রাতে কেন মোটরসাইকেল চালানো উচিৎ নয় – ৭ টি কারন

This page was last updated on 28-Jul-2024 04:14am , By Shuvo Bangla

রাতে কেন মোটরসাইকেল চালানো উচিৎ নয়? কেন অনেকেই রাতে মোটরসাইকেল চালাতে নিরুৎসাহিত করে? রাতে মোটরসাইকেল চালানো কি তবে রোমাঞ্চকর নয়? তাহলে কেন অনেকেই রাতে মোটরসাইকেল চালাতে চান না? তো যাইহোক না কেন, আমরা আজকের আলোচনায় সেই কারণগুলোই আলোচনা করবো যে, রাতে কেন মোটরসাইকেল চালানো উচিৎ নয়?

রাতে কেন মোটরসাইকেল চালানো উচিৎ নয় – ৭ টি কারন

রাতে কেন মোটরসাইকেল চালানো উচিৎ নয় – ৭ টি কারন

রাতে কেন মোটরসাইকেল চালানো উচিৎ নয়?

বন্ধুরা আপনারা জানেন যে, মোটরসাইক্লিং একটি বেশ মজার ও উত্তেজনাপূর্ণ কর্মকান্ড। মানুষ মূলত: বিভিন্ন কারণেই মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। তবে তার মধ্যে প্রধান কারণটিই হলো দৈনন্দিন চলাচল। সেইসাথে মোটরসাইক্লিং একধরণের এ্যাডভেঞ্চার ও স্পোর্টসও বটে। আর সেকারণেই বেশিরভাগ মোটরসাইক্লিস্টই এটি চালাতে অত্যন্ত পছন্দ করেন।

তবে সেইসাথে, বিশেষ করে রাতে মোটরসাইকেল চালানো অনেকের কাছেই বেশ পছন্দের। তবে কিছু অনিবার্য কারণে, রাতে মোটরসাইকেল চালানো দিনে চালানোর মতো ততটা নিরাপদ নয়। তাই সাধারণত অনেকেই রাতে মোটরসাইকেল চালাতে নিরুৎসাহিত করেন। আর রাতে কেন মোটরসাইকেল চালানো উচিৎ নয় সেই কারণগুলিই আমারা নিম্নে আলোচনা করছি।

রাতে দৃষ্টিক্ষমতা ও বস্তুর দৃশ্যমানতা হ্রাস পায়

সাধারণত, মানুষের দৃষ্টিশক্তি রাতের অন্ধকারে বেশখানিকটা সীমাবদ্ধ। আর পারিপার্শ্বিক বস্তুসমূহ অবশ্যই দিনের মতো রাতে কখনোই পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান হয় না। তাই রাতে বস্তুর দৃশ্যমানতা প্রায়শ:ই একটি সীমাতে কমে আসে। ফলে রাতে মোটরসাইকেল চালক ও অন্যান্য যান-চালকের দৃষ্টির পরিসর অনেকটাই কমে যায়। আর রাত বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যা আরো বৃদ্ধি পায়।

এছাড়াও বৃষ্টি, কুয়াশা, ধুলোবালি, এবং ধোঁয়ার কারণেও পারিপার্শ্বিক বস্তুর দৃশ্যমানতা দিনের চেয়ে রাতের বেলা অনেক কমে যায়। এর ফলে মোটরসাইকেল চালক এবং অন্যান্য যানবাহন উভয়েরই কম দৃশ্যমানতা একজন মোটরসাইক্লিস্টের জন্য অনেক বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর একারনেই রাতে মোটরসাইকেলে চলাচল ততটা নিরাপদ নয়।

ঘনঘন আবহাওয়ার পরিবর্তন

রাতের বেলার আবহাওয়ার পরিস্থিতি মোটরসাইকেল না চালানোর পক্ষে অন্যতম প্রধান একটি কারন। কেননা রাতেই দিনের অন্যান্য সময়কালের চেয়ে আবহাওয়া খুব ঘনঘন পরিবর্তিত হয়। রাতে তাপমাত্রা ক্রমেই হ্রাস পায় এবং আর্দ্রতাও দ্রুত পরিবর্তিত হয়।

