রানার বুলেট ১০০ সিসি মালিকানা রিভিউ - মুহাম্মদ তাওহীদ
This page was last updated on 09-Jul-2024 06:04pm , By Saleh Bangla
চায়না বেশি দিন যায় না। এক সময়কার প্রচলিত বাক্যটি যদি এখনও আপনার মনে গেঁথে রাখেন, তাহলে বলাই যায়, প্রযুক্তির জগতে আপনি শিশু। রানার বুলেট ১০০ মোটরসাইকেলটি বর্তমানে বাংলাদেশের ১০০ সিসি বাইকের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি বাইক। যেটা বাংলাদেশের রানার ও চায়নার ডায়াং কোম্পানীর যৌথ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরী। ২০১৭ সালের ২০শে ডিসেম্বর রানার বুলেট ২০১৭ মডেলের বাইকটি আমি কিনি। প্রায় ৯ মাসে ৯৫০০ কিঃমিঃ এরও বেশি পথ এই বাইকটি দিয়ে পার করলাম।
>>রানার বুলেট ১০০ এর ফিচার রিভিউ এর জন্য এখানে ক্লিক করুন<<
আসলে অফিসিয়ালি ১০০ সিসি বলা হলেও বাইকের ইঞ্জিনটি আসলে ১১৮ সিসি। যেটার রেডি পিকআপ, হাই-ষ্পীড, কন্ট্রোলিং ও অন্যান্য পারফর্মেন্স আমাকে মুগ্ধ করে। আমি বাইকটি থেকে ঢাকায় ৫০-৫২ কিঃমিঃ/লিঃ এবং হাইওয়েতে প্রায় ৫৮-৬০ কিঃমিঃ/লিঃ মাইলেজ পেয়েছি। সর্বোচ্চ টপ স্পীড ১০২ কিঃমিঃ/ঘন্টা উঠিয়েছিলাম। যদিও অন্যান্য ব্যবহারকারী ১০৭ কিঃমিঃ/ঘন্টা তুলেছে। তবে ৮০-৮৫ কিঃমিঃ/ঘন্টা স্পীডে খুব স্মুথলি চালানো যায়। আমার ০-৬০ কিঃমিঃ/ঘন্টা স্পীড উঠতে সময় লাগে ৪-৫ সেকেন্ড।
বাইকটির ওজন ১২১ কেজি, যা অন্যান্য ১০০ সিসি বাইকের তুলনায় বেশি। তাই লং রাইডে ভালো ব্যালেন্স পাওয়া যায়। রানার বুলেট ১০০ বাইকটি নিয়ে চাঁদপুর, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার ট্যুর দিয়েছি। কক্সবাজার ট্যুরে একটানা ১৮ ঘন্টাও চালানো হয়, গড় স্পীড ৮০-৮৫ ও সর্বোচ্চ স্পীড ছিলো ৯৫, ১-২ ঘন্টা পর পর ১০-১৫ মিনিট বিরতি ছিলো। এক বারের জন্যও বাইকটি ঝামেলা করেনি। ৮০-৮৫ স্পীডে অনায়সে ব্রেক করা যায়, যদিও অনেকের অভিযোগ স্কিড করে। তবে আমি শুধু মাত্র ভেজা রাস্তায় এই সমস্যাটা পেয়েছিলাম, যেটা স্বাভাবিক। যদিও বলা হয় চায়না বাইক, তবে আমি যতোটুকু জানি বর্তমানে, রানারের সকল যন্ত্রাংশই বাংলাদেশে তৈরি করা হয়, শুধু মাত্র ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে ডায়াং ও ফ্রিডমের টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।
>>রানার বুলেট ১০০ এর সর্বশেষ মূল্য জানতে এখানে ক্লিক করুন<<
রানার বুলেট ১০০ বাইকটির ভালো দিকঃ
* ইঞ্জিন ভালো * তুলনা মূলক ওজন বেশি * কন্ট্রোল ভালো * মাইলেজ ভালো * ষ্টাইলিশ বিল্ড কোয়ালিটি
রানার বুলেট ১০০খারাপ দিকঃ
