২০২০ সালে মোটরসাইকেল বিক্রি কমেছে ১১ শতাংশ!

This page was last updated on 08-Nov-2022 04:23am , By Raihan Opu Bangla

মোটরসাইকেলের বাজারে করোনার ধাক্কা দ্বিমুখী। বছরের প্রথম ভাগে মোটামুটি তিন মাস তেমন কোনো চাহিদা ছিল না। দ্বিতীয় ভাগে চাহিদা ছিল, তবে বিপণনকারীদের হাতে মোটরসাইকেল ছিল না। সব মিলিয়ে ২০২০ সালে এই দ্বিচক্রযানের বিক্রি কমেছে ১১ শতাংশের মতো।

২০২০ সালে মোটরসাইকেল বিক্রি কমেছে ১১ শতাংশ!

  hero thriller 160r red color front disc brake engine

বাজারের এই পেছন দিকে হাঁটার ঘটনা ঘটল চার বছর পর। ২০১৫ সালের পর চার বছর মোটরসাইকেলের বাজার অনেকটা উড়ন্ত ছিল। বছরে বিক্রি বাড়ার হার ছিল অন্য খাতের জন্য ঈর্ষণীয়। মহামারির বছরে বিক্রি কমেছে, তাই বলে কি ব্যবসায়ীরা হাল ছেড়ে দিয়েছেন? মোটেই না। 


বরং সরবরাহ বাড়ানোর জোর প্রচেষ্টায় প্রতিটি ব্র্যান্ড। কারণ, বাজারে চাহিদা আছে। কিন্তু সরবরাহ তেমন নেই। টিভিএস ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদন ও বিপণনকারী টিভিএস অটো বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিপ্লব কুমার রায় বলেন, মোটরসাইকেলে এখন দিন আনি, দিন খাই অবস্থা। এর মানে হলো, বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি এনে যে কয়টি মোটরসাইকেল তৈরি করা যাচ্ছে, তা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এই চাহিদাই আশা জাগিয়ে রাখছে।


বিপ্লব কুমার রায়ের মতে, ২০২১ সালে বাজার হয়তো অনেক চাঙা থাকবে না। কারণ, বহু মানুষের চাকরি গেছে, অনেকের আয় কমেছে। তাই বিক্রি বাড়ার হার আহামরি কিছু হবে না। তবে মোটরসাইকেল খাত সংকটকাল কাটিয়ে উঠেছে। এখন সরবরাহ স্বাভাবিক করা গেলেই হয়। ভালো গেছে দ্বিতীয় ভাগ ২০২০ সালে দেশের মোটরসাইকেলের বাজার কেমন গেল, তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো জরিপ নেই। 


তবে কোম্পানিগুলো নিজেদের পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। বাজার বোঝার জন্য সেটিই ভরসা। এমনই এক প্রতিবেদনের হিসাবে, মহামারির বছরে দেশে ৪ লাখ ৯০ হাজারটি মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৫৯ হাজারের মতো কম। আগেই বলেছি, বাজার সংকোচনের হার ১১ শতাংশের মতো।


tvs radeon top speed

 বছরটিকে যদি দুটি ভাগ করে নেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে, দ্বিতীয় ভাগে মোটরসাইকেল খাত বেশ ভালো করেছে। যেমন ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে মোটরসাইকেল বিক্রি কমেছিল ২৪ শতাংশের মতো। দ্বিতীয় ভাগ, অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিক্রি বেড়েছে ৩ শতাংশের মতো।


উদ্যোক্তারা আগেই জানিয়েছিলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর (২০২০ সালের ৮ মার্চ) থেকে মোটরসাইকেল বিক্রিতে টান শুরু হয়। মানুষ তখন জীবাণুনাশক আর তেল-চিনি কিনতে ব্যস্ত। মোটরসাইকেল কে কিনবে? ২৬ মার্চ থেকে তো সাধারণ ছুটি শুরু হলো। দোকানপাট বন্ধ থাকল মে মাসের শেষ পর্যন্ত। এরপর সীমিত পরিসরে কেনাবেচা শুরু। 


সব মিলিয়ে মোটরসাইকেল খাত ২০২০ সালে ভরা মৌসুমটি হারিয়েছে। প্রতিবছর মার্চ থেকে পবিত্র ঈদুল আজহা পর্যন্ত ভালো বেচাকেনার সময়। এ সময় কৃষকের প্রধান ফসলগুলোর একটি বোরো ধান ঘরে ওঠে। পয়লা বৈশাখ, ঈদুল ফিরত ও ঈদুল আজহা মিলিয়ে বাজার থাকে চাঙা। বিদায় নেওয়া বছরে ‘অফ সিজন’ বা অমৌসুমে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর কারণ অবশ্য করোনা।


