মোটরসাইকেলের টায়ার সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য

This page was last updated on 03-Jul-2024 07:26am , By Shuvo Bangla

আমাদের মোটরসাইকেল চালকদের খুবই অদ্ভুত স্বভাব হলো, তারা বাইকের টায়ারের ব্যাপারে খুবই উদাসীন থাকেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাইকের ইঞ্জিনের চেয়ে এর টায়ারের গুরুত্ব একটুও কম নয়। আশ্চর্য হচ্ছেন? তাহলে একটা প্রশ্নের জবাব দিন—আপনার বাইক যতো সিসিরই হোক, তা যতো অ্যাগ্রেসিভ লুকেরই হোক না কেনো, বাইক চলার সময় রাস্তার সঙ্গে এর কোন অংশটি লেগে থাকে বলুন তো? বুঝলেন তো, একমাত্র টায়ারই আপনাকে রাস্তার ওপর ধরে রাখে। এই টায়ারের ওপরই গতি নির্ভর করে, ব্রেকিং নির্ভর করে, কর্নারিং নির্ভর করে।


 

তাছাড়া আপনার বাইকে যতো ভালো সাসপেনশনই থাকুক না কেনো, টায়ারই সবার প্রথমে শকটি গ্রহণ করে। আপনি বাইকে খুব ভালো মানের প্রশস্থ টায়ার লাগিয়ে এটা পরীক্ষা করতে পারেন। এতে করে আপনি খুবই ভালো ও আরামদায়ক সাসপেনশন পাবেন। কিন্তু আমাদের দেশে বাইকারদের কাছে টায়ার এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই নয়! টায়ার সম্পর্কে তাদের পর্যপ্ত জ্ঞানের অভাবই এই উদাসীনতার জন্য দায়ী। তাই এই লেখাটিতে টায়ার সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য—যেমন টায়ারের প্রকারভেদ, টায়ার কেনার সময় লক্ষণীয়, টায়ার কখন পরিবর্তন করা উচিৎ ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলা হবে। এখানে টেকনিকাল বিষয়ের পরিবর্তে খুবই সাদামাটে ভাবে বিষয়গুলো বলতে চেষ্টা করছি। আসলে টায়ার সম্পর্কে জানতে ও নিরাপদে চলার জন্য অল্প কিছু সাধারণ জ্ঞানই যথেষ্ট।

মোটরসাইকেল টায়ারের প্রকারভেদ

রেডিয়াল টায়ার বনাম প্রথাগত সাধারণ টায়ার :

রেডিয়াল মোটরসাইকেল টায়ার সাধারণত ইয়ামাহা ফেজার ইয়ামাহা ওয়াইজেডএফ আর১৫ ভি২ বাইকে দেখা যায়। এই টায়ারের সুবিধা হলো এর সাইডওয়ালগুলো প্রসারণশীল। ফলে বাইক চলার সময় আপনি ভালো কর্নারিং করতে পারবেন, কারণ টায়ারগুলো কাত হওয়ার সময় যথেষ্ট পরিমাণে প্রসারিত হবে। তাছাড়া রেডিয়াল টায়ারের রোলিং রেসিসট্যান্স কম হওয়ায় ভালো গতিও পাওয়া যায়। অন্যদিকে রেডিয়াল টায়ার প্রসারণশীল হওয়ার কারণে ভাইব্রেশনও কম অনুভূত হয়। আর রেডিয়াল টায়ার কম গরম হওয়ার কারণে এটা চলেও বেশিদিন।




বিপরীত দিকে পুরনো দিনের বাইক যেমন বাংলাদেশে টিভিএস, হিরো, হোন্ডার প্রায় সব বাইকেই প্রথাগত সাধারণ টায়ার ব্যবহার করা হয়। রেডিয়াল টায়ারের তুলনায় প্রথাগত নন-রেডিয়াল টায়ারে কোনো সুবিধাই নেই, তবুও আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এগুলো খুবই জনপ্রিয়। কারণ এসব টায়ারের দাম কম। যেকোনো টায়ার কোম্পানি যেমন গাজী টায়ার, হুসেইন টায়ার এসব টায়ার তৈরী করতে পারে। যেজন্য খুব কম দামেই এসব টায়ার পাওয়া যায়। অবশ্য অফ-রোডে নন-রেডিয়াল টায়ারের কিছু সুবিধা রয়েছে বটে। এগুলোর শক্ত সাইডওয়ালের কারণে অফ-রোডে কম ক্ষয় হয়।

Also Read: টিউব টায়ার এবং স্পোক রিমকে টিউবলেস করার উপায়

টিউব টায়ার বনাম টিউবলেস টায়ার

বর্তমানে সব আধুনিক বাইকেই টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয়। কেনো? কারণ পুরনো যুগের টিউব-টায়ারের চেয়ে টিউবলেস টায়ারে বেশ কিছু সুবিধা আছে। টিউব টায়ার পাংচার হলে সঙ্গে সঙ্গেই তা সমান হয়ে যায়। এখন ধরুন আপনি ১০০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে বাইক চালাচ্ছেন। এমন সময়ে যদি টায়ারটি ফেটে যায় তাহলে কী হবে? অবশ্যই আপনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবেন এবং বাইকটি পল্টিও খেতে পারে! এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, রিম থেকে টায়ার খুলে গেছে। কারণ টিউবলেস টায়ারের মতো টিউব টায়ার রিমের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে লাগানো থাকে না।




টিউবলেস টায়ারও পাংচার হতে পারে। কিন্তু পাংচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা সমান হয়ে যাবে না। কোনো রকম ঝাঁকুনি ছাড়াই আপনি ওই পাংচার হওয়া টায়ারেই আরো ৫০ কিমি চালিয়ে যেতে পারবেন। এটা অনেক বেশি নিরাপদ। তাছাড়া অনেকখানি পথ চালিয়ে গ্যারেজে যাওয়ার সুবিধা তো রয়েছেই। অন্যদিকে রিম থেকে কখনোই টায়ার খুলে যাবে না। এসব কারণেই টিউব টায়ারের পরিবের্ত টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা উচিৎ।




টায়ার কেনার সময় কোন বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে?

আপনি আপনার পছন্দ ও বাজেট অনুযায়ী যেকোনো টায়ারই কিনতে পারেন। কিন্তু এই কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখবেন :
১. সেকেন্ড হ্যান্ড টায়ার কিনবেন না।
২. নতুন টায়ার যদি দোকানে ১ বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে থাকে, তবে সেটাও কিনবেন না। কারণ টায়ার ব্যবহার করা না হলেও এর মেয়াদ উত্তীর্ণের ব্যাপার রয়েছে।
৩. অন রোড বাইকে অফ রোড টায়ার লাগাবেন না। অফ রোড টায়ারগুলো এক্সসেল বাইকের জন্য। অন রোড বাইকে এসব টায়ার লাগালে আরাম ও নিরপত্তা ঘাটতি দেখা দিবে।
৪. বড়ো মাপের বা ছোটো মাপের টায়ার লাগাবেন না। বাইকের স্টক টায়ারে সুপারিশকৃত টায়ারই লাগান।
৫. তারপরও যদি বড়ো বড়ো টায়ার লাগান তবে সেটার নির্দিষ্ট সীমা পার করবেন না। আপনার বাইকের অ্যালয় হুইলের জন্য সর্বোচ্চ কতো বড়ো টায়ার লাগানো যাবে তা দেখে নিবেন অবশ্যই।




Also Read: Maxxis M6017 (100/90-18) Tyre Price In Bangladesh

কখন আপনার বাইকরে টায়ার পরিবর্তন করবেন?

আপনি যদি স্বাভাবিকভাবে বাইক চালান তবে আপনার বাইকের টায়ার খুব সহজেই ২০ হাজার কিমি পর্যন্ত চলতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটা ৩০ হাজার কিমি পর্যন্তও চলতে পারে। তবে আপনি যদি হরহামেশাই হার্ড ব্রেক করেন বা টায়ার বার্ন করেন তবে সেটা ৫ হাজার কিমিও চলবে না। তবে আপনি যেভাবেই বাইক চালান না কেনো, আপনার নিজের ও বাইকের নিরাপত্তার জন্য টায়ার বদলে ফেলবেন যদি দেখেন যে :




১. টায়ারের পৃষ্ঠভাগ যদি ওর্ন ইন্ডিকেটরের সমান হয়ে যায়।
২. টায়ারের গ্রিপ কম যায়।
৩. টায়ারে ফাটা দাগ থাকলে।

আমা করি পাঠক বিরক্ত হননি। লেখাটিকে সহজবোধ্য করার জন্য ইচ্ছা করেই টেকনিকাল ভাষা ব্যবহার করিনি। মোটরসাইকেল টায়ার সম্পর্কে আরো কিছু জানতে হলে বা আমাকে জানাতে চাইলে আশা করি মন্তব্য করবেন ও ফিডব্যাক দিবেন। নিরাপদে থাকুন, বীরের মতো থাকুন। নিজের প্রতি খেয়াল রাখবেন।

- রাসেল রাইডার


আর্টিকেলটি পূর্বে ইংরেজিতে প্রকাশ করা হয়েছিলো।