Last updated on 01-Aug-2024 , By Shuvo Bangla
আমি পিয়াস । আমি একটি
Lifan KPR 165R EFI বাইক ব্যবহার করি । বাইকটি নিয়ে আজ আমি আমার মালিকানা রিভিউ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ।
আমি গাজীপুর মাওনা তে থাকি। গতবছর আমি আমার জীবনের প্রথম বাইক নিজের উপার্জনের টাকায় ক্রয় করি এবং এই বাইকটা হচ্ছে
Lifan KPR 165 সিসি এফ আই সিবিএস। এটি একটি চাইনিজ ব্র্যান্ড। চাইনিজ ব্র্যান্ডের মধ্যে এই বাজেটে এই বাইকটি সবার সেরা।
কেন বাইকিং ভালোবাসি:
ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম যে আমার একটি বাইক থাকবে। আর সেই স্বপ্ন থেকেই বাইকিং এর প্রতি ভালবাসাটা তৈরি হয়েছে আর আমি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে খুব পছন্দ করি আর বাইক হচ্ছে এমন একটি বাহন যার দ্বারা স্বাধীনভাবে যেখানে খুশি সেখানে যাওয়া যায়।
মন খারাপ হলে বাইক রাইড করলে মন ভালো হয়ে যায়। তারপর বাইক একটা আবেগের জিনিস।। সে জন্য আমি বাইকিং ভালোবাসি।। বাইকের প্রতি ছোটবেলা থেকে কেন জানি একটু আলাদা দুর্বলতা কাজ করতো ভালোবাসা ছিল বাইকের প্রতি।
পাঁচ-ছয়টা দিক বিবেচনা করে আমি আমার বাইক টি বেছে নিয়েছি -
- বাজেট
- স্পোর্টি লুকস
- পাওয়ার
- ব্রেকিং
- কন্ট্রোলিং
- মাইলেজ
বাইকটি বেছে নেওয়ার পিছনে বিস্তারিত বলতে গেলে ২ লক্ষ টাকা বাজেটে কেপিআর হচ্ছে একমাত্র বেস্ট স্পোর্টস বাইক। এই বাইকটির লুকস, ব্রেকিং, পাওয়ার,কন্ট্রোলিং,মাইলেজ এবং অন্যান্য দিক বিবেচনা করে আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।
অন্যান্য বাইকের তুলনায় কেপিআরের পাওয়ার এবং ব্রেকিং অনেক বেটার লেগেছে। এই বাইকটি এফ আই ইঞ্জিন হওয়াতে ভালো মাইলেজ দিবে এইজন্য আমি বাইকটি বেছে নিয়েছি। সিবিএস ব্রেকিং সিস্টেম দেওয়ার কারণে কন্ট্রোলিং এ ভালো সাপোর্ট দিবে আমাকে । এইসব চিন্তা ভাবনা করে আমি এই বাইকটি বেছে নিয়েছি।
বাইকের দাম পড়েছিল ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা এবং বাইকটি আমি
Lifan Showroom বাংলামোটর থেকে কিনেছিলাম। যেদিন বাইকটি কিনি সেদিন আসলে আমি খুব উত্তেজিত ছিলাম। জীবনের প্রথম বাইক ছিল এটা। আমার সবকিছু কেমন জানি স্বপ্নের মত মনে হচ্ছিল।
দুই বছর যাবত শুধু বলছিলাম একটা বাইক কিনবো কিন্তু কিনতে পারতেছিলাম না। কি বাইক নিব সেই চিন্তায় দিন কাটিয়েছি অনেক। অবশেষে একদিন বাইকবিডির রিভিউ দেখলাম
Lifan KPR 165 Fi বাইকের এবং আমার কাছে অনেক ভালো লাগে বাইকটি। তারপর হুট করেই বাইকটা কিনা হয়ে গেল একদিন।
বাইক কেনার আগের দিন রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। অনেকদিনের স্বপ্নটা পূরণ হতে যাচ্ছে এসব চিন্তা ভাবনা করে ঘুম হচ্ছিল না। প্রথম প্রথম বাইকটি চালাতে একটু ভয় ভয় লাগতেছিল কারণ কখনো এত হায়ার সিসি বাইক আমি আগে কখনো চালাইনি ।
আস্তে আস্তে বাইকটা যখন স্টার্ট দেই চালাই , কিছুক্ষণ চালানোর পর খুবই ভালো লাগতেছিল। এরপর চালিয়ে এত ভালো লাগে যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার নিজের বাইক আমি নিজে চালাচ্ছি এটা আসলে কল্পনার মত ছিল। আমার বাইকটি চালানোর পিছনের মূল কারণ হয়তো বেশী বড় না বা কোন উদ্দেশ্য মূলক কারন নাই।
আমার স্বপ্ন ছিল একটি বাইক হবে আমার। সেইসাথে আমি ঘোরাফেরা করতে অনেক পছন্দ করি। বাইক দিয়ে ঘুরতে আমি খুবই পছন্দ করি, তাই হয়তো বাইকটা চালাব আর ছোটবেলা থেকেই বাইকের প্রতি একটা নেশা ছিল। আমার খুব ইচ্ছা যে আমি বাইক দিয়ে সারা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করব আর বাইকই হচ্ছে একমাত্র বাহন যা দিয়ে স্বাধীনভাবে দেশের প্রকৃতি ও সৌন্দর্য সঠিক ভাবে উপভোগ করা যায়।। যা অন্য কোন বাহনের দ্বারা সম্ভব না।
বাইকটির ফিচার -
