Shares 2
Bajaj Pulsar 150 বাইকের মালিকানা রিভিউ - আবরার রাকিন
Last updated on 01-Aug-2024 , By Shuvo Bangla
আমার নাম মোঃ আবরার রাকিন। প্রথমেই আমি শুভ্র সেন দাদার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এরকম সুন্দর একটি কনটেস্ট আয়োজন করার জন্য । আমি নওগাঁ থেকে আজ Bajaj Pulsar 150 এই বাইকটির রিভিউ দিচ্ছি ।
আমার ৩-৪ বছর বয়স থেকেই বাইক খুবই ভালো লাগে। আমার এখনো মনে আছে আমার বাবার Freedom LML এর নীল কালার একটা বাইক ছিলো। সিসি কত সেটা মনে নেই ঠিক কারণ ওই সময় আমার বয়স ৩-৪ বছর ছিলো। বাবা আমাকে নিয়ে চালাতো আর আমি সবসময় ট্যাংকের ওপর বসে থাকতাম। এই করতে করতে বড় হলাম।
যতই আমি বড় হচ্ছি ততই আমার বাইকের প্রতি ঝোঁক বেড়েই চলেছে সাথে BikeBD ভালোবাসার এই গ্রুপটির সাথে ৫ বছর থাকতে থাকতে আমার বাইকের সাথে একটি রিলেশন হয়ে গেছে। আমার নিজস্ব কোন বাইক নেই। বাবার Pulsar UG 4.5 150cc এর বাইকটাই আমি আর বাবা মিলে চালাই। ছোট থেকেই আমার পালসারের প্রতি অন্যরকম একটা ভালোবাসা এবং ভালোলাগা কাজ করতো।
প্রথম বাবা পালসার কিনে ২০১৫ সালে। তারপর ওটা চলতে চলতে হঠাৎ অত্যন্ত পরিমাণে টাকার দরকার পরে কোন এক কারণে তাই বাবা বাধ্য হয়ে ওটা বিক্রি করে দেয়, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের। বিশ্বাস করেন ভাইয়া তিন থেকে চার দিন আমি এতটা কষ্ট পেয়েছিলাম যেটা আমার বাবাও কষ্ট পায়নি। কিছু ভালো লাগত না দম বন্ধ হয়ে আসতো আমার। যেই রুমে বাইকটা থাকতো সে রুমে আমি ঢুকতে পারতাম না বিক্রির পর এতোটা কষ্ট পেয়েছিলাম।
প্রচুর পরিমাণে কান্নাকাটি করেছিলাম আমি। বাবা আমার কান্নাকাটি দেখে অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছিলো। বাবারও খারাপ লাগছিলো কিন্তু প্রকাশ করেনি। এটা ২০২০ সালের ঘটনা। তারপর ২০২১ সালে বাবা আমাকে বলে আমি এবার কোন বাইক নিবো ? আমি এক কথায় বলি পালসার নাও। পালসারের নেশা ছাড়তে পারিনি ভাই। যেদিন বাইক নিবো সেদিন এতোটাই আমি এক্সাইটেড ছিলাম যে মনে হচ্ছিলো আমি বাইক কিনতিছি।
বাসার সবাইও অনেক খুশি ছিলো। তাই আবার পালসার নেয় বাবা নওগাঁ উত্তরা মটরসের অফিশিয়াল শো-রুম থেকে। ১০ বছরের রেজিষ্ট্রেশন সহ ২ লাখের মতো টাকা দিতে হয়েছিল তখন। তখনও আমি ভালোমতো বাইক চালানো শিখিনি। আমি আমার জীবনে প্রথম বাবাকে পিছে নিয়েই রোডে বাইক চালাই। প্রথমবার বাবাকে নিয়ে চালানোর অনুভূতি আমার সারাজীবন মনে থাকবে। বাইকের সম্পুর্ণ কিছু আমি বাবার হাত ধরেই শিখি। আমার বাবাই আমাকে গিয়ার শিফটিং এর ব্যাপারগুলো বুঝিয়ে দিতো। আমার খুব সমস্যা হতো এগুলো প্রথমে। ক্লাচ আর থ্রটল এক করতেই পারতাম না খালি বাইক বন্ধ করে ফেলতাম চলার আগেই।
মূলত আমি পালসারের প্রেমে পড়ি এর ডিজাইন দেখে, বিশেষ করে পিছে টেইল ল্যাম্পের ডিজাইনটা । যদিও এর থেকে খুব সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের বাইক আছে এখন কিন্তু এটা আমার কাছে এটা এখনো সেরাদের কাতারে এক নাম্বারে থাকবে।
ফিচার পালসারে তেমন কিছুই নেই, সবই একদম নরমাল কিন্তু বাজাজের বাইকে DTSI টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেটি অন্য কোন বাইকে নেই। পালসারে দুটো স্পার্ক প্লাগ ইউজ করা হয়েছে ফলে বাইক এক ক্লিকেই স্টার্ট নিতে বাধ্য।
বাবা থাকে তাই বেশি গতি তুলতে পারি না আমি। বেশি গতি তুললেই বকাবকি করতে লাগে আমাকে। তবে আমি ৯০ একবার তুলেছিলাম। তবে এই বাইক ইজিলি ১২০ এর মতো উঠবে। শহরে আমি ৩৫+ মাইলেজ পাই আর হাইওয়েতে গেলে ৪০ এর একটু বেশি পাই যেহেতু কার্বুরেটর বাইক তাই মাইলেজ একটু কম হবেই।
