Shares 2

Honda Livo 110 ১৬,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - জটিল পাপা

Last updated on 31-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla

আমি জটিল পাপা। আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। সিটি ইউনিভার্সিটি থাকে বিবিএ (ফিন্যান্স এবং ব্যাংকি) এর উপর পড়াশনা শেষ করে এখন ব্যবসা করছি। এখন আমি Honda Livo 110 DISC নিয়ে ঘুরে বেড়াই, যা দিয়ে ১৬ হাজার কিলোমিটার পথ চলার কিছু গল্প শেয়ার করবো ।

honda livo 110 user review

Honda Livo 110 ১৬,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - জটিল পাপা

গল্পের শুরুটা ১৯৯৮ সালে । বাবার YAMAHA RX 115CC দিয়ে শুরু। প্রথম প্রথম শুধু বাবার সাথে ঘুরে বেড়াতাম। বাবা যখন বাইক নিয়ে বাইরে কাজে বের হতেন। যদি বিকেল থাকত তাহলে আমি চেষ্টা করতাম, যে ভাবেই হোক আমি যাব। তখন দেখতাম বাবা কাজের পাশাপাশি যেইখানে মন চাইত সেখানে দাড়িয়ে একটু রেস্ট নিয়ে আবার রাইড করতেন। পথের মাঝে ভাল কোন কিছু পেলে দাড়িয়ে নিয়ে নিতেন। সেই থেকে মনের ভিতর গেঁথে গিয়েছে আমি যদি ভ্রমন করি তাহলে বাইক নিয়ে করব। 

বাইক নিয়ে ভ্রমন করার কারণ গুলো নিচে দেয়া হলঃ

  • বাসে যদি ভ্রমন করেন তাহলে যেখান কার বাস সেই খানে নামিয়ে দিবে। কিন্তু যদি বাইকে ভ্রমন করেন তাহলে রাস্তার মাঝে ভাল কিছু দেখলে দাড়িয়ে দেখবেন কেউ কোন বাধা দিবেনা ।
  • প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার একমাএ বাহন হল বাইক ।
  • মধ্যবিত্তদের ছোট ছোট আশা পূরণের একমাত্র বাহন হচ্ছে বাইক ।
  • মনকে তাৎক্ষনিক ভাল করার একমাএ ঔষুধ হচ্ছে বাইক ।

সত্যি কথা বলতে ১৫০সিসি বাইক ছাড়া কিনতে চাইনি। কিন্তু যখন দেখলাম বাবা-মা আমাকে কিনে দিতে চাইল এবং কথা হল ১ লক্ষ্য টাকা এর ভিতরে কিনতে হবে। তখন বাইক খুজতে থাকলাম এবং বাবা কে বললাম কি ধরনের বাইক দেখব? তখন সে উত্তর দিল মাইলেজ বেশি, দেখতে ভাল এবং জাপানী ব্যান্ড (হোন্ডা অথবা ইয়ামাহা)।

তারপর খুজে দেখলাম ইয়ামাহা কোম্পানীর কোন বাইক ঐ দামের মধ্যে নেই। পরে হোন্ডতে গিয়ে দেখলাম দাম একটু (+) হলে দুইটা বাইক (লিভো এবং ড্রিম নিও)। Love at first sight লিভো, লুকিংটা আমার কাছে ভাল লেগে গিয়েছিল তার কারনে আমি লিভো বাইকটি কিনে নিয়ে আসি ।

honda livo 110 owner in bd 

Honda Livo 110 নেওয়ার পিছনে কারন ছিলঃ

  • লুকিং
  • জাপানী ব্যান্ড (হোন্ডা)
  • মাইলেজ

বাইকটি আমি ১,১৬,০০০/- টাকা দিয়ে কিনেছিলাম আমাদের সিরাজগঞ্জের হোন্ডার অনুমোদিত ডিলার এম.আর. হোন্ডা প্যালেস থেকে। যে দিন বাইকটি কিনতে যাব সেই দিন নিজের কাছে এতটা ভাল লাগছিল যা বলার মত না। শুধু এইটুকু বলতে পারব, যে শুধু মনে হচ্ছিল ছোট অথবা বড় হোক, স্বপ্নটা কে সত্যি করতে যাচ্ছি এটাই অনেক বেশি কিছু ।

