Shares 2
Bajaj Pulsar NS160 নিয়ে ১২ হাজার কিলোমিটার রিভিউ - রিকু আমির
Last updated on 15-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla
মোটর সাইকেল নিয়ে যেমনি এদিক ওদিন যখন তখন ছুটে চলা যায়, ঠিক তেমনি আমার স্বভাব, যখন তখন এদিক ওদিক ছুটে যাওয়া আমার অভ্যাস। সুতরাং মোটর সাইকেল আমার হৃদয়ের একটি অংশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে বহু আগ থেকেই। সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছি বেস্ট মোটর সাইকেল সংগ্রহের। এরই ধারাবাহিকতায় সংগ্রহের খাতায় নাম লিখাই Bajaj Pulsar NS160 মোটর সাইকেলের।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকার মোহাম্মদপুরস্থ বাজাজ কালেকশন থেকে গ্রে রং এর মোটর সাইকেলটি ক্রয় করি। যা এই জুলাই মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ১২হাজার কিলোমিটার চালিয়ে ফেলেছি। এই ব্যবহারের অভিজ্ঞতা নিয়েই আপনাদের সামনে লেখা নিয়ে হাজির হলাম আমি আমির হোসেন রিকু, পেশাগত পরিচয় সাংবাদিকতা, প্রতিষ্ঠান দৈনিক জাগরণ (jagaranbd.com)। শুরুতেই বলে নিচ্ছি, এনএস ১৬০’র পূর্বে আমি সুজুকি জিক্সার ডুয়েল টোন ডাবল ডিস্ক (২০১৭ মডেল) ৭ হাজার কিলোমিটার চালিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলাম ভয়াবহ যান্ত্রিক গোলযোগের জেরে। এই সম্পর্কে লেখা একটি রিভিউ বাইকবিডিতে বেশ আগে প্রকাশিত হয়েছে। জিক্সার বিক্রয়ের পরে আমি খুব হতাশ হয়ে পড়ি।
দ্বিধায় পড়ে যাই- কোন বাইক সংগ্রহ করব ভেবে। বহু ঘেঁটে, পড়াশোনা করে এনএস ১৬০ বাইকটি ক্রয় করি। তবে Bajaj Pulsar NS160 ব্যবহারকারী ছাড়া কারও কাছ থেকে এর বিষয়ে আমি ইতিবাচক সাড়া পাইনি। বলা যায়- অনেকটা একক সিদ্ধান্তে ভর করে বাইকটি ক্রয় করি। এনএস পছন্দের প্রধান কারণ- প্রথমত; অয়েল কুল্ড ইঞ্জিন, দ্বিতীয়ত; বলিষ্ঠ গঠন কৌশল তৃতীয়ত; পেরিমিটার ফ্রেম চেসিস চতুর্থত; থ্রটল রেসপন্স।
১২ হাজার চালানো এনএস আমাকে মোটর সাইকেল সম্পর্কে নতুন অভিজ্ঞতা দেয় । জিক্সার থেকে যে হতাশা সঞ্চার হয় মনে, তা পুরোপুরি দূর করে এনএস ১৬০। হোক সিটিতে, হোক মহাসড়কে- সবক্ষেত্রেই এনএস ১৬০’র সার্ভিস আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাইকটি ক্রয়ের পর ২ হাজার কিলোতে ব্রেক-ইন পিরিয়ড শেষ করি সফলভাবে। এরপর পুনরায় জাগিয়ে তুলি ভ্রমণের নেশা।
জিক্সার দিয়ে শেষ ভ্রমণ করি সীতাকুণ্ডের কুমিরা ব্রিজে। এর দীর্ঘদিন পর এনএস নিয়ে ছুটে যাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। আমি একক এবং ননস্টপ ভ্রমণ পছন্দ করি। কক্সবাজারে একা এবং অনেকটা ননস্টপ ভ্রমণ করি। এই ভ্রমণে এনএস আমাকে বাড়তি কিছু অনুভব দিয়েছে। যার মধ্যে প্রধান ইঞ্জিন পারফরম্যান্স। ঢাকা থেকে রওয়ানা দেবার সময় ইঞ্জিন যেমন শক্তি সরবরাহ করেছিল, ফেরার পথেও তেমন তালে শক্তি সরবরাহ করে।
কখনই পাওয়ার ড্রপ করেনি। এটা পেয়েছি অয়েল কুল্ড সিস্টেমের কারণে। এজন্যই ক্রয়ের সময় বাজেট অনুযায়ী পছন্দের শীর্ষে রেখেছিলাম। কক্সবাজারের পর নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জের মেন্দিপুর হাওর, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভ্রমণ সম্পন্ন করি। প্রতিটি ভ্রমণই এনএস ১৬০ উপভোগ্য করে তুলেছে। ওভারটেকিং, হাইস্পিডিং, ব্রেকিং, মাইলেজ, কমফোর্ট- সবদিকেই অভিজ্ঞতা ছিল ইতিবাচক।