বাইকটিতে রয়েছে একটি শক্তিশালী ১৬৫ সিসি লিকুইড কুল ইঞ্জিন, যার ম্যাক্সিমাম টর্ক ১৭ যা ৮০০০ আর পি এম এ ১৭ বিএইচপি পাওয়ার উৎপন্ন করে। বাইকটির ওজন ১৫০ কেজি। বাইকের ফুয়েল ট্যাংক ক্যাপাচিটি ১৬ লিটার। সামনে ৯০ সেকশনের টায়ার এবং পিছনে ১৩০ সেকশনের টায়ার ইউজড করা হয়েছে।
সামনে-পিছনে ডিস্ক ব্রেক যা CBS ব্রেকিং সিস্টেম। বাইকটি ফুয়েল ইন্জেকশন এর হওয়াতে মাইলেজ খুব ভালো পাওয়া যাবে।সাসপেনশনে আছে সামনে Telescopic Fork, পিছনে Monoshock সাসপেনশন। বাইকটি চালিয়ে আমি খুবই মজা পাচ্ছি এবং স্বাচ্ছন্দ বোধ করছি বাইকটি দিয়ে আমি যেখানেই যাই সবাই বাইকটির দিকে তাকিয়ে থাকে এবং বাইকটি সম্পর্কে জানতে চায় । এটা আমার খুব ভালো লাগে।
আমি বাইকটি দুইবার সার্ভিস করিয়েছি এবং দুইবারই মিরপুর
Lifan Bike এর অথোরাইজড সার্ভিস সেন্টার থেকে সার্ভিস করিয়েছি। ২৫০০ কিলোমিটার চালানোর পূর্বে আমি ৪২ থেকে ৪৪ মাইলেজ পেয়েছি এবং ২৫০০ কিলোমিটার চালানোর পরে আমি ৪২ থেকে ৪৩ মাইলেজ পেয়েছি।
আমি প্রতিদিন আমার বাইকের টায়ার প্রেসার ঠিক আছে কিনা চেক করি। এছাড়াও চেইন এডজাস্ট, চেইন লুব দেয়া, ইঞ্জিন অয়েল সময়মতো পরিবর্তন করা, অয়েল ফিল্টার চেক করা এবং ক্লিন করা, ক্লাস এডজাস্ট করা চেক করা, বাইক ওয়াশ করা ইত্যাদি মেনটেনেন্স করি।
আমি আমার বাইকে Shell advance 20w 40 গ্রেড এর মিনারেল ইন্জিন অয়েল ব্যবহার করি যার মূল্য ৪৫০ টাকা । এখন পর্যন্ত আমি বাইকের কোনো পার্টস বদলাইনি। বাইকটি সম্পূর্ণ স্টক আছে। বাইকের কোন অংশ মোডিফাই করিনি।
আমি স্পিডে বাইক চালানো পছন্দ করিনা। আমি একবার সর্বোচ্চ ১১৫ পর্যন্ত স্পিড উঠিয়েছিলাম।
Lifan KPR 165R EFI বাইকটির পাঁচটি ভালো দিক হচ্ছে -
- বাইকের লুকস, যার জন্য যে কোন জায়গায় বাইকটি সবার নজর কাড়ে।
- বাইকটির পাওয়ার ও টর্ক ভালো থাকাতে হাইওয়েতে ওভারটেকিং এর সময় কনফিডেন্স পাওয়া যায় বেশি।
- কন্ট্রোলিং ব্রেকিং খুবই ভালো , ব্রেকিং এ CBS ব্রেক হওয়াতে খুব ভালো কনফিডেন্স পাওয়া যায়।
- লিকুইড কুল ইঞ্জিন হওয়াতে লং টাইম রাইড করলে পাওয়ার লস করবে না এবং দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করবে। Fi ইঞ্জিন হওয়াতে স্পোর্টস বাইক হওয়া সত্বেও মাইলেজ খুবই ভালো পাওয়া যায়।
Lifan KPR 165R EFI বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- হিটিং ইস্যু জ্যামের মধ্যে বাইক চালালে ইঞ্জিন গরম হয়ে যায়।
- বাইক ঘোরাতে জায়গা লাগে প্রচুর।
- সাসপেনশন খুবই শক্ত।
- গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স খুব কম হওয়াতে পিলিয়ন নিয়ে চালালে নিচে স্পিডব্রেকারে বেজে যায়।
- বাইকের ক্লাস টা খুবই হার্ড মনে হয়েছে।
বাইকটি নিয়ে আমি একবার মিঠামইন অষ্টগ্রাম ট্যুর দিয়েছি।। সারাদিনব্যাপী বাইকটি চালিয়েও আমার কোন ক্লান্তি আসেনি এবং বাইকটি আমাকে নিরাশ করেনি। বাইকটি এই বাজেটে খুব ভালো একটা প্যাকেজ। যারা স্পোর্টস বাইক চালাতে ইচ্ছুক এবং বাজেট ২ লক্ষ টাকার আশেপাশে তাদের জন্য বেস্ট একটা চয়েজ হবে।
আমি আমার এই বাইকটি নিয়ে খুবই স্যাটিস্ফাইড। আমি এই বাইকটির মালিক হয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করি। বাইকটি যতই চালাচ্ছি ততই বাইকটির প্রেমে পড়ে যাচ্ছি। বাইকটি নিয়ে আমার একটাই পরামর্শ থাকবে যে প্রত্যেক জেলাতেই যেন লিফানের সার্ভিস সেন্টার হয় এবং পার্টস এভেলিটি থাকে, তাহলে আমরা যারা কেপিআর ইউজার আছি তারা খুবই উপকৃত হবো । ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ পিয়াস
আপনিও আমাদেরকে
আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন।
মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন
articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।