Shares 2
Honda CB Trigger 150cc টেস্ট রাইড রিভিউ বাই টীম বাইকবিডি
Last updated on 29-Jul-2024 , By Shuvo Bangla
বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় বাইক হচ্ছে Honda CB Trigger 150cc। বাইকটি বাংলাদেশে লঞ্চ হওয়ার পর বাইকারদের মাঝে সাড়া ফেলে দেয়। কারণ হচ্ছে এর লুকস, ডিজাইন এবং অন্যান্য ফিচার যুক্ত হওয়াতে বাইকটি এই সেগমেন্টের অন্য বাইক থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছে। যদিও অনেক কিছুই নিয়ে তর্কের শেষ নেই যেমন ডিজাইন, মডেল, লুকস, পাওয়ার, এক্সিলারেশন আরো ফিচার নিয়ে।
সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে যে খুব শীঘ্রই বিখ্যাত মোটরসাইকেল কোম্পানি গুলো বাংলাদেশে অফিশিয়ালি তাদের যাত্রা শুরু করেছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে হোন্ডা মোটরসাইকেল তাদের যাত্রা শুরু করে। আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি Honda CB Trigger 150cc টিম বাইকবিডি রিভিউ।এছাড়াও চলেন দেখে আসি Honda bike price in Bangladesh সর্ম্পকে বিস্তারিত।
এন্টার দ্যা ড্রাগন:
Honda Bangladesh Private Limited (HBPL) বাংলাদেশে তাদের যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালে। লঞ্চ হওয়ার পর আমরা আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেজে বাইকাদের অনেক প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছি। বেশির ভাগ মানুষের প্রশ্ন কবে Honda CB Trigger 150cc এবং Honda CBR 150R বাংলাদেশে এভেইলেবল হবে। বাইকপ্রেমীদের কাছে Honda CBR 150R বাংলাদেশী বাইকারদের কাছে অতি পরিচিত। তবে প্রধান আকর্ষন ছিল হচ্ছে সিবি ট্রিগার যার মডেল, স্পেসিফিকেশন, রাইডিং কমফোর্ট এবং এর দাম সব কিছু মিলিয়ে বাইকাদের মাঝে মুল আকর্ষন ছিল এই বাইকটি। ২০১৪ এর মে মাসের শেষ Honda CB Trigger 150cc বাংলাদেশে লঞ্চ হয়। যদিও অনেক বাইকার এরই মাঝে FZS বাইকটির অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেলেছে যা সিবি ট্রিগারের রাইভাল বাইক।
Honda CB Trigger 150cc বড় প্রশ্ন:
বাইকাদের মাঝে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে Yamaha FZS বাইকটির সাথে Honda CB Trigger 150cc পাওয়ার ও গ্রেডে FZS এর সমান হবে। নাকি কম বা বেশি। তবে এই দুটি বাইকের মাঝে কম্পারিজন টা উপভোগ্য হবে। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশে বেস্ট ১৫০সিস এয়ার কুল্ড বাইক গুলো কিকি সেগুলো আমরা আগেই জানিয়েছি। তাই আমরা টিম বাইকবিডি মেম্বার জুন সাদীকুল্লাহ কাছে গিয়েছিলাম। যে নতুন একটি Honda CB Trigger ক্রয় করেছিল। আর তিনি টিম বাইকবিডির জন্য হোন্ডা সিবি ট্রিগার এর স্টেট রাইড রিভিউ করেছেন।
