নতুন রাইডারদের নিয়ে ভ্রমন - টিম NRB । বাইকবিডি
This page was last updated on 13-Jul-2024 09:51pm , By Ashik Mahmud Bangla
প্রতিমাসের মতো এই সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার টিম Night Riders Bangladesh(NRB) আয়োজন করেছিলো ডে লং ট্যুর । তবে সবার চাহিদা ছিলো এই ট্যুরটা হতে হবে অন্য ট্যুরের থেকে আলাদা । তাই আগে থেকেই প্ল্যান করে জায়গা নির্ধারন করে নিলাম।
নতুন রাইডারদের নিয়ে ভ্রমন - টিম NRB ।
এবারের জায়গা নির্ধারনের কাজটা ছিলো রাসেল আহমেদ ভাইয়ের । তিনি তার কাজটা খুব ভালোভাবেই করেছেন, যা আমি ট্যুরে গিয়ে তা বুঝতে পারলাম । ভিন্ন সব অভিজ্ঞতার গল্প নিয়েই এবারের আয়োজন । তবে চলুন শুরু করা যাক। আচ্ছা বলে নেই এবারের গন্তব্য ছিলো শাহজির বাজার, হবিগঞ্জ। অবশেষে চলে এলো সেই কাংক্ষিত শুক্রবার, মানে আমাদের ট্যুরের দিন ভোরে উঠার চেস্টা থাকলেও কিছুটা লেট হয়ে গেলো আমার ।
এদিকে মানিকগঞ্জ থেকে টিম NRB এর ইসলাম শরীফ ভাই এবং চট্টগ্রাম থেকে আব্রাহাম মাহফুজ ভাই সংসদ ভবনের সামনে এসে অপেক্ষা করছে । ব্যাপারটা কিছুটা লজ্জাজনক ছিলো আমার জন্য কারণ সবার আগে মিট পয়েন্টে পৌছাতে পারলাম না ।
যেহেতু ডে লং ট্যুর তাই আগের দিন বাইকটা ভালোভাবে সার্ভিস করিয়ে ফুল ট্যাংক ফুয়েল লোড করে রেখেছিলাম। যে কোন জায়গায় ট্যুরে গেলে আগে অবশ্যই বাইকটি ভালোভাবে চেক করিয়ে নিবেন । যাই হোক অবশেষে আমি ঘুম ঘুম চোখে সংসদ ভবনের সামনে উপস্থিত হলাম। গিয়ে দেখি আমার আগেই ৩ জন হাজির। যেহেতু লং হাইওয়ে রাইড তাই ঘুমটা কাটাতে হবে ৪ জন মিলে চায়ের সন্ধানে বের হয়ে পরলাম,খামার বাড়ি মোড়ে চায়ের দোকান খোলা পেলাম ।
চলুন চা পান করে নেয়া যায়। চা খেতে খেতে ই চলে এলো বাকি ৩ টি বাইক । কথায় কথায় জানতে পারলাম একজন বাইকার ভাইয়ের এটাই প্রথম গ্রুপ রাইড । ব্যাপারটা নিমিষেই আমার ঘুম দূর করে দিলো । এটা একটা চ্যালেঞ্জের মতো ছিলো কারন সবাইকে নিয়ে সুস্থভাবে আমার ঢাকা ফেরত আসতে হবে। যাই হোক চা খাওয়া শেষ করে মোড় থেকে চলে গেলাম আমাদের মিট পয়েন্টে একে একে সবাই আসলো।
এবার আরো একটি ব্যাপার জানতে পারলাম আমার সাথে টিম NRB এর এমন অনেক রাইডার আছেন যারা কখনো অফরোডিং করেনি । আর টিলার উপরে ওঠা তো আলাদা কথা । পুরো ব্যাপারটা একটু চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠলো। ওহ একটা কথা বলে রাখি আমাদের টিমে আমরা নতুনদের সুযোগ করে দেই। কারন প্রতিটি বাইকারের ই স্বপ্ন পূরনের অধিকার আছে। অনেক সময় যে কাজ একা করা যায় না অনেকে মিলে সেটা করা সম্ভব।
যেহেতু অনেকেই নতুন তাই ভালোভাবে গ্রুপ রাইডের নিয়ম তাদের বলে দিলাম। এবার চলুন যাত্রা শুরু করা যাক, সবার প্রথমে রাসেল ভাই ২য় তে আমি তারপর সিরিয়াল অনুযায়ী বাকিরা । জাহাঙ্গীর গেট হয়ে মহাখালী ফ্লাইওভার দিয়ে বনানী হয়ে ৩০০ ফিটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমি এবং আমাদের টিম । রাস্তা ফাকা হওয়ায় খুব অল্প সময়েই চলে আসলাম বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের সামনে ।