এছাড়াও, বৃষ্টি, কুয়াশা, ধুলো, এবং ধোঁয়াটে পরিস্থিতি, ইত্যাদি রাতে বেশ সাধারণ বিষয়। এগুলি বস্তুর দৃশ্যমানতা কমায়, চালকের দৃষ্টিকে বিঘ্নিত করে, এবং রাস্তার অবস্থা বুঝতে বাধা দেয়। আর ঘন ঘন আবহাওয়ার পরিবর্তন একজন রাইডারকে অনেকটাই অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। ফলে রাতে মোটরসাইকেল চালানো অনেকসময়ই অস্বস্তিকর।

মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলিং ও কন্ট্রোলিং বাধাগ্রস্ত হয়

রাতের বেলার রাস্তায় একটি মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলিং ও কন্ট্রোলিং ক্যারেক্টার অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে যায়। কেননা রাতের আবহাওয়া পরিস্থিতি, আর্দ্রতার পরিবর্তন, ইত্যাদি রাস্তার পৃষ্ঠদেশে বেশ প্রভাব ফেলে। আর বৃষ্টিপাত, কুয়াশা, ধূলিকণা, ইত্যাদি রাতে রোড-সারফেসকে অনেকটাই আনপ্রেডিক্টেবল করে তোলে।

সুতরাং রাতে একজন মোটরসাইকেল চালক অনেকসময়ই কম রোড-ট্র্যাকশন, বাজে ব্রেকিং, এবং বাইকের উপর কম নিয়ন্ত্রণ অনুভব করতে পারেন। আর এসব কারনেই রাতের বেলা মোটরসাইকেল চালানো দিনের তুলনায় অনেকটাই বেশি কৌশলের। মূলত: এটিও অন্যতম একটি কারণ যে রাতে মোটরসাইকেল চালাতে নিরুৎসাহিত করা হয়।

রাতে কেন মোটরসাইকেল চালানো উচিৎ নয় – ৭ টি কারন

মোটরসাইকেলে যান্ত্রিক গোলযোগ

মোটরসাইকেল বা অন্য যেকোনও যানবাহন চলার সময় অনেকসময়ই যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটি ঘূর্ণায়মান যন্ত্র হিসাবে, যেকোন যানবাহনের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ সমস্যা। তাই রাতে মোটরসাইকেল চালানোর সময়ও অযথোচিত কিছু যান্ত্রিক সমস্যা পোহাতে হতে পারে। আবার অনেকসময় মোটরসাইকেল বিকলও হয়ে পড়তে পারে।

এছাড়াও হঠাৎ হয়তো মোটরসাইকেলের ফুয়েলও শেষ হতে পারে। তো সমস্যাগুলি যাই হোক না কেন, রাতের সময় পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে সাহায্য ও সহায়তা পাওয়া বেশ কঠিন। সেইসাথে রাতে নির্জন ও অনুন্নত এলাকাতে পরিস্থিতি আরো বেশি খারাপ হয়ে উঠতে পারে। আর এসব কারণেও মূলত: রাতে প্রত্যন্ত এলাকায় মোটরসাইকেল চালানো নিরুৎসাহিত করা হয়।

আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তাবোধের ঘাটতি

রাতের যাত্রার অনেকসময়ই মোটরসাইকেল চালক আত্মবিশ্বাসের অভাব বোধ করতে পারেন। কেননা রাতের বিচ্ছিন্নতায় ও অলো-আঁধারিতে অনেকেই বিভ্রান্ত বোধ করতে পারেন। এছাড়াও রাতে একজন মোটরসাইক্লিস্ট সহজেই ক্লান্তি বোধ করতে পারেন এবং অনেকসময়ই তাকে ঘুমঘুম ভাব পেয়ে বসতে পারে। আর এভাবে অন্ধকারে তার আত্মবিশ্বাসের অভাব আরো বাড়তে পারে।

এছাড়াও রাতের ঘনঘন আবহাওয়া পরিবর্তন, আনপ্রেডিক্টেবল রোড-সারফেস, বৃষ্টি, কুয়াশা, ধুলো, ধোঁয়া ইত্যাদির ফলে একজন রাইডার সহজেই অস্বস্তিতে পড়তে পারেন। আর এইধরনের ক্ষেত্রে, এমনকি একটি দলের মধ্যে থাকা একজন রাইডারও অনিরাপদ বোধ করতে পারেন। সুতরাং এরকম অস্বস্তিবোধ নিয়ে রাতে মোটরসাইকেল না চালানোই ভাল।

যাত্রাবিরতি, খাবার ও রিফ্রেশমেন্টের অসুবিধা

মোটরসাইকেল চালানোর সময় ফুয়েল নেয়া, রিফ্রেশমেন্ট বা খাবারের জন্য বিরতি নেওয়া, ইত্যাদি একজন মোটরসাইকেল রাইডারের জন্য সাধারণ বিষয়। দিনের বেলায় নিকটস্থ ফুয়েলস্টেশন, রেস্তোঁরা বা আরাম করার জায়গা খুঁজে বের করা বেশ সহজ। এমনকি অচেনা এলাকাতেও কোন ব্যক্তি দিনের বেলা বিরতি দেওয়ার জন্য একটি সুবিধাজনক জায়গা সহজেই খুঁজে বের করতে পারেন।

তবে রাতের পরিস্থিতি একজন মোটরসাইকেল চালকের পক্ষে অনেকটাই জটিল হয়ে পড়ে। রাতের সময় এমনকি একটি সুবিধাজনক রিফ্রেশমেন্টের জায়গা বের করাও কঠিন হয়ে পড়ে। সেইসাথে অচেনা এলাকায় মোটরসাইকেল ও চালক উভয়ের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টিও বেশ বাধাগ্রস্ত হয়। আর এটিও রাতের বেলা মোটরসাইকেল না চালানোর অন্যতম আরেকটি প্রধান কারণ।

নিরাপত্তার ঘাটতি

রাতে মোটরসাইকেলে চলাচল করার সময় নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সমস্যাটি সবচেয়ে বড় সমস্যা। রাতের সময় যেকোন ব্যাক্তিরই ভিজ্যুয়াল পাওয়ার কমে যায়। সেইসাথে মোটরসাইকেল রাইডার এবং তার চারপাশের বস্তুর দৃশ্যমানতাও হ্রাস পায়। আর সাথে সাথে অন্যান্য যানবাহনের দৃশ্যমানতাও নাটকীয়ভাবে কমে যায়। ফলে রাতের সময় সড়ক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

আর এসব ছাড়াও চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হাইজ্যাকিং ইত্যাদি বিপত্তি রাতের বেলাতেই বেশি ঘটে। সুতরাং, রাতে এমনকি একটি গ্রূপে রাইড করাও  অনেকস্থানে  নিরাপদ নাও হতে পারে। অতএব, এমন সম্ভাব্য অনিরাপদ এলাকাগুলোতে রাতে মোটরসাইকেল চালানো সত্যিই বিপজ্জনক এবং এটি কঠোরভাবে এড়ানো উচিত।

তো বন্ধুরা, রাতের বেলা মোটরসাইকেলে চলা আসলেই অনেক বিপত্তির বিষয়। আর এই বিপত্তিগুলোর কারণেই অভিজ্ঞ এবং দায়িত্বশীল মোটরসাইক্লিস্টরা রাতে রাইডিং এড়িয়ে যেতে বলেন। আর একই কারণে মোটরসাইকেল লং-ট্যুরার তথা ট্রান্সকন্টিনেন্টাল বা ওয়ার্ল্ড ট্যুরাররা রাতে মোটরসাইকেল চালানো এড়িয়ে চলেন।

সুতরাং এসবই সেই কারন যাতে রাতে কেন মোটরসাইকেল চালানো উচিৎ নয়। সবমিলিয়ে রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে লম্বা রাস্তায় চলাচল এড়িয়ে চলাই ভালো। কিন্তু আপনি যদি আসলেই নাইটরাইডের খুব বেশি পছন্দ করেন বা সচরাচরই রাতে বের হন, তবে সেক্ষেত্রে গ্রূপরাইডই সবচেয়ে ভালো, অথবা পরিচিত এলাকাতেই চলাফেরা করুন। আর যদি তাও না পারেন তবে সলো রাইডে অবশ্যই যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে সাবধানতার সাথে চলুন। ধন্যবাদ।