Honda CB Trigger 150cc ফ্ল্যাশ ব্যাক:
হোন্ডা সব সময় কিছু দারুন বাইক উপহার দিয়েছে। যার মধ্যে কিংবদন্তি Honda H100S CDI , রোড মাস্টার ২০০, সিডি-৮০, এবং সিডি-৫০। এরপর হোন্ডা ৪ স্ট্রোকের Honda CG 125, Honda CBF Stunner এবং CB Unicorn বাজারে নিয়ে আসে। সব গুলো বাইক রাস্তায় দারুন পারফর্ম করছে। প্রতিটি বাইক পাওয়ার ও দীর্ঘস্থায়ীত্বের দিক থেকে আমাদের মুগ্ধ করেছে। তাই হোন্ডার কাছে বাইকারদের এবং আমাদের সকলের প্রত্যশা অনেক। তারা Honda CB Trigger এ কি দেয়া হয়েছে আর কি কি ফিচার যুক্ত হয়েছে। তা নিয়ে আমদের আগ্রহের কমতি নেই। তবে কেমন হবে এই নতুন বিস্ট?? এটা কি রাস্তায় রাজ্যত্ব করতে পারবে। নাকি হারিয়ে যাবে।
Also Read: Honda Wave Alpha এর মালিকানা রিভিউ
Honda CB Trigger 150cc স্পেসিফিকেশন:
আপনারা সবাই জানেন যে বাংলাদেশে সিসি লিমেটেশন অনেক কম। মাত্র ১৫৫সিসি, যদিও এখন তা ১৬৫সিসি করা হয়েছে। কিন্তু সেই হিসেবে হোন্ডা সিবি ট্রিগার অনেক শক্তিশালী। এর ইঞ্জিন ১৪৯.১সিসি এবং ৪ স্ট্রোক, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এয়ার কুল্ড। ইঞ্জিনটি ১৪BHP তে ৮৫০০rpm এবং ১২.৫NM তে 6500rpm ক্ষমতা উতপন্ন করতে সক্ষম। ইঞ্জিনটিতে ২টি ভালব ও OHC যুক্ত করা হয়েছে। ফুয়েল সাপ্লাই হচ্ছে কারবুর্টেড। এছাড়া আপনি সেলফ বা কিক দুই ভাবেই বাইক স্টার্ট করতে পারবেন। Honda CB Trigger 150cc এ ৫ স্পিড গিয়ার বক্স যুক্ত করা হয়েছে। ১টি নিচে এবং বাকি চারটি উপরের দিকে। হোন্ডা দাবী করছে যে তারা বাইকটির চেসিস এডভান্সড ডায়মন্ড ফ্রেম ব্যবহার করেছে। সিবি ট্রিগারের ফ্রন্ট সাসপেনশন রেগুলার টেলিস্কোপিক ফ্রন্ট কিন্তু রিয়ার সাসপেনশনে মনোশক ব্যবহার করা হয়েছে। Honda CB Trigger 150cc এর ফ্রন্টে ১০০/৮০-১৭ সাইজের টায়ার এবং রিয়ারে ১১০/৮০-১৭ সাইজের টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। উভয় টায়ার ই টিউবলেস টায়ার। বাইকটির উভয় চাকা এলয় এবং ডিস্ক ব্রেক সংযুক্ত। ফ্রন্টে ২৪০মিমি এবং ২২০মিমি ডিস্ক ব্রেক দেয়া হয়েছে। CBS অপশনাল হিসেবে রাখা হয়েছে।
Also Read: Honda CB Hornet 160R ABS ফিচার্স ও বিস্তারিত
CBS হচ্ছে কম্বিব্রেকিং সিস্টেম। যদিও বাংলাদেশে CBS এভেইলেবল নয়। যা রিয়ারে এল্পাই করা হয়। রিয়ারের ব্রেক লিভারের কাছেই CBS দেয়া হয়। যখন আপনি রিয়ার ব্রেক ধরবেন তখন রিয়ার এবং ফ্রন্ট দুটো বাইকেই এক সাথে কার্যকর হবে। যদিও আমরা CBS সম্পন্ন ট্রিগার স্টেট করার সুযোগ পাইনি তাই এখন বলা যাচ্ছে না যে CBS কতটা ভালোভাবে কাজ করবে। কিন্তু Honda CB Trigger এর