মোটরসাইকেলের ৬টি সাধারন সমস্যা ও এর প্রতিকার - যা আপনার জানা উচিত

This page was last updated on 08-Jul-2024 07:56pm , By Saleh Bangla

বাইক পাগল হিসেবে আজকে আমি আপনাদের কাছে কিছু মোটরসাইকেলের সমস্যা এবং প্রতিকারের কিছু গুরুত্বপূর্ন টিপস তুলে ধরলাম । কিছু কমন সমস্যা যেগুলো আমরা প্রতিদিন সম্মুখীন হই এবং যেগুলোর প্রতিকার আমরা করতে চাই । অনেকেই ভাবেন মোটরসাইকেলের সমস্যা গুলো জটিল । আসলে এমন নয় । আপনি খুব সহজে এই সমস্যা গুলোর সমাধান করতে পারবেন । মোটরসাইকেলের সমস্যা গুলো যা সব ক্ষেত্রে কমন সেগুলো হলঃ ১. ইঞ্জিন হল্টিং২. ভাল থ্রোটল রেস্পন্স না পাওয়া৩. ব্রেকিং সমস্যা৪. ইলেক্ট্রিক প্রবলেম৫. অতিরিক্ত স্পিডে জার্কিং এবং ভাইব্রেশন হওয়া৬. বেশি ফুয়েল খরচ হওয়া 

মোটরসাইকেলের ৬টি সাধারন সমস্যা ও এর প্রতিকার - যা আপনার জানা উচিত

  ১. ইঞ্জিন হল্টিং সবাই হয়ত জানেন একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি বাইক না চালানো হয় তাহলে ইঞ্জিন সহজে চালু হতে চায় না । এর পিছনে অনেক কারন রয়েছে । সবথেকে বড় কারন হল ইঞ্জিন পরিমিত পরিমানে ফুয়েল পায় না চালু হওয়ার সময় । সিম্পল চোক আপনাকে স্টার্ট করতে সহায়তা করবে । তারপরেও যদি একই ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আপনার ফুয়েল লাইন চেক করে দেখুন । আর একটি কারন হল খারাপ কোয়ালিটির ফুয়েল যেটি প্রায় সব বাইকার এই সমস্যাটিতে পরেছেন । যদি সেখানেও কোন সমস্যা না থাকে তাহলে স্পার্ক প্লাগ চেক করুন দেখুন স্পার্ক প্লাগ এর অবস্থা কেমন এবং ইঞ্জিন চালু হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে স্পার্ক পাচ্ছে কি না । যদি তাও চালু না হয় তাহলে দুঃখের বিষয় হল যে আপনার বাইকের কয়েলে বা ইঞ্জিনে কোন সমস্যা আছে যেটি শুধু মেকানিকের মাধ্যমে ঠিক করা যাবে । যদি বাইক রাইডিং এর সময় ইঞ্জিন হল্ট হয় তাহলে বাইকটি নিয়ে আপনি রাস্তার এক পাশে নিরাপদভাবে সাইড করে নেন । তারপর লক্ষ্য করুন যে আপনার ফুয়েল লাইন ঠিক আছে কি না । ফুয়েল এর কোয়ালিটিও এখানে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় । যদি আপনি কম সিসি এর বাইক হাই স্পিডে রাইডিং করেন তাহলে আপনার উচিত বাইকটি এর ইঞ্জিনকে কিছুক্ষন এর জন্য ঠান্ডা হওয়ার জন্য  । যদি বাইকটি পয়েন্ট সিস্টেম এর হয় তাহলে প্লাগ এবং যদি বাইকটি সিডিআই ইগনিশেন এর হয় তাহলে লক্ষ্য করুন যে পর্যাপ্ত পরিমানে কারেন্ট পাচ্ছে কি না । 

