Shares 2

বিআরটিএ এর খুটিনাটি সকল বিষয় নিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় টিপস

Last updated on 08-Jul-2024 , By Shuvo Bangla

আমি মুনিফ আহমেদ। বাইকের প্রতি আমার ছোট থেকেই নেশা। ছোটবেলায় আশেপাশে কারো বাইকের আওয়াজ বা গন্ধ পেলেই ছুটে যেতাম কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার আব্বা, মামা, চাচা কাছের কারোরই বাইক ছিলনা। তাই চালানো শেখা হয়নি কিন্তু সবসময়ই ভাবতাম কবে নিজের একটা বাইক হবে। আর দেরি না করে এই বছরই নিজে ১০০ সিসি একটা নতুন বাইক কিনে চালানো শিখেছি এবং এখনো নিত্যনতুন বিভিন্ন বিষয় শিখে যাচ্ছি। এবং এখন পর্যন্ত আমি বিআরটিএ নিয়ে অনেককিছুই শিখেছি, যা শেয়ার করতে চাচ্ছি সকলের সাথে। 

বিআরটিএ

বিআরটিএ এর খুটিনাটি অনেক বিষয় আমরা অধিকাংশই জানতে চাই না, ভাবি যে যাবো আর হয়ে যাবে। আমাদের এই অলসতার সুযোগ নেয় দালালরা। তারপরেও যখন কাজ হয় না তখন BRTA এর দোষ। অথচ একটু পরিশ্রম করলেই অনেক ঝামেলা এড়ানো যায়। তাই যারা খুব সম্প্রতি বিআরটিএ তে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট, অ্যাকনোলেজমেন্ট পেপারের ডেট বাড়ানো, সিগনেচার, ছবি তোলা, ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার জন্য যারা যাবেন তাদের জন্যই এই টিপস।

digital number plate

নাম্বার প্লেটের এপয়েন্টমেন্টঃ

প্রথমেই আপনার মোবাইলের ম্যাসেজ চেক করুন এবং দেখুন সেখানে ডিজিটাল নাম্বারপ্লেটের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়ার ম্যাসেজ অটোমেটিক্যালি কি এসেছে কিনা।যদি আসে তবে যেভাবে SMS এসেছে ঐ ভাবে আপনার পছন্দমত ডেটে ফিরতি sms দিন ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিশ্চিত করুন। যদি আপনার মোবাইল নাম্বারে ডিজিটাল নাম্বারপ্লেটের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়ার ম্যাসেজ অটোমেটিক্যালি না আসে তাহলে, NP লিখে পাঠাবেন ৬৯৬৯ এ (রেজিস্ট্রেশনের সময় ফরমে যে মোবাইল নাম্বার দিয়েছেন অবশ্যই ঐ নাম্বার থেকে এসএমএস করতে হবে)। ফিরতি ম্যাসেজে জানাবে আপনার নাম্বার প্লেট রেডি কিনা। অথবা আপনার মোবাইল নাম্বার বাইক কিনে রেজিস্ট্রেশন এর সময় ঠিক দেওয়া না থাকলেও পেরা নাই সল্যুশন আছে। NP স্পেস Registration Number স্পেস ট্রানজেকশন নাম্বারের শেষ ৬ ডিজিট পাঠাবেন ৬৯৬৯ এ। ফিরতি ম্যাসেজে জানাবে আপনার নাম্বার প্লেট রেডি কিনা।। যদি রেডি থাকে তাহলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে এটার ইন্সট্রাকশন ও ফিরতি ম্যাসেজে দিয়ে দিবে। যে ডেট দিবেন সেই ডেটে ভ্যাকেন্সি না থাকলে আপনার সুবিধা মত পরের কোন ডেট দিবেন।

বিআরটিএ তে নাম্বার প্লেট নিতে যাবার আগে করণীয়:

বি আর টি এ তে যাওয়ার আগের দিনই প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র গুলো এ4 সাইযের পেপারে ফটোকপি করে নিবেন,,তাহলে বি আর টি এ তে গিয়া অযথা দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না।সম্ভব হলে একটু সকালের দিকে গিয়ে লাইনের প্রথমে থাকার চেষ্টা করবেন। যেসব কাগজ সাথে নিবেন:- ১-ব্যাংক জমা স্লিপ (ফটোকপি+মেইন কপি) ২-একনোলেজমেন্ট স্লিপ (ফটোকপি+মেইন কপি) ৩-টেক্স টোকেন (ফটোকপি+মেইন কপি) ৪-জাতীয় পরিচয়পত্র (ফটোকপি+মেইন কপি) সকল ফটোকপি গুলো একসাথে পিন-আপ করে রাখবেন। এরপর একজন ইন্সপেক্টর আসবে আপনার গাড়ির ইঞ্জিন/চেসিস নম্বর চেক করার জন্য,, উনি চেক করে আপনার কাগজ পত্র নিয়ে যাবে।কিছুক্ষন পর অন্য একজন এসে সিরিয়াল অনুযায়ী ডিজিটাল নাম্বার প্লেট দিয়ে যাবে। এই পর্যন্ত সব কিছুই ইজিলি হবে,, এরপর আসল খেলা,, নাম্বার প্লেট লাগানোর জন্য ওইখানকার কিছু লোক আপনাকে উনাদের নাম্বার প্লেট এর ব্যাকপারট নেয়ার জন্য প্রায় একরকম বাধ্যই করার চেষ্টা করবে। এই ঝামেলা এড়াতে আপনি আগে থেকেই লোকাল মটরবাইক মার্কেট থেকে ৫০-৬০ টাকার মধ্যে একটি নাম্বার প্লেট এর ব্যাক পারট কিনে রাখবেন। পারলে আগে থেকে মিরপুর ১০ এ গিয়ে একটা ক্লাম্ বানিয়ে নিয়ে আসবেন, নাহলে অখানে দালালরা brta কর্মচারীদের সাথে মিলে আপনাকে রাস্তার ওপার থেকে ক্লাম্ লাগিয়ে আনতে বলবে, এ ছাড়া প্লেট দিবেও না লাগাবেও না। যার দাম চাবে স্টিলে প্লেট সহ ৪০০/৫০০ আর খালি ক্লাম্ যার কাছে যত নিয়ে পারে। আর সাথে বাইকের টুল বক্স এ ছোট্ট ডালি ৮/১০ সাইজ নিয়ে যাবেন।ডিজিটাল নাম্বার হাতে পাওয়ার সাথে সাথে নিজ হাতে লাগিয়ে নিবেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স