ক্ষেত্রে এটি একটি আকর্ষনীয় ফিচার। কিন্তু যদি ট্রিগারে CBS এ দেয়া হয় তখন এর দাম কিছুটা হলেও বেড়ে যাবে। Honda CB Trigger এর ওজন ১৩৭ কেজি যা পাওয়ার এবং ওয়েটের সম্বনয় নোটিশ করার মত। ইনিশিয়ালি স্পিড আপনি হয়ত কম পাবেন। কিন্তু ধীরে ধীরে থ্রটল ঘুরানোর পর দেখেবেন যে ওডোতে প্রায় ৯০ কিলোমিটার পার ঘন্টায় স্পর্শ করে থাকে। ইয়ামাহা এফজেডএস এর চেয়ে ট্রীগার একটু ফাস্ত কিন্তু এপাচি আরটিআর এর চেয়ে কম দ্রুত।
বাইকটির ইঞ্জিন অনেক বেশি রিফাইন করা হয়েছে যাতে সাউন্ড একদম কম। আপনি হয়ত সাউন্ড তেমন শুনতে পাবেন না, কিন্তু ফিল করতে পারবেন। টায়ারের গ্রিপ অসাধারন। আপনি যখন কর্নারিং করবেন তখন ভাবো ভাবে বুঝতে পারবেন। আর রিয়ার সাসপেনশন কতটা ভালো ভাবে কাজ করে। তখন ফিল করতে পারবেন।
Honda CB Trigger 150cc এপিয়ারেন্স:
বাইকটি কে কোন ক্যাটাগরিতে ফেলা সম্ভব নয়। কারণ এর লুকস স্পোর্টি বা সেমি স্পোর্টি কোনটাই নয়। তারচেয়ে বরং এর লুকস অনেকটা কমিউটার বাইকের মত। কিন্তু অনেক বেশি স্টাইলিশ। বাইকটির ওডোমিটার পুরোপরি ডিজিটাল এবং বড়। যার এর এপিয়ারেন্স কে অনেক বেশি স্টাইলিশ করে তুলেছে।
ডাবল স্টেপড টেইল লাইট এবং সাইলেন্ট এক্স হস্ট এর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া ফুয়েল ট্যাঙ্কের পাশে সাইড ক্রাওল রয়েছে। এর কারণে ইঞ্জিনে বাতাস বেশি প্রবাহিত হয়। যা এয়ার কুল্ড বাইকটির একটি বৈশিষ্ট্য ।
Honda CB Trigger 150 এ অনেক বেশি আকর্ষনীয় করে তুলেছে এর বাক যুক্ত পেশীবহুল ফুয়েল ট্যাঙ্ক। যদিও এই বাক গুলো FZS এর মত দেখতে কিন্তু প্লাস্টিকের নয়, মেটালের তৈরি। হেড ল্যাম্প অনেকটা Pulsar NS200 এর মত দেখতে। এছাড়া রিয়ার মনোশক, শক এভজরভার, ডিস্ক ব্রেক, ক্লিয়ার লেন্স টার্নিং ইন্ডিকেটরস এবং প্রশস্ত ও আরামদায়ক সিট মিলিয়ে ট্রিগার কে অতুলনীয় করেছে।
Honda CB Trigger 150cc এর ফলাফল:
সৌভাগ্যবশত আমাদের সুযোগ হয়েছিল ০ কিলো থেকে ট্রিগার রাইড করার। তিন সপ্তাহে ১৪০০কিলো রাইডের পরে আমরা আপনাদের জন্য ফলাফল নিয়ে হাজির হয়েছি। আমরা জ্যাম ও ভীড়ের মধ্যে বাইকটি স্টেট করেছি। এছাড়া হাইওয়েতেও বাইকটি স্টেট করেছি। তবে এটা বলা যায় যে বাইকটি ট্যুরিং বাইক নয়।
আমাদের ১৪০০ কিলো রাইডিং এ আমরা চেষ্টা করেছি যথা সম্ভব সব জায়গাতেই বাইকটি স্টেট করার। আর আমরা হাইওয়েতে Honda CB Trigger 150cc কে অনেক বেশি আরামদায়ক হিসেবে পেয়েছি। আমরা প্রায় ৩৫০কিলো ক্রজিং এ অনেক বেশি কমফোর্ট পেয়েছি। আমরা পিলিয়ন সহ বাইকটির স্পিড পেয়েছি ১১৮ কিলো প্রতি ঘন্টায়। কিন্তু তখন বাইকটি মাত্র ৮০০ কিলো পর্যন্ত রাইড করা হয়েছে। Honda CB Trigger এ টপ স্পিড পেয়েছি ১২৬ কিলো প্রতি ঘন্টায় পিলিয়ন ছাড়া। আর বাইকটি তখন মাত্র ১০০০ কিলো রাইড করা হয়েছে। তাই আমরা ব্রেক ইন পয়েন্টের পর এর ক্ষমতা বুঝতে পারি। বাইকটির মুল দিক হচ্ছে মাইলেজ। আমরা মাইলেজ পেয়েছি ৪৮-৫২ কিলো প্রতি লিটারে।
