Shares 2

Keeway RKS 100 ১২,৫০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - আলম

Last updated on 07-Nov-2022 , By Shuvo Bangla

আমি মোহাম্মদ নূর আলম। আমি Keeway RKS 100 বাইকটি  ক্রয় করি 2018 সালের এপ্রিলের ৮ তারিখ। যখন বাইকটি ক্রয় করি তখন আমি ছিলাম চাকুরীজীবী কিন্তু বর্তমানে আমি ফুলটাইম ফ্রিল্যান্সার, ওয়েব ডিজাইন নিয়ে কাজ করছি।

keeway rks 100 bike pic

আমার বাসা হচ্ছে উত্তরবঙ্গের জয়পুরহাট জেলায় । বাইকটি ক্রয় করার আগে বগুড়া কিওয়ে শোরুম এ যাই এবং লাল ও কালো কালারের দুইটি বাইক আমি দেখে আসি। তারপর আবার জয়পুরহাট শোরুমের ফোন দিয়ে কনফার্ম জানতে চাই যে তাদের কাছে বাইকটি আছে নাকি?

জয়পুরহাট শোরুম থেকে আমাকে জানানো হয় যে তাদের কাছে বাইকটি আছে। পরে যে দিন বাইকটি ক্রয় করতে  যাই, সেদিন আমাদের জয়পুরহাটের শোরুমে আসি কিন্তু সেদিন বাইকটি শোরুমে ছিল না। তারা আমাকে v3 বাইকটি নিতে বলেন।  কিন্তু আমি শোরুমের লোকদের কথা না শুনে ভার্সন টু বাইকটি নেওয়ার জন্য জয়পুরহাট শোরুম  থেকে বগুড়া শোরুমে চলে যাই।

বগুড়া শোরুমে গিয়ে দেখি লাল কালারের একটিমাত্র বাইক আছে।  সেই সময়  বাইকটির দাম কষাকষি করে নগদে 97 হাজার টাকা ঠিক হয়।  তারপর টাকা পরিশোধ করে বাইকটি মেকানিক এর কাছ থেকে বুঝে নেই।

keeway rks 100 with bilmola helmet

এর আগে বাইক চালানোর আমার কোন এক্সপেরিয়েন্স ছিলনা! তো স্টার্ট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে  আবার বাইকের স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।  বগুড়া থেকে আমার বাসার দূরত্ব 40 কিলোমিটার।  আমার পক্ষে বাইকটি চালিয়ে নিয়ে আসা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না।  তো তখন আমি আমার এক শিক্ষক এবং এক মামাকে ফোন করে বিস্তারিত ঘটনা বললাম। তো  আমার শিক্ষক বলল ঠিক আছে তুমি শোরুমে বসে থাকো আমি বগুড়াতে যাচ্ছি , দুজনে একসঙ্গে আসবো।

তখন সময় বিকেল 4:30।  তো মামাকে আবার ফোন দিয়ে বললাম যে আপনাকে আসতে হবে না , আমার স্যার আসবে আমি ওনার সঙ্গে যাবো। তখন আমি তার আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম।  উনি আসলেন এবং  উনার দোকানের কিছু মাল কেনাকাটা করলেন এবং সর্বশেষে আমরা গাড়ির গেট পাস এবং ট্যাক্স টোকেন নিয়ে উনাকে সঙ্গে নিয়ে শোরুম থেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

মাঝ রাস্তায় এসে উনি আমাকে বলেন এখন তো রাস্তা ফাঁকা তুমি চালাও। আমি বললাম আমার দ্বারা এই বাইক এখন চালানো সম্ভব না, আপনি আমাকে বাজারে গিয়ে বাইক দিবেন আমি বাজার থেকে বাসায় নিয়ে যাব। উনি বগুড়া থেকে আমাদের বাজার পর্যন্ত বাইক চালিয়ে নিয়ে আসলেন এবং আমি তার পিছনে পিলিয়ন হয়ে বসে ছিলাম।

keeway rks 100 bike price

তারপর বাজার থেকে অনেক কষ্টে প্রথম গিয়ারের বাইক চালিয়ে বাসায় নিয়ে আসলাম। বাজার থেকে আমার বাসার দূরত্ব ছিল  পাঁচশত গজের মত। বাসায় বাইক নিয়ে আসার পর,  মা  বলল বাজার থেকে বাড়ি পর্যন্ত কে নিয়ে এসে দিল।  আমি বাসায় আগেই জানিয়ে দেখেছিলাম যে,  আমার  বাইক কেনা হয়েছে এবং আমি স্যারের সাথে বাসায়  ফিরতেছি।  মা বিশ্বাস  করছিল না যে আমি বাজার থেকে বাইক নিজেই চালিয়ে বাসায় এসেছি!

আমার বাজেট ছিল অল্প এবং এই অল্প বাজেটের মধ্যেই নতুন একটা বাইক খুজতেছিলাম।  বাইক কেনার তিনমাস আগে থেকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্লগ ফেসবুক ঘাটাঘাটি করছিলাম এবং রিভিউ দেখছিলাম।  আমার উচ্চতা 5 ফিট 2 ইঞ্চি বিবেচনা করে অন্যান্য বাইক গুলোতে আন ইজি ফিল করতাম। আর Keeway Bike এর  লুকিং,  সিট  হাইট বিবেচনা করে এবং বিভিন্ন জনের রিভিউ দেখে এই বাইকটি কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম।

keeway rks 100 red

এছাড়া সামনের ডিস্ক ব্রেক, এলইডি হেডলাইট, ফুয়েল ক্যাপাসিটি অনেক বেশি,  এগুলোও মাথার মধ্যে কাজ করছিল।  ১০০ সিসির অন্যান্য বাইকে আমি এতো সুন্দর ডিজাইন কখনই লক্ষ্য করিনি। ডিজাইনে পাশাপাশি বিল্ড কোয়ালিটিটা অনেক মজবুত ও টেকসই মনে হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে আমার কাছে এর ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি পারফেক্ট মনে হয়েছে।

তারপর থেকে আজ অবধি আমি বাইকটি চালাচ্ছি । আজ পর্যন্ত আমি বাইকে কোন ধরনের অসুবিধায় পরি নি। অনেকের কাছ থেকে শুনি  যে বাইকটা কেনার পর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। কিন্তু আমি আমার বাইকের আজ পর্যন্ত কোন ধরনের সমস্যা হয় নাই বা আমার বাইকের ইঞ্জিনে আজ পর্যন্ত হাত দিতে হয় নাই।

স্মুথলি খুব ভালোভাবে চলতেছে আমার বাইকটি। আমি বাইকটির হেডলাইট বাল্ব চেঞ্জ করে  7s  এল ই ডি বাল্ব  লাগিয়েছি।  হ্যান্ডেল বার চেঞ্জ করে সুজুকি জিক্সারের টা লাগিয়েছি, এতে করে বাইকটি আমি খুবই ভালো ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি।

আজ পর্যন্ত আমি আমার এই বাইকটি চালিয়েছি সর্বমোট ১২,৫০০ কিলোমিটার প্লাস। তেমন কোন লং ট্যুরে যাওয়া হয় নাই।  তবে জয়পুরহাট থেকে রংপুর 100+KM এবং জয়পুরহাট থেকে নওগাঁ হাসাইগাড়ি বিল এ 65+KM দুইটা   জায়গায়   লং টুর দিয়েছি আমার এই বাইকটি নিয়ে।

keeway rks 100

বাইকটিতে আমি সর্বোচ্চ গতিবেগ পেয়েছি ৯৩ কিলোমিটার পার আওয়ার এবং মাইলেজ পেয়েছি সর্বোচ্চ  ৬০ কিলোমিটার পার লিটার। আমি সবসময় হাইওয়েতে গাড়ি চালাই সেজন্য আমি  মাইলেজ বেশি পাই।  আমি ব্যবহার করি ক্যাস্ট্রল অ্যাক্টিভ 4T  20W40 গ্রেডের মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল গরমকালে এবং শীতকালে ব্যবহার করছি Q8 অ্যাডভান্স ফুল সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল।

মিনারেল এর ক্ষেত্রে প্রতি 1000 কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি এবং ফুল সিনথেটিকের ক্ষেত্রে প্রতি 1600 থেকে 2 হাজার কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি।

keeway rks 100 bike pic

সাত হাজার কিলোমিটার রাইডের মধ্যে এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করেছি । ১২ হাজার কিলোমিটার পর  সামনের সাসপেনশন দুইটি  অয়েল সিল ই এক মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং পরিবর্তন করেছি.। বাইকটিতে সর্বোচ্চ দুইজন পিলিয়ন সহ 190 কেজি ওজন নিয়ে রান করেছি এবং একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি যে যখন বাইকটিতে বেশি ওজন দেওয়া হয় তখন এটার কন্ট্রোলিং খুব ভালো পেয়েছি ।  একা চালানোর সময় পিছনের ব্রেক শক্ত করে চেপে ধরলেন চাকা  স্লিপ করে।

Keeway RKS 100 বাইকের কিছু ভাল দিক -

  • বিল্ড কোয়ালিটি অনেক ভাল।
  • লুকিং টা একেবারে জোশ!
  • ১০০ সিসি এরমধ্যে বেস্ট ফিচার সমৃদ্ধ বাইক।
  • মাইলেজ অনেক ভালো।
  • দামের দিক দিয়ে সাশ্রয়ী।

Keeway RKS 100 বাইকের কিছু খারাপ দিক -

  • খুচরা যন্ত্রাংশের অপ্রাপ্যতা।
  • সার্ভিস পয়েন্ট কম।
  • হেড লাইটের আলো কম।
  • 50 থেকে 60 কিলোমিটার গতির মধ্যে ভাইব্রেশন অনুভূত হয়।
  • পিছনের চাকা হার্ট ব্রেক করলে স্কিড করে।

সর্বপোরি এক লাখ টাকার নিচে এতো ফিচার সমৃদ্ধ বাইক বাংলাদেশে এর ধারে কাছে আর একটাও নেই। ধন্যবাদ ।

keeway rks 100 bike price

লিখেছেনঃ মোহাম্মদ নূর আলম
 
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Shuvo Bangla