Shares 2

বৃষ্টি ভেজা সিলেট ট্যুর!

Last updated on 04-Jul-2024 , By Shuvo Bangla

ছোটো একটা গল্প দিয়ে শুরু করছি; এবছর আমি বাইক নিয়ে কক্সবাজার ও খুলনায় ঘুরে এসেছি। গতবছর গিয়েছিলাম পার্বত্য অঞ্চলে। কিন্তু আমার অনেকদিনের ইচ্ছা সিলেট ঘুরে আসবো। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে ঘুরে আসলাম সিলেট থেকে। এই সিলেট ট্যুর আমার জীবনের অন্যতম একটি স্মরণীয় ঘটনা, কারণ এই প্রথমবার আমি ১২ ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজে বাইক চালিয়েছি।  

শুরু করা যাক বৃষ্টি ভেজা সিলেট ট্যুরের গল্প।

সিলেট পানে যাত্রা

সিলেট ট্যুরের পরিকল্পনা করি শাওন, জহির ও আমি। পরে আমাদের সঙ্গে যোগ দেয় আমার সহকর্মী ও বাইকবিডি’র এডিটর সালেহ। এর মধ্যে সালেহ তার ইয়ামাহা ফেজার ও শাওনের লিফান কেপিআর১৫০ নিয়ে পার্বত্য অঞ্চল থেকে ঘুরে এসেছিলো ২০১৫’র ডিসেম্বরের ১৬ থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত। শেষদিনে বান্দরবান থেকে আলীকদম হয়ে চকরিয়া-চট্টগ্রাম দিয়ে ঢাকা পর্যন্ত ৫৩০ কিমি পথ অতিক্রম করা হয়েছিলো ১৭ ঘণ্টায়।

আর এবারই প্রথম আমি ইয়ামাহা এম স্ল্যাজ চালালাম। আমরা সিলেটের উদ্দেশ্যে সকাল ৬টায় ঢাকা যাত্রা শুরু করি এবং বৃষ্টিতে কিছু সময়ের জন্য আটকা পড়ে গেলেও দুপুর ১টা নাগাদ আমরা সিলেট পৌঁছে যাই। পথে আমি ও জহির ইয়ামাহা এম স্ল্যাজ চালিয়েছি।

ভাঙা রাস্তায় রোড র‌্যাশ!

সিলেটে দুপুরের খাবার খেয়েই আমরা জাফলংয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি, কিন্তু রাস্তাটি প্রচুর ভুগিয়েছে আমাদের। প্রথম ৪০ কিমি অবশ্য ভালোই ছিলো, সামান্য খানখন্দ থাকলেও সমস্যা হয়নি।

কিন্তু শেষের ১০ কিমি একেবারে জঘন্য। তবে বলে নেওয়া ভালো, আমরা সেখানে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছে এবং সারা রাস্তাই কাদা ও পাথরে ভরে ছিলো। এই দুর্গম পথে এম স্ল্যাজের ১৩০ সাইজের টায়ারও পিছলে যাচ্ছিলো!

আর শেষের ৫ কিমি তো একেবারে বলার অযোগ্য, সেখানে মনে হচ্ছিলো রাস্তার মাঝে কেউ পুকুর খুঁড়ে রেখেছে! ওই রাস্তায় চলার সময় আমাদের বাইকের রেডিয়েটরের দুই তৃতীয়াংশই পানিতে তলিয়ে যাচ্ছিলো। এটা অন্যতম একটা ভয়ানক ঘটনা।

মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছিলো, আমার বাইকের সাইলেন্সারে পানি ঢুকে যাবে এবং বাইক ও ট্যুর দুইটাই নষ্ট হবে! তবে আনন্দের বিষয় হলো তেমনটি হয়নি। আর তেমনটা হলে নিশ্চয়ই ভালোও লাগতো না!