অফিস খুলে যাওয়া ও ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হয়ে যাওয়ার পর মানুষের আর ঘরে থাকার উপায় ছিল না। করোনার ঝুঁকি এড়াতে অনেকে গণপরিবহন ব্যবহারে রাজি ছিলেন না। তাই ভরসা তুলনামূলক কম খরচের ব্যক্তিগত বাহন মোটরসাইকেল। হঠাৎ অপ্রত্যাশিত চাহিদা সামাল দিতে গিয়ে অবশ্য বিপাকে পড়ে বিপণনকারীরা। কারণ কী, তা পরের অনুচ্ছেদে। সরবরাহে টান বাংলাদেশে যে মোটরসাইকেল কারখানা হতে পারে, দেশেও উৎপাদন হতে পারে, তা এখন প্রমাণিত। 


ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজ, হিরো ও টিভিএস এবং জাপানের ব্র্যান্ড হোন্ডা, সুজুকি ও ইয়ামাহা এখন দেশেই তৈরি হয়। তৈরি হয় বলতে, কিছু কিছু মডেলে একটি বড় অংশের মূল্য সংযোজন হয়, যাকে বাংলাদেশে তৈরি বলতে কোনো বাধা নেই। কিছু কিছু মডেলের মোটরসাইকেল সংযোজিত হয়। অন্যদিকে দেশীয় ব্র্যান্ড রানার অনেক আগে থেকেই দেশে মোটরসাইকেল তৈরি করছে।


  yamaha fzs fi v3 engine

মোটরসাইকেল খাতের দুই সংগঠন বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স ও ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএএমএ) এবং মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এমএমইএবি) হিসাব অনুযায়ী এ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। 


যা-ই হোক, এই অনুচ্ছেদের আলোচ্য বিষয়, মোটরসাইকেলের বাজারে সরবরাহে টান পড়ার কারণ কী? মোটরসাইকেল খাতের কোম্পানিগুলোর সিইওরা বলছেন, বাংলাদেশে তৈরি ও সংযোজনের জন্য মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশের বড় উৎস ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও চীন।


 কিছু কিছু যন্ত্রাংশ আসে জাপান থেকেও। করোনাকালে ভারতসহ অন্য দেশে লকডাউনে কারখানা বন্ধ ছিল। এরপর হঠাৎ বাড়তি চাহিদা হয়, যার জের এখনো রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী যন্ত্রাংশ পাওয়া যাচ্ছে না। ভারতে কারখানাগুলো খুলেছে। অন্যান্য দেশেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পথে।


জাপানের সুজুকি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদন ও বিপণনকারী র্যানকন মোটরসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাজী আশিকুর রহমান বলেন, ‘বছরের দ্বিতীয় ভাগে অনেকে মোটরসাইকেল কিনতে চেয়েছেন। আমরা দিতে পারিনি। তবে সংকট এখন কাটতে শুরু করেছে।’ তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে আমরা পুরোপুরি সম্পৃক্ত। সেখানে সমস্যা না কাটলে আমাদের বিপদও কাটবে না।


দাম বাড়ার শঙ্কা টিভিএস, সুজুকি ও ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী এসিআই মোটরসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এর কারণ বিশ্বব্যাপী কনটেইনার ভাড়া ব্যাপকভাবে বেড়েছে। 


উদাহরণ দিয়ে টিভিএসের বিপ্লব কুমার রায় বলেন, ‘৪২ ফুটের একটি কনটেইনার ভারতের চেন্নাই থেকে শ্রীলঙ্কার কলম্বো অথবা সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশে আনার ভাড়া ছিল ১ হাজার ১০০ ডলারের মতো। সেটা ২ হাজার ৯০০ ডলারে উঠে গেছে। তিনি বলেন, ‘এই দাম আমরা গ্রাহকের ওপর না চাপানোর চেষ্টা করছি।


মোটরসাইকেল haojue dr 160 red color

 কয়েকটি কোম্পানি আমদানি নিয়েও জটিলতায় পড়েছে। সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৭ সালে মোটরসাইকেলে সিকেডির (বিযুক্ত) যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তার চেয়ে প্রযুক্তি এখন অনেক বদলে গেছে। আগের সংজ্ঞায় মোটরসাইকেলের টায়ার ও টিউব আলাদাভাবে আমদানির কথা বলা আছে। এখন উন্নত প্রযুক্তির মোটরসাইকেলের টায়ারে কোনো টিউব ব্যবহৃত হয় না।


এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ফুয়েল ইনজেকশন, অ্যান্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম (এবিএস), এয়ারকুলিং সিস্টেম ইত্যাদি প্রযুক্তি যোগ হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে ৬ জানুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী সিকেডির সংজ্ঞা পরিবর্তন করে আধুনিক প্রযুক্তিগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে একমত হয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স ও ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএএমএ)। এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় একটি সুপারিশপত্র পাঠিয়েছে এনবিআরকে। 


হোন্ডা বাংলাদেশের বিপণনপ্রধান গিয়াস উদ্দিন বলেন, সব মিলিয়ে বাংলাদেশে মাথাপিছু মোটরসাইকেল ব্যবহার প্রতিবেশীদের তুলনায় এখনো কম। তাই বাংলাদেশের বাজার এখনো অনেক সম্ভাবনাময়।