অ্যাকনোলেজমেন্ট পেপারের ডেট বাড়ানো + সিগনেচার, ছবি তোলা, ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়াঃ

অ্যাকনোলেজমেন্ট পেপারে ডেট স্বাধারণত ব্যাংক জমা স্লিপ পাওয়া ৩ মাস পর্যন্ত ভ্যালিড থাকে। এর আগেই ডেট বাড়িয়ে নেয়া ভালো, নাহলে সার্জেন্ট ৪০০ টাকার কেস দিতে পারে। নাম্বারপ্লেট আনতে যেয়ে একবারে বাড়িয়ে নিয়ে আসতে পারেন। মিরপুর বিআরটিএ তে ১১৮ নাম্বার রুমে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি সহ এগুলো করা হয়। তবে এর আগে টোকেন নিতে হয়। ১১৮ নাম্বার রুমের গার্ড আপনাকে দেখিয়ে দিবে টোকেন কাউন্টার। ১,২ ও ৩ নাম্ববার কাউন্টার সিরিয়াল টোকেন নেওয়ার। ডেট বাড়ানোরর আগে অ্যাকনোলেজমেন্ট পেপার যদি লেমিনেট করা থাকে তা আগেই খুলিয়ে আনবেন, নাহলে ওখানে ১০০/১৫০/২০০ টাকা নিবে এক লেমিনেটিং খুলতে। ট্যাক্স টোকেন বাদে কিছু লেমিনেট করাবেনই না। আপনার যদি নাম্বার প্লেট লাগানো হয়ে যায় আর ড্রাইভিং লাইসেন্স বা ভোটার আইডি সাথেই থাকে, তবে ১১৮ নাম্বার রুমে ঢুকে নতুন করে সিগনেচার, ছবি তোলা বা ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়া নাও লাগতে পারে। কারনে ওগুলো ইন্টারনেটে অটো ফিলাপ হয়ে যায়।এর পর স্মার্ট কার্ড চলে আসলে আপনার দেওয়া নাম্বারে ম্যাসেজ আসবে, নাম্বার ঠিক আছে কিনা তা ১১৮ নাম্বার রুমে সিরিয়াল পেয়ে ঢুকলে ওদের কর্মচারীরর কম্পিউটার থেকে দেখে শিয়োর হয়ে নিবেন। যদি উল্লেখিত তারিখের মধ্য ম্যাসেজ নাও আসে, ডেট অভার হবার আগেই একই পদ্ধতিতে ১১৮ নাম্বার রুমে গিয়ে ডেট বাড়িয়ে আনবেন।

ট্র্যাফিক-আইন-ভঙ্গের-মামলা-এর-জরিমানা-এর-বিস্তারিত

 

বিশেষ নোটঃ

আগেই বলেছি দালালে ভর্তি বিআরটিএ, কেও কোন টাকা চাইলে একটা ফুটা পয়সাও দিবেন না। ডেট ওভার হবার কারনে এক ভুক্তভোগী কেইস খায়, যে কারনে তার অ্যাক্নোলেজমেন্ট পেপারটা নাম্বার প্লেটের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাবার দিনেই সার্জেন্ট নিয়ে রাখে। আর অরিজিনাল কপি ছাড়া না পাবেন নাম্বার প্লেট আর নাই দিতে পারবেন স্মার্ট কার্ডের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট আর ছবি। তার কাছে এক দালাল ১৫০০০ টাকা চায় তখনই কাজ করে দেওয়ার জন্য। এরকম অবস্থায় পড়লে আগে কেস ছাড়াবেন তারপর আবার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ডেট নিবেন ওই একই ভাবে, কারন এরা টাকা নিয়েও কাজ করবে কিনা কোন গ্যারান্টি নেই।  বিআরটিএ তে গিয়ে একটা জিনিস ক্লিয়ার হলাম যে, বেশিরভাগ বাইকার ই কোনো ধরনের প্রিপারেশন ছাড়া আসে এখানে,,এবং ছোট খাট ব্যাপারগুলো সম্পর্কিত তথ্য না থাকাতে প্রায় সারাদিন ই এদিক সেদিক ঘুরেও কাজ করতে পারে না।এবং বিভিন্ন দালাল চক্র তাদেরকে নিজেদের টার্গেট বানিয়ে ফেলে।তাই আগে থেকেই জেনে নিন কি করনীয়।আর সব ঝামেলাকে পাশ কাটিয়ে নিজের কাজ করে ফেলুন খুব সহজেই। 

লিখেছেন: মুনিফ আহমেদ

Published by Shuvo Bangla