Shares 2

সুজুকি জিক্সার ৮,৭০০কিমি মালিকানা রিভিউ - নাজমুস সাদাত

Last updated on 29-Jul-2024 , By Saleh Bangla

হ্যালো বাইকার্স, আমি আবু জাফর নাজমুস সাদাত, এক্টা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ময়মনসিংহ রিজিওনে ইন্জিনিয়ার হিসেবে চাকুরী করি। আমি একজন সেইরকমের বাইক লাভার বলতে পারেন এক কথায় যতক্ষণ বাইকের উপর থাকি সেই সময়টা সবথেকে বেশি এনজয় করি আজকে আমি আমার ৮৭০০ কি:মি: চলা সুজুকি জিক্সার নিয়ে কিছু বলবো। আমার জন্ম পাবনা জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে, ছোটবেলা থেকেই বাইকের প্রতি একটা আলাদা দুর্বলতা কাজ করে আমার।
suzuki-gixxer-suzuki-gixxer-150
যেভাবে বাইকের প্রেমে পরি এবং একজন বাইকার হয়ে যাই:
আমার বয়স যখন ৪/৫ বছর তখন থেকেই মামার লিজেন্ডারি বাইক হোন্ডা সিডিআই এইচ ১০০ বাইকে করে ঘুরার সুযোগ পেয়েছি, আমি তখন ফুয়েল ট্যাংকের উপরে বসে যাইতাম, হ্যান্ডেল এ হাত থাকতো আর দেখতাম মামা কিভাবে গিয়ার শিফটিং করছে, কখন ক্লাচ চাপছে আবার ছারছে ফিলিংসটা তখন থেকেই শুরু

ছোটবেলায় কখনও বাসার পাশ দিয়ে কোন বাইক যাওয়ার আওয়াজ পেলে দৌরে বাসার বাইরে চলে আসতাম বাইক দেখতে। এরপর ২০০৯ সালে ছোটমামার কেনা আরেক লিজেন্ডারি ইয়ামাহা আরএক্স ১০০ দিয়ে আমি বাইক চালানো শিখি, অনেকটা একা একাই চালানো শিখে ফেলেছিলাম, এবং সেই ১৪/১৫ বছর বয়সেই সেই আরএক্স দিয়ে আমি পাবনার বেশ কয়েক্টা অন্চল ঘুরে শেষ করেছিলাম।

তারপর ২০১২ তে কেনা ভাইয়ার ডিস্কোভার ১০০ সিসি দিয়ে শুরু হলো বাইকিং পর্বের ৩য় ধাপ পুরো পাবনা আর সিরাজগন্জ জেলার অনেকটা এলাকা ঘুরে শেষ করলাম সেই ১০০সিসি দিয়ে।

  

suzuki-gixxer-price-in-bangladesh

এবার আসি আমার জিক্সার কেনার গল্প নিয়ে:
অনেকদিনের স্বপ্ন আমার নিজের টাকায় নিজের একটা বাইক হবে, এবং এটা যত তারাতারি হবে ততই ভালো, এমন মনভাব নিয়ে আমি স্যালারী থেকে কিছু টাকা সন্চয় করা শুরু করি এরপর ২০১৭ সালের ০৫ই জুলাই নিজের অর্জিত কিছু টাকা আর ফ্যামিলি থেকে কিছুটা সাপোর্ট নেওয়ার পরে ঢাকার ইস্কাটনে অবস্থিত সোনারগাও মটর্স থেকে সুজুকি জিক্সার  ব্ল্যাক/মেরুন ডুয়্যাল ডিস্ক বাইকটা কিনি।

তারপরেই শুরু হয় আমার জিক্সারের সাথে নতুন পথচলা, জিক্সার সত্যিই অসাধারণ একটি বাইক। এর পারফরমেন্স দিয়ে জয় করে নিয়েছে হাজারও বাইকারের ভালোবাসা।

সুজুকি জিক্সারের স্পেসিফিকেশন:
Engine: Type4-stroke, 1-cylinder, Air-cooled
Valve System: SOHC, 2 Valve
Displacement: 154.9 cm3
Bore x Stroke: 56.0 mm x 62.9 mm
Engine Output: 14.8ps@8000 rpm
Torque: 14 Nm @ 6000 rpm
Fuel System: Carburetor
Starter System: Electric / Kick
Transmission Type: 5 Speed, MT
Brake
Front: Disc
Rear: Disc
Suspension
Front: Telescopic
Rear: Swing Arm, Mono Suspension
suzuki-gixxer-front-back-view
Dimensions and Weight
Wheels: Cast
Overall Length: 2,050 mm
Overall Width: 785 mm
Overall Height: 1,030 mm
Wheel Base: 1,330 mm
Ground Clearance: 160 mm
Seat Height: 780 mm
Kerb Mass: 135 kg
Fuel Tank Capacity: 12 Ltrs (with 2 Ltrs Reserve)
Tyre Size
Front: 100/80 – 17 – Tubeless
Rear: 140/60R – 17 – Radial Tubeless
Electrical
Battery: Maintenance free 12V, 3Ah
Headlight: 12V 35/35W
Tail Light: LED
  

suzuki-gixxer-150-price-in-bangladesh

আমি এই বাইক কেনার পরে ঘুরে বেরিয়েছি ঢাকা,গাজীপুর,ময়মনসিংহ,নেত্রোকো না,কিশোরগন্জ, টাংগাইল,সিরাজগন্জ, বগুড়া আর পাবনা জেলার বেশ কিছু যায়গা। একটা বাইকের ভালো এবং মন্দ দুইটা দিকই আছে,  ঠিক তেমনই জিক্সারেরও কিছু ভালো এবং মন্দ দিক রয়েছে।

