Shares 2
Hero Ignitor টেস্ট রাইড রিভিউ - টিম বাইকবিডি
Last updated on 09-Jan-2025 , By Saleh Bangla
হিরো ইন্ডিয়ার নাম্বার ১ মোটরসাইকেল ব্রান্ড। হিরো বাংলাদেশে কমিউটিং সেগমেন্টে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে কারন এর সহজলভ্যতা এবং অসাধারন পারফরমেন্সের জন্য। ১২৫ সিসি সেগমেন্টে স্টাইল, কমফোর্ট এবং সহজলভ্যতার দিক দিয়ে Hero Glamour খুব শক্তিশালী অবস্থানে আছে। এই শক্তিশালী অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে গত বছর হিরো বাজারে এনেছে Hero Ignitor যা পাওয়ার এবং স্টাইল এর দিক দিয়ে আরো এগ্রেসিভ ।
Hero Ignitor টেস্ট রাইড রিভিউ - টিম বাইকবিডি
Hero Ignitor বাজারে এসেছে এর i3S টেকনোলজি নিয়ে, এটি হিরোর একটি পেটেন্ট টেকনোলজি । তারা বিশ্বাস করে যে এই টেকনোলজি ব্যবহার করলে বাইকের অনেক ফুয়েল সাশ্রয় হবে। বাইকের জন্য ১২৫ সিসি একটি ইন্টারেস্টিং সেগমেন্ট কারন এই সেগমেন্ট অনেক বেশি আরামদায়ক ১০০ সিসি বাইক থেকে এবং প্রায় ১৫০ সিসি বাইক চালানোর স্বাদ পাওয়া যায়। ব্যাক্তিগত ভাবে এর ভ্যালুর জন্য আমি এই সেগমেন্টে ফ্যান। Hero Ignitor হিরোর সম্পূর্ন নতুন একটি ডিজাইন। Hero Splendor iSmart 110 এরপর এটা তাদের দ্বিতীয় বাইক যা সম্পূর্ন ভাবে হিরোর নিজেদের তৈরি যাতে করে হোন্ডার কোন অবদান নেই।
Also Read: Hero Bike Showroom in Bochagonj: Elin Motors (Dinajpur)
Hero Ignitor ইঞ্জিনঃ এই বাইকের ইঞ্জিনটি সম্পূর্ন নতুন ইউনিট । এই বাইকে ব্যবহার করা হয়েছে ১২৫ সিসি এয়ার কুলড সিঙ্গেল সিলিন্ডার ভার্টিক্যাল ইঞ্জিন যা ১১ বিএইচপি @ ৭৫০০ আরপিএম পাওয়ার এবং ১১ এনএম @ ৬৫০০ আরপিএম টর্ক উৎপন্ন করে । এই ইঞ্জিনটি BS4 সমৃদ্ধ এবং এর সাথে আরো যোগ হয়েছে i3S টেকনোলজি। এই বাইকে কিক এবং সেলফ উভয় স্ট্যার্টিং সিস্টেম রয়েছে।
যদি i3S টেকনোলজি অন করা থেকে তবে ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে আপনি ১০ সেকেন্ড বসে থাকেন তাহলে ইঞ্জিন অটোমেটিকলি অফ হয়ে যাবে । এরপর যদি আপনি আবার বাইকের ক্লাচ চেপে ধরেন তাহলে বাইক আবার স্ট্যার্ট হয়ে যাবে। আপনি ইঞ্জিনের এই অটোমেটিক অপশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়া পছন্দ না করেন তাহলে চাইলে এই i3S সিস্টেম অফ করতে পারবেন । i3S টেকনোলজি আপনার ফুয়েল বাচাবে, আপনি এর গুরুত্ব বুঝতে পারবেন যখন আপনি ঢাকা শহরের মত কনজাস্টেট ট্রাফিক জ্যামের শহরে বাইক চালাবেন। এই বাইকের ইঞ্জিন্টি খুব স্মুথ তবে হাই আরপিএমে আপনি কিছুটা ভাইব্রেশন অনুভব করবেন। ইঞ্জিনটি রিফাইন্ড এবং এর শব্দ খুব ভালো, বাইকের ৪ স্পিড গিয়ার বক্স প্রথম দিকে খুব শক্ত অনুভূত হবে হবে তবে প্রথম সার্ভিসিং এরপর এটি ঠিক হয়ে যাবে।
Also Read: Hero Motorcycle lineup with the detailed price list for Bangladesh in 2018
