Zontes ZT155-G1 ১৬৭০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - তৌহিদ

This page was last updated on 31-Jul-2024 05:20am , By Shuvo Bangla

আমি হাসান মোহাম্মদ তৌহিদ । আমি ঢাকার লালবাগ এলাকায় বসবাস করি । বর্তমানে আমি যে বাইকটি ব্যবহার করছি তার নাম Zontes ZT155-G1 । বাইকটি আমি ১৬,৭০০ কিলোমিটার রাইড করেছি । আজ আমি ১৬,৭০০ কিলোমিটার রাইডের রাইডিং অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ।

zontes zt155-g1 review

আমার জীবনের প্রথম বাইক Honda CDI 100 , বাইকটি আমার এলাকার এক বড় ভাইয়ের ছিল। মাঝে মাঝে তার কাছ থেকে নিয়ে চালাতাম। তখন থেকেই বাইকের প্রতি আমার ভালোবাসা জন্মায়। বাইক দিয়ে ভ্রমন যেমন আনন্দের, তেমনি প্রকৃতিকে খুব কাছে যাওয়া যায়।

একটি বাইক থাকলে সহজে গন্তব্যে যাওয়া যায়, পাশাপাশি সময় বাঁচে। আমার বাইকটি প্রথম দেখাতেই ভালো লাগে তারপর এর বিল্ড কোয়ালিটি ছিল অসাধারন। বাইকটি মূলত আমি ট্র্যাভেলিং এর জন্য ব্যবহার করি।

zontes zt155-g1 at bandarban

Zontes ZT155-G1 বাইকের দাম ছিল ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা। বাইকটি নেয়া হয়েছিল মিরপুর মাটিকাটা মটোসলুশন শোরুম থেকে। বাইকটি বাংলাদেশে একদমই নতুন ছিল। বাইকটি যেদিন কিনব মন মাইন্ড সেট করি, তার আগের দিন আমার সিবিআর রেপসল বিক্রি করে দিই, শুধু  Zontes ZT155-G1 বাইকটি ক্রয় করার নেশায়।

Zontes ZT155 G1 First Impression Review By Team BikeBD

মোটো সুলেশন বাইকটি আমাকে দিবে কি দিবেনা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। কিন্তু আমি বাইকটি নেয়ার জন্য অস্থির হয়ে যাই কারন এটা এভেলেবেল বাইক ছিল না মাত্র একটি বাইক ছিলো বিক্রি করার মতো সুতরাং আমার এই বাইকটি নিতেই হবে। যেই কথা সেই কাজ বাইকটাকে আমি তাদের শোরুমেও নিতে দেই নিই পিকআপ থেকেই নিয়ে নিয়েছি।

zontes zt155-g1 at 60 gumboj mosjid

বাইকটি প্রথমবার চালানোর অনুভূতি ছিল অন্যরকম। আমার Zontes Bike র প্রতি ধারণাই পরিবর্তন হয়ে গেল । যে একটা বাইক কত কনফিডেন্সলি চালানো যায়। Zontes ZT155-G1 বাইকের ফিচার বাংলাদেশের সবগুলো বাইকের চেয়ে আপডেট। যেমন এটার বোসের ডুয়েল চ্যানেল এবিএস। ডুয়েল পারপাস টিউবলেস টায়ার।

স্পোক রিম যা দেখতে অসাধারণ লাগে আমার কাছে। সম্পূর্ণ বডিটাই অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে করা। বাইকটির ক্লাসিক লুকস, সিটিং পজিশন , কালার কোয়ালিটি , বিল্ড কোয়ালিটি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে । আমি একটানা অনেকক্ষণ রাইড করলেও কোন ক্লান্তি আসে না।

zontes zt155-g1 black

২০ লিটার ফুয়েল ট্যাংক ক্যাপাসিটি। একবার ফুল ট্যাংক ফুয়েল নিলে প্রায় ৮০০কিলোমিটার পর্যন্ত রাইড করা সম্ভব। বারবার তেল নিয়ে ভাবার চিন্তা হয় না। বাইকটি স্পিডে চালালেও ব্রেকিং নিয়ে আমাকে ভাবায় না। অসাধারণ ব্রেকিং সিস্টেম

আমি আমার বাইকের প্রথম অবস্থায় ৩০০ কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল ড্রেইন দিয়ে পরবর্তীতে ৭০০ কিলোমিটার পর পর ১০০০ কিলোমিটারে পরিবর্তন করেছি । বর্তমানে আমি ২০০০ কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি। সব সময় চেষ্টা করি বাইক এর খুঁটিনাটি সমস্যাগুলো সমাধান করে রাখা।

কিছুদিন পর পর ফোমওয়াশ করি পাশাপাশি পলিশ করি যাতে বাইকটি দেখতে ভালো লাগে। আমি ফুয়েলের সাথে ডায়নোট্যাব অকটেন বুস্টার এবং ক্লিন ইঞ্জেক্টর ব্যবহার করি। তাতে পারফরম্যান্স ভালো পাই।

zontes zt155-g1 at mawa expressway

আমি বিভিন্ন ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি প্রথম অবস্থায় মবিল 1, মটুল, লিকু মলি ব্যবহার করতাম। তবে লিকুমলিটাই আমার কাছে ভালো লেগেছে। আমি আমার বাইকে প্রথম থেকেই 10w40 গ্রেডের ফুল সিন্থেটিক ইউজ করে আসতেছি। বাইকে আমি তেমন কিছু পরিবর্তন করিনি। সাধারণত অয়েল ফিল্টার এয়ার ফিল্টার এবং ব্রেক প্যাড।

কিছু মডিফিকেশন করেছি সামনের হেডলাইটের কভার, পিছনের মাডগার্ড,ক্যারিয়ার গ্যাব্রিয়েল, সামনের চাকার মার্কেটের পিছনের অংশটুকু এবং রেগুলেটর গার্ড। সবগুলোই বাইকের অফিশিয়াল। আমি বাইকটি সবসময় টেকনো সার্ভিস স্টেশন মিরপুরে সার্ভিস করাই। এ পর্যন্ত পাঁচবার সার্ভিস করিয়েছি।

আমার বাইকের মাইলেজ সিটিতে ৩৬ + হাইওয়েতে ৪০+। আমি আমার বাইকটি দিয়ে সর্বোচ্চ ১৩৪ টপ স্পিড পেয়েছি এই বাইকের অনেক অনেক ভালো দিক রয়েছে ।

Zontes ZT155-G1 বাইকের কিছু ভালো দিক -

  • ব্রেকিং সিস্টেম
  • ২০ লিটার ফুয়েল ট্যাংক ক্যাপাসিটি
  • সিটিং পসিশন
  • গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স চমৎকার
  • একটানা অনেকক্ষণ রাইড করলেও ক্লান্তি আসে না
  • পিলিয়ন নিয়ে বাইকটি চালালেও কোন বেগ পেতে হয়না
  • অফরোড অন রোড দুটোতেই সমানতালে পারফরম্যান্স করে

Zontes ZT155-G1 বাইকের কিছু খারাপ দিক -

  • শুরুর দিকে ইঞ্জিন হিট হতো
  • আরপিএম ধরে রাখতো
  • ভালো তেল না নিলে পারফরমেন্সে কিছুটা ঘাটতি দেখা দেয়
  • বাইকটার কম আরপিএম এ সাউন্ডটা সবার কাছে ভালো লাগবে না
  • যাদের উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুটের নিচে তাদের চালাতে কিছুটা কষ্ট হবে

zontes zt155-g1 bike

আমাদের দেশে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির বাইক খুব বেশি একটা ভেরিয়েশন নেই বললেই চলে। আমরা প্রিমিয়াম সেগমেন্ট বলতে Yamaha R15,Suzuki Gxsr, Honda X motion এগুলোকেই আমরা প্রিমিয়াম বুঝি।
 
এই বাইকগুলো আমি নিজেও দীর্ঘদিন ব্যবহার করেছি নিঃসন্দেহে এগুলো ভালো বাইক। তবে এর বাইরে আমার কাছে Zontes ZT155-G1 বাইকটি ভালো লেগেছে ।
 
আমার একটা মুদ্রা দোষ ছিলো তা হলো কোন বাইক আমি ৬ মাসের বেশি চালাতে মন চাইতো না,ভাবতাম এটার চেয়ে ভালো ফিচার কি আছে সেটা চালাই।
zontes zt155-g1 bike pic
আজ দেড় বছর হলো চালাচ্ছি। প্রত্যেক বাইকার এটাই চায় যে,আমার বাইক হবে স্পিডি তবে ব্রেকিং হবে কনফিডেন্সলি।আর সেটা আমার ZONTES পুরোপুরি সাপোর্ট দিচ্ছে।

বাইকটির নিয়ে প্রথম ২০২১ সালের রমজান মাসে ঢাকা থেকে কক্সবাজার উদ্দেশ্যে রওনা হই। একটানা রাইড করে চিটাগাং গিয়ে আমি সেহেরি করি। এরপর ওখান থেকে কক্সবাজার চলে যাই। দুইদিন পরে রোজা রেখে আবার ঢাকায় ব্যাক করি। এত লং রাইডে বিন্দু পরিমান ক্লান্তি আসেনি।

zontes zt155-g1 price

এই বাইকটি ব্যাপারে আমার চূড়ান্ত মতামত হলো, বাংলাদেশের যে কয়টি বাইক আছে তার মধ্যে Zontes ZT155-G1 আমার কাছে সবচাইতে ভালো বাইক। এর স্পিড এবং ব্রেকিং সিস্টেমের কারণে বাইকটি কনফিডেন্সলি রাইড করা যায়।

লিখেছেনঃ হাসান মোহাম্মদ তৌহিদ

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।