Shares 2
Honda CBR150R 2016 Repsol Edition এর মালিকানা রিভিউ: লিখেছেন তাহমিদ
Last updated on 07-Jul-2024 , By Shuvo Bangla
সবাইকে শুভেচ্ছা। আমি তাহমিদ হাসান এবং পেশায় একজন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। অনেকদিন ধরে আমি আমার Honda CBR150R 2016 (Repsol edition) এর রিভিউ লিখতে চাচ্ছিলাম। তাই এবার ১৪ হাজার কিলোমিটার চালানোর একটা লম্বা রিভিউ আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
Honda CBR150R 2016 Repsol Edition এর মালিকানা রিভিউ
Honda CBR150R 2016 কেনার আগে আমি Yamaha FZs ব্যবহার করতাম। গত ২০১৬ সালের ২৯ জুন আমি এই বাইকটি কিনি। এটি প্রথম লটের বাইক ছিল। তখন খুব কম মানুষই এই বাইকটি চিনত। এই বাইক কেনার আগে আমি ইন্টারনেট থেকে এর স্পেসিফিকেশন দেখি। ফলে আমার কেনার প্রতি ইচ্ছাটা বেড়ে যায়।
যেহেতু BHL এর কাছে এই বাইকটি নেই সেহেতু আমি বাইরের একজন ইম্পোটারের মাধ্যমে বাইকটি কিনি। যেহেতু প্রথম দিকে কেনা তাই বাইকটি বর্তমান বাজার দরের থেকে একটু বেশি দামেই কিনেছিলাম। রেজিস্ট্রেশন সহ খরচ পড়েছিল ৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকা।
বাইকটি সর্বপ্রথম ইন্দোনেশিয়াতে বাজারজাত শুরু হয় ২০১৬ সালের প্রথম দিকে। এর আগে এই বাইকটির পুরাতন ভার্সনটি বাজারে ছিল। আগের মডেলটি থেকে এই নতুন মডেলে অনেক ধরণের পরিবর্তন আনা হয়েছে। লুক, ডিজাইন, ইঞ্জিন, হেডলাইট থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রে এই মডেলটিতে পরিবর্তন করা হয়েছে।
এই বাইকটির ইঞ্জিন হচ্ছে সিঙ্গেল সিলিন্ডার DOHC ওয়াটার কুলড ইঞ্জিন। একই ইঞ্জিনটি Honda CB150r Streetfire বাইকেও ব্যবহার করা হয়েছে। এই ইঞ্জিন অনেকগুলো সেন্সর দিয়ে পরিচালিত হয়। যেটি PGM-FI নামে পরিচিত। বাইকটির ইঞ্জিন ১৭.১ বিএইচপি এবং ১৪.৪ টর্ক উৎপন্ন করে। ইঞ্জিনে কোন প্রকার ভাইব্রেশন হয় না। ওজন ১৩৫ কেজি এবং তেল ধারণক্ষমতা ১২ লিটার। এটির সামনে ১০০/৮০- ১৭ এবং পিছনে ১৩০/৭০- ১৭ সাইজের টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে।
Honda CBR150R 2016 (Repsol edition) বাইকটির ফিচারসমূহ:
১. নতুন এলইডি হেডলাইট ২. Tuss ফ্রেম ৩. পাস লাইট সুইচ ৪. গিয়ার ইন্ডিকেটর মিটার ৫. সিকিউরিটি কি শাটার ৬. অটোমেটিক হেডলাইট অন (AHO) ৭. উভয় চাকায় Nissin ব্র্যান্ডের ব্রেক ক্যালিপার ৮. Sunstar ব্র্যান্ডের ব্রেক ডিস্ক ৯. এলইডি ইন্ডিকেটর লাইট ১০. Soft সেলফ স্টার্ট সুইচ ১১. প্রতিলিটারে এভারেজ মাইলেজ মিটার ১২. এলুমিনিয়াম ক্যাপ লাগানো নতুন ডিজাইনের সাইলেন্সার।
Honda CBR150R 2016 Edition - ভাল দিকগুলো:
১. ব্রেক: NISSIN ব্র্যান্ডের ক্যালিপার এবং Sunstar ব্র্যান্ডের ডিস্ক হওয়ায় আমি এর অসাধারণ পারফর্মেন্স লক্ষ্য করেছি। বিশেষ করে দুই চাকার ব্রেক একসাথে চাপলে বাইক খুব দ্রুত থামানো সম্ভব হয় এবং স্লিপ কাটে না। ২. রাইডিং পজিশন: দীর্ঘ সময় ধরে রাইড করলেও কোমরে বা পিঠে ব্যাথা হয় না। আমি এই বাইক দিয়ে একদিনে ৪১০ কিলো রাইড করেও তেমন ব্যাথা অনুভব করিনি। ৩. এক্সিলারেশন এবং টপ স্পিড: Throttle রেসপন্স ভাল হওয়ায় মাত্র ১০ সেকেন্ড সময়ে ০-১০০ উঠে যায় এবং এর টপ স্পিড ১৪৫।
Also Read: BHL Opens Honda Motorcycle Showroom In Mirpur
৪. সাসপেন্সন: অনেক ভাঙ্গা কিংবা অফ রোডেও খুব কম ঝাঁকি খায়। ফলে লং রাইডে কোমরে ব্যাথা হয় না। ৫. অ্যারোডাইনামিক: এর অ্যারোডাইনামিক কিট বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাইকটি সাইডে প্রশস্ত কম হওয়ায় সহজেই যানজটের মধ্য দিয়ে চালানো যায়। ৬. মাইলেজ: শহরে এটার মাইলেজ প্রতি লিটারে ৩৫-৩৭ কিলোমিটার থাকে। আর হাইওয়েতে প্রতি লিটারে ৪০ কিলোমিটার থাকে।
Honda CBR150R 2016 Edition - মন্দ দিকসমূহ:
১. টাইমিং চেইন এডজাস্টার: টাইমিং চেইনের এডজাস্টার খুব অল্প সময়ে পাল্টিয়ে ফেলতে হয়। কারণ ৫০০০ কিলোতে আমি টাইমিং চেইনের আওয়াজ পাই। পরে একজন মেকানিকের পরামর্শে আমি এটি পাল্টিয়ে ফেলি। আমার মত অনেকেই এরকম সমস্যায় ভুগেছেন। ২. Chain & Sprocket: নরমাল সাধারণ মানের স্ট্যান্ডার্ড চেইনের কারণে খুব অল্প সময়ে বার বার চেইন লুজ হয়ে যায়।
Also Read: Bangshal Honda Gallery Showroom In Bangshal, Dhaka
বেশ কয়েক মাস চালানোর পর আমি বাইকে SSS ব্র্যান্ডের ও রিং চেইন লাগাই। সেই সাথে সামনে ১৫ দাঁতের এবং পিছনে ৪৬ দাঁতের Sprocket লাগাই। এখন পর্যন্ত এই চেইনে তেমন কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। এই চেইন একবার টাইট দিয়ে ৩০০০+ কিলো চালানো যায়। ৩. চাকার রঙ: রিমের রঙ অনেক পাতলা হওয়ায় হালকা খোঁচা লাগলেই রঙ চটে উঠে যায়। ৪. Race Steering Kit (বল রেসার): আমাদের দেশের রাস্তাঘাট খারাপ হওয়ার কারণে এই বল রেসার বেশিদিন যায় না। আমি ১৩৫০০ কিলোতে একবার এটি চেঞ্জ করি। এটা খুব সূক্ষ্ম জিনিস। তাই সমস্যা ধরা পড়লে ভাল অভিজ্ঞ মিস্ত্রি দিয়ে পাল্টানো উচিত।
ব্রেক ইন পিরিয়ড এবং ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন:
শুরুতেই আমি বাইকের ব্রেক ইন পিরিয়ড মেনে চলি। আরপিএম ৫০০০ এর উপর উঠাইনি কখনো। এভাবে প্রথম ১৬০০ কিলো চালাই। এই প্রথম দিকের সময় গুলোতে আমি হোন্ডার মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতাম। প্রথম ৩০০০ কিলো এই মবিল ব্যবহার করি। ৫০০-৬০০ কিলো পর পর মবিল চেঞ্জ করতাম। বাইক যখন ৫০০০ কিলো চালানো হয়ে যায় তখন সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার শুরু করি। বর্তমানে আমি এখন Mobil 1 Racing 4T 10w-40 ব্যবহার করছি। ২০০০ কিলো পর পর এই ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করি। অনেকেই এই ইঞ্জিন অয়েল দিয়ে ২৫০০-৩০০০ কিলো চালান। কিন্তু আমি আমার বাইকের প্রতি একটু বেশি কেয়ার করি।
পরিশেষে আমি বাইকটি নিয়ে সন্তুষ্ট। আমার প্রতিদিনের পথ চলার সঙ্গী। ছোট বেলা থেকেই একটা স্পোর্টস বাইকের প্রতি শখ ছিল। অতঃপর এই Honda CBR150R 2016 Edition (Repsol Version) বাইকটি আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করে। সামনে আরও পথ চলা বাকি। আশা করি আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।
লিখেছেন: তাহমিদ হাসান
T
Published by Shuvo Bangla