Honda CB Trigger 150cc এর কিছু বিষয়:
আমরা ঢাকা সিটি ও হাইওয়েতে বাইকটি স্টেট করেছি। আমরা লক্ষ্য করেছি যে বাইকটির লুকস সবাই পছন্দ করেছে। অনেকে আবার এগ্রেসিভ স্পোর্টস এর কারনে তাদের ভালো লাগেনি বলেছে। অনেক রাইডার আবার এই ভদ্র লুকের কারনে হতাশ হয়েছেন। তাই রাইডার ও পছন্দের উপর সবারই আলাদা আলাদা মনোভাব রয়েছে।
- এর ভ্রদ লুকস ও এপিয়ারেন্স সাথে কালারের দারুন সম্বনয়, যেকোন ক্লাসের রাইডারে কাছে পছন্দনীয়।
- সাইলেন্ট, রিফাইন্ড ও ব্যালেন্সড টুইকড ইঞ্জিন, যা পাওয়ার ও এক্সলারেশন সাথে ভালো মাইলেজ দেয়।
- এর ডিজিটাল স্পিডোমিটার ড্যাশ বোর্ড সব ধরনের তথ্য আপনাকে আপডেট দেবে।
- আমরা টায়ার নিয়ে হতাশ ছিলাম। কারণ আমরা আশা করেছিলাম টায়ার কিছুটা প্রশস্ত হবে। কিন্তু এই টায়ারের পারফর্মেন্স আমাদের মুগ্ধ করেছে। সেফলি কর্নারিং করা যায় এবং ম্যাক্সিমাম টার্নি রেডিয়াস পাওয়া যায়।
- হ্যান্ডেল বার প্রশস্ত হওয়ায় এর টার্নিং রেডিয়াস ভালো। তাই খুব অল্প জায়গাতেই বাইকটি টার্ন করানো যায়।
- হেড লাইট ক্যাসিটি দারুন কার্যকরী। হেড লাইট ব্যাটারি থেকে সরাসরি পাওয়ার নেয়। তবে আপার ও ডিপারের ক্ষেত্রে অনেক অনেক বেশি বিরক্তিকর।
- এর ব্রেকিং ক্যাপাসিটি অসাধারন ও সাসপেনশন অনেক ভালো।
- সিটিং পজিশন ও হ্যান্ডেল পজিশন অনেক বেশি আরামদায়ক হওয়াতে লং রাইডিং এ কোন ঝামেলা হয়না।
- আমরা কন্ট্রোল সুইচ নিয়ে একটু হতাশ বলা যায়। কারণ বাইকটির সাথে এই সুইচ ম্যাচ করে না।
- ইঞ্জিন কিল সুইচ নেই।
- বাইকটির জন্য ফুয়েল হিসেবে অকেটেন(RON95) ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
অন্যান্য ফিচার:
- ব্যাটারি ১২V ৪AH
- হেড ল্যাম্প ৩৫ওয়াট
- ফুয়েল ইঞ্জিন ১২ লিটার
- এয়ার ফিল্টার এবং ১৬০০০কিলো লাইফ টাইম
Honda CB Trigger 150cc সার-সংক্ষেপ:
আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে সন্দেহাতীত ভাবে ফ্যান্টাস্টিক বাইক। উইকেন্ডে ক্রুজিং হোক অথবা প্রতিদিনের কমিউটিং এই বাইকটি আপনাকে সর্বোচ্চ সাপোর্ত দেবে। আপনি চাইবেন এমন একটি বাইক আপনার কাছে থাকুক। সবশেষে বলা যায় Honda CB Trigger 150cc রাস্তায় এর সক্ষমতা প্রকাশ করবে। তবে দেখার বিষয় হচ্ছে যে বাইকটি এর রাইভাল বাইকটির সাথে কতটা প্রতযোগিতা করবে। আশা করি আপনারা আমাদের আলোচনা থেকে সম্পূর্ন ধারনা পেয়েছেন। ধন্যবাদ সাবাইকে।
T
Published by Shuvo Bangla