শো-রুম থেকে বাইকটি নিয়ে নিজের বাসার দিকে অগ্রসর হলাম । তখন তো বাইকটি একেবারেই নতুন আর একটা নতুন বাইক ২ - ৪ কিলোমিটার চালিয়ে আমি কিছুই বুঝতে পারিনি । আমি বাইকটি ব্যবহার করি ব্যবসার কাজে আর মাঝে মাঝে ঘোরাফেরার জন্য । বাইকটি আমার কাজ এবং ঘোরা ফেরাকে অনেক সহজ করে দিয়েছে । 

Honda Livo 110 বাইকটিতে আছেঃ

 ১০৯.১সিসির একটি ইঞ্জিন

  • এয়ার কুলিং সিস্টেম
  • সামনে ডিস্ক ব্রেক
  • ৯.০৯ NM টর্ক এবং ৮.৩১ BHP
  • ৪ টি গিয়ার
  • ৮.৫ লিটার আয়তন বিশিষ্ট ফুয়েল ট্যাংক
  • টিউবলেস টায়ার সামনের টায়ার ৮০/১০০-১৮
  • টিউবলেস টায়ার পিছনে টায়ার ৮০/১০০-১৮

বাইকটি ১৬০০০ কিলোমিটার চালানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত যতবার বাইকটি চালানোর কথা চিন্তা করি যদি মন খারাপ থাকে, বাইকটি চালানোর কথা চিন্তা করার সাথে সাথে মন ভাল হয়ে যায়। বাইকটি রাইড করার পরে অনেক রিফ্রেসমেন্ট ফিল করি ।

bike tour place in bangladesh

 

সার্ভিসিংঃ আমার বাইক যেহেতু ১৬ হাজার কিলোমিটার হয়ে গিয়েছে। তাই আমি এখন পর্যন্ত ৮ বার সার্ভিস করিয়েছি। যথাক্রমে ১,০০০ কিলোমিটার, ২,৫০০ কিলোমিটার, ৪,০০০ কিলোমিটার, ৬,৫০০ কিলোমিটার, ৮,০০০ কিলোমিটার, ১০,০০০ কিলোমিটার, ১২,০০০ কিলোমিটার এবং ১৪,৫০০ কিলোমিটার। সিরাজগঞ্জের এম.আর. হোন্ডা প্যালেস থেকে বাইক সার্ভিসিং করিয়েছি ।

এদের সার্ভিস এর মান ভালো । আমার বাইকের তেমন কোন সমস্যা ছিলনা। ছোট খাটো কিছু সমস্যার কথা বলেছিলাম, তা তারা তাৎক্ষনিক ঠিক করে দিয়েছে এবং ৮,০০০ কিলোমিটারের পর আমি এয়ার ফিল্টার এবং প্লাগ পরিবর্তন করি ।

মাইলেজঃ আমার বাইক এখন পর্যন্ত ১৬,০০০ কিলোমিটার এর মত চলেছে। এতে আমি ৫০+ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পাই। আমি সব সময় ইঞ্জিন ব্রেকের উপর বাইক রান করি। এই জন্য আমার বাইকের মাইলেজ কম । আমি এখন যা মাইলেজ পাই তাতে আমি খুশি ।