* মেটালিক যন্ত্রাংশগুলো কিছুটা নিম্ন মানের * সাইড কাভারের প্লাষ্টিক লক গুলো নিম্ন মানের * সবচেয়ে বড় খারাপ দিক হচ্ছে, কোম্পানীর সার্ভিস খুবই নিম্ন মানের! সার্ভিসিং কোয়ালিটি ভালো না, স্পেয়ার পার্টস পাওয়া যায় না, যেগুলো পাওয়া যায়, সেগুলোর দাম অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায় অনেক বেশি! যার জন্য ইন্ডিয়ান বাইকের পার্টস লাগাতে হয়। পার্টস সংযোজনঃ এই ৯৫০০ কিঃমিঃ এ শুধু ব্রেক প্যাড আর ব্যাটারি ছাড়া আর কিছুই নষ্ট হয়নি। যদিও ব্যাটারিটা নিজের কারণে নষ্ট হয়। যাই হোক চলমান জিনিস নষ্ট হতেই পারে। এখন আসি মূল কথায়, অনেকের অভিযোগ চায়না বাইক বেশি দিন টিকে না। তবে এখন আমি দেখি ইন্ডিয়ান বাইকও তাদের কাছে টিকে না। সমস্যা হচ্ছে আমাদের মন-মানষিকতায়। অনেকেই দেখি এই রানার বুলেট ১০০ সিসি বাইকটি তারা ১৫০ সিসি বাইকের মতো ব্যবহার করে। যদিও এটা ১০৫ কিঃমিঃ/ঘন্টা স্পিড তুলতে পারে, আসলেতো এটা ১০০ সিসি বাইক, যেটা সাধারণত ৭০-৮০ কিঃমিঃ/ঘন্টা স্পীডে চালাতে হয়। এর উপর স্পীড তুললে, বাইকের উপরে প্রেশার পড়বে, পার্টস দ্রুত ক্ষয় হবে, মাইলেক কমে যাবে, এটা তারা বুঝে না।
>>রানারের শোরুম গুলোর ঠিকানা জানতে এখানে ক্লিক করুন<<
তাই বলি, যখন এ্যাপাচি নিয়ে কেউ এক্সিডেন্ট করে, অনেকে বলে এ্যাপাচি ফ্যাক্ট। আসলে এ্যাপাচি না বাইকটা ফ্যাক্ট। কন্ট্রোল করতে না শিখে, এ্যাপাচি এর মতো রেসিং বাইক নিয়ে পারপারি করলে, তার ফলাফল এক্সিডেন্ট। যাই হোক বর্তমানে প্রযুক্তির বেশির ভাগই চায়নার দখলে। আমাদের দেশও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও ভালো বাইক তৈরী হচ্ছে। বিশেষ করে রোড মাষ্টার, রানার, কিওয়ে ইত্যাদে কোম্পানীগুলো দেশের প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। রানারে ডিলাক্স ৮০, বুলেট ১০০, টার্বো ১২৫, নাইট রাইডার ১৫০, রোড মাষ্টারের ভ্যালোসিটি ১০০ ও রেপিডো ১৫০, কিওয়ের আরকেএস ১০০-১৫০ সিসি বাইক গুলো বর্তমানে ভালো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর রাসেল ইন্ডাস্ট্রি এর কেপিআর তো অনেকের স্বপ্ন। একটা সময় ছিলো নোকিয়া, স্যামসাং, মটোরলা ইত্যাদি ফোন গুলো অনেক দামে ফোন বিক্রি করে এক চেটিয়া ব্যাবসা করে। কিন্তু সাধারণ মানুষের খুব কম সাধ্য ছিলো মোবাইল কেনার। কিন্তু চায়না মানুষের সেই শখ পূরণ করেছে। আজকে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষরাও মোবাইল ব্যবহার করছে। আর এখন দেশেই ফোন তৈরী হচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য গর্ব। একটা সময় বাইকও এমন হবে বলে স্বপ্ন দেখি।
>> কিওয়ে আর কে এস ১০০ এবং রানার বুলেট ১০০ এর তুলনামূলক রিভিউ<<
অনেকে হেলমেট এর বদলে আরএফএল এর বাটি ব্যবহার করছে, প্রশ্ন জাগে, তারা না জীবনের মানে জানে, না হেলমেট এর। তাই ভালো মানেট হেলমেট ব্যবহার করুন। নিয়ন্ত্রিত গতিতে চলুন, পরিবারকে ভালোবাসুন। Proud to use Made in Bangladesh. লিখেছেনঃ মুহাম্মদ তাওহীদ আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।