হোন্ডা সিবি শাইন এর মালিকানা রিভিউ - লিখেছেন: শামিম খান
This page was last updated on 07-Jul-2024 12:51pm , By Shuvo Bangla
হ্যালো রাইডার্স, আমি ইমরুল শামিম খান। দেশের একদম উত্তরের জনপদে বসবাস। পেশায় একজন নার্সিং অফিসার। লালমনির হাট থেকে বাইক বিডির একজন আদি ফ্যান। আর মোটরসাইকেল কেনার ইচ্ছে আমার বহুদিনের, প্রায় ৮-১০বছর আগের কিংবা তারও বেশি। কিন্তু সে সময়গুলোতে ইচ্ছা থাকলেও উপায় ছিলো না। প্রায় ছয় মাস হল আমি একটি হোন্ডা সিবি শাইন এর মালিক হয়েছি। স্টুডেন্ট লাইফে শখ ছিলো কিন্তু এখন প্রফেশনাল লাইফে এসে প্রয়োজনে কিনতে হয়েছে। কারন প্রতিদিন অফিসে টাইমলি পৌছুতে হয়। যাই হোক, কথা না বাড়িয়ে এবার আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে।
Honda CB Shine এর বর্তমান বিক্রয়মূল্য
বাইক নির্বাচনঃ দেশে বিভিন্ন কোম্পানির বাইক রয়েছে। সেগুলোর মধ্য থেকে একটি সঠিক বাইক নির্বাচন করা আসলেই একটু সমস্যাই বটে। আমি যে বাইকটি কিনেছি সেটি হল হোন্ডা সিবি শাইন।এটা নির্বাচন করতে আমি যা যা বিবেচনায় এনেছি তা হলঃ
- ট্রাস্টেড ব্র্যান্ড
- শক্তিশালি রিফাইন্ড ইঞ্জিন
- সাউন্ডলেস
- মাইলেজ
- লুক
- কিছুটা আনকমন (আমার এলাকায় মাত্র দুইটা)
- টিউবলেস টায়ার
- লো মেইনটেন্যান্স
তবে এটার লুকটা অত এগ্রেসিভ না হলেও গতানুগতিক ধাচের। কেনার সময় এটাকে কিছুটা কম্প্রমাইজ করতে হয়েছিলো। এটা কিনেছিলাম নির্মান হোন্ডা রংপুর থেকে এবছর মার্চের দিকে। তারা ১লাখ ৪৭ হাজার দাম রেখেছিল। তার সাথে রেজিঃখরচ বাবদ ১৫০০০ এবং হেলমেট ও আনুসাংগিক মিলে আরো ৫ হাজার টাকা ব্যয় করেছিলাম। ব্র্যান্ডনেমে হোন্ডার জুড়ি নেই। ওয়ার্ল্ডওয়াইড ট্রাস্টেড ব্র্যান্ড। আর হোন্ডা সিবি শাইন ওয়ার্ল্ডের বেস্ট সেলিং ১২৫ সিসির একটি বাইক।
ইঞ্জিনপারফরমেন্স:হোন্ডা সিবি শাইন ১২৫সিসির একটি কমিউটার বাইক। কিন্তু চালালে মনেই হবে না যে ১২৫ সিসি। পিওর বিএইচপি &পিওর টর্কের এক অসাধারন সমন্বয়। Maximum Power: 10.3 Bhp @ 7500 rpm & Maximum Torque: 10.9 Nm @ 5500 rpm হোন্ডা ইকো টেকনোলোজির একটি ছোট্ট কিন্তু পাওয়াফুল ইঞ্জিন। থ্রটল ঘুরানোর সাথে সাথেই অন্যরকম এক হিংস্র অনুভূতি। দুজন পিলিয়ন নিয়েও ইঞ্জিনের শক্তির তেমন কোন কমতি পাইনি । তবে শব্দহীনতা এর একটি খুব ভাল দিক হিসেবে মনে হয়েছে আমার কাছে। এর ইঞ্জিন যতটুকু গর্জে তার থেকে বেশিই বর্ষে। প্রায় ৮০০০ কিমি চলাতে আমি অনেক বার লং ট্যুর দিয়েছি। একদিনে প্রায় তিনশ কিমি ছিলো সর্বোচ্চ। এছাড়া দেড়-দুশ কিমি হরহামেশাই রাইড করি। ইঞ্জিন থেকে কোন প্রকার অসৌজন্যমূলক আচরন এখনো পাইনি। সর্বোচ্চ স্পীড ৯০কিমি/ঘন্টা তুলেছি। আরো উঠত। কিন্তু আর রাস্তা পাইনি। এ উচ্চ গতিতে বাইকটির কোন প্রকার দুর্বলতা পাইনি। ইঞ্জিন সাউন্ড এবং কম্পন স্বাভাবিকই ছিলো। স্মুথনেসের কোন ব্যাত্যয় ঘটেনি।
হোন্ডা সিবি শাইন ফুল স্পেসিফিকেশন
রাইডিং: চালানোর সময় সাইনের ইঞ্জিনের সঠিক পারফরমেন্স ফুটে উঠে। গুড এক্সিলারেশন। স্মুথ গতি। ৫৫ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত খুব আরামদায়ক রাইডিং এর অভিজ্ঞতা দেয়। কিন্তু ৫৫-৬০এ বেশ কম্পনসহ মোটামুটি বিরক্তিকর এক অবস্থার সৃষ্টি হয়। আবার ৬০ পার হলের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। দুঘন্টা টানা চালালে ক্লান্তি আসতে পারে। ব্যাক পেইন হতে চাইবে কিন্তু হবে না। কারন সাসপেন্সন খুব নরম এবং প্রশস্ত সিট অত্যান্ত আরামদায়ক। আর গাড়িটি চালাতে আপনাকে ঘন ঘন গিয়ার শিফটিং করতে হবে না। চতুর্থ গিয়ায়ে সর্বনিম্ন ২০কিমি/ঘন্টার নিচেও এটি আরামদায়ভাবে চালানো যায়। কন্ট্রোল: খুব সুন্দর কন্ট্রোল পাওয়া যায়।পিছনের ব্রেকের চেয়ে সামনের ব্রেক বেশি ব্যাবহার করে সাচ্ছন্দ্য পেয়েছি। আর ভেজা রাস্তায় তিনবার পিছনের চাকা স্কিড করেছে কিন্তু পড়ে যাইনি। তবে পিছনের টায়ার আর একটু মোটা হলে আরো ভাল হত। ওজন একটু ভারী (১২০কেজি) হওয়ার চমতকার ব্রেকিং উপহার পেয়েছি।বাইকটির ব্যালেন্সও অসাধারণ। তবে আমি একটু খাটো হওয়ার দাড়ানো অবস্থা মাটি ছুতে খানিক সমস্যা হত।এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আরো ভাল কন্ট্রোলের জন্য হ্যান্ডেল বার সামান্য ডাউন করে নিয়েছি। মাইলেজ: ২৫০ মিলি বোতলে তেল নিয়ে দুইবার টেস্ট করেছি।তাতে হাইওয়েতে ৬৪ কিমি/লি পেয়েছিলাম! আর গ্রামের রাস্তায় পেয়েছি ৬০কিমি/লি।ক্ষেত্রে স্পীড ৫০এর উপরে তোলা হয়নি। তবে রেগুলার ৩৫-৪০কিমি প্রতিদিন চালাতে হয়। গতি ৭০+/ঘন্টা তুমি প্রায়ই। এভারেজ মাইলেজ ৫৫-৬০ কিমি/লি এরকমভাবে পাই। আর হ্যা ব্রেক ইন পিরিয়ড বাইক বিডি দেয়া তথ্য মোতাবেক অনুসরন করেছি।