>>Bajaj Pulsar NS160 Review<<
পেশাগত কারণে ঢাকায়ও যখন তখন এদিক-ওদিক ছুটে বেড়িয়েছি। এখানেও হতাশা আসেনি। মহাসড়কে প্রতি লিটার অকটেনে ৪২-৪৫, ঢাকায় প্রতি লিটার অকটেনে ৩৫-৩৭ কিলোমিটার মাইলেজ পেয়েছি। যা এখনও অব্যহত। সবসময় হাইরেইভ করলে মাইলেজ ২৮-৩২ এ নেমে আসে। আপরাইড হ্যান্ডেল পজিশন হওয়ায় এটি সিটির অলিগলি, যানবাহনের ফাঁকফোঁকর দিয়ে বের হওয়া বেশ আরামদায়ক।
এসব কাজে আন্ডারবেলি এগজস্ট পাইপও বেশ ভাল সাপোর্ট দিয়েছে। এনএস ১৬০’র কালার, স্পেয়ার পার্টস কোয়ালিটি, স্টক হেডলাইট, স্পিডো মিটার, পার্কিং লাইট, ব্যাক লাইট, হেডলাইট শেইপ- সবকিছুই ভাল লেগেছে। তবে ইন্ডিকেটর লাইট এলইডি দেয়া প্রয়োজন ছিল। থ্রটল রেসপন্সের কথা না বললেই হচ্ছে না। থ্রটল ঘুরালে মনে হয় আমার হাতভর্তি শক্তির পাহাড়, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, তা যত দীর্ঘপথই হোক না কেন। সামনের টেলিস্কোপিক ও পেছনের নাইট্রক্স গ্যাস মনোশক সাসপেনশনও যথেষ্ট উন্নত। বহু ভাঙাচোড়া পথ দিয়ে চলেছি, কিন্তু সে তুলনায় ঝাঁকুনি অনুল্লেখযোগ্য পরিমাণে অনুভূত হয়েছে। তবে সামনের টেলিস্কোপিক সাসপেনশন আরও মোটা হলে ভাল হতো।
এর সামনে ডিস্কব্রেক বেশ ভাল সাপোর্ট দিয়েছে। এ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। পেছনের চাকায় ড্রাম ব্রেক দেয়া স্বত্বেও যে নৈপুণ্য পেয়েছি, তাতে আমি বিস্মিত। কখনও কখনও মনে হয়েছে ’আমি রিয়ার ডিস্কের মোটর সাইকেল চালাচ্ছি’। এ দুটি বিষয় এবং টায়ার যে পরিমাণ সাপোর্ট দেয়, তাতে এটি কন্ট্রোলে আনা অনেকটা সহজ মনে হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো স্কিডিং সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়নি। কিন্তু হাই স্পিডে হার্ড ব্রেক করাটা কিছুটা ঝুঁকির। এর প্রধান কারণ পেছনের চাকা ১১০ সেকশনের দেয়ায়। যদি এটা ১৩০ সেকশনের দিতো, তাহলে কোনো টু শব্দের অভিযোগ বা আপত্তি আসত না।
পেরিমিটার ফ্রেম চেসিস Bajaj Pulsar NS160 কে দিয়েছে বলিষ্ঠ এবং মজবুত গঠন। তবে এ কারণে এটি মেরামত করা বেশ ঝামেলার। ছোট খাটো কিছু কাজ, যেমন এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন, ক্লাচ-এক্সিলারেটর ক্যাবল পরিবর্তনসহ আরও কিছু ছোট কাজ করতে গেলে ফুয়েল ট্যাংক খুলে ফেলতে হয়। যা বেশ অস্বস্ত্বিকর ও সময়সাপেক্ষ। এটা মেরামতের খরচও বাড়িয়ে দেয়। টুইন স্পার্ক প্লাগ পরিবর্তন বা পরিষ্কার করতে গেলেও ঝামেলা একটু বেশি, দুই পাশের বাম্পার খুলতে হয়।
বাজাজ পালসার এনএস১৬০ ২,৫০০কিমি টেস্ট রাইড রিভিউ – বাইকবিডি
কক্সবাজার একক ভ্রমণের সময় এনএস থেকে সর্বোচ্চ ১২৫ কিলোমিটার গতি পেয়েছি। এসময় রেডলাইন করে চালিয়েছিলাম। এর বেশি গতি আসতো, কিন্তু সামনে যাত্রীবাহী বাস থাকায় ঝুঁকি নেইনি। ৬০ কিলো থেকে ৮০ কিলোর সময় ও ১০০ কিলো এর উপরে পাদানিতে সামান্য ভাইব্রেশন অনুভব হয়। অবশ্য কয়েক সেকেন্ড পর তা থাকে না। এর ব্যাটারি বেশ দুর্বল মনে হয়েছে। কেনার সময় এএইচও প্রযুক্তিতে চলত হেডলাইট।
