হিরো Xpulse 210 - দ্যা মাল্টিপারপাস এডভেঞ্চার ট্যুরার

This page was last updated on 20-Jan-2025 01:54pm , By Badhan Roy

সারা বিশ্বে হার্ড ট্র্যাক এন্থুসিয়াস্টদের আগ্রহের শীর্ষে বরাবরই থাকে ডার্ট বাইক। কিন্তু আফসোসের বিষয় ইঞ্জিন সিসি লিমিট থাকার কারনে বাংলাদেশের রাস্তায় একেবারে নগণ্য কিছু ডার্ট বাইক দেখা যেতো এবং বাইকারদের জন্য এই সেগমেন্টে অপশন ও ছিল সীমিত। 

বাংলাদেশের বাইকারদের প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল গত বছর লঞ্চ হওয়া হিরো xpulse 210 4v এবং 4v pro এর উপর, এবং সুখবর হচ্ছে সিসি লিমিট বৃদ্ধি করায় বাংলাদেশে শীঘ্রই লঞ্চ হতে যাচ্ছে Xpulse 210 4v মডেল টি। চলুন এক নজরে বাইকটি সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক।

 

হিরো Xpulse 210 – ডিজাইন

হিরো Xpulse 210 এর ডিজাইন ডার্ট শেপ এর করা হয়েছে। এই বাইক টির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি কেবল অফ রোডার নয় বরং এডভেঞ্চার ট্যুরার ও বটে। অর্থাৎ, রাইডার এটিকে মাল্টিপারপাস ব্যাবহার করতে পারবেন। 

সিম্পল লুক, শক্তিশালী বিল্ড কোয়ালিটি, স্পোক এলয় রিম, র‍্যালিক্রস গ্রাফিক্স এবং আপরাইট এক্সহস্ট প্লেসমেন্ট এর কারনে এটার মাল্টিপারপাস দিকটি সহজেই বোঝা যায়। এতে দেওয়া হয়েছে এলইডি ইন্ডিকেটরস, হেড এবং টেইল ল্যাম্প যা দেখতে সাধারণ হলেও যথেষ্ট প্র্যাক্টিকাল এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাইকটির আধুনিকতা এবং উন্নত প্রযুক্তির প্রকাশ ঘটায়।

হিরো Xpulse 210 – ইঞ্জিন স্পেসিফিকেশন

হিরো Xpulse 210 4v বাইকটিতে রয়েছে ওয়েট মাল্টিপ্লেট ক্লাচের সাথে ১৯৯.৬ সিসি সিঙ্গেল-সিলিন্ডার, অয়েল কুলড, ৪ ভাল্ভ, ৪ স্ট্রোক ফুয়েল-ইনজেক্টেড OHC ইঞ্জিন, যা ৮৫০০ আরপিএম-এ ১৮.৯ বিএইচপি পাওয়ার এবং ৬৫০০ আরপিএম-এ ১৭.৩৫ এনএম টর্ক উৎপন্ন করে। 

এটি ০-৮০ কি.মি গতিবেগ ৭.৬১ সেকেন্ডে তুলতে সক্ষম যা ভাল ইনিশিয়াল রেস্পন্স কে নির্দেশ করে এবং ১২০ কি.মি/ঘন্টা পর্যন্ত টপস্পিড দিতে সক্ষম। এই ইঞ্জিনটি বিএস ৬ প্রযুক্তির সাথে তৈরি, যা পরিবেশবান্ধব ও ভাল রাইডিং এক্সপিরিয়েন্স এর নিশ্চয়তা দেয়। হিরো মোটরকর্প এর দাবী বাইকটি সিটি, হাইওয়ে ও অফরোড সবরকম রাস্তায় স্টেবল ও সেরা পারফর্ম করতে সক্ষম।

হিরো Xpulse 210 – ফিচারস

হিরো Xpulse 210 4v এর কিছু উল্লেখযোগ্য ফিচারস হলো:

সিট হাইট, ওজন ও গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স- ৮২৫ মি.মি এর সিট হাইট, ২২০ মি.মি এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ও ১৫৯ কেজি ওজনের কার্ব ওয়েট থাকছে বাইকটিতে। তবে বাইকের ফ্রেম ও ওয়েট ডিস্ট্রিবিউশন অনেক চমৎকার হওয়ার কারনে বাইকটি বেশ হালকা বলে মনে হয়। 

ইগনিশন সিস্টেম- সেলফ এবং কিক।


 ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার
: সম্পূর্ণ ডিজিটাল এলসিডি ক্লাস্টারটিতে ফুয়েল লেভেল, একাধিক ট্রিপ মিটার, স্পিডোমিটার, ট্যাকোমিটার, গিয়ার, সার্ভিস ইন্ডিকেটর, টার্ন বাই টার্ন নেভিগেশন এবিএস ইন্ডিকেটর, সাইড স্ট্যান্ড ইন্ডিকেটর, ঘড়ি ইত্যাদি। ক্লাস্টারটির নিচে সর্বাধুনিক ইউএসবি চার্জিং পোর্ট ও দেওয়া আছে।

এলইডি লাইটিং: এলইডি ডিআরএল ও প্রজেক্টর হেডল্যাম্প, টেইল ল্যাম্প এবং টার্ন ইন্ডিকেটর বাইকটিকে আধুনিক এবং আর্কষণীয় করে তুলেছে। বাইকটির ডিআরএল লাইট ইংরেজি এইচ অক্ষরের মত করে ডিজাইন করা হয়েছে যা কিছুটা হিরো এর লোগো নির্দেশ করে ও আকর্ষনীয় লুক দেয়। 

