সুজুকি জিক্সার এসএফ এর মালিকানা রিভিউ—লিখেছেন সাদ
This page was last updated on 06-Jul-2024 01:18pm , By Shuvo Bangla
হ্যালো, আমি ডা. আব্দুল মুনেম সাদ, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের শরীরতত্ত্বের প্রভাষক। আজ আমি আপনাদের সঙ্গে আমার Suzuki Gixxer SF চালানোর অভিজ্ঞতা বিনিময় করবো। প্রথমেই স্বীকার করে নিচ্ছি, ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত বাইকের ব্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ ছিলো না। কিন্তু বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করার পর ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন হই। আমাকে প্রায়ই জেলা কার্যালয়ে ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ভিজিট করতে যেতে হতো। তাই বাইকটা এ সময় বিশেষ প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়। আর ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতা ও ১১০ কেজি ওজন হওয়ায় অন্যের বাইকে পিলিয়ন হিসেবে চড়েও সুবিধা হচ্ছিলো না।
সুজুকি জিক্সার এসএফ এর মালিকানা রিভিউ
বাইক ক্রয় অধ্যায়
২৬ বছর বয়সে (!!!) ২০১৪’র আগস্টে যখন বাইক চালানো শিখলাম তখন থেকেই বাইকের উত্তেজনা আমাকে পেয়ে বসে। সেসময় উত্তেজনার বশেই না ভেবেই কিনে ফেলি ওয়াল্টনের ফিউশন এনএক্স১২৫। এটা সত্যিই আমার জীবনের খুব বড়ো একটা ভুল ছিলো। ওই ভাঙড়ি (!) বাইকটা বিক্রি করতে বেশ কষ্ট পোহাতে হয়েছে। এরপর কিনি হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস। এই বাইকটা বেশ শক্তপোক্ত ও ভারী হলেও আমার মনমতো হয়নি। কারণ এর ইঞ্জিনের আওয়াজ ও চাবি লাগানোর অবস্থানটা আমার কাছে বিরক্তিকর ছিলো।
অবশেষে ২০১৬’র ফেব্রুয়ারিতে কর্মোন্নোয়ন বরিশাল থেকে Suzuki Gixxer SF MotoGP কিনি আমি। প্রথম দর্শনেই এর প্রেমে পড়েছিলাম আমি। বাইকটিতে প্রথম চড়েই আমার মনে হচ্ছিলো মাখনের মতো একটি বাইকে উঠেছি, চরম স্মুথ। সৃষ্টিকর্তার রহমতে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার কিমি চালিয়েও ফেলেছি। এ পর্যায়ে এসে মনে হয়েছে, এবার আপনাদের সঙ্গে আমার Suzuki Gixxer SF চালানোর অভিজ্ঞতা বিনিময় করা যেতে পারে।
ভালো দিক
১. লুক : বাইকটা দেখতে চরম সুন্দর।
২. স্পিডোমিটার : স্পিডোমিটার সম্পূর্ণ ডিজিটাল এবং এর ব্যাকলাইট স্পিডো দেখার জন্য যথেষ্ট ভালো। তাছাড়া এতে ২টি ট্রিপ মিটার ও গিয়ার ইন্ডিকেটর রয়েছে।
৩. ইঞ্জিন : এর ইঞ্জিনটি একটি মাস্টারপিস। খুবই কম ভাইব্রেশন, যেটুকু না হলেই নয়, আকর্ষণীয় ইঞ্জিন সাউন্ড ও চমৎকার রেডি পিকাপ। আপনি চাইলেই এটা আপনাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।
৪. সাসপেনশন : এর সাসপেনশন খুব ভালো কাজ করে। অবশ্য স্পোর্টস কমিউটার হওয়ায় এর সামনের সাসপেনশন উচ্চ গতিতে কর্নারিং করার জন্য একটু বেশি হার্ড। পিছনে রয়েছে মনোশক সাসপেনশন এবং এটা ৭ ধাপে অ্যাডজাস্ট করা যায়। ফলে এটা যেকোনো ভাঙাচোরা রাস্তাতেও খুবই আরামদায়ক যাত্রার নিশ্চয়তা দেয়।
৫. ব্রেক : ব্রেকগুলো সত্যিই অসাধারণ। সামনের চাকায় বিশ্বখ্যাত বাইবার ব্র্যান্ডের ডিস্কব্রেক। যেগুলো অবিশ্বাস্য ভালো ব্রেকিং দেয়। পিছনে ড্রাম ব্রেক। এটার পারফরমেন্স খুব ভালো না হলেও চলে যায়। কিন্তু যখন আপনি উভয় ব্রেকই ধরবেন তখন চমৎকার ব্রেক করে।
৬. অ্যারোডাইনামিক : এর অ্যারোডাইনামিক কিট বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এটা শুধু প্লাস্টিকের টুকরা নয় কিন্তু। এটা সেখানেই বানানো হয়েছে যেখানে ঐতিহ্যবাহী হায়াবুসা ও জিএসএক্স আর ও অন্যান্য রেসিং বাইকগুলো তৈরি করা হয়। তাই এটা খুবই কার্যকরী।
