মোটরসাইকেল সেকেন্ড গিয়ারে রেখে স্টার্ট করা কতটা ক্ষতিকর?

This page was last updated on 06-Jul-2024 04:27pm , By Saleh Bangla

মোটরসাইকেল রাইডারদের মধ্যে অভ্যাসবশত: গিয়ারে থাকা অবস্থায় মোটরসাইকেল স্টার্ট করা বেশ প্রচলিত একটি অভ্যাস। রাইডারদের অনেকেই হয়তো নিতান্ত অনিচ্ছাকৃতভাবে এমনটা করে থাকেন, তবে তাদের বেশ বড় একটি অংশ ইচ্ছাকৃতভাবেই গিয়ারে রেখে মোটরসাইকেল স্টার্ট করতে অভ্যস্ত। তবে এটি ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত যাই হোকনা কেন; প্রশ্ন হলো মোটরসাইকেল সেকেন্ড গিয়ারে রেখে তা স্টার্ট করা কতটা যৌক্তিক: আর গিয়ারে রেখে ইঞ্জিন স্টার্ট করায় এর মেকানিজমের উপর কোন বাজে প্রভাব পড়ে কিনা। চলুন এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক।

 

মোটরসাইকেল সেকেন্ড গিয়ারে রেখে স্টার্ট করা কতটা ক্ষতিকর?

স্ট্যান্ডার্ড মেথড অনুসারে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন স্টার্ট করার সঠিক নিয়ম হলো, ইঞ্জিন ট্রান্সমিশন নিউট্রাল পজিশনে বা শূন্য গিয়ারে রেখে তবেই ইঞ্জিন স্টার্ট করা। কিন্তু অভ্যাসের বশেই হোক বা অন্যকোনো কারণেই হোক হয়তো অনেকসময়ই অনেকেরই এটা করা হয়ে ওঠেনা। হতে পারে হয়তো শেষবার মোটরসাইকেল থামানোর সময় রাইডার প্রথম বা দ্বিতীয় গিয়ারে রেখেই তার মোটরসাইকেলটি থামিয়েছিলেন। অথবা হতে পারে তাড়াহুড়ায় সেটি নিউট্রাল করতে বা নিউট্রাল পজিশন খুঁজে পেতে ব্যার্থ হয়েছিলেন।

এছাড়াও অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে মোটরসাইকেল থামানোর সময় সেটিকে ফার্স্ট বা সেকেন্ডে গিয়ারে রেখেই ইগনিশন বন্ধ করে দেন। এতে হয়তো পরবর্তীতে গিয়ার দেবার ঝামেলায় না গিয়ে সরাসরি ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়েই মোটরসাইকেল চালানোর অভিপ্রায় থেকে যায়। তবে কারণ যাই হোক না কেন এটি একটি বাজে অভ্যাস। আর আমাদের অনেকেই প্রায়শ:ই মোটরসাইকেলের ট্রান্সমিশন সেকেন্ড গিয়ারে থাকা অবস্থাতেও সরাসরি ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়েই মোটরসাইকেল চালানো শুরু করেন। তো এখন জানার বিষয় হলো এই অভ্যাসের ফলে মোটরসাইকেলে আসলে কি কি সমস্যা হতে পারে।

রাইডিংয়ের দৃষ্টিকোন থেকে এধরনের ক্ষেত্রে, সাধারণত বিগার ক্যাপাসিটি ও পাওয়ারফুল মোটরসাইকেলগুলিকে থেমে থাকা অবস্থা থেকে রানিংয়ে যেতে খুব একটা সমস্যা পোহাতে হয়না। বরং হালকা ক্লাচ-ইন করে সেসব মোটরসাইকেলের পাওয়ারফুল ইঞ্জিন বেশ সহজেই সেগুলিকে এমনকি দ্বিতীয় বা তৃতীয় গিয়ারে থাকা অবস্থায়ও থেমে থাকা থেকে সচল অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। এখানে বিগার ক্যাপাসিটি  মোটরসাইকেলের হাইয়ার টর্ক ডেলিভারি সহজেই সব ম্যানেজ করে নিতে পারে।

অপরদিকে, লো-ক্যাপাসিটি ইঞ্জিনের স্বল্পক্ষমতার মোটরসাইকেলগুলো সেকেন্ড গিয়ারে থাকা অবস্থায় ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে তা চালাতে শুরু করলে মোটরসাইকেলটিকে সঠিক রাইডিং স্পিডে নিয়ে যেতে ইঞ্জিনটিকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। এসব মোটরসাইকেলের ছোট ইঞ্জিনের লোয়ার পাওয়ার ডেলিভারির কারণে মোটরসাইকেলটি থেমে থাকা অবস্থা থেকে সেকেন্ড গিয়ারে বের আসতে পারেনা। সুতরাং, সঙ্গত কারনেই তখন সেকেন্ড গিয়ার থেকে ফার্স্ট গিয়ারে যেয়ে মোটরসাইকেলটিকে রানিংয়ে আনতে হয়।

আর মেকানিক্যাল কনসার্ন বিচারে ছোট-বড় যেকোন সাইজের মোটরসাইকেলেই সেকেন্ড গিয়ারে থেমে থাকা অবস্থা থেকে পুল করে চলমান অবস্থায় নিয়ে যেতে অবধারিতভাবেই তাতে স্বাভাবিকের বেশি চাপ দিতে হয়। এক্ষেত্রে রাইডারকে অবশ্যই বাড়তি থ্রটল পুশ করতে হয়, আর সেইসাথে ক্লাচ-ইন করে তা লম্বা সময় স্লিপ করতে দিতে হয়। সেইসাথে অল্প-ক্ষমতার ইঞ্জিনগুলিতে এসময় পিস্টনে হেঁচকি দেয়া এবং ইঞ্জিন নকিং হওয়া খুব সচরাচর একটি বিষয়। তাই আক্ষরিক অর্থেই, সেকেন্ড গিয়ারে মোটরসাইকেল স্টার্ট করে চালাতে শুরু করা অবশ্যই একটি বাজে প্রচেষ্টা।

এই ধরনের ক্ষেত্রে, মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের ক্ষমতা অনুসারে তাতে ইঞ্জিন স্টার্টের সাথে সাথে পাওয়ার কন্ট্রোল করে ইঞ্জিনের রেভের সাথে পাওয়ার ডেলিভারি সিঙ্ক্রোনাইজ কর‍ার জন্য হেভি ক্লাচ স্লিপেজ করা খুব সাধারন ও অত্যাবশ্যকীয় একটি বিষয়। আর এসময় একটি মোটরসাইকেল আইডল অবস্থায় থাকার কারনে ইঞ্জিন চালু হয়ে তা রাইডিং কন্ডিশনে নিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই ক্লাচ সেটআপটি শুকনো থাকে। আর সেই অবস্থাতেই হেভি ক্লাচ স্লিপেজ করা যে কতটা খারাপ বিষয় তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না।

আর ছোট-বড় যেকোন সাইজের যেকোনো ক্যাপাসিটির মোটরসাইকলের ক্ষেত্রেই গিয়ারে রেখে ইঞ্জিন চালু করার সময় অবশ্যই ক্লাচ-ইন করতে হয়। আর ক্লাচ-ইন করলেও তবু এসময় অবধারিতভাবেই প্রতিবার ক্লাচ হাউজিং ও ক্লাচ-প্লেট হঠাৎ ঘূর্ণায়মান ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্ট থেকে আসা একটি আকষ্মিক ধাক্কা ও চাপ সামলায় আর তারপরই মূলত ক্লাচ স্লিপেজ ঘটে। 

আর এই পুরো প্রক্রিয়টিই আক্ষরিক অর্থে আইডল একটি ক্লাচ মেকানিজমকে কঠোরভাবে লাথি দেয় এবং প্লেটগুলিকে শুকনো অবস্থাতেও দ্রুত পিছলে যেতে বাধ্য করে। তাই যেকোন গিয়ারে রেখে মোটরসাইকেল স্টার্ট করার অভ্যাসের কারনে মোটরসাইকেলের ক্লাচপ্লেটতো বটেই এর ক্লাচ-বাকেটও দ্রুত ক্ষয়ে নষ্ট হয়ে যায়। আর পাওয়ারফুল ইঞ্জিনের মোটরসাইকেলে এর প্রভাব সবচেয়ে খারাপ হয়। সুতরাং, সেকেন্ড গিয়ার হোক বা ফার্স্ট গিয়ার হোক একটি মোটরসাইকেল গিয়ারে রেখে তা স্টার্ট করা আর তা চালাতে শুরু করা অবশ্যই একটি বাজে ও ক্ষতিকর অভ্যাস।  আশাকরি রাইডাররা এটি পরিহার করবেন; ধন্যবাদ।