লাগেজ প্লেট ও গ্র্যাব রেইল:  বেটার লাগেজ ক্যারিং এর জন্য বাইকটিতে বিল্ট ইন লাগেজ প্লেট দেওয়া আছে, পিলিওন এর জন্য থাকছে পকেট গ্র্যাব রেইল। 

নকেল গার্ড ও র‍্যালি স্টাইল উইন্ডশিল্ড: নকেল গার্ড অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনায় হাতের কবজি কে রক্ষা করবে, র‍্যালি স্টাইল উইন্ডশিল্ড বাতাসের বাধা অনেকটাই কমিয়ে রাইডারের ক্লান্তি কিছুটা কমাবে ও রাইডিং এক্সপিরিয়েন্স বেটার করবে।

আপসোয়েপ্ট এক্সহস্ট প্লেসমেন্ট: কিছুটা উপরে এক্সহস্ট প্লেসমেন্ট হওয়ার কারনে অফ রোডিং এর ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে, সেটা কর্দমাক্ত কিংবা জলাবদ্ধ এলাকা যাই হোক না কেন! 

টিউবলেস টায়ার: বাইকটির টায়ার সাইজ- সামনের টায়ার 90/90-21, পিছনের টায়ার: 120/80-18. বাইকটিতে বড় সাইজের এলয় রিমের সাথে উচ্চমানের মাল্টিপারপাস গ্রিপের টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে ফলে টায়ার পাংচারের ঝুঁকি কম এবং বেটার কনফিডেন্স এর সাথে যে কোন ধরনের রাস্তায় রাইড করা সম্ভব।

ব্রেক: ব্রেকিং এর জন্য সামনে ২৭৬ মিমি ও পিছনে ২২০ মিমি এর পেটাল ডিস্ক ব্রেক রয়েছে। ব্রেকিং কে আরো দ্রুত এবং নিরাপদ করতে বাইকটিতে দেওয়া হয়েছে সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস সিস্টেম যা বৃষ্টি ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে খুবই জরুরী। 

তবে এই বাইকের একটি উল্লেখযোগ্য ফিচার হচ্ছে এবিএস সেটিং। রাইডার রাস্তার ধরন ও তার স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী রোড, অফ রোড, র‍্যালি- ৩ ধরণের মোডে বাইকটির এবিএস সেট করে নিতে পারবেন অথবা অফ করে রাখতে পারবেন। 

সাসপেনশন সিস্টেম: বাইকটির সামনে প্রো-ক্যাটরিজ টাইপ টেলিস্কোপিক হাইড্রোলিক শক অ্যাবজর্বার ও পিছনে ১০ স্টেপ প্রিলোড এডজাস্টেবল মনোশক অ্যাবজর্বার ব্যাবহার করা হয়েছে যা রাইডিং কে আরামদায়ক করে তুলবে। এছাড়াও এডজাস্টেবল হ্যান্ডেলবার রাইজার দেওয়া আছে যা হ্যান্ডেলবারের কম্ফোর্ট রাইডারের পছন্দ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। 

মাইলেজঃ হিরো মোটরকর্পের তথ্য অনুযায়ী ১৩ লিটারের ফুয়েল ক্যাপাসিটির সাথে প্রতি লিটার জ্বালানী তেলে বাইকটি ৪৫-৫০ কিলোমিটারের মাইলেজ দিতে সক্ষম যা ২০০ সিসির বাইক বিবেচনায় যথেষ্ট ভাল। তবে পরিবেশ, জ্বালানীর মান এবং রাইডিং স্টাইলের উপর মাইলেজ কম বেশী হতে পারে। 

তো, এই ছিল হিরো Xpulse 210 4v এর বিস্তারিত। বাংলাদেশের বাইকারদের দীর্ঘদিনের চাহিদা অনুযায়ী একটা পার্ফেক্ট মাল্টিপারপাস ডার্ট বাইক অবশেষে দেশের বাজারে আসতে চলেছে। শুধু ট্যুর না, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বেশ কয়েকটি ডার্ট রেসিং চ্যাম্পিয়নশিপে আগত রেসার রা এরকম একটি বাইক ট্র্যাক ও প্র্যাক্টিকাল এক্সপিরিয়েন্স এর জন্য দ্রুত বাংলাদেশের বাজারে আনার জন্য মতামত প্রকাশ করেন। 

যেহেতু ইন্টারন্যাশনাল র‍্যালি মোটরস্পোর্টে এই বাইকটির যথেষ্ট সুনাম রয়েছে, পাশাপাশি বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্টে Xpulse 210 4v রাইডারগণ অসংখ্য পুরষ্কার অর্জন করেছেন তাই দেশের সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টি করা ডার্ট মোটোস্পোর্টগুলোতে এই ধরনের বাইক নিয়ে অংশগ্রহণের আগ্রহ ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করা গিয়েছে। আশা করা যায় শীঘ্রই সাধারণ মোটো ট্যুরিস্ট এবং সাধারণ মোটো স্পোর্টস এন্থুজিয়াস্টদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই হিরো বাংলাদেশ বাইকটি বাজারজাত করবে। 


 বাইকের লঞ্চিং, মূল্য ও প্রি বুকিং, বিষয়ক তথ্য সবার আগে পেতে বাইকবিডির সাথেই থাকুন।