৭. টায়ার : এর টায়ারগুলো রাস্তার সঙ্গে চিপকে লেগে থাকে। ফলে ভেজা পিচ্ছির রাস্তা বা হার্ড ব্রেকিংয়ের সময়েও আপনাকে এগুলো নিরাশ করবে না।
৮. ওজন : অনেকেরই ভুল ধারনা রয়েছে যে জিক্সার এসএফ ওজনে হালকা। এটা কোনোভাবেই হালকা নয়, ১৩৯ কেজি এটা। ফেজার এফআই ভি২ এর চেয়েও ভারী এটা। ওয়েট ডিস্ট্রিবিউশন যথাযথ হওয়ায় এর ব্যালান্সও চমৎকার।
৯. জ্বালানি সাশ্রয় : এটা যথেষ্ট জ্বালানি সাশ্রয়ী বাইক। এটাতে সুজুকির এসইপি (সুজুকি ইকো পারফরমেন্স) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। আমি হাইওয়েতে ৪৩+ এবং শহুরে রাস্তায় ৪১+ মাইলেজ পেয়েছি, এটা পরীক্ষিত।।
আসল কথা হলো এই পৃথিবীতে কোনোকিছুই নিঁখুত নয়। এটার একটা প্রমিত মান রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অন্য কেউ এটা অর্জন করতে পারবেন না। তাই জিক্সার এসএফ এর ত্রুটিগুলোও দেখা দরকার।
Also Read: সুজুকি জিক্সার এর মালিকানা রিভিউ
ত্রুটিসমূহ
১. এটার গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স খুবই বিরক্তিকর। অনেক বড়ো বড়ো স্পিড ব্রেকারেই বাড়ি খায়। অবশ্য পরিকল্পমাফিক বানানো ব্রেকারগুলোতে লাগে না। তাছাড়া কিটেও লাগে না, নিচের ধাতব অংশেই বাড়ি লাগে শুধু।
২. ১৫০ সিসির প্রিমিয়াম বাইক হিসেবে এর ইলেকট্রিক ওয়্যারিং ও সুইচগুলো আরো বেশি ভালো হওয়া উচিৎ ছিলো।
৩. র্যাঙ্কন এর বিক্রয়োত্তর সেবা মোটেও আশানুরূপ নয়। আরো ভালো করা উচিৎ এদিকটায়।
৪. বাইকের বিল্ড কোয়ালিটি খারাপ নয়, কিন্তু যেহেতু এটা সিকেডি বাইক, তাই র্যাঙ্কনের ভবানীপুরের ইউনিটের অ্যাসেমব্লিং আরো উন্নত করা দরকার। অনেক স্ক্রু লুজ থেকে যায়। তাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
৫. বাইকের দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করতে হয় এবং খারাপ রাস্তায় চালানো ঠিক হবে না। জিক্সার এবড়ো-থেবড়ো সড়কে চলার উপযুক্ত নয়। অবশ্য ভালো রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা চালানো যাবে।
৬. হেড ল্যাম্প মোটামুটি মানের। খুব ভালোও না, খারাপও না।
৭. হ্যান্ডেলবার ভালো, তবে আরো ভালো করা যায়।
ইঞ্জিন ওয়েল : সুজুকি 20w40 অথবা মবিল 10w40… এই দুইটাই সবচেয়ে ভালো।
সর্বোচ্চ গতি: ১০৭ কিমি/ঘণ্টা। এর চেয় বেশি তোলার সাহসে কুলায়নি।
যন্ত্রাংশ পরিবর্তন: এখনো কোনোকিছু পাল্টাতে হয়নি।
সার্ভিসিংয়ের পর পারফরমেন্স : আগের মতোই, বদলায়নি।
ব্রেক ইন পিরিয়ড
সুজুকির ইউজার ম্যানুয়ালটা খুবই ভালো। এটাতে ব্রেক ইন পিরিয়ডের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা আছে। ইঞ্জিন পারফরমেন্স ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য এগুলো মানা জরুরি।
পাঠক, এখন পর্যন্ত আমার সুজুকি জিক্সার এসএফ নিয়ে আমি এতোটুকুই বলতে পারছি। এর বেশ কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও এটা চালানো বেশ মজার ও আরামের। আর আপনি যদি সতর্কতার সঙ্গে ও মনোযোগ দিয়ে বাইক চালান তাহলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রায় নেই বললেই চলে। আর সময় মতো বাইক সার্ভিসিং করাতে ভুলবেন না। সবশেষে, এই দীর্ঘ রিভিউ পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ও হ্যা, অবশ্যই হেলমেট পরবেন। কারণ পরিবারের কাছে আপনাদের মূল্য অসীম। হ্যাপি ড্রাইভিং, সেফ ড্রাইভিং।
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।