Shares 2

Honda CBR 150R Repsol ABS নিয়ে ভ্রমন কাহিনী - শুভ

Last updated on 27-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla

আমার সবসময় এক রোড থেকে গিয়ে সেই রোডে ফিরে আসতে ভালো লাগেনা । তাই আমি আমার ট্যুর প্লান গুলো একটু ভিন্ন রকম করার চেষ্টা করি । প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার চেষ্টা করি । ১৩ নভেম্বর ২০২০ দিনটি ছিল শুক্রবার । 

Honda CBR 150R Repsol ABS নিয়ে ভ্রমন কাহিনী

আগেই প্ল্যান করা ছিল শুক্রবার ট্যুরে যাবো । আর তাই আমার ট্যুর পার্টনার ইমরান ভাই আগের দিন যশোর থেকে চলে আসলো । আমি সবুজ ভাই সোহাগ ভাই  আমরা ৩ জন ঢাকা ছিলাম । আমাদের সাথে ছিল Honda CBR 150R Repsol ABS এবং Yamaha R15 V3 । তবে চলুন শুরু করা যাক। Honda bike price in Bangladesh সম্পর্কে আরও জানতে আমাদের ওয়েবসাইত ভিজিট করুন । yamaha r15 v3 and honda cbr repsol 150 abs with headlightশুক্রবার সকাল ৬.৩০ এ আমরা ৪ জন ২ টি বাইক নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু করি । আমি রাইড করতেছিলাম Honda CBR 150R Repsol ABS বাইকটি এবং ইমরান ভাইয়ের ছিল Yamaha R15 V3। প্রথম উদ্দেশ্য গাজীপুর । আজমপুর খুব দ্রুত চলে যাই কিন্তু বোর্ড বাজারে একটি ট্রাক উল্টে যাওয়ার কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় । অনেক বেশি সময় নষ্ট হয়ে যায় । 

জ্যামের কারণে গাজীপুর আর বিরতি দেওয়ার কোন ইচ্ছে ছিলনা । এরপরে ভালুকা, ত্রিশাল এর হাইওয়ে পেয়ে কখন যে ময়মনসিংহ চলে গেলাম বুঝতেই পারিনি ।  ময়মনসিংহ ২০ মিনিটের একটা চায়ের ব্রেক দিয়ে নেত্রকোনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করি । গন্তব্য ছিল দূর্গাপুর ।honda cbr repsol bike at gazipur districtদূর্গাপুর থেকে সোমেশ্বরী নদী থেকে খেয়া পাড় হয়ে নদীর ওপার বিজয়পুর যাই । দুর্গাপুরের আসল সৌন্দর্য স্বচ্ছ সোমেশ্বরী নদী। সোমেশ্বরী নদীটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের অভ্যন্তরে সীমসাংগ্রী বা সমসাংগা নামক স্থান থেকে উৎপন্ন হয়ে বাঘমারা বাজারের পাশ দিয়ে দুর্গাপুর এ প্রবেশ করেছে।

দুর্গাপুরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে এ অসাধারণ সুন্দর নদীটি। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের থেকে সৃষ্টি নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। শীত কালে যখন পানি কম থাকে তখন সোমেশ্বরী নদীতে হাটু পানি থাকে।honda cbr repsol abs and yamaha r15 v3 bike with kyt helmet

মজার ব্যাপার হচ্ছে এই নদীর অর্ধেক বাংলাদেশ এর মধ্যে অর্ধেক ভারতের মধ্যে । খেয়া পাড় হয়ে চলে যাই বিজয়পুর বর্ডারে । সেখান থেকে ট্রলারে করে বর্ডার এর জিরো পয়েন্ট এ চলে যাই । তখন সোমেশ্বরী নদী আরো বেশি ভালো লাগে । স্বচ্ছ পানি এবং দূরের ভারতের পাহাড় অন্যরকম এক অনুভূতি যা বলে বা লিখে প্রকাশ করার মত না । সোমেশ্বরী নদীর পাশে বিজয়পুর বিজিবি ক্যাম্প অবস্থিত। 

এখানকার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এক কথায় মনোমুগ্ধকর। এখান থেকে আপনি ভারতীয় অংশে অবস্থিত পাহাড়গুলোকে দেখতে পাবেন, পাহাড়ের উপর ভাসমান মেঘও চোখে পড়তে পারে। বর্ষাকাল এখানে বেড়াতে আসার সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। ক্যাম্পের পাশেই অবস্থিত নদীতে নৌকা ভ্রমন করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।bikebd t-shirtপ্রকৃতিকে দেখতে হলে প্রকৃতির মুখোমুখি গিয়ে দাড়াতে হয় । আর তখন মনে হয় আমাদের বাংলাদেশটা কত সুন্দর । ভ্রমন মানুষকে এক অন্যরকম অনুভূতি দেয় মনকে ফ্রেশ করে । বছরে অন্তত একবার হলেও ভ্রমন করুন  দেখবেন নিজেকে কতটা ফ্রেশ লাগে ।

যাইহোক আমরা বিজয়পুর বর্ডার থেকে সরাসরি চলে যাই বিরিশিরি লেক ও চীনামাটির পাহাড় দেখতে । এই পাহাড়ে আমি আগেও গিয়েছি আমার সব থেকে ভালো লাগে এই পাহাড়ে বাইক নিয়ে উঠতে পারি এবং পাহাড়, লেক একত্রে পাওয়া যায়। এই পাহাড়ে উঠে তাকালে মনে হয় যেন রং তুলি দিয়ে আকা কোন চিত্র দেখতেছি ।

বিরিশিরি এর মূল আকর্ষণ বিজয়পুর চীনা মাটির পাহাড় যার বুক চিরে জেগে উঠেছে নীলচে-সবুজ পানির হ্রদ। সাদা মাটি পানির রং যেন আরো বেশি গাঢ় করে দিয়েছে। পাহাড় ও সমভূমি সহ এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৬০০ মিটার। 

বিস্তর পাহাড় জুড়ে রয়েছে সাদা মাটি। কিছু কিছু জায়গায় লালচে মাটি ও দেখা যায়। পাহাড় থেকে মাটি কাটায় সেখানে হ্রদের সৃষ্টি হয় যার পানি কোথাও স্বচ্ছ নীল কোথাও সবুজাভ নীল কোথাও বা একদম লাল। তবে লাল পানি এখন নেই বললেই চলে।birishiri lake yamaha r15 v3 and honda cbr repsol abs back lightএই হ্রদের নীল জল যেন আপনার সমস্ত অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে দেবে। আর এসব হ্রদের পানিতে চোখ পড়তেই দেখবেন আসার সব কষ্ট গুলো নিমিষেই মিলিয়ে গেছে। বিরিশিরি এর সৌন্দর্য আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেবে সব ব্যস্ততা।

বিরিশিরি লেক ও চীনামাটির পাহাড় থেকে যাত্রা করলাম শেরপুর এর উদ্ধেশ্যে ধোবাউড়া, মুন্সির হাট, হালুয়াঘাট থেকে চলে যাই শেরপুর জেলায়। এর মধ্যে ধোবাউড়া দুপুরের খাবার খেয়ে নেই । শেরপুর যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায় । ধোবাউড়া থেকে শেরপুর এর প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তা ছিল খুব খারাপ ।serpur district with honda cbr repsol

এই ৭০ কিলোমিটার রাস্তা ছিল প্রচুর বিরক্তিকর। সকাল থেকে ২০০ কিলোমিটার চালাতে এতটা বিরক্ত লাগেনি যতটা লেগেছে এই ৭০ কিলোমিটার রাইড করে । শেরপুর খুব বেশি সময় না থেকে চলে গেলাম জামালপুর । শেরপুর এর ভাংগা রাস্তায় রাইড করে সবাই ক্লান্ত হয়ে যাই । 

কিন্তু এখনো ঢাকা পৌঁছাতে যেতে হবে ২০০ কিলোমিটার । Honda CBR 150R Repsol ABS এবং Yamaha R15 V3 নিয়ে পরবর্তী উদ্দেশ্য টাঙ্গাইলের ২০১ গম্বুজ মসজিদ । রাত তখন ৯ টা, টাঙ্গাইল ২০১ গুম্বজ মসজিদে গিয়ে পৌঁছাই । 

আমার দেখা সুন্দর মসজিদ গুলোর তালিকায় আগে ছিল বরিশাল বাইতুল আমান জামে মসজিদ (গুটিয়া মসজিদ) কিন্তু এখন নতুন যুক্ত হলো ২০১ গুম্বজ মসজিদ । এত সুন্দর সৃষ্টি যা নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবেনা । খুব সুন্দর করে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে।jamalpur district

২০১ গম্বুজ মসজিদ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গম্বুজ এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনার বিশিষ্ট মসজিদ। এই মসজিদের নকশা করা হয়েছে ২০১টি গম্বুজ ও ৯টি মিনার দিয়ে সজ্জিত একটি পূর্ণাঙ্গ মসজিদ । মসজিদটি এখনো নির্মাণাধীন। ২০১ গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত। ২০১৩ সালের জানুয়ারি এই মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। 