২. ভাল থ্রোটল রেস্পপন্স না পাওয়া যদি আপনি থ্রোটল রেস্পপন্স ভাল ভাবে না পান তাহলে কিছু জিনিস চেক করতে পারেন । তখনি আপনার সবার আগে যে কাজটি করতে হবে তা হল বাইকের কার্বুরেটর টিউনিং এবং ইঞ্জিন টিউনিং ঠিক আছে কি না । এছাড়া এয়ার ফিল্টার, ফুয়েল ফিল্টার এবং স্পার্ক প্লাগ চেক করুন । যদি তারপরেও একই ধরনের সমস্যা হয় তাহলে ফুয়েলের কোয়ালিটি কেমন সেটি চেক করুন । এইগুলো সবার আগে চেক করবেন । আরো বেশি অব্জারভেশন এর জন্য আপনি স্পার্ক বা সিডিআই বা কয়েল চেক করে দেখবেন যে এগুলো সঠিক পরিমানে স্পার্ক দিচ্ছে কি না । আপনি আপনার বাইকের এক্সিলেরশন ক্যাবল চেক করে দেখতে পারেন । আমরা প্রায় এটি ভুলে যায় কিন্তু বাইরের বাতাস এবং আদ্রতার জন্য ক্যাবল এর ভিতরে জং ধরতে পারে । এছাড়া আপনি বাইকের ক্লাচ প্লেট ঠিক আছে কি না সেটিও চেক করে দেখতে পারেন । 

     ৩. মোটরসাইকেল ব্রেকিং সমস্যা আমার মতে বাইকের জন্য এই ব্রেক বিষয়টি সব থেকে বেশি গুরত্বপূর্ন জিনিস । আমার মনে আছে যখন আমি প্রথম কার চালাতে শিখতে গেছিলাম তখন আমার এক আংকেল বলেছিলেন যে তুমি কত স্পিডে কার চালাচ্ছো সেটা বিষয় না বরং কত সুন্দরভাবে তুমি ব্রেক ধরতে পারবা সেটি হল বিষয় । আমাদের দেশে দুই ধরনের ব্রেক রয়েছে বাইকের জন্য । একটি হল ড্রাম ব্রেক এবং আর একটি হল ডিস্ক ব্রেক যেটি হাইড্রোলিক ফুয়েল এর মাধ্যমে কন্ট্রোল করা হয় । প্রথমে ড্রাম ব্রেক নিয়ে কথা বলি । যদি আপনি ব্রেকিং সিস্টেম এ কোন ধরনের সমস্যা ফেস করেন তাহলে ব্রেকের ক্যাবলটি লক্ষ্য করুন । যদি ক্যাবলটি পুরাতন হয় তাহলে চেঞ্জ করে ফেলুন । হয়ত ক্যাবলের ভিতরে জং ধরে গেছে  যার কারনে ভাল ভাবে ব্রেক কাজ করছে না । যদি আপনি ড্রাম ব্রেক ব্যবহারকৃত বাইক ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আমার মতে যতটা পারেন কম এগ্রেসিভভাবে বাইক রাইডিং করবেন । অতিরিক্ত ব্রেকিং এর ফলে প্যাড গরম হবে বেশি এবং প্রশস্ত হবে যার ফলে ব্রেক দূর্বল হয়ে পড়বে । ডিস্ক ব্রেকে সবার আগে আপনি যে জিনিসটি চেক করবেন তা হল হাইড্রোলিক ফুয়েল যে এটি ভালভাবে ড্রামে পৌছাচ্ছে কি না । শুধুমাত্র সেই ফুয়েল ব্যবহার করুন যেটি বাইক কোম্পানি থেকে বলে দেওয়া হয়েছে । লিভারস এর মধ্যে যে বাকেট আছে সেটিও চেক করে দেখুন । ব্রেক শু প্রতিদিন চেক করে দেখুন । 

