থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত বাইক বাংলাদেশে—কেনা কি ঠিক হবে?

This page was last updated on 19-Aug-2024 12:24am , By Shuvo Bangla

বর্তমানে থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া থেকে বাংলাদেশে বাইক আমদানি করা হচ্ছে—সেগুলো কেনা কি ঠিক হবে? এবছরের (২০১৬) এপ্রিল থেকেই নানাজনের মাথায় এ প্রশ্নটি ঘুরফির করছে। তাহলে আসলেই কি এসব আমদানিকৃত নানা ব্র্যান্ডের বাইক কেনা ঠিক হবে নাকি ভারতীয় বাইকগুলোর ওপরই নির্ভর হয়ে থাকবো? এই তর্কের মীমাংসা সহজে হবে না। কিন্তু আজকে আমি আপনাদেরকে আমার জবানবন্দি শোনাবো।

Bangladesh-imported-bikes

বর্তমানে বাংলাদেশে ৩টি জাপানি কোম্পানির বাইক আমদানি করা হচ্ছে।

  • হোন্ডা : সিবিআর১৫০আর সিঙ্গেল হেডল্যাম্প (থাইল্যান্ড), ২০১৬ সিবিআর১৫০আর ডাবল হেডল্যাম্প (ইন্দোনেশিয়া),সিবিআর১৫০আর স্ট্রিটফায়ার (ইন্দোনেশিয়া)
  • ইয়ামাহা : আর১৫ভি২ (থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া), এম স্ল্যাজ (থাইল্যান্ড), জ্যাবর (ইন্দোনেশিয়া), ভিক্সন (ইন্দোনেশিয়া)
  • কাওয়াসাকি : কেএলএক্স১৫০, ডি ট্র্যাকার১৫০, জেড১২৫। (থাইল্যান্ড)

বাংলাদেশের মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলো প্রধানত ভারত ও চীনের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রধান ৩ জাপানি ব্র্যান্ড (হোন্ডা, ইয়ামাহা ও সুজুকি) তো পুরোপুরিই ভারতের বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাইক বাজারে আনে। এর মধ্যে হোন্ডাই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা ভিয়েতনাম (ওয়েভ আলফা) ও পাকিস্তান (সিডি৮০) থেকে একটি করে এবং বাকিসব ভারতের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশে ইয়ামাহা এম স্ল্যাজ

বাংলাদেশে গত ৪ বছর ধরেই মোটরসাইকেল বাজারে ব্যাপক স্ফূরণ ঘটেছে। শুধু গত বছরই দেশে ১ লক্ষ ৮০ হাজারের মতো বাইক বিক্রি হয়েছে। আসলে আজকের দিনে তরুণদের কাছে বাইক শুধু অফিসে বা ভার্সিটিতে যাওয়া-আসার বাহনই নয়, বরং জীবনযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ।

তবে আমাদের দেশের অধিকাংশই বাইকই কমিউটার শ্রেণির, যদিও বেশ কিছু স্পোর্টস বাইকও রয়েছে, যেগুলোর একমাত্র পরিচয় গতিতে! ইঞ্জিন ডিসপ্লেসমেন্ট অর্থাৎ সিসি সীমা ও বেশ কিছু কারণে আমাদের দেশে খুব বেশি স্পোর্টস বাইক আসেনি, শুধু ইয়ামাহা আর১৫ ও হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ছাড়া। যদিও ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে বেশ চমৎকার বাইক তৈরি হয়েছে।

আর ভারতের বাজারে স্পোর্টস বাইকের চেয়ে কমিউটার বাইকের চাহিদা বেশি থাকায়, তারা ১৫০ সিসিতে স্পোর্টস বাইক আনার প্রতি খুব বেশি একটা নজর দেয়নি। কিন্তু থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রে হিসাবটা আলাদা। এবছরই আমরা সেখান থেকে ইয়ামাহা ও হোন্ডার দারুণ কিছু বাইক আমদানি হতে দেখেছি।

আর বাংলাদেশে ১৫০ সিসি স্পোর্টস বাইকগুলোর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও আমরা যেহেতু ভারতের বাইকগুলোর ওপর নির্ভরশীল এবং সেদেশে এই শ্রেণিতে খুব বেশি ভালো মানের বাইক নেই, তাই আমাদেরকেও দুধের স্বাদ ঘোলেই মেটাতে হয়! আর কেউ যদি দুধই চায়, তবে থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া থেকেেআমদানি করা বাইক ছাড়া তার আর গত্যান্তর থাকে না।

বাংলাদেশে হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬

হোন্ডা সিবিআর১৫০আর এর ভারতীয় ভার্সনের ব্যাপারে বাইকারদের অভিযোগ সেটা দেখতে ইয়ামাহা আর১৫ভি২ এর মতো আকর্ষণীয় নয়। আর এ বছর যখন ইন্দোনেশিয়াতে তারা নতুন সিবিআর১৫০আর ছাড়লো, বাংলাদেশ হোন্ডা লিমিটেডের কাছ থেকে আমরা সেটা পেলাম না, কারণ ভারতে তা আসেনি! একই ঘটনা ঘটেছে ইয়ামাহা আর১৫ভি২ এর মটোজিপি এডিশনের বেলাতেও। ভারতে যেহেতু নেই, তাই ওই থাই ভার্সনটিও আর বাংলাদেশে আসেনি।

সেজন্যই যারা ওই বাইকগুলো কিনতে চায় তাদের কাছে অথোরাইজড ডিলারদের পরিবর্তে থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা সর্বশেষ ভার্সনের ইয়ামাহা ও হোন্ডা কেনা ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু এ ধরনের বাইক কেনার কিছু সুবিধা-অসুবিধাও আছে।

আমদানিকৃত বাইক কেনার সুবিধা

  • এক্সক্লুসিভ কিছু স্পোর্টস বাইকের মালিক হতে পারবেন (এম স্ল্যাজ, ২০১৬ সিবিআর১৫০আর, স্ট্রিটফায়ার)
  • এসবের অধিকাংশই ভারতের বাজারে পাওয়া যাবে না।
  • ইউনিক কালার কম্বিনেশনের বাইক (আর১৫ভি২ মটোজিপি)
  • অনেক ধরনের রঙ থেকে বেছে নেওয়ার সুবিধা, যা ভারতের ভার্সনে পাওয়া যাবে না।
  • কাওয়াসাকির কিছু অফরোড বাইক রয়েছে, যেগুলো ভারতে পাওয়া যায় না।
  • আর মানের দিক থেকে এগুলো এশিয়াতে সেরা

আমদানিকৃত বাইক কেনার অসুবিধা

  • বাইকগুলো ইউনিক হওয়ায় ও অল্প পরিমাণে আমদানি করায় দাম অনেক বেশি পড়ে।
  • সবচেয়ে বড়ো সমস্যা, কোনো ওয়ারেন্টি পাবেন না।
  • অনেক সময় খুচরা যন্ত্রাংশ সহজে পাওয়া যায় না। তবে আমদানিকারককে বললে তারা এনে দিবে। কিন্তু এতে সময় ও অর্থ খরচ হয় অনেক বেশি।

বাংলাদেশে আমদানিকৃত বাইকআমার ব্যক্তিগত অভিমত

আমার জীবনের অন্যতম ইচ্ছা ছিলো নেকেড স্পোর্টস বাইক কিনবো এবং হোন্ডা স্ট্রিটফায়ার ছিলো এই তালিকার শীর্ষে। আর ২০১৫’র অক্টোবরে বাংলাদেশ হোন্ডা লিমিটেড জানিয়েছিলো, তারা ২০১৬’র ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশে হোন্ডা স্ট্রিটফায়ার ছাড়বে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তা আর আসেনি। আর সেসময় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দিয়ে সিবিআর১৫০আর কেনাটাও সম্ভব ছিলো না। তাই শেষ পর্যন্ত এবছরের জুনে এক আমদানিকারকের কাছ থেকে স্ট্রিটফায়ার কেনা ছাড়া আমার আর অন্য কোনো উপায় ছিলো না।

আর এদিকে ঘোষণার এক বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ হোন্ডা লি. স্ট্রিটফায়ার বাজারে আনতে পারেনি! ফলে আমার মতো যারা কিছু এক্সক্লুসিভ বাইক কিনতে চায়, তাদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে জাপানি কোম্পানির দেশীয় অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলো।

তাই হোন্ডা, ইয়ামাহা ও সুজকির প্রতি বিনীত অনুরোধ শুধু ভারত থেকেই নয়, বরং থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া থেকেও ওই সব স্পোর্টস বাইক বাংলাদেশে এনে দেওয়ার জন্য। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সেগেুলো বাংলাদেশী বাইকারদের কাছে ব্যাপকভাবে গৃহীত হবে।