বাইকটি আমি অত্যন্ত যত্নে ব্যবহার করি, বারবার মোছামুচির উপরেই থাকি। মেনটেনেন্স বলতে সব সময় ইঞ্জিন চেক করা হয় তারপর ক্লাচ ক্যাবল সাথে ব্রেকও। বাইকে ইঞ্জিন অয়েল ভরার সময় সব সময় চেক করি যে অরিজিনাল নাকি। আমি DTSI এর 20W50 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি । বাইক ৪০০০ কিলোমিটার চলেছে তাই মিনারেলেই আছি এখনো।
Bajaj Pulsar 150 বাইকের কিছু ভালো দিক -
- বাইকটি আসলেই একটি মারাত্মক বাইক। এর যা লুকিং কম-বেশি সবাইকে মুগ্ধ করবেই।
- ডায়মন্ড কি সুইচ আছে, যেটা অন্য ২-১ টা বাইকে আছে। মানে সুইচের পাশেই আলো জ্বলে যা রাতে রাইড করার সময় সবসময় ইউনিক একটা ফিল দিবে।
- ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স যেরকম ভালো সেরকম ইঞ্জিনের সাউন্ড টাও সুন্দর।
- এই বাইকে চেইন কভার ইউজ করা হয়েছে যাতে করে স্ত্রী বা কোন মহিলা পিছে উঠলে ওড়না বা কাপড় ঢুকে যাওয়ার চান্স নেই।
- DTSI টেকনোলজি আছে যার ফলে শীতকালেও আপনার বাইক এক ক্লিকেই স্টার্ট নিবে।
Bajaj Pulsar 150 বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- রেডি পিকাপ বেশ কম। যার ফলে হাইওয়েতে একটা গাড়িকে ওভারটেক করতে গেলে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়।
- এই বাইকের টাইমিং চেইন নষ্ট হলে শেষ। প্রতি ১০০০ কিলো পর পর টাইমিং চেইন অ্যাডজাস্ট করতে হয় আমাকে। না হলে ঝিরঝির একটা সাউন্ড আসে ইঞ্জিন থেকে।
- ইঞ্জিন বেশ হিট হয়ে যায় ১০-২০ কিলো একটু টেনে চালালেই।
- চাকা বেশ চিকন তাই কর্ণারিং ঠিকমতো করা যায় না। ১৪৬ কেজি ওজনের বেশ ভারী একটা বাইক এটা।
- মিটারে কোন ঘড়ি নেই। তাই বারবার সময় দেখার জন্য ফোন বা হাতের ঘড়ি দেখতে হয় ।
আমি কোন মডিফিকেশন করিনি। তাই মডিফিকেশনের ব্যাপারে বলতে পারছি না। তবে আপনারা চাইলে ইজিলি করতে পারেন কোন সমস্যা নেই। সুন্দরভাবে Mod করা যাবে এই বাইকটা। ১০০ কিলোমিটার এর একটা লং ট্যুর দিয়েছিলাম আমি আর বাবা। বেশ ভালো ফিডব্যাক পেয়েছি কোন সমস্যা হয়নি আমাদের। একদম সুন্দর চলেছে। তবে হ্যাঁ যেহেতু এটা Air Cooled বাইক তাই ৫০ কিলোমিটার পর পর একটা করে ২০ মিনিটের জন্য ব্রেক দিতে হয়েছে।
সত্যি বলছি ভাই কারোর নামে আমি দুর্নাম করতে চাচ্ছি না। একদিন বাইক থেকে একটা পোড়া পোড়া গন্ধ আসছিল। সাথে সাথে বাবা বাজারের অথোরাইজ সার্ভিস পয়েন্টে নিয়ে গেছিলো। ওরা আমার ৩০০০ চলা বাইকের ভালো একদম সুন্দর ক্লাচ প্লেট ফেলে দিলো। অতিরিক্ত পরিমাণে বিল করেছিলো তারা। প্রায় ৭০০০ টাকার মতো। সেই পোড়া গন্ধ আবারো আসছিলো দুদিন পর থেকেই। এরপর থেকে কখনোই তাদের কাছে যাইনি আমি। আমি জানি না তারা মানুষ নাকি কসাই। আমি এটা বলতে চাইনি কিন্তু আমি A-Z বলছি যাতে আমার মতো মানুষজন প্রতারিত না হয়।
প্রথমেই বলছি যারা টানাটানি পছন্দ করেন তাদের জন্য এই বাইক না ভাই। যারা অফিস করেন বা গ্রামগঞ্জের বাজারে যাওয়া আসা করবেন তারা নিতে পারেন বা যারা কম্ফোর্ট পছন্দ করেন তারা নিতে পারেন। আবার যারা ট্যুর দিবেন তারা তাইলেও অনায়াসেই নিতে পারেন কোনো সমস্যা নেই। মূলত এই বাইকটা হালকা ফ্যাটি মানুষদের বেশ মানাবে। যারা স্টান্ট করেন তারা চাইলে নিতে পারেন পরে Mod করতে পারবেন। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ মোঃ আবরার রাকিন
T
Published by Shuvo Bangla