প্রথমে মন্দ দিকটা নিয়েই আলোচনা করি:

১। প্রথমেই আমার অভিযোগ এর পিলিওন সিট নিয়ে। রাইডিং সিটের মত পিলিওন সিটটাও কম্ফোর্ট করা উচিৎ ছিলো

২।হেড লাইটের আলো: জিক্সারে OSRAM ব্র্যান্ডের ৩৫ ওয়াটের এক্টা বাল্ব দেয়া থাকে ঐটা ভিলেজ রোডে আপনাকে ভালো সাপোর্ট দিলেও হাইওয়ে তে দুর্বল হয়ে যায় । আমি অবশ্য ২টা ক্রি লাইট লাগাই নিছি এখন আলো সল্পতার সমস্যা নেই

৩। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেনস: জিক্সারে গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স আরও বারানো উচিৎ ছিলো কারণ পিলিওন নিয়ে চালাইলে প্রায় স্পীডব্রেকারেই ঘষা লাগে

৪। প্লাস্টিক পার্ট দুর্বল তাই অল্প আঘাতেই উহা ভেঙ্গে যায়

৫। দুর্বল হর্নঃ স্টক হর্নটি খুবই দুর্বল, হাইওয়ে রাস্তায় এটি প্রায় শোনাই যায় না ।
  

suzuki-gixxer-150cc-ownership-review


এবার আসি এর ভালো দিক নিয়ে:

১। রেডি পিকাপ: নি:সন্দেহে জিক্সারের রেডিপিকাপ প্রশংসা করার মত, মুহুর্তের মধ্যেই থ্রটল রেসপন্সে দ্রুত গতি তোলা সম্ভব এবং ৫ সেকেন্ডে ৬০ গতি তুলা যায়। যদিও আমি বাইককে কষ্ট দিয়ে চালাইনা তাই ঐভাবে টানি নাই

২। ব্যালেন্স: পিছে ১৪০/৬০-১৭ সাইজের এমআরএফ আর সামনে ১০০/৮০-১৭ সাইজের টায়ার আপনাকে ব্যালেন্সের নিশ্চয়তা দিবে পুরোটাই, আমি কনফিডেন্ট নিয়ে কর্ণারিং করতে পারি ।

৩। ব্রেকিং: পিছনে নিশিন এর সিংগেল পিস্টনের ব্রেক ক্যালিপার এবং সামনে বাইব্রি এর ডাবল পিস্টন ব্রেক ক্যালিপার
এর ব্রেকিং আমার কাছে আস্থার আরেক নাম, আমি এই ৮৭০০ কি:মি রাইডে বেশ কয়েকবার বিপদের সম্মুখীন হয়েছি কিন্ত ইন্স্ট্যান্ট ব্রেকে কখনই আমার বাইক আমাকে নিরাশ করেনি এবং এর মোটা টায়ার হওয়ায় স্কীডও করেনি তেমন এক্টা (যদিও আমি ম্যানুয়াল টায়ার প্রেসার ২৮/৩৩ মেনে চলি)

৪। সাসপেনশনঃ সুজুকি জিক্সার এর সামনে টেলিস্কোপিক ও পেছনে মনো সাসপেনশন রয়েছে যা বিভিন্নরকমের রোড কন্ডিশনেও অসাধারন পারফর্ম করে।

৫। মাইলেজ: আমার জিক্সারে শুরু থেকেই এভারেজে ৪৮-৫০ মাইলেজ পেয়ে আসছি (অনেকের ক্ষেত্রে এটা কমে যায়), এই মাইলেজ পাওয়ার জন্য আমি বাইকের টায়ার প্রেসার ম্যানুয়াল অনুযায়ী মেনে চলি, সর্বদা এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার করি, চেইন নিয়মিত লুব করি, গিয়ার শিফটিং নিয়ম মেনে করি এবং এক্টি বিশ্বস্ত পাম্প থেকে ফুয়েল নেই যারা পরিমাপে হেরফের করে না

৬। মিটারঃ সুজুকি জিক্সারে একটি ফুল ডিজিটাল মিটার রয়েছে যা আরপিএম, স্পীড, গিয়ার ইন্ডিকেট, ঘড়ি থেকে শুরু করে সকল তথ্য প্রদান করে।


suzuki-gixxer-price-bd
পরিশেষে বলতে চাই, যারা ২লক্ষ টাকার আশেপাশে গর্জিয়াস ন্যাকেডলুকস, কমফোর্ট, রেডি পিকাপ, টপ স্পীড, অসাধারণ কন্ট্রোলিং , ভালো মাইলেজ এবং দীর্ঘদিন ভালো সার্ভিস দিবে এমন একটি বাইক খুজছেন সুজুকি জিক্সার তাদের জন্য পারফেক্ট একটা বাইক সবাই ভালো থাকবেন এবং রাইডিং এর সময় সর্বদা হেলমেট ব্যবহার করুন আপনার নিজের নিরাপত্তার জন্য, আইনের জন্য নয়।

Published by Saleh Bangla