বাইকটা স্লো করে চেক করে নেই সবাই আছে কিনা । চলুন এগিয়ে যাওয়া যাক । রাস্তা ফাকা যেতে হবে অনেকটা পথ গতি কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে গিয়েছি ৩০০ ফিট পূর্বাচল রোড ধরে। হুট করে একটা প্রাইভেটকার আমাদের খুব বাজে ভাবে ওভারটেক করলো । বেশ ভালো কথা আমরা আমাদের মতো এগিয়ে যাচ্ছি । প্রথমে কার থেকে ময়লা একটা পলিথিন ছুড়ে ফেলা হলো যেটা আমাদের গায়ে একটুর জন্য লাগলো না,প্রথমবার তাই আর কিছু বললাম না ।
এগিয়ে যাচ্ছি আমরা ২য় বার আবারও একি কাজ কারলো এবার একজনের গায়ে কিছুটা লাগলো এবার আর চুপ থাকা যায় না । হাওয়েতে মুখে বা গায়ে ময়লা পলিথিন লেগে অনেক কিছুই হতে পারে ।
পলিথিন এ কি ছিলো সেটা নিজেরাই বুঝে নিন । কারটিকে সিগনাল দেয়া হলো সে সে থামতে চাইলো না ভেবেছিলো একটা বাইক কি আর করবে কয়েক মিনিট ব্যবধানে সবগুলো বাইক মিলে কারটিকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরা হলো এবার সে বাধ্য হয়ে থামলো এবং ভদ্র ভাবে তাকে বোঝানো হলো বমির পলিথিন গুলো এভাবে যাতে ছুড়ে না ফেলে। চলুন এগিয়ে যাওয়া যাক ।
কাঞ্চন ব্রিজ পার হয়ে বাইপাস রোড ধরে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা নরসিংদির দিকে বাইকের গতি ৭০-৮০ । ওহ একটু বলে রাখি এবারের গতিটা কিছুটা বেশি ছিলো কারন বাইকগুলা সব ১৫০ সিসির ছিলো । রাস্তা ফাকা হওয়ায় খুব দ্রুত আমরা পৌছে গেলাম ড্রিম হলিডে পার্কের সামনে। বাইকগুলো পার্ক করে ফেললাম। চলুন এবার সাবধানে রাস্তাটা পার হয়ে নেয়া যাক। এই রাস্তাটা খুব মারাত্মক একটু সাবধানে পার হবেন।
হোটেলে প্রবেশ করলাম । ফ্রেশ হয়ে নেয়া যাক, নাস্তা চলে আসলো। একটু বলে রাখি গ্রুপ নিয়ে আসলে আগে থেকে এদের জানিয়ে রাখবেন, না হলেও এখানে অনেকটা সময় অপচয় হবে। নাস্তা, চা পান করা শেষ এবার এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে, রাস্তা এখনো অনেকটাই বাকি আছে।
ঢাকা সিলেট মহাসড়ক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা এরিই মধ্যে নতুন যে ভাইয়েরা আজ আমাদের সাথে যাচ্ছেন তাদের রাইডিং লক্ষ করে আমি আবাক,তারা নতুন হলেও প্রত্যেকেই অসাধারণ রাইড করেন। ভৈরব মাধবপুর হয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা শাহজির বাজারের দিকে। প্রায় চলে আসলাম আমাদের গন্তব্যের কাছে তখন সকাল ১১ টা বাজেনি । রাস্তা ফাকা হওয়ায় এবং রাইডাররা অসাধারণ হওয়ায় যে সময় লাগবে বলে ভেবেছিলাম তার চাইতে কম সময়ে আমরা পৌছে গেলাম।
প্রচুর গরম চলুন কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নেয়,আর হ্যা প্রচুর পানি পান করুন । সবাই মিলে বিশ্রাম নিয়ে খানিকটা সময় বিশ্রাম করে নিলাম,সাথে অনেক মাস্তিও । এবার আমরা রওনা দিলাম শাহজির বাজার গ্যাস কুপের দিকে,১০ কি.মি বাদ আছে তাই একটু আস্তে ধীরেই এগিয়ে যাচ্ছি সবাই। বেশ ভালোই লাগছিলো রাইডটা চলে আসলাম গন্তব্যে। এবার রাসেল ভাইয়ের সহোযোগিতায় স্থানীয় দুই ভাইকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে অফরোডিং।
তবে অফরোডিং শুরু করার আগে সাতছড়ি চা বাগানের মধ্যে কিছুটা কর্নারিং চললো সবাই ব্যাপারটা দারুন উপভোগ করতে লাগলাম। চা বাগান ঘুরে দেখার পর শুরু হলো আমাদের এইবার ট্যুরের আসল মজা অফরোডিং, বাবার বাগার চা বাগানের আঁকাবাঁকা রাস্তা,কখনো বা পানি জমা কখনো বা গর্ত সব মিলিয়ে ট্যুরের পুরো ব্যাপারটাই চেঞ্জ করে দিলো। এগিয়ে যাচ্ছে টিলার মধ্যে দিয়ে।
ছোট্ট একটু ভুল হয়ে গেলো, তাই একটা আরটিআর বাইক স্কিড করে পরে গেলো । যাইহোক সেফটি গার্ড থাকার কারনে কিছুই হয়নি । এটা হওয়া নরমাল ব্যাপার এগিয়ে যাচ্ছি সবাই মিলে । একটি টিলার উচুতে উঠা শেষ তাই এবার বিশ্রাম নিয়ে নেয়। লেখার শুরুতে যে ছবিগুলা দেখলেন ওই রাস্তা ধরেই উপরে উঠে এসেছি আমরা । প্রচুর গরম আর অফরোডিং সবাই বেশ ক্লান্ত, দুই ভাই আখ নিয়ে আসলেন।
এভাবেই একে একে একটির পর একটি টিলাতে উঠতে লাগলাম। জায়গাগুলো এতটা সুন্দর যা বলে বোঝানোর মতো না। আর পাহাড়ি খাড়া ঢাল আপনার ভ্রমনকে আরো আনন্দময় করে তুলবে। ছবিতে সম্পূর্ণ কিছু দেখাতে পারলাম না,তবে যারা ভিডিও দেখতে চান লিংকে ঢুকে দেখে নিতে পারেন। সবাই বেশ ক্লান্ত হয়ে গেলাম, কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে দুপুর থাকতেই রওনা দিয়ে দিলাম আমরা,একি রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছি ঢাকার দিকে।
প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে পানসি ও পেয়ে গেলাম চলতে চলতে চলুন দুপুরের খাবার এবং বিশ্রাম নিয়ে নেয়া যাক, সবাই কিছুটা ক্লান্ত। খাওয়া শেষ করে যে যার মতো সোফায় শুয়ে পরলো, দেখলাম ভাবটা একটু খারাপ । তাই সবাইকে রেডি করিয়ে আবার রওনা দিয়ে দিলাম। পথে একটা বিরতি নিয়ে সবাই চা খেয়ে নিলাম । রাত ৮ টার দিকে ঢাকা পৌছে গেলাম সবাই সুস্থভাবে।
আর এভাবেই কিছু নতুন রাইডার নিয়ে শেষ হলো এবারের ৩৫০+ কি.মি এর একটি ডে লং ট্যুর। দারুণ ছিলো পুরো ট্যুরটা।
Night Riders Bangladesh(NRB) - কি কি বাইক ছিল এই ট্যুরেঃ
- ফেজার ভি১
- এফ জেড এস ভি ২ ডুয়েল ডিস্ক (২টি)
- আর টি আর ৪ ভি ডুয়েল ডিস্ক+ সিংগেল ডিস্ক +আর টি আর ১৫০(৩টি)
- সুজুকি জিক্সার (২ টি)
- পালসার ২ টি (এ এস+ইউ যে ৪)
Night Riders Bangladesh(NRB) টিমে ১০ টি বাইকে মোট ১৬ জন। জনপ্রতি খরচ কেমন হয়েছিলো? সারাদিনের খাওয়ার জন্য খরচ হয়েছিলো ৩০০ টাকা,আর আমার বাইকে তেল খরচ হয়েছিলো ১০০০ টাকার একটু বেশি। ভালো থাকবেন,আর নিরাপদে বাইক রাইড করবেন । টিম Night Riders Bangladesh(NRB) পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ।