ট্রাভেল ট্যাক্স কি, কত, কোথায় দিবেন, অনলাইনে দেয়ার উপায় কি ?

This page was last updated on 05-Nov-2023 09:59am , By Ashik Mahmud Bangla

বর্তমান সময়ে ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুজে পাওয়াটা বেশ মুশকিল। আর বাইরে ভ্রমণ করার সাথে ট্রাভেল ট্যাক্স বিষয়টি জড়িত। নিজের বাইক নিয়ে অথবা বাইক ছাড়া অনেক বাইকার ভাই বর্তমানে দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে যাচ্ছেন। অনেকেই আবার বাইরে গিয়ে বাইক ভাড়া করে নিয়ে নিজেদের ভ্রমণের স্বপ্নগুলো পূরণ করছনে। আমাদের দেশে কিন্তু অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে ভ্রমণ করার মতো। ভ্রমণ কাহিনী জানতে আগ্রহী হলে এই লিংকে প্রবেশ করুন।

দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে ট্রাভেল ট্যাক্স। এটা আসলে কি , কত টাকা দিতে হয় আর কিভাবে দিবেন ? এই নিয়ে আজ আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো।বিদেশ ভ্রমণের সময় ট্রাভেল ট্যাক্স ( Travel Tax ) পরিশোধ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি স্থলপথে, আকাশপথে, ট্রেন বা নৌপথে যেভাবেই দেশের বাইরে যতবারই ভ্রমণ করেন না কেনো আপনাকে প্রতিবারই ট্রাভেল ট্যাক্স দিতে হবে। বর্তমান সময়ে আকাশ পথে ও ট্রেনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে টিকেটের সাথেই ভ্রমণ কর যুক্ত থাকে। শুধুমাত্র স্থলপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপনাকে আলাদা করে Travel Tax দিতে হবে। ট্রাভেল ট্যাক্স দেওয়া ছাড়া আপনি দেশের বাইরে কোথাও ভ্রমণ করতে পারবেন না।

ট্রাভেল ট্যাক্স কত ?

বর্তমানে যেকোন স্থল বন্দর দিয়ে প্রতিবার দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য প্রাপ্ত বয়স্কদের ( ১২ বছর+) ভ্রমণ কর ৫০০ টাকা দিতে হয় এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ( ৫ – ১২ বছর )  Travel Tax ২৫০ টাকা দিতে হয়।

স্থলপথ দিয়ে কোন কোন দেশে যাওয়া যায় ?

আমাদের দেশ থেকে থেকে স্থলপথে ভারত , নেপাল , ভুটান ও মায়ানমার যাওয়া যায়। শুধুমাত্র এই দেশগুলোতে না আপনি যেখানেই ভ্রমণ করেন না কেনো আপনাকে ট্রাভেল ট্যাক্স দিয়েই ভ্রমণ করতে হবে।

ট্রাভেল ট্যাক্স দিতে কি কি ডকুমেন্ট লাগে ?

ভ্রমণ কর ( Travel Tax ) নিজের বা অন্য কারো জন্য দিতে গেলে নিজের এবং অন্যের মূল পাসপোর্ট বা ফটোকপি/স্ক্যানকপি নিয়ে যেতে হয়। ন্তাই আপনি নিজে না গিয়ে অন্যকে দিয়ে ট্যাক্স জমা দিতে পারবেন।

ট্রাভেল ট্যাক্স কোথায় দিতে হয় ?

এতদিন কেবলমাত্র জেলা ভেদে ১/২টি সোনালী ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা ও বেশিরভাগ স্থল বন্দরে ট্রাভেল ট্যাক্স বা ভ্রমণ কর দেওয়ার সুযোগ থাকলেও বর্তমানে অনলাইনে ভ্রমণ কর দেয়ার সুবিধা চালু করা হয়েছে। যের জন্য আমরা ধন্যবাদ জানাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে। ফলে সোনালী ব্যাংকে সরাসরি উপস্থিত হয়ে কর দেয়ার পাশাপাশি এখন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেকোন স্থান থেকে অনলাইনে ট্রাভেল ট্যাক্স দেয়া যাবে।

ট্রাভেল ট্যাক্স অনলাইন এ দেয়ার নিয়মঃ

NBR এবং Sonali Bank এর যৌথ উদ্যোগে ট্রাভেল ট্যাক্স অনলাইনে দেয়ার সিস্টেম চালু হয়েছে। বর্তমানে বেনাপোল , দর্শনা এবং ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে ভ্রমণকারীগণ অনলাইনে ট্রাভেল ট্যাক্স প্রদানের এই সেবা পাবেন। পরবর্তীতে সবগুলো স্থল বন্দরের জন্যে ট্রাভেল ট্যাক্স অনলাইনে দেবার সুবিধা চালু হবে।

অনলাইনে ভ্রমণ কর দেবার জন্যে প্রথমে এই লিংকে (https://sbl.com.bd:7070/nbrTravelTax/Collection/Create) যান। পাসপোর্টের সাথে মিল রেখে ইংরেজীতে আপনার নাম , পাসপোর্টের নাম্বার , যাত্রীর ধরণ , পরিবহনের ধরণ , আপনার গন্তব্য , মোবাইল নাম্বার সঠিকভাবে পূরণ করুন। পরবর্তী ধাপে আপনার পূরণকৃত তথ্যগুলো দেখাবে। কোন ভুল থাকলে এডিট অপশন থেকে অবশ্যই ঠিক করে নিবেন। সব ঠিক থাকলে পেমেন্ট অপশনে ক্লিক করুন।

বর্তমানে অনলাইনে ট্রাভেল ট্যাক্সের অর্থ সোনালী ব্যাংক অনলাইন সিস্টেম থেকে অথবা কার্ড দিয়ে করতে চাইলে মাস্টার কার্ড , কিউ ক্যাশ , ভিসা কার্ড এবং বিকাশের মাধ্যোমে পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। অনলাইনে ভ্রমণ করের ৫০০ টাকার সাথে ১০ টাকা সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে। তবে নিজে গেলে এই ১০ টাকা আর লাগবে না।

আপনার পেমেন্ট করা হয়ে গেলে একটা ট্রাভেল ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে পারবেন। সেই রশিদ প্রিন্ট করে ভ্রমণের সময় আপনার সাথে রাখতে হবে।

সরাসরি ট্রাভেল ট্যাক্স কিভাবে জমা দিব ?

স্থল বন্দরে ৩৬৫ দিন সকাল ৮:০০ থেকে সন্ধ্যা ৬:০০ পর্যন্ত ট্রাভেল ট্যাক্স জমা দেয়ার সুযোগ থাকে। তবে সময় বাঁচাতে এবং বিভিন্ন জটিলতা এডিয়ে চলতে সোনালি ব্যাংকের নির্ধারিত কোন শাখায় আগেই ভ্রমণ কর জমা দিয়ে দেয়া ভাল। এছাড়া সীমান্তে গিয়ে ভ্রমণ কর দিতে এক্সট্রা ফি গুনতে হয়। আবার ডাউকিতে ভ্রমণ কর পরিশোধের কোন ব্যবস্থা ছিলো না। কোন কোন ক্ষেত্রে ২০০-৩০০ টাকা অতিরিক্ত দিলে ভ্রমণ ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ পাওয়া যায়। এছাড়া আগে থেকেই ট্রাভেল ট্যাক্স পরিশোধ করে রশিদ সংগ্রহ করে রাখতে পারেন এবং এতে কোন ঝামেলা নেই কারণ এর কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই।

এছাড়া সোনালি ব্যাংকের কিছু শাখায় চালানের মাধ্যমে ট্রাভেল ট্যাক্স জমা দেওয়া যায়। তবে জেনে নিতে হবে আপনি যে শাখায় যেতে চাচ্ছেন এরা চালানের মাধ্যমে ভ্রমণ কর নেয় কিনা। চালানের মাধ্যমে ভ্রমণ কর জমা দিতে জোন অনুযায়ী ভ্রমণ কর কোড প্রয়োজন হয়। সোনালী ব্যাংকের জোন অনুযায়ী একেক শাখার কোড একেক রকম। আর চালানের মাধ্যমে কর দেওয়ার ক্ষেত্রে চালানে পাসপোর্ট নাম্বার , নাম, ঠিকানা ইত্যাদি বড় হাতের ইংরেজি অক্ষরে লিখতে হয়।

Also Read: লং ডিসট্যান্স মোটরসাইকেল ট্রাভেলার দের জন্য গুরুত্তপূর্ণ টিপস

বিদেশ ভ্রমণে সময় কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ ?

বাইরের দেশে অনেক রকম আইন আছে যেগুলো আমাদের সাথে মিলে না, তাই আপনি যদি এগুলো যদি আপনি না জানেন আপনি তাহলে বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবেন। মজার কিছু আইন আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো।

১- থাইল্যাণ্ডে গিয়ে টাকার ওপর পাড়া দেবেন না

থাইল্যাণ্ডে রাজতন্ত্রকে অপমান করার বিরুদ্ধে যে আইন রয়েছে তা খুবই পুরোন এবং বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে কঠোর আইন। এই আইন অনুযায়ী থাই রাজপরিবারের কারো ছবিকে অপমান করা গুরুতর অপরাধ।

যেহেতু ব্যাঙ্কনোটের ওপর রাজার ছবি রয়েছে , তাই থাই নোট পা দিয়ে মাড়ালে বা কারো পায়ের তলায় পড়লে আপনাকে সোজা হাজতে পাঠানো হবে।

২- চুয়িং গাম নিষিদ্ধ

থাইল্যাণ্ডে মেঝেতে চুয়িং গাম ছুঁড়ে ফেলা অপরাধ। এ অপরাধের সাজা ৪০০ পাউণ্ড সমমূল্যের জরিমানা এবং অনাদায়ে সম্ভবত কারাবাস। চুয়িং গাম নিয়ে সিঙ্গাপুরেও রয়েছে কড়া আইন। সেখানে ব্যতিক্রম শুধু মাড়ির চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত গাম অথবা ধূমপান বন্ধ করার জন্য চিবানোর গাম। এই দুই ধরনের গাম ছাড়া সিঙ্গাপুরে কোনধরনের চুয়িং গাম কেনাবেচা নিষিদ্ধ।

৩- ওষুধ নিয়ে সতর্কতাঃ

উত্তেজক ওষুধের বিরুদ্ধে জাপানে আইন অত্যন্ত কঠোর। ফলে ঠাণ্ডা লাগার কারণে যেসব ওষুধ নাক বা মুখ দিয়ে টেনে ভেতরে নিতে হয় অর্থাৎ ''ইনহেল'' করতে হয়, সেধরনের ওষুধ নিয়ে জাপানে খুব সতর্ক থাকা দরকার। জাপানে ঢোকার সময় এধরনের ওষুধ সঙ্গে থাকলে সাবধান। এর ব্যবহার নিয়ে কোনরকম সন্দেহ হলে আপনাকে আটকানো হতে পারে এবং ওষুধ জব্দ করা হতে পারে।

পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই , আপনি যেই দেশেই ভ্রমণ করেন না কেনো সেখানে গিয়ে এমন কিছু করবেন না যার কারনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।

তথ্যসূত্রঃ ভ্রমণ গাইড

প্রতিবেদনঃ বিবিসি নিউজ বাংলা