Hero Ignitor স্টাইল এবং ডিজাইনঃ হিরো এই বাইকটির স্টাইল ও ডিজাইনের জন্য অনেক সময় ব্যয় করেছে । বাইকটিতে একটি হ্যালোজেন হেডলাইট দেয়া হয়েছে, তবে সেটি এসি অপারেটেড । হিরোর এই জায়গাতে অনেক বেশি কাজ করতে হবে । কারন বর্তমানে সকল বাইক ই ডিসি অপারেটেড হেডলাইট নিয়ে আসছে । তাই আশা করছি হিরো খুব শীঘ্রই এই বিষয়টির দিকে নজর দেবে । হিরো একটি দারুন ফুয়েল ট্যাঙ্ক তৈরি করেছে, যার দুপাশে এয়ার স্কুপ দেয়া হয়েছে । তারা বাইকটিকে এগ্রেসিভ করেনি, বরং একটা ভদ্র লুকস দেয়ার চেষ্টা করেছে । আমার কাছে বাইকটির পেছনের এলইডি টেইল লাইটি ভাল লেগেছে । এটি বাইকারদের অনেক বেশি আকর্ষন করে ।
Also Read: Hero Bike Showroom in Paikgacha: Promila Motors (Khulna)
সুইচ গিয়ার গুলোর কথা যদি বলি তবে, তারা এখনও সেই পুরাতন সুইচ গিয়ার রেখেছে । যা তারা হিরো গ্ল্যামার বাইকটিতে ব্যবহার করেছিল । এছাড়া তারা একটি এনালগ স্পিডোমিটার দিয়েছে, এর সাথেই রয়েছে একটি ডিজিটাল ইউনিট বেসড মিটার । যেখানে ওডোমিটার শো করে এবং ফুয়েল গজ শো করে, যেখানে ফুয়েল ট্যাঙ্কে ১৩ লিটার ফুয়েল নেয়া যায় । তারা বাইকটিতে সেমি ডাবল ক্রেডেল চেসিস দিয়েছে, যা অনেক হালকা । এই ফ্রেম বাইকটিকে অনেক হালকা করেছে, যার জন্য এর ওজন হয়েছে মাত্র ১২৭ কেজি, এতে সিটি এবং হাইওয়েতে রাইডের জন্য অনেক ভালো । হিরো রেয়ার টায়ারে একটা গার্ড দিয়েছে যা আপনাকে বর্ষাকালে রাইড করতে সাহায্য করবে ।
বাইকটির রং এবং এর ফিনিশিং অনেক হতাশাজনক । বিশেষ ভাবে গ্রেইব রেইল এবং চোক সুইচ হতাশাজনক । এই জায়গাতেও বাইটির উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে ।
Hero Ignitor হুইলস, ব্রেক এবং টায়ারঃ প্রথম বারের মত হিরো এই সেগমেন্টে টিউবলেস টায়ার যুক্ত করেছে । যা বাংলাদেশে এই সেগমেন্টে জরুরী ছিল । এছাড়া রেয়ার টায়ারে তারা ৯০ সেকশন যুক্ত করেছে, যাতে আরও ভাল গ্রিপ এবং স্ট্যাবিলিটি পাওয়া যায় ।
Also Read: Hero Bike Showroom in Kotiadi: Ziran Motors (Kishorgonj)
হিরো ইগনাইটর এই বাইকটিতে সামনে ২৪০মিমি ডিস্ক ব্রেক ও রেয়ারে ১৩০মিমি ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করেছে । আর এই সেগেমেন্টে দারুন পারফর্ম করেছে এর ব্রেকিং । আমি প্রায় ৮০ – ৯০ কিলো প্রতি ঘন্টায় স্পিডে রাইড করে ব্রেক করেছি । এই স্পিডেও এর ব্রেক দারুন কাজ করেছে, বাইকও দারুন স্ট্যাবল ছিল ।
বাইকটিতে হিরো সামনে দিয়েছে টেলিস্কোপিক সাসপেনশন এবং রেয়ার তারা দিয়েছে ৫ স্টেপ এডজাস্টেবল শক এবজরভার । সাসপেনশন এর ফিডব্যাক ভালো, তবে আপনি পিলিয়ন নিয়ে রাইড করার সময় যদি রাস্তার ছোট খাটো গর্তে পরেন তাহলে টায়ার গার্ড মাড গার্ডের সাথে ঘষা লাগে ।
Also Read: Hero Bike Showroom in Gopalganj: M/S Zannat Motors (Police Line)
Hero Ignitor রাইডিং অভিজ্ঞতাঃ প্রথম দেখায় আমার মনে হয়েছে এই সেগমেন্টে বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম স্মার্ট লুকিং বাইক, এর মধ্যে একটা এক্সিকিউটিভ লুকস আছে । এর রাইডিং অভিজ্ঞতা আমার দারুন । আপনি চাইলে সারাদিন এই বাইকটি রাইড করতে পারেন, আপনি বিরক্ত বা ক্লান্ত হবেন না । হ্যান্ডেল বার আপরাইট হবার কারনে আপনি ট্র্যাফিক জ্যামের মধ্যেও আপনি সহজেই বাইকটি রাইড করতে পারবেন ।
বাইকটিতে মাত্র ৪টি গিয়ার দেয়া হয়েছে, হাইওয়েতে আপনি ৫ম গিয়ারটি মিস করবেন । গিয়ার রেশিও ছোট এবং চার নাম্বার গিয়ার দেয়ার পর আপনি একটা বুস্ট পাবেন । টপ গিয়ারে আমি ১১০ কিলো প্রতি ঘন্টা স্পিড পেয়েছি । সিটিতে আমি ৫২ এবং হাইওয়েতে ৫৮ – ৬০ কিলো প্রতি লিটার মাইলেজ পেয়েছি । এই মাইলেজ পেয়েছি আমি স্বাভাবিক ভাবে রাইড করে, আপনি এগ্রেসিভ রাইড না করলে এমন মাইলেজ পাবেন বলে আশা রাখি । প্রথম দিকে ব্রেকিং পারফর্মেন্স ভাল, যদিও এগ্রেসিভ নয় তবে এই সেগেমেন্টের জন্য এই ব্রেকিং যথেষ্ট । সাসপেনশন অনেক সফট, আপনি সিটি ও হাইওয়ে রাইডের সময় ভাল ফিডব্যাক পাবেন । থ্রটল রেসপন্স লিনিয়ার এবং দারুন সফট স্মুথ ।
Also Read: Hero Bike Showroom in Kurigram: Prime Motors (Khalilganj Bazar)
সিটি রাইডিং এর জন্য এর বাইকটি অসাধারন, কারন এর স্যাডেল হাইট কম । আপনি জ্যামের মধ্যে সহজেই রাইড করতে পারবেন পিলিয়ন সহ, আপনি যদি শর্ট রাইড হন তারপরও কোন সমস্যা হবে না । আপনি হালকা ভাইব্রেশন অনুভব করবেন, যদিও এটা উচ্চ আরপিএম এ ক্ষেত্রে । তবে ভাইব্রেশন আপনাকে তেমন অসুবিধায় ফেলবে না । এসি হেডলাইট হবার কারনে আপনার কনফিডেন্স একটু কমে যেতে পারে হাইওয়েতে । এছাড়া আপনি যখন ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় রাইড করবেন তখন বাইকটি একটু ভাইব্রেট করবে বাতাসের কারনে । তবে বাইকটির ইঞ্জিন স্মুথ এবং রিফাইন করা । তাই হাই স্পিড বা লো স্পিডে আপনি সুন্দর ভাবে রাইড করতে পারবেন ।
রেয়ার টায়ার প্রশস্ত হওয়ার কারনে কর্নারিং এ আপনি কোন সমস্যা অনুভব করবেন না, এছাড়া এর টিউবলেস টায়ার আপনাকে খারাপ রাস্তাতেও দারুন কনফিডেন্স এর সাথে রাইড করতে পারবেন । বাইকটিতে মেয়েরা এক সাইডে পা দিয়ে আরাম করে বসতে পারবে, কারন এতে সাড়ি গার্ড দেয়া হয়েছে ।
Hero Ignitor 125 First Impression Review
Hero Ignitor ভাল দিকঃ
- ১২৫সিসি সেগমেন্টে স্মার্ট ডিজাইন
- স্মুথ ইঞ্জিন এর সাথে ভাইব্রেশন খুব ই কম
- সামনের ডিস্ক ব্রেকের কারনে ব্রেকিং স্ট্যাবল
- হ্যান্ডেলিং অনেক দারুন, আপনি ৮০ কিমি তেও দারুন ভাবে কর্নারিং করতে পারবেন
- খারাপ রাস্তার জন্য সাসপেনশন গুলো ভাল ফিডব্যাক দেয়
Hero Ignitor খারাপ দিকঃ
- এসি অপারেটেড হেড লাইট হাই স্পিডে হাইওয়েতে চলার জন্য ভাল নয়
- কালার এবং ফিনিশং কিছু কিছু জায়গাতে ইম্প্রুভ করতে হবে, বিশেষ করে চোক সুইচ ও গ্রেইব রেইল
- রেয়ার টায়ার গার্ড এর সাথে মাড গার্ড এর হিট হয় স্পিড ব্রেকার পার হাবার সময়
আমি শুরুতেই বলেছি ১২৫সিসি সেগমেন্ট বাংলাদেশের বাইকারদের কাছে জনপ্রিয় । আমরা আশা করছি যে হিরো ইগনাইটর ১২৫ টেস্ট রাইড রিভিউটি আপনাকে সাহায্য করবে নতুন বাইক কেনার বা পছন্দের ক্ষেত্রে । বাইকটি তিনটি কালারে পাওয়া যাবে, এর দাম হচ্ছে ১১৮,৯০০/- টাকা ।
T
Published by Saleh Bangla