মসজিদটি মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে। এ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের মা রিজিয়া খাতুন।201 gombuj masjid with honda cbr repsol absমসজিদ নির্মাণে ব্যয় হবে আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা। নির্মাণ শেষ হলে কাবার ইমাম এসে নামাজের ইমামতি করে মসজিদটি উদ্বোধন করবেন। পৃথিবীর ইতিহাসে কখনো এত সংখ্যক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ তৈরি হয়নি। অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের ছাদে ৮১ ফুট উচ্চতার একটি গম্বুজ রয়েছে। এই বড় গম্বুজের চারপাশে ছোট ছোট গম্বুজ আছে ২০০টি।

এদের প্রত্যেকের উচ্চতা ১৭ ফুট। মূল মসজিদের চার কোণায় রয়েছে ৪টি মিনার । এদের প্রত্যেকের উচ্চতা ১০১ ফুট। পাশাপাশি আরও চারটি মিনার আছে ৮১ ফুট উচ্চতার। সবচেয়ে উঁচু মিনার মসজিদের পাশে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৪৫১ ফুট।

Click To See Honda CBR 150 Test Ride Review

১৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪৪ ফুট প্রস্থের দ্বিতল এই মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদের দেয়ালের টাইলসে অঙ্কিত রয়েছে পূর্ণ পবিত্র কোরআন শরীফ। যে কেউ বসে বা দাঁড়িয়ে মসজিদের দেয়ালে অঙ্কিত কোরআন শরীফ পড়তে পারবেন।ইচ্ছে ছিল যমুনা ব্রিজে যাওয়ার কিন্তু । 

তখন রাত ১০.৩০ অফরোডে Yamaha R15 v3 রাইড করে ইমরান ভাই খুব ক্লান্ত হয়ে যায় এছাড়া আমিও Honda CBR 150R Repsol ABS নিয়ে কিছুটা ক্লান্ত বোধ করি । যে ক্লান্তিটা আমি আগে কখনো তার মধ্যে দেখিনি । আগের দিন আবার যশোর থেকে ২৭০ কিলোমিটার রাইড করে ঢাকায় এসেছে, তাই যমুনা যাওয়ার প্লান পরিবর্তন করে কিছুক্ষন বিরতি দিয়ে রাত ১১ টায় ২০১ গুম্বজ মসজিদ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করি ।Birishiri lake with honda cbr repsol abs and kyt helmet

এবার শুরু হয় আর এক সমস্যা সেটা হচ্ছে আমি যে বাইকটি রাইড করতেছিলাম সেই বাইকটিতে কোন ফগ লাইট লাগানো ছিলোনা আর আমি সামনে ছিলাম । Honda CBR 150R Repsol ABS বাইকটি খুব কম্ফোর্ট নিয়ে রাইড করতেছিলাম তবে এর স্টক হেডলাইটের আলো আমার স্পিড কমিয়ে দিতে বাধ্য করে । যাইহোক কিছু করার নেই এভাবেই চলে আসলাম মানিকগঞ্জ । 

একটা ৩০ মিনিটের বিরতি দেই । এর পরে মানিকগঞ্জ এড়িয়া থেকে সাভার চলে আসি এবং সাভার থেকে গাবতলী হয়ে নিরাপদে ৪৭৫ কিলোমিটার রাইড শেষ করে রাত ২.৩০ ঘটিকায় বাসায় চলে আসি । সকাল ৬.৩০ থেকে রাত ২.৩০ পর্যন্ত এই ৪৭৫ কিলোমিটার রাইডের আনন্দ এবং অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ । ঢাকা - গাজীপুর - ময়মনসিংহ - নেত্রকোনা - শেরপুর - জামালপুর - টাঙ্গাইল - মানিকগঞ্জ - ঢাকা ।

Honda CBR 150R Repsol ABS নিয়ে বাংলাদেশের ৮ টি জেলা সাথে কিছু দর্শনীয় স্থান সবমিলিয়ে খুব সুন্দর একটি ভ্রমন শেষ করি । আমার কাছে ভ্রমনের প্রকৃত সার্থকতা হচ্ছে নিরাপদে ভ্রমন শেষ করে বাড়িতে ফেরা। সুন্দর বাংলাদেশটাকে জানতে এবং জানাতে চাই । তাই প্রকৃতির দিকে ছুটে চলা । দুই চাকায় করে যেতে চাই বহুদূর।  আমার লেখাটি এতক্ষন ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

লিখেছেনঃ শুভ মিয়া

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Raihan Opu Bangla