দায়ুন ডিফেন্ডার ১৫০ টেষ্টরাইড রিভিউ- টীম বাইক বিডি
This page was last updated on 04-Jul-2024 11:18am , By Shuvo Bangla
বাংলাদেশের বাজারে বেশ খানিকটা আড়ালে থাকা অন্যতম একটি মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড দায়ুন। মজার বিষয় হচ্ছে রাজধানীতে অনেকেই এই মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডটি সম্পর্কে জানে, কিন্তু তাদের বেশিরভাগই দায়ুন এর প্রডাক্ট লাইনআপ অথবা বাজারে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানে না। এর মুল কারন হচ্ছে দায়ুন রাজধানী ঢাকার বাইরেই বেশী বিস্তৃত। আর মূলত: সাধারন জনপদেই তাদের ব্যবসা প্রসারিত। আরো মজার বিষয় হচ্ছে যদিও তাদের কর্পোরেট সেলস সেন্টার থেকে বাইক বিক্রি হয় কিন্তু ঢাকাতে তাদের কোন অফিসিয়াল ডিলার বা শো-রুম নেই। যাহোক এবার আমরা দায়ুন এর দায়ুন ডিফেন্ডার ১৫০ বাইকটির টেষ্টরাইড সম্পন্ন করেছি। আর আজ আপনাদের জন্যে নিয়ে এসেছি দায়ুন ডিফেন্ডার ১৫০ টেষ্টরাইড রিভিউ।
দায়ুন ডিফেন্ডার ১৫০ এর এক ঝলক
দায়ুন ডিফেন্ডার ১৫০ বাইকটি প্রথম দেখায় হয়তো মনে হতে পারে যে বাইকটি তাদের জন্যে নয় যারা কেবলমাত্র স্টাইলের জন্যে বাইক কেনে। বরং বাইকটি তাদের জন্যেই যারা প্রাত্যহিক চলাফেরার জন্যে বাইক ব্যবহার করে।
দায়ুন ডিফেন্ডার ১৫০ বাইকটির সাসপেনশন মোটামুটি ভালো। হেডলাইটের চেহাড়া বেশ ফোলানো ধরনের, অনেকটা পুরাতন হোন্ডা ইউনিকর্ণের মতো্ ক্লাসিক লুক। স্পিড-মিটারটিতে বড় এ্যানালগ রেভ কাউন্টার সহ সুন্দর ডিজিটাল ডিসপ্লে রয়েছে।
এতে আরো রয়েছে ফুয়েল-গজ আর গিয়ার ইন্ডিকেটর। ডিসেপ্লেটির ব্যাকলাইটং অনেকটা হলুদাভ আর দায়ুন ডিফেন্ডার ১৫০ বাইকটিতে কোন ক্লক নেই।
দায়ুন ডিফেন্ডার ১৫০ বাইকটির ফুয়েল ট্যাংকটি ধাতব আর ট্যাংকটির দুপাশে দুটি এয়ার-স্কুপ আছে যা বেশ স্মার্টভাবে ডিজাইন করা। এই এয়ার-স্কুপ দুটি বাইকটির ইঞ্জিনের দিকে বাতাস প্রবাহিত করে যা এর এয়ার-কুলড ইঞ্জিনকে দ্রুত ঠান্ডা হতে সহায়তা করে।
বাইকটির ইঞ্জিন সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয় ১৫০সিসির ইঞ্জিন হিসেবে এটা একটু কম। এটি ১১.৪বিএইচপি শক্তি ও ১১.৫এনএম টর্ক উৎপন্ন করে যা বেশ কম।
দায়ুন ডিফেন্ডার ১৫০ বাইকটির সিটিং পজিশন আপ-রাইট আর তা মোটেও এ্যাগ্রেসিভ নয়, বরং আরামদায়ক। আর বাইকটির হ্যান্ডেলবার ক্লিপ-অন টাইপের সেইসাথে রয়েছে বেশ সুদৃশ্য সুইচ। এর সিট স্প্লিট টাইপের; আর তা যথেষ্ট বড় যে অনায়াসে দুজন পূর্ণবয়ষ্ক মানুষ আরামে বসতে পারবে।
বাইকটিতে আরো রয়েছে শাড়ী-গার্ড আর গ্রাব-রেইল যা বাংলাদেশের রাস্তায় চলার জন্যে একটি অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য। আর বাইকটির পেছনের চাকা ১৩০মিমি যা যথেষ্ট ভালো, তবে তাতে কোন ডিস্ক ব্রেক নেই।
বাইকটির পিলিয়ন সিট একটু শক্ত, আর যাত্রীকে তা সয়ে নিতে খানিকটা সময় লাগবে। সাসপেনশন সিষ্টেম যখন সম্পুর্ণভাবে কাজ করবে তখন সিটিং কমফোর্ট আরো ভালো হবে আশা করা যায়।
দায়ুন ডিফেন্ডার ১৫০ বাইকটির ট্যাঙ্কে ১৩ লিটার তেল ধরে। এটি আপনি কিক অথবা সেলফ দুভাবেই স্টার্ট করতে পারবেন। এর সামনের সাসপেনশন টেলিস্কোপিক হাইড্রলিক আর পেছনেরটা কয়েল-স্পিঙ লোডেড।
বাইটিতে কি-হোল সিকিউরিটি সন্নিবেশিত হয়েছে। বাইকটি প্রায় ১৪৩কেজি, যেটা বেশিরভাগ প্লাস্টিক বডির বাইক হিসেবে অনেকটাই বেশি। বাইকটির একজষ্ট পাইপটি দেখতে ভালোই তবে এর ছিদ্রটি ছোট।
এর হেডলাইটের আলো শহরে চালানোর জন্যে যথেষ্ট ভালো। তবে এলইডি বাতি হলে তা আরো ভালো হতো বলে মনে হয়। এর টেইললাইটটি এলইডি সন্নিবেশিত আর তা যথেষ্ট সুন্দর। আর এর পেছনের চাকার মাডগার্ডটা যথেষ্ট ভালো আর কাদা-ময়লা প্রতিরোধে বেশ উপযোগী।
হ্যান্ডেলের সুইচগুলো আরো একটু ভালো মানের হতে পারতো। আমরা যে বাইকটি টেস্ট করেছি সেটার স্পিডমিটারটি মাঝে মাঝে ভুল রিডিং দেখিয়েছে। আর প্রথম চালানোয় এর গিয়ার চেঞ্জ বেশ ঝামেলাপূর্ণ মনে হচ্ছিল, তবে সময়ের সাথে উন্নতি হচ্ছিল।
বাইকটির সামনের চাকায় সিঙ্গেল পিষ্টনের ব্রেক অ্যাসেমব্লী আছে যা ভালো ব্রেকিং এর জন্যে কিছুটা অসঙ্গতিপূর্ণ। এর সামনের চাকার ডিস্কটি বামদিকে বসানো, ভারতীয় বাইকগুলোর মতো ডানপাশে নয়-এতে করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অভ্যস্ত ড্রাইভাররা উচ্চগতিতে চালানোর সময় কর্নারিংয়ে কিছুটা অস্বস্থিতে পড়তে পারেন।
দায়ুন ডিফেন্ডার ১৫০ চালানোর অভিজ্ঞতা
দায়ুন ডিফেন্ডার ১৫০ বাইকটির এক্সিলারেশন মাঝারি। যেহেতু বাইকটি কমিউটার সেগমেন্টের সে হিসেবে এটা ০-৬০ এবং ০-১০০কিমি/ঘন্টা গতিবেগ তুলতে একটু সময় নেয়। এতে সামনের ব্রেকে সিঙ্গেল পিষ্টন ক্লিপার ব্যবহার করা হয়েছে আর পেছনে গতানুগতিক ড্রাম ব্রেক। ১৫০সিসির বাইক হিসেবে এর ব্রেক আরো সবল হলে ভালো হতো।
তবে বাইকটির উপভোগ করার বিষয় হলো এর কর্নারিং। বিস্তৃত হুইলবেজ আর ১৩০মিমি পেছনের টায়ার বাইকটিকে চমৎকার কর্নারিং বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন করে তুলেছে। হ্যাঁ এর টায়ারগুলি হয়তো খুব ভালো মানের নয় তবে তা শহরের রাস্তায় চালানোর জন্য যথেষ্টই কাজ করে।
আমরা সম্পূর্ণ নতুন বাইকটির প্রথম ১০০০কিমি টেষ্টরাইডে ঢাকা সিটিতে এর মাইলেজ পেয়েছি ৩৫-৩৮কিমি/লিটার। তবে ১৫০০কিমি এর পর থেকে এর মাইলেজ বাড়ার কথা।
এছাড়াও বাইকটির টপ-স্পিড আমরা পেয়েছিলাম প্রায় ১১৫কিমি/ঘন্টা। আর বাইকটির গিয়ার রেশিও একটু অন্য ধরনের মনে হয়েছে। আমরা দ্বিতীয় গিয়ারে ৪২কিমি/ঘন্টা গতিবেগ তুলতে পেরেছিলাম।
দায়ুন ডিফেন্ডার ১৫০ টেষ্টরাইডের সারকথা
দায়ুন ডিফেন্ডার ১৫০ বাইকটি সম্পূর্ণভাবে কমিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য ডিজাইন করা। কমিউটার বাইক হিসেবে এটা দেখতে যথেষ্ট ভালো আর আকর্ষনীয়, চালানোতেও আরামদায়ক। তবে এই বাইকটি ড্রাগ রেস করার জন্য নয়। এই বাইকটি হয়তো নতুন জেনারেশনের ছেলে-পুলেদের মাত্রাতিরিক্ত গতিময়তার জন্য নয়, কিন্তু খুব ভালোভাবে সববয়সী সাধারন ব্যবহারকারী ও প্রাত্যহিক কাজে বাইক ব্যবহারকারী সব চালকেরাই এই বাইকটি পছন্দ করবেন। ১৫০ সিসির বাইক হিসেবে এটির দাম বেশ কম, মাত্র ১,২৯,৯০০ টাকায় বাইকটি বিক্রি হচ্ছে। :)
দায়ুন মোটর সাইকেল শোরুম হটলাইনঃ
০১৯৭৬৬৯৯৬৩৫ & ০১৯৭৬৬৯৯৬৩৬