একটা আলাদা টান আছে, যেটা সালেহ ও আমাকে ভীষণ টানে। কিন্তু সমুদ্রের ঢেউয়ের কলতান আমাদেরকে সেভাবে আকর্ষণ করে না। যাহোক, জাফলংয়ে কিছু সময় কাটিঢেয় আমরা দ্রুত ফিরতি পথ ধরি। কারণ সন্ধ্যার আধার নামার আগেই ওই দুর্গম পথ পার করতে চেয়েছিলাম আমরা।

হোটেলে ফেরার পথে আমরা একটি রিসোর্টে যাত্রা বিরতি করি। সেখানে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্যটা ছিলো দেখার মতো! যদিও রিসোর্টটি এখনো চালু হয়নি, তবে সেটা দ্রুতই তা চালু হবে এবং আশা করি আবারো সেখানে গিয়ে দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য্য উপভোগ করবো। এরপর হোটেলে ফিরে আমরা বিশ্রাম নিয়ে পরের দিন বিছানাকান্দি যাবার পরিকল্পনা করে ফেলি।

সিলেটে দ্বিতীয় দিন

দ্বিতীয় খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমরা বিছানাকান্দির উদ্দেশে বেরিয়ে পরি। এ্ই তন্ময় ভাই যাত্রায় আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। উনি খুবই মাটির মানুষ, বাইকিং করতে গিয়েই উনার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিলো। আমরা পালা করে বাইক চালাচ্ছিলাম, ভালো মসৃণ রাস্তায় উনি এবং খারাপ রাস্তায় আমি চালাচ্ছিলাম।

আমরা শারিঘাট হয়ে বিছানাকান্দি যাচ্ছিলাম। যদিও এই পথটি সবচেয়ে দীর্ঘ, তবে রাস্তার দুধারের দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে দেয়। অবশ্য ভারী বৃষ্টির কারণে রাস্তার দুপাশেই পানি জমে ছিলো।

বিছানাকান্দি পৌঁছে আমরা সকালের নাস্তা করে নৌভ্রমণে বের হই। বাংলাদেশ সত্যিই সুন্দর একটি দেশ!

আমরা ওখানে নদীতে গোসল করি এবং ওই এলাকা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, খারাপ রাস্তা ও সময় স্বল্পতার কারণে পান্থুমাই ঘুরে আসতে পারিনি। আশা করছি পরের বার মিস হবে না।

বিছানাকান্দি থেকে ফেরার পথে আমরা রাতারগুল বনের ভিতর দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু বিছানাকান্দি থেকে ওসমানি বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তাটি সত্যিই ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো।

গোটা রাস্তাটি আমার পায়ের পাতা পর্যন্ত কাদায় ডুবে ছিলো। সিএনজিওয়ালাদেরকে মাটি খুঁড়ে চাকা বের করতে হচ্ছিলো!

আর ওই পথে চলতে গিয়ে অত্যধিক পরিশ্রমের কারণে আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তবে এমন দুর্গম রাস্তাতেও এম স্ল্যাজের পারফরমেন্সে আমি আশ্চর্যান্বিত হয়েছি।

ওই পথে চলতে গিয়ে আমার মনেই হয়নি এটা স্পোর্টস বাইক, বরং এটা পুরোপুরি অফ রোড বাইকের ফিলিংস দিয়েছে।

সে রাতে বৃষ্টি হচ্ছিলো, যে কারণে আমরা তাড়াতাড়ি হোটেলে ফিরে আসি। পরেরদিন আমরা সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গল হয়ে ঢাকা ফিরবো—সেজন্য খুবই এক্সেইটেড ছিলাম। কিন্তু একের পর এক সমস্যা পিছু লেগেই ছিলো, কারণ সকাল থেকেই প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিলো।

বৃষ্টি ভেজা ১২ ঘণ্টা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ যেটা পরে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’তে রূপ নেয়, যেটার কারণে এই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে পড়তে হয় আমাদেরকে।

প্রাকৃতিকভাবেই সিলেট অঞ্চলটি সবুজে পরিপূর্ণ এবং বৃষ্টির কারণে তা আরো সতেজ দেখাচ্ছিলো। যার ফলে রাস্তার দুধারের দৃশ্য যতোই দেখছিলাম, ততোই মুগ্ধ হচ্ছিলাম আমরা।

আর যে রাস্তায় আমরা চলছিলাম, সেখানে গত ২০ দিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছিলো।

গোটা পথ জুড়েই সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিলো এবং আমরা তা উপভোগও করছিলাম। আমাদের প্রথম যাত্রা বিরতি ছিলো মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে, যেটা বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় একটি স্থান।

সেখান থেকে আমরা শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। আমাদের ইচ্ছা ছিলো লাউয়াছড়া বন ঘুরে যাবার। কিন্তু ভারী বৃষ্টির কারণে সেই পরিকল্পনা মাঠেই মারা যায়!

