহার করতে হয়, আমি এর পাশাপাশি সবসময় অকটেন বুষ্টার ব্যবহার করার চেষ্টা করি। 

পরিশেষে বলবো সব বাইক ই ভালো যদি নিজে নিজের মতো করে গুছিয়ে নেয়া যায়। 

আমি বাইকিং জগতে আসার আগ থেকে Bike BD এর ফ্যান।  কারণ বাইক মানেই বাইক বিডি। 

Ride Bike, Ride Safe Happy Biking With BikeBD

লিখেছেনঃ   রুবায়েত মাহমুদ

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।