Race Fiero 150FR এর মালিকানা রিভিউ - লিখেছেন: নেওয়াজ

This page was last updated on 06-Jul-2024 02:47pm , By Shuvo Bangla

Race Fiero 150FR এর মালিকানা রিভিউ

হ্যালো রাইডার্স। আমি কাজী মারজুক নেওয়াজ। আমি বর্তমানে তেজগাও শিল্প এলাকা, ঢাকাতে থাকি। আজ আমি সকলের সাথে আমার Race Fiero 150FR বাইকটির অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।

বাইক কেনার সপ্ন আমার অনেক দিনের কিন্তু স্বপ্ন থাকলেও সাধ্য ছিলোনা বলে কেনা হয়নি। এর আগে বন্ধু, ছোটভাই, বড় ভাই দিয়ে অনেকেরই বাইক চালাতাম এবং বাইক সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতাম। তবে এ বিষয়ে আমাকে সবথেকে বেশি সাহায্য করেছে বাইকবিডি ফেইসবুক গ্রুপটি। বাইক কিনবো কিনবো করেও আমি অনেক দিন ঘুরেছি। দেখেছি প্রায় সব ১৫০সিসি এর বাইক। দেখতে তো আর পয়সা লাগেনা তাই আর কি। অবশেষে অনেক জল্পনাকল্পনা শেষ করে হঠাৎ রেস গ্লোবালের শোরুমে যেয়ে Race Fiero 150fr বাইকটি দেখি। বাইকটি দেখে আমার এতই পছন্দ হয় যে আমি ওই দিনই সন্ধ্যায় বাইকটি কিনে নিয়ে আসি।

Race Fiero 150FR

আমি বাইক কিনি ২৫-৩-২০১৭ তে। রেস গ্লোবাল শোরুমের ভাইয়ারাও খুবই আন্তরিক ছিল কারন ওই দিন বাইক শো আর পরের দিন ২৬ শে মার্চ এর ছুটি থাকার জন্য উনাদের মেইন অফিস বন্ধ ছিল। কিন্তু ওই শো রুমে কালো কালারের বাইকটি ছিল না তবুও তারা আমার জন্য মেইন অফিস থেকে ওই সন্ধ্যার সময় বাইক এনে দিয়েছিল।

Race Fiero 150FR মূলত একটি china বাইক। কিন্তু চায়না হলেও এই বাইকটি তৈরি করেছে চায়নার নামকরা কম্পানি CF Moto। রেস গ্লোবাল যেটা র‍্যাংস গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।  তারা এই বাইকটি বাংলাদেশে এনেছে। Race fiero 150fr তাদের সব থেকে নামকরা বাইকের মধ্যে একটি।

Race fiero 150fr বাইকটি কেনার আগে অনেকেই আমাকে অনেক কথা বলেছিল। চায়না বাইক ভালনা, দুই দিনে ভাঙ্গারি হয়ে যাবে আরো অনেক কিছু। আর সবারই একটা প্রচলিত কথা মুখে থাকে যে চায়না বেশি দিন যায় না। কিন্তু আমি মনে করি যে যত্ন নিলে যেকোনো জিনিস ভালো সার্ভিস দেয়।

চায়না বাইক কেনার আগে অনেকেরই একটাই প্রশ্ন থাকে যে বাইকের সব পার্টস পাওয়া যায় কিনা। এ বিষয়ে আগেই বলে রাখি যে এই বাইকের পার্টস তাদের শোরুমে পাওয়া গেলেও লোকাল মার্কেটে এখনো পাওয়া যায় না। আর শুধুমাত্র তাদের শোরুমে পাওয়া যায় বলে parts এর দাম একটু বেশি।

বাইক কেনার আগে সকলেই চায় যে তার বাইকটি যেন দৃষ্টিনন্দন হয়। Race fiero 150fr বাইকের ডিজাইন নিয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না কারন বাইকের ডিজাইনার KISKA কোম্পানি। আর রাস্তায় বের হলে বাইরের রুপ দেখে মানুষের প্রশংসাই বলে দেয় যে বাইকটি কত সুন্দর।

রেস ফিয়েরো এর টীম বাইকবিডি টেস্ট রাইড রিভিউ দেখতে এখানে ক্লিক করুন

বাইকটি নিয়ে ৫০০০কি.মি পার করায় আজ আমি আপনাদের বলব বাইকের ভাল দিক ,খারাপ দিক, মাইলেজ ,top speed নিয়ে।

ইন্জিনঃ এতে রয়েছে একটি 150cc এর cooled EFI ইঞ্জিন এবং একটি radiator fan যা ইঞ্জিন গরম হলে অটোমেটিক চালু হয়ে যায়।