৪. ইলেক্ট্রিক্যাল সমস্যা বর্তমানে এটি কমন সমস্যা বাইকের জন্য । খোলা থাকার ফলে ধুলাবালি এবং বৃষ্টি পড়ে এতে বেশি । ইলেক্ট্রিক্যাল সমস্যা বাইকের জন্য বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে । ইন্ডিকেটর লাইট থেকে ইঞ্জিন এর হল্টিং সব সমস্যা প্রধানত এই কারনে হয়ে থাকে । এই সমস্যা দূর করার জন্য হয়ত আপনাকে যে কোন ইলেক্ট্রিক ওয়ার কাটতে হতে পারে কিন্তু ওয়ার কাটার সময় খেয়াল রাখবেন যে আপনি সঠিক তার কাটছেন কারন ভুল কানেকশন এর তার কাটলে আপনার বাইক আগুনে লেগে যেতে পারে । অবশ্যই চেক করবেন যে তারটি কাটার পর ভালভাবে টেপ করা হয়েছে । আপনার ব্যাটারি প্রতিদিন চেক করে দেখুন । বাইকের কয়েল ঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা চেক করতে ভুলবেন না । কারন এটি আপনার বাইকের পার্ফমেন্স, থ্রোটল রেস্পন্স এবং মাইলেজ এর বিষয় বিরাট বড় ভূমিকা পালন করে । আর একটি কথা অবশ্যই যে আপনি যদি মেকানিকস এর কাছে তারের সমস্যা নিয়ে যান তাহলে অবশ্যই রাতে যাবেন না । দিনের বেলায় কাজ করাবেন যাতে মেকানিক বুঝতে পারে সঠিক তারে কাজ করছে কি না অবশ্য এটি আমার পার্সোনাল মতামত । 

৫. অতিরিক্ত স্পিডে জার্কিং এবং ভাইব্রেশন হওয়া প্রায় সব বাইকে কিছুটা হলেও ভাইব্রেশন আছে আশা করি আপনারা এটি জানেন । যদি আপনার বাইকে বেশি পরিমান ভাইব্রেশন হয় তাহলে অবশ্যই আপনি কিছু জিনিস লক্ষ্য করে দেখতে পারেন কারন অতিরিক্ত ভাইব্রেশন এর কারনে রাইডিং ক্যাপাবিলিটিতে সমস্যা দেখা দেয় । সর্বপ্রথম আপনি যে জিনিসটি খেয়াল করবেন তা হল যে আপনার বাইকের বডি পার্টস গুলো ভালভাবে জয়েন আছে কি না যদি এটি চায়নিজ ফুল ফেয়ারড বাইক হয় । একটি বিষয় অবশ্যই লক্ষ করে রাখবেন যে আপনি যখন সিটে বসবেন তখন দেখে নেবেন যে সিট এর নাটগুলো ভাল লাগানো আছে কি না । সচারচর আমরা এটি চেক করি না কিন্তু এটি আমাদের ভালভাবে রাইডের জন্য গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে । এছাড়াও আপনার উচিত বাইকের সাস্পেনশন এবং শক এব্জার্বার ঠিক আছে কি না । এছাড়াও আর একটি কারন হতে পারে হল চেইন এর কোন সমস্যা । আমার পার্সোনাল মতামত যে যদি আপনি চেইন চেঞ্জ করতে চান তাহলে সর্ম্পূন চেইন সেট চেঞ্জ করুন কারন এর ফলে আপনার চেইন অনেক দিন টিকে থাকবে ।  

   ৬. বেশি ফুয়েল খরচ হওয়া এখন ফুয়েল বেশি খরচ হওয়াটা বাইকারদের জন্য সব থেকে বড় বিষয় কারন ফুয়েল এর যা দাম । সর্বপ্রথম হল আপনি কেমনভাবে বাইক রাইড করেন । সঠিক সময় গিয়ার শিফটিং এবং রাইডিং একটি নির্দিষ্ট স্পিডে রাইডিং এর ফলে মাইলেজ বেশি পাবেন । সঠিক সময় ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করলে ভাল মাইলেজ পাওয়া যায় । কার্বুরেটর এর টিউনিংও বেশ গুরুত্বপূর্ন বিষয় । এছাড়া আপনার ক্লাচ প্লেটও চেক করে দেখা উচিত । রেডিয়াস এখানে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে ফুয়েল কম খরচ হওয়ার বিষয়ে । রেডিয়াসে কম এয়ার প্রেশার ফুয়েল খরচ আরো বাড়িয়ে দেবে । চেইন স্প্রোকেটস, ব্রেক শু সমস্যা, ড্রাম সমস্যা, বিয়ারিং ও এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে ।