মোটরসাইকেল এর কাগজপত্র হারানো গেলে কি করনীয়?

This page was last updated on 11-Jul-2024 03:13pm , By Shuvo Bangla

যতটা অনাকাঙ্ক্ষিতই হোক না কেনো, মনে করুন যেকোনভাবে আপনার মোটরসাইকেলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হারিয়ে গেলো। সেই অবস্থায় আপনি কি করবেন ? হ্যা, আমাদের মধ্যে অনেকেই এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্নরকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তাই আজকে আমরা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবো যে মোটরসাইকেল এর কাগজপত্র হারানো গেলে কি করা উচিত। প্রথমেই বলে নেয়া ভালো আমরা এখানে মোটরসাইকেল এর কাগজপত্র এর ব্যাপারে আলোচনা করবো যেগুলো রাইডিং এর সময় প্রয়োজন হয় যেমন – রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন, এবং ইনস্যুরেন্স এর কাগজপত্রসমূহ। তাই, যদি কোনভাবে এগুলোর কোন একটা আপনার থেকে হারানো যায়, তবে কি করবেন ? চলুন জেনে নেয়া যাক। 

মোটরসাইকেল এর কাগজপত্র

মোটরসাইকেল এর কাগজপত্র - ইনস্যুরেন্স পেপার হারানো গেলে করনীয়ঃ

যখনই যেকোন মোটরসাইকেল এর কাগজপত্র হারানো যাবে তখনই প্রথম কাজ হচ্ছে নিকটস্থ থানায় একটি জিডি করা। ইনস্যুরেন্স এর কাগজের জন্য এটা বাধ্যতামূলক নয়, কারন মোটরসাইকেল এর ইনস্যুরেন্স একটি লোক-দেখানো ফর্মালিটি ব্যতিত কিছুই নয় এবং সত্যিকারের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এটি কোন গুরুত্বই বহন করে না। তবুও, যদি ইনস্যুরেন্স পেপারটি হারানো যায় তবে খুব সহজেই ইনস্যুরেন্স অফিস থেকে ডুপ্লিকেট কপি আদায় করে নেয়া যায়। ডুপ্লিকেট কপি ক্লেইম করার সময় অরিজিনাল কপি হারানোর প্রমান হিসেবে থানায় করা জিডির কপি দাখিল করতে হবে। তবে, ডুপ্লিকেট কপি সংগ্রহ করার চাইতে নতুন ইনস্যুরেন্স করে ফেলা তূলনামূলক বেশি সহজ এবং ইনস্যুরেন্স করার খরচও খুব বেশি নয়। 

মোটরসাইকেল এর রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট হারানো গেলে করনীয়ঃ

মোটরসাইকেল রাস্তায় চালানোর ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট সবচাইতে মূল্যবান ডকুমেন্ট। যদি কোনভাবে এটি হারানো যায় তবে বাইকচালকের উচিত যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ থানায় একটি জিডি করা। এবং জিডি যত দ্রুত করা যায় ততই ভালো। জিডি করার পরে জিডির কপি সাথে নিয়ে যেখানে বাইকটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে, সেই বিআরটিএ তে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট এর ডুপ্লিকেট কপি এর জন্য আবেদন করতে হবে। নির্দিষ্ট বিআরটিএ ব্যতিত অন্য বিআরটিএ তে আবেদন করা যাবে না। বাইকচালককে বিআরটিএ থেকে ডুপ্লিকেট রেজিস্ট্রেশন ফর্ম, মালিকানা স্বাক্ষর ফর্ম এবং মানি ডিপোজিট ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে। ফর্মগুলো বাইক এবং মালিকের তথ্যসমূহ দিয়ে সম্পূর্ন ফিলআপ করতে হবে। এরপরে বিআরটিএ এর কর্মকর্তার কাছ থেকে মানি ডিপোজিট  ফর্মে নির্দিষ্ট পরিমানের ফি মার্ক করে নিতে হবে। এরপরে নির্দিষ্ট ব্যাংকে বা বুথে টাকা জমা দিয়ে মানি ডিপোজিট স্লিপ সংগ্রহ করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট এর ডুপ্লিকেট কপি এর জন্য টাকা জমা দেয়ার সময় মালিককে হয়তো আরো কিছুটা টাকা জমা দিতে হতে পারে যদি তার কোনপ্রকার বকেয়া টাকা বা জরিমানা থাকে। 