যাহোক বৃষ্টি তেকে বাঁচতে আমরা একটি পেট্রোল পাম্পে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করি এবং কী করা যায় সে ব্যাপারে আমরা ৪ জন আলোচনা করে নেই। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেই, বৃষ্টির মধ্যেই ঢাকায় ফিরে যাবো, কারণ সেখান থেকে ঢাকা মাত্র ২০০ কিমি পথ।

পথে আমরা প্রচণ্ড বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার প্রকোপে পড়েছিলাম। বাতাস এতোটাই জোরে বইছিলো যে, সালেহ’র ইয়ামাহ ফেজারও দুইবার স্লিপ করেছিলো!

এর ফলে আমরা স্পিড কমাতে বাধ্য হই। সত্যিই প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিলো এবং ঝড়ো হাওয়ার কারণে রাস্তায় বাইক ঠিক রাখা যাচ্ছিলো না।

সেখান থেকে শুরু করে গোটা পথজুড়েই বৃষ্টি হচ্ছিলো এবং আমরা দোয়া করছিলাম বৃষ্টি কমার জন্য। কিন্তু যতোই ঢাকার দিকে আসছিলাম বৃষ্টির তোড়ও ততোই বেড়ে যাচ্ছিলো।

অবশেষে ভৈরব পার হয়ে আমরা প্রথম শুকনো রাস্তা দেখতে পাই, যদিও তা মাত্র ১২ কিমি ছিলো। এরপর আরো সাড়ে ১০ ঘণ্টা বৃষ্টির মধ্যে বাইক চালিয়ে যেতে হয়েছিলো আমাদেরকে।

বৃষ্টি থেকে মুক্তি

বৃষ্টিতে ভিজে সুদীর্ঘ ১২ ঘণ্টা বাইক চালানোর পর আমরা নিরাপদেই বাড়ি ফিরি। এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা বাইক ভ্রমণ, কারণ এই ভ্রমণটি শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকেই আমাদেরকে প্রচুর প্যারা দিয়েছে!

আমি এ পর্যন্ত অনেক কঠিন পথে বাইক চালিয়েছি কিন্তু একদিনে ১২ ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজে বাইক চালানো আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আমার সহযাত্রী তিন রাইডারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

কিন্তু আমি অবশ্যই আমার ইয়ামাহা এম স্ল্যাজ’কে বিশেষ ধন্যবাদ দিবো এর ব্রেক ও গ্রিপের কারণে। তবে হ্যা, বাইকটির হেডলাইট নিয়ে আমি হতাশ। এর হেডলাইট হাইওয়েতে চলার উপযোগী নয়। তাছাড়া এর পিছনের চাকায় কোনো মাডগার্ড না থাকায় সমস্ত কাদাপানি আমার পিঠ ভিজিয়ে দিচ্ছিলো। তবে এটা স্বীকার করি যে, অমন ভেজা রা্স্তায় ভালো গ্রিপ দেওয়ার জন্য এটা ধন্যবাদ অবশ্যই পাবে।

Published by Shuvo Bangla

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Latest Bikes

CFMoto 125NK

CFMoto 125NK

Price: 0.00

Liban Wind

Liban Wind

Price: 0.00

Liban Phoenix Plus

Liban Phoenix Plus

Price: 0.00

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

Liban Wind

Liban Wind

Price: 0.00

Liban Phoenix Plus

Liban Phoenix Plus

Price: 0.00

Liban Phoenix

Liban Phoenix

Price: 0.00

View all Upcoming Bikes