মডিফিকেশনঃ বাইক মোডিফাই করার মধ্যে শুধু পিছনের চাকা ২ সাইজ মোটা ১০০-৯০/১৮ TIMSUN DUAL SPORTS GRIP লাগিয়েছি এবং এইটা লাগানোর পর আমি খুব ভাল ভাবে ব্রেক করতে পারি। রেডিয়াম স্পার্ক প্লাগ লাগিয়েছি। চেষ্টা করি সব সময় বাইকের যত্ন নিতে। মোটামোটি ১০০০ কিলোমিটার পর পর চেইন লুব করি আর হালকা পাতলা পরিস্কার করি।

group tour in bangladesh

ইঞ্জিন অয়েলঃ হোন্ডা কোম্পানির রিকমেন্ডেট ইঞ্জিন অয়েলের গ্রেড যেহেতু 10W30 সেহেতু আমি সব সময় 10W30 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। প্রথম ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আমি ৪টি হোন্ডার ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি। পরের ৪০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আমি MOTUL 10W30 3000 মিনারেল ৫টি ব্যবহার করি। তারপর থেকে আমি MOTUL 10W30 7100 ব্যবহার করা শুরু করি । এখন পর্যন্ত আমি শুধু ২টি এয়ার ফিল্টার এবং একবার স্পার্ক প্লাগ পরিবর্তন করেছি। আমরা সবাই জানি ৭-৮ হাজার কিলোমিটার পর পর এয়ার ফিন্টার পরিবর্তন করতে হয়। লিভোর স্টক টায়ার থাকতে ৯৯ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা টপ স্পিড উঠেছিল। এখন ২ সাইজ মোটা টায়ার লাগানোতে ৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা টপ স্পিড উঠে ।

বাইকটির কিছু ভালো দিকঃ

  • এর লুকিং। একে সামনে থেকে দেখতে কখনো মনে হয় না যে এইটা ১১০ সিসির বাইক।
  • মাইলেজ ভাল
  • শুধু সামনের সাসপেনশন আরামদায়ক
  • হ্যান্ডেলবারের সাথে সিটিং পজিশনের কম্বিনেশন খুব ভাল
  • পিক আপ এবং গিয়ার স্মুথ

বাইকের কিছু খারাপ দিকঃ

  • পিলিয়ান সিট অনেক বাজে
  • পেছনের সাস্পেনশন ভাল না
  • ৪ নং গিয়ারে বাইক তার শক্তি কমিয়ে দেয়
  • দাম অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় বেশি
  • ডিজিটাল মিটার দেওয়ার কোন প্রয়োজন ছিলনা

highway ride bike tour

লং ট্যুরঃ 

আমি এখন পর্যন্ত ৩ টা লম্বা ট্যুর দিয়েছি।

  • সিরাজগঞ্জ-কক্সবাজার-টেকনাফ-সিরাজগঞ্জ। মোট-১৩০০ কিলোমিটার আশেপাশের আরও বেশ কয়েকটা স্পট সহ
  • সিরাজগঞ্জ-সাজেক-খাগড়াছড়ি-সিরাজগঞ্জ। মোট-১২০০ কিলোমিটার আশেপাশের আরও বেশ কয়েকটা স্পট সহ
  • সিরাজগঞ্জ-কুয়াকাটা-সিরাজগঞ্জ। মোট-১১০০ কিলোমিটার আশেপাশের আরও বেশ কয়েকটা স্পট সহ

এই বাইকটা নেওয়ার পর আমাদের জেলার বাইকিং গ্রুপ SIRAJGANJ RIDERS এর সাথে আরও অনেক ট্যুর দিয়েছি । কখনো মনে হয়নি যে আমি ১১০ সিসির বাইক নিয়ে ট্যুর দিচ্ছি। আমার কাছে ১১০ সিসির অন্যান্য কোম্পানি বাইকের চেয়ে লিভোকে অনেক ভাল লেগেছে । মনে করা যায় মধ্যবিত্ত বাইকারদের যেমন স্বপ্ন পূরণ করেছে HUNK। ঠিক তেমনি নিম্ন মধ্যবিত্ত বাইকারদের স্বপ্ন পূরণ করেছে Honda Livo 110। আপনি যদি কম বাজেটে ভালো একটি বাইক পেতে চান নিশ্চিন্তে Honda Livo নিয়ে নিন। সবশেষে একটা কথাই বলতে পারি HONDA IS HONDA। হোন্ডা বাইক দাম এর সর্ম্পকে ডিটেইলস পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ঘুরে আসতে পারেন। ধন্যবাদ ।

লিখেছেনঃ জটিল পাপা

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Raihan Opu Bangla