কিন্তু এক সপ্তাহের মাঝেই দেখি ব্যাটারিতে সমস্যা হচ্ছে। পরে এএইচও প্রযুক্তি বাদ দিই। এরপর অবস্থার আংশিক উন্নতি হয়। কিন্তু ব্যাটারিকে ফিটফাট করতে গিয়ে বহু সময় ব্যয় করতে হয়েছে। ১২ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে সামনের ডিস্ক প্যাড একবার, চেইন সেটের সামনের স্পোকেট একবার এবং এয়ার ফিল্টার একবার পরিবর্তন করতে হয়েছে। প্রথম ৫ হাজার কিলো পর্যন্ত ২০ডব্লু ৫০ মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারের পর র্যাপসল ১০ডব্লু ৫০ ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার শুরু করি। যা এখনও চলমান। এতে পারফরম্যান্স সন্তোষজনক পাচ্ছি।
Also Read: এসিআই মোটরস দিচ্ছে বৈশাখী উল্লাস অফার এপ্রিল ২০১৯
সার্ভিসিং এর ব্যাপারে আমি অনেক হতাশ। উত্তরা মটরস ঢাকা শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টার করে রাখলেও সেসব সেন্টারের কারিগরদের কর্মকাণ্ড আমাকে বেশ বিব্রত করেছে। একটু সরলতা প্রকাশ করলে গোঁজামিল দিয়ে বিদায় করা, অহেতুক কাজ বাড়ানো, কাজে মনো সংযোগের অভাব এসব সেন্টারের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়ে গেছে। কিন্তু টাকা নেবার বেলায় একশতে একশ।
একটি সার্ভিস সেন্টার থেকে প্রথম পেইড সার্ভিস করিয়ে উল্টাপাল্টা ব্রেকপ্যাডের ব্যবহার আমাকে বেশ রাগান্বিত করে। আমার মনে হয়েছে- সেবাদানের ক্ষেত্রে উত্তরা মটরস সার্ভিস সেন্টারগুলোকে তদারক করে না। এনএস ১৬০ সম্পর্কে কারিগরদের জ্ঞানের অভাববোধ করি। দক্ষ কারিগর পাওয়া যায় না। তারা কাজ বোঝে না। ট্যাপেট অ্যাডজাস্ট, ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স, কার্বুরেটর টিউনিং- এ অদক্ষতার মাত্রা বেশি। অবশ্য এর পেছনে আরেকটি কারণ আছে।
সেটা হলো পেরিমিটার ফ্রেম চেসিস। এজন্য ভেতরে জায়গা অত্যন্ত কম, এর প্রভাবে ইঞ্জিনের হেড খোলা, সঠিক মাপ অনুযায়ী ট্যাপেট মিলানো, ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স সঠিক করা বেশ জটিল। এর বাম্পার দেখলে মনে হয়, যুগ যুগ ধরে রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত একটি বস্তুকে দানবের পায়ের তলায় অবস্থিত শরণার্থী শিবিরে দয়া করে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। মোটর সাইকেলটি চালাতে ভাল উচ্চতা প্রয়োজন। এক কথায়- ৫ ফুট ৬ ইঞ্জির উপর উচ্চতাবিশিষ্টদের জন্য এনএস। এটা মন্দ দিক। বাইকের পার্টসের দাম মোটামুটি ঠিক আছে। কিন্তু পেতে কষ্ট। বাজাজের মোটর সাইকেল হিসেবে এই বিষয়টা বেশ কষ্টের।
অয়েল কুলিং এর জন্য ব্যবহৃত রেডিয়েটরের সম্মুখভাগ একদম খোলা। এর সম্মুখে একটি কভার দেয়া উচিৎ ছিল। ওয়াশের সময় খেয়াল রাখতে হয়, যেন পানির চাপ এখানে না পড়ে। যদি পড়ে তাহলে রেডিয়েটরের ভাঁজ নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া রেডিয়েটরের সম্মুখভাগ খোলা থাকায় ধুলাবালি আটকায় বেশি। সবমিলিয়ে Bajaj Pulsar NS160 এর প্রতি আমার সন্তুষ্টির পরিমাণ বেশি।
সবার বাইকিং জীবন নিরাপদ হোক, সার্টিফাইড ও ফুলফেস হেলমেট ব্যবহার করবেন, মোটর সাইকেলে উন্নত সিকিউরিটি সিস্টেম ব্যবহার করবেন। ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ভাল থাকবেন, খোদা হাফেজ।
লিখেছেনঃ রিকু আমির আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Ashik Mahmud Bangla