সাধারনত পুরনো মোটরসাইকেল এর ক্ষেত্রে এই বিষয়টি বেশি ঘটে যেগুলোতে কাগজের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট রয়েছে এবং ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট নেই। বর্তমানে সকলের জন্য স্মার্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট কার্ড  এবং ডিজিটাল নাম্বার প্লেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে, পুরনো মোটরসাইকেল এর ক্ষেত্রে এসকল খরচগুলো বকেয়া অর্থাৎ ডিউ শো করা হয় । তাই, টাকা ডিপোজিট করার সময় যদি এরকম কোন বকেয়া দেখায় তবে সেগুলো পরিশোধ করে দিতে হবে, এবং, ডিপোজিট ফর্মে সঠিকভাবে সকল ফি  চিহ্নিত করে নিতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বাইকারকে নির্দিষ্ট ট্রাফিক অফিস থেকে ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহ করতে হবে। তারা তখনই ক্লিয়ারেন্স দেবে যদি বাইকের কোন ট্রাফিক সম্পর্কিত কেসে কোনপ্রকার বকেয়া না থাকে। এরপরে, জিডির কপি, ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স, এবং ব্যাংক ডিপোজিট কপি নিয়ে পেপারগুলো বিআরটিএ তে দাখিল করতে হবে। দাখিল করার দরখাস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল কাগজের বিবরন নিচে দেয়া হলো। 

মোটরসাইকেল এর ডুপ্লিকেট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট সংগ্রহের জন্য দরখাস্তের বিবরন

মোটরসাইকেল এর ডুপ্লিকেট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট সংগ্রহের জন্য নিন্মোক্তভাবে সকল কাগজপত্র সাজিয়ে জমা দিতে হবে -

  • সম্পূর্নভাবে পূরনকৃত ডুপ্লিকেট রেজিস্ট্রেশন এপ্লিকেশন ফর্ম
  • সম্পূর্নভাবে পূরনকৃত মালিকানা ফর্ম
  • মোটরসাইকেল এর মালিকের ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • টাকা জমা দেয়ার স্লিপ
  • জিডি এর কপি
  • ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স কপি
  • যদি সম্ভব হয়, ট্যাক্স টোকেন এবং রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট এর ফটোকপি

এরপরে এসকল কাগজপত্র একত্রিত করে বিআরটিএ এর কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। কাগজপত্র জমা দেবার পর নির্দিষ্ট সময় পরে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে যোগাযোগ করবেন এবং মেসেজেই পরবর্তী বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে। ডুপ্লিকেট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, এবং ডিজিটাল নাম্বার প্লেট এর ক্ষেত্রে সকল কার্যক্রমের জন্য আলাদা আলাদাভাবে যোগাযোগ করা হবে। বিআরটিএ সকল আপডেট এবং নির্দেশনা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে দিয়ে থাকে, তাই কোনপ্রকার চিন্তা না করে মেসেজ এর অপেক্ষায় থাকুন নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করুন। 

মোটরসাইকেল এর ট্যাক্স টোকেন হারিয়ে গেলে করনীয়ঃ

যদি মোটরসাইকেল এর ট্যাক্স টোকেন হারিয়ে যায় তবে প্রথমেই পুলিশ জিডি করতে হবে। যদি একইসাথে মোটরসাইকেল এর আরো অন্যান্য কাগজপত্রও হারানো যায়, তবে একই জিডিতে সেগুলোর কথাও উল্লেখ করতে পারবেন। এবং এরপরে ট্রাফিক অফিস থেকে ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স নিয়ে সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বিআরটিএ অফিসে সাবমিট করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ অফিসই আপনাকে ডুপ্লিকেট ট্যাক্স টোকেন এর কপি দিতে সক্ষম। যদি আপনার দরখাস্ত এবং ডকুমেন্ট সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তবে তারা   কিছুক্ষনের মধ্যেই ট্যাক্স টোকেন এর ডুপ্লিকেট কপি দিয়ে দেবেন। এতে কোনপ্রকার জরিমানা বা চার্জ এর প্রয়োজন হয় না। 

তো এই ছিলো মোটরসাইকেল এর কাগজপত্র এর ডুপ্লিকেট কপি নেয়ার পদ্ধতি। আশা করা যায় যে আমরা সম্পূর্ন লেখায় অন্তত কিছুটা হলেও আইডিয়া দিতে পেরেছি যে মোটরসাইকেল এর ডকুমেন্ট হারিয়ে গেলে কি করতে হবে। অতীতে এই প্রক্রিয়া অনেক জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ছিলো তবে বর্তমানে এই প্রক্রিয়া অনেকটাই সহজ, যদিও এখনো এই প্রক্রিয়ায় সময়ের প্রয়োজন হয়। আমরা সকলকে উতসাহিত করবো এসকল কাজ নিজে নিজে করার জন্য। এছাড়াও আমরা সকলকে অনুরোধ করবো বিআরটিএ তে কর্মরত বা অন্য কারো সাথে কোনপ্রকারের টাকার আদান প্রদান না করতে।সকলকে ধন্যবাদ আমাদের এই মোটরসাইকেল এর কাগজপত্র হারানো গেলে কি করনীয় টপিকের আলোচনাটি সম্পূর্ন পড়ার জন্য। আপনার যেকোন প্রশ্ন বা মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না ।