ইয়োংলি ব্রেক প্যাড নিয়ে কিছু ভালো খারাপ অভিজ্ঞতা - জান্নাতীন নাঈম
This page was last updated on 04-Nov-2024 04:51pm , By Shuvo Bangla
আমার নাম জান্নাতীন নাঈম , আমি একজন নগন্য বাইকার। আমি বর্তমানে Lifan KPR 165 EFI CBS ব্যাবহার করতেছি। তবে আজ বাইকের কথা বলবোনা আজ কথা হবে বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম আপগ্রেড করার জন্য আমার ব্যবহার করা ইয়োংলি ব্রেক প্যাড নিয়ে ।
আমি অনেকদিন ধরেই আমার বাইকের ব্রেকিং আপগ্রেড করার কথা ভাবতেছিলাম। কিন্তু মাস্টার সিলিন্ডার, হোসপাইপ এগুলো চেঞ্জ করার পর্যাপ্ত বাজেট ছিলো না। যার কারনে আমি বাইকবিডি এর রিভিউ দেখে ইয়োংলি ব্রেকপ্যাড ইন্সটল করি।
ইয়োংলি ব্রেকপ্যাড ইন্সটল করার কিছুদিন পরেই আমি বান্দরবান ট্যুরে বের হয়ে যাই। এরপরে প্রথমে ঢাকা-বরিশাল হাইওয়ে ও পরে ঢাকা-চিটাগাং হাইওয়েতে এই ব্রেকপ্যাডের পারফরম্যান্স আমাকে মুগ্ধ করে এবং আমার পাহাড়ি যাত্রার জন্য পর্যাপ্ত সাহস যুগিয়েছিলো। ওইদিন রাতে আমরা বান্দরবান পৌছাই। পরের দিন দুপুরে আমরা নীলগিরির উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
পথিমধ্যে প্রচন্ড বৃস্টি শুরু হয় এবং ঘন মেঘের কারনে দুপুর ৩.৩৭ এর সময় আমরা ৫-৭ ফুট এর বেসি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম না। তবুও আমরা ইঞ্জয় করেছিলাম মেঘে ঢাকা পাহাড়ি রাস্তা। তবে এইরকম ভয়ংকর সুন্দর পাহাড়ের রুপ আগে কখনো দেখা হইনি। তারপরে আবার একটু পর পরে কাদায় মাখা পাহাড়ি মোড় আর গর্ত সেইখানে ও আমি আমার ইয়োংলি ব্রেকপ্যাড এর জন্য একবার ও কনফিডেন্স হারাইনি।
ওইরকম অবস্থায় রাইড করতে করতে ৪.৩০ এর দিকে নীলগিরি পৌছাই। এরপর অইখানে দুপুরের খাবার খাই এবং ওইখানে ঘুরে ফিরে ৬.২০ এর দিকে বান্দরবান শহরের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেই। তখন ও টিপ টিপ বৃস্টি পরতেছিলো। তখন আমরা আমরা আমাদের ২ ফুট সামনেও কিছু দেখতে ছিলাম না। তারপর ও আল্লাহর রহমতে আমরা সহি সালামতে বান্দরবন শহরে পৌছাই। এরপর দিন আমরা আলীকদম চলে যাই এবং সেখান থেকে মারায়ংতং এর উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
আগের দিন গুলোর বৃস্টির কারনে মারায়ংতং এ ওঠার ইটের রাস্তা ছিলো সম্পূর্ণ স্লিপারি রাস্তা। অই রাস্তা দিয়ে নামার সময় ও আমার চাকা একবার এর জন্য ও স্লিপ করেনি। আমি মনে করি আমার এই শ্যাওলা ধরা ইটের রাস্তার মারায়ংতং যাত্রা কোনো দূর্ঘটনা ছাড়া সমাপ্ত করতে আমার ইয়োংলি ব্রেকপ্যাড অভাবনীয় ভূমিকা পালন করেছে। এরপরের দিন আমি বর্তমান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মটরেবল রোড ডিমপাহাড় - থানচি হয়ে আবার বান্দরবন ব্যাক করেছি।
যদিও এই রাস্তা ছিলো সসম্পূর্ণ শুকনো। তাই আমি ডিমপাহাড় - থানচি এর রাস্তায় ব্রেকিং এর বিশ্লেষণ করলাম না। সব মিলিয়ে পাহাড়ে ইয়োংলি ব্রেকপ্যাড এর প্রাফরমেন্স ছিলো দূর্দান্ত। আর হাইওয়েতে এর কথা তো না হয় নাই বললাম।
এবারে আসি স্টক ব্রেক প্যাডের সাথে ইয়োংলি ব্রেকপ্যাডের তূলনায় :-
- আমার কাছে ইয়োংলি ব্রেক প্যাড স্টক ব্রেক প্যাড এর থেকে ১০০% বেটার মনে হয়েছে।
- ইয়োংলি ব্রেকপ্যাডের ব্রেক বাইট স্টক ব্রেক প্যাডের থেকে অনেক ভালো।
অনেকতো ভালো দিক নিয়ে আলোচনা করলাম এবার আসি ইয়োংলি ব্রেকপ্যাডের খারাপ দিকে এবং খারাপ দিক থেকে বেচে যাওয়ার উপায় নিয়ে :-
এই ব্রেকপ্যাড নিয়ে অনেকেই বলে থাকে এই ব্রেকপ্যাড নিয়ে বৃষ্টিতে রাইড করলে অর্থাৎ ভিজে গেলে ব্রেকপ্যাড থেকে ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজ আসে। আমিও এই কথা শুনে আমার এক ভাইয়ের সাথে আলাপ করি এরপর ওনার পরামর্শ অনুযায়ী অনুযায়ী আমি ব্রেকপ্যাড ইন্সটলের সময় ব্রেকপ্যাড একটু ঘষে নিয়ে ইন্সটল করার ফলে আমি তীব্র বৃস্টিতে বাইক রাইড করার পরেও আমি আমার ব্রেকপ্যাড থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো আওয়াজ পাইনি। আপনারাও চাইলে এভাবে ব্রেকপ্যাড ইন্সটল করতে পারেন এবং এরপরে কয়েক হাজার কিলোমিটার রাইড করার পরেও যদি এমন সাউন্ড আসে তাহলে আবার ব্রেকপ্যাড খুলে ঘষা মাজা দিয়ে নিলেই সাউন্ড এর সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।
আমি মনে করি ইয়োংলি ব্রেকপ্যাড এর যে পারফরম্যান্স এবং ব্রেকিং যে কনফিডেন্স দিবে আপনাকে সেই ব্রেকিং & কনফিডেন্স এর সাথে তুলনা করলে এইটুকু কস্ট কিছুই না।
এবারে ইয়োংলি ব্রেকপ্যাড ও স্টক ব্রেকপ্যাড এর দামের প্রসঙ্গে আশা যাক :-
বর্তমানে আমার বাইকের স্টক ব্রেকপ্যাড এর দাম সামনের টা ৯০০ টাকা ও পিছনের টা ৭০০ টাকা। আর ইয়োংলি ব্রেকপ্যাড এর এর সামনের টার দাম ১১০০ টাকা এবং পিছনেরটা ৯৫০ টাকা। যদি জোড়া হিসাবে হিসাব করা হয় তাহলে স্টক ব্রেকপ্যাড থেকে ইয়োংলি ব্রেকপ্যাড এর দাম ৪৫০ টাকা বেশি। আমি মনে করি পারফরম্যান্স অনুযায়ী মাত্র ৪৫০ টাকা কিছুই না।
সর্বোপরি ইয়োংলি ব্রেকপ্যাড নিয়ে আমার হাইওয়ে ও পাহাড়ে রাইড করা অভিজ্ঞতা ছিলো অসাধারণ। এই ব্রেকপ্যাড আমার ব্রেকিংয়ে যে পরিমান কনফিডেন্স বাড়িয়ে দিয়েছে তা আমি বলে বুঝাতে পারবো না। আমি আমার নিজের ব্যাপারে এইটুকু বলতে পারি যে আমি এখন থেকে সব সময় আমার বাইকে ইয়োংলি ব্রেকপ্যাড ই ব্যাবহার করবো।
পরিশেষে সবাইকে ধন্যবাদ যারা আমার মত নগন্য বাইকারের লেখা এতক্ষণ ধরে পড়েছেন।
লিখেছেনঃ জান্নাতীন নাঈম