ইঞ্জিনওয়েল: এটা একটা বড় ফ্যাক্টর আমার কাছে। প্রতি ৮০০-১০০০ কিমির মধ্যেই চেঞ্জ করি। প্রথম ৫০০০ কিমি হোন্ডা মিনারেল 10w30 ইউজ করেছি। তারপর আর ভালো লাগে নাই। পরে মতুল 10w30 3100 দিয়েছিলাম। খুব ভাল ফল পাই নি। পরে গাল্ফ 10w30 সিন্থেটিক ইউজ করছি। ভাইব্রেশন ৫০% কমে গেছে। সর্বদা রিকমেন্ডেট গ্রেডের ওয়েল ব্যাবহারের পরামর্শ থাকবে। এখন ৬০ উঠলে মিটার না দেখা পর্যন্ত টেরই পাই না। লাইট: হেডলাইটের যেহেতু পিকাপের সাথে সম্পর্কিত সেহেতু আলো অবশ্যই কম। রাতে ট্রাক বাসের সামনে পড়লে ভালই সমস্যা হয়। তাই এক্সট্রা একটা লাইট বাম্পারে লাগিয়েছি। এই লাইটের সংযোগ পিছনের টেইল লাইটের সাথে এমনভাবে করা আছে যাতে শুধুমাত্র ব্রেক চাপলে জ্বলে। হ্যান্ডের সাথে একটি সুইচ সেট করা হয়েছে যাতে দিনের বেলায় ব্যাটারির চার্জের অপচয় না হয়। হর্ন: স্টক হর্ন দুর্বল। তাই একটা এক্সট্রা লাগিয়ে সমস্যার সমাধান হয়েছে।
কোয়ালিটি: অনেক মজবুত এবং উন্নত যন্ত্রাংশের একটি পরিপুর্ন সংমিশ্রন। অনেকেই পেইন্ট এর ব্যাপারে বলে থাকে। তবে আরো পুরনো না হলে আমি বলতে পারব না। মিনিমাম ৫০,০০০কিমি পরে এর রিলাইবিলিটি ডিউরেবিলিটি সম্পর্কে ভাল বলা যাবে। এখন পর্যন্ত স্বেচ্ছায় এয়ার ফিল্টার ব্যাতীত কোন কিছুই বদলানোর প্রয়োজন পড়েনি। তবে চেইন দু একবার লুজ হয়েছিল তা টাইট করে নিয়েছি। বর্তমানে সেটা আবারো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে নিজ উদ্যগে একটু মোটা চেইন লাগানোর ইচ্ছা আছে। ভারী বৃষ্টি, কাদাতে চালিয়ে কোন যান্ত্রিক ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় নি। কাদা: সামনের মাডগার্ড খুব বেশি কাদা সামলাতে অক্ষম। ভেজা রাস্তায় ইঞ্জিনে প্রচুর কাদা উঠে। পা থেকে মাঝেমধ্যে হাটুতেও ছিটকে কাদা লাগে। ইঞ্জিনের সামনে রাবার লাগিয়েছিলাম।পরে খুলে ফেলেছি। কোল্ডস্টার্ট: শীতকালে সকালে স্টার্ট নিতে ঝামেলা করে। চোকের ব্যাবহার করতে হবে।
হোন্ডা সিবি শাইন কাদের জন্যঃ চাকুরীজিবী ,ব্যাবসায়ী এবং সব পেশার মানুষই যারা প্রতিদিন ৪০-৫০ কিমি রাইড করবেন তারা নিশ্চিন্তে বাইকটি ব্যাবহার করতে পারেন। লো মেইনট্যান্স কস্ট আর বিশ্বস্ত ইঞ্জিন আপনাকে ছোটখাট ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই দীর্ঘদিন রাইডিং এর অভিজ্ঞতা দেবে। আপনার কষ্টার্জিত অর্থের গুরুত্ব বুঝে এমন বাইক নিতে চাইলে এটাকে নির্ধিদায় সিলেক্ট করতে পারেন। রাইডার ভাইয়েরা, এই ছিল আমার হোন্ডা সিবি শাইন ব্যাবহারের সামান্য অভিজ্ঞতা। আশা করি কিছুটা হলেও আপনাদের উপকারে আসবে।
লেখকঃ ইমরুল শামীম খান