Acceleration: বাইকটির acceleration মোটামুটি সন্তোষজনক। speed 100 পর্যন্ত মোটামুটি দ্রুতই ওঠে। তারপরে speed উঠতে একটু দেরি হয়।

MODE: এই বাইকে দুটি mode রয়েছে। ECO MODE ,SPORTS MODE। ECO MODE তেল সাশ্রয়ী ও SPORTS MODE দ্রুত speed ওঠাতে সাহায্য করে।

মাইলেজঃ ECO MODE এ মাইলেজ পেয়েছি 36 থেকে 37 এবং SPORTS MODE এ মাইলেজ পেয়েছি 30 থেকে 32।

টপস্পিডঃ আমি বাইকটিতে ১১৪ কিলো মিটার পার আওয়ার টপস্পিড পেয়েছি। আরো স্পিড তোলা সম্ভব ছিল কিন্তু রাস্তা না থাকার কারণে আর তুলতে পারিনি। আর পিলিয়ন সহ ১১৩ কিলো মিটার পার আওয়ার পেয়েছি।  যদিও আমার rpm লক করা। লক খুললে 125 কিলো মিটার পার আওয়ার স্পীড তোলা সম্ভব বলে মনে করি।

ব্রেকঃ এই বাইকের সামনের চাকা ও পেছনের চাকায় রয়েছে হাইড্রোলিক ব্রেক।

লংট্যুরঃ আমি ২ বার ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল গিয়েছি। টাঙ্গাইলের ভাঙা রাস্তায় আমি ভালই সার্ভিস পেয়েছি। আর ২ বার ঢাকা খুলনা আপ ডাউন করেছি। মাওয়া থেকে খুলনার অসাধারন রাস্তায় বাইকটি রাইড করে আমি রীতিমত বাইকটির প্রেমে পরে গিয়েছি।

ইঞ্জিন অয়েলঃ ৫০০০ কি,মি এর আগপর্যন্ত  আমি Shell Advance 20w40 ইউজ করেছি এবং ৫০০০ কি,মি পরে আমি Motul 7100 10w40 ইউজ করছি এবং খুবই ভাল সার্ভিস পাচ্ছি। ইঞ্জিন অয়েল ড্রেন দিয়েছি ১ম ৩১০ কি,মি, ১১০০ কি,মি, ২২০০ কি,মি, ৩১০০ কি,মি, ৪১০০ কি,মি এবং সবশেষে ৫০০০ কি,মি তে।

সুবিধাঃ বাইকটিতে রয়েছে কিছু অসাধারণ ফিচার যেমন বাইকের stand নামানো অবস্থায় চালু করে গিয়ার দিলে অটোমেটিক স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। বাইকের ইঞ্জিন temperature বাইকের স্পিড মিটার এ দেখা যায়। বাইকের rpm লাইট সেটিংস থেকে নিজের ইচ্ছামত সেট করা যায়। বাইকের ব্রেক আসলেই অসাধারণ এবং খুব দ্রুত কার্যকরী। বাইকের সর্বোচ্চ ক্ষমতা 11.8 Bphহলেও তা যথেষ্ট ভালো কাজ করে।

অসুবিধাঃ এই বাইকে ডাবল স্ট্যান্ড নেই। বাইকের fuel ধারণ ক্ষমতা মাত্র দশ লিটার। EFi ইঞ্জিন হওয়ায় এতে ভালো মানের তেল ব্যবহার করা লাগে। বাইকটির হেডলাইট এবং পার্কিং লাইট সব সময় জ্বলে থাকে। বাইকের পেছনে চাকা সামান্য স্কিড করে বলে আমার মনে হয়েছে। ইঞ্জিন অয়েল লাগে ১২০০ মি,লি। যার জন্য ২টা করে কিনা লাগে যা খুবই সমস্যা করে।

পরামর্শঃ বাইকের সার্ভিসিং সব সময় রেসের সার্ভিস সেন্টার থেকে করা ভালো। তাদের মেকানিক আসলেই দক্ষ বলে আমি মনে করি।

Also Read: Race Fiero 150fr price in BD

সবশেষে বলব Race Fiero 150FR বাইকটি চায়না হলেও নিম্নমানের বলে আমার মনে হয়নি। ৫৭০০ কি,মি পার করার মধ‍্যে এখনো ইঞ্জিনে কোন সমস্যা হয়নি। radiator fan একবার চেঞ্জ করা লেগেছে তাও কুলেন্ট শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং তা আমি খেয়াল করিনি। শুধুমাত্র চায়না বলে বাইকটিকে অবহেলা করা ঠিক হবে না। আমার মনে হয় না বাইকটি নিলে আপনারা খুব বেশি লস করবেন। এটা আমার প্রথম review আশা করি কিছু ভুল হলে আপনারা সকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।

লেখকঃ  কাজী মারজুক নেওয়াজ