Yamaha WR 155 – কম সিসির ডার্ট বাইকের বিপ্লব

This page was last updated on 17-Sep-2024 09:25am , By Badhan Roy

ডার্ট বাইক শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে বিশ্বখ্যাত ডাকার র‍্যালি বা অন্যান্য র‍্যালীক্রস চ্যাম্পিয়নশীপের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত এডভেঞ্চারাস বাইকগুলোর চেহারা। সাধারণ বাইক থেকে গতানুগতিক আলাদা এই ধরনের বাইকগুলোর টার্গেট রাইডার যেমন আলাদা তেমনই এই বাইকগুলো তাদের পাওয়ার আউটপুট এবং যে কোন ধরণের প্রতিকূল পরিবেশে চালানোর উপযোগী হওয়ার কারনে বিখ্যাত। 

উন্নত বিশ্বে হায়ার সিসির ডার্ট সেগমেন্টে অনেক অপশন থাকলেও ১৬০ সিসির নিচে এবং বাংলাদেশে এভেইলেবল ডার্ট বাইকের সংখ্যা একেবারে নগণ্য। সেই বিবেচনায় Yamaha WR155 বাইকটি অন্যতম সেরা সেটি এর স্পেসিফিকেশন দেখলে বলাই যায়। 

যদিও বাইকটি অফিশিয়ালি বাংলাদেশে এভেইলেবল নয়, কিন্তু বাংলাদেশের ডার্ট ও এডভেঞ্চার লাভারদের আগ্রহে বাইকটি শীর্ষে এবং তাদের দীর্ঘদিনের দাবি বাইকটি দেশে অফিশিয়ালি এভেইলেবল হোক।  এই লেখায় আমরা এক নজরে Yamaha WR155 বাইকটি সম্পর্কে সামগ্রিক আলোচনা করব।  

Yamaha WR 155 – ডিজাইন

Yamaha WR 155 এর ডিজাইন টিপিক্যাল অফ রোডার শেপ এর করা হয়েছে। এই বাইক টির বিশেষত্ব হচ্ছে এটির লাইট ওয়েট ফ্রেমের সাথে হেভি ডিউটি সাসপেনশন ও পাওয়ারফুল টর্কের ইঞ্জিন। অর্থাৎ, রাইডার এটিকে যে কোন ধরণের রাস্তায় বেশ ভালভাবেই ব্যাবহার করতে পারবেন। 

সিম্পল লুক, শক্তিশালী বিল্ড কোয়ালিটি, অফ-রোডিং টায়ারের সাথে স্পোক এলয় রিম, হাই গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স, এবং আপরাইট এক্সহস্ট প্লেসমেন্ট এর কারনে এটার রাইডিং পারপাস সহজেই বোঝা যায়। বাইকটি আহামরি অনেক বেশি আধুনিক ফিচার সমৃদ্ধ না হলেও সব দিক দিয়ে যে যথেষ্ট প্র্যাক্টিকালিটির পরিচয় দেয় এটা বলাই বাহুল্য। 

Yamaha WR 155 – ইঞ্জিন স্পেসিফিকেশন

Yamaha WR 155 বাইকটিতে রয়েছে আমাদের বহুল পরিচিত Yamaha R15 v3, MT-15, XSR ও Aerox মডেলের সেম ইঞ্জিন। ৬ স্পিড গিয়ারবক্স ও ওয়েট মাল্টিপ্লেট ক্লাচের সাথে ১৫৫.১ সিসি সিঙ্গেল-সিলিন্ডার, লিকুইড কুলড, ৪ ভাল্ভ, ৪ স্ট্রোক ইলেক্ট্রনিক ফুয়েল-ইনজেক্টেড (EFI) ও ভ্যারিয়েবল ভালভ এক্সেলারেশন (VVA) প্রযুক্তি বিশিষ্ট SOHC ইঞ্জিন।

ইঞ্জিনটি ১০০০০ আরপিএম-এ ১৬.৪ বিএইচপি পাওয়ার এবং ৬৫০০ আরপিএম-এ ১৪.৩১ এনএম টর্ক উৎপন্ন করে। ইঞ্জিন একই হওয়া স্বত্তেও লাইট ওয়েট ফ্রেম এবং প্রযুক্তিগত সামান্য পার্থক্যের কারনে বাইকের টর্ক সাধারণ বাইকের থেকে অনেকগুণ বেশি ফিল হয় যা যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি পাড়ি দিতে সাহায্য করে নিমেষেই। 


Yamaha WR 155 – ফিচারস

Yamaha WR 155 এর কিছু উল্লেখযোগ্য ফিচারস হলো:

সিট হাইট, ওজন ও গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স- ৮৮৮ মি.মি এর সিট হাইট, ২৪৫ মি.মি এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ও মাত্র ১৩৪ কেজি ওজনের কার্ব ওয়েট থাকছে বাইকটিতে। বোঝাই যাচ্ছে বাইকটি যথেষ্ট হালকা। তবে সিট হাইট ও গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বেশি হওয়ার কারনে খাটো বাইকারগণ বাইকটি স্বাচ্ছন্দে রাইড করতে অসুবিধায় পড়তে পারেন।   

ইগনিশন সিস্টেম- সেলফ স্টার্ট ইগনিশন।


 ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার
: সম্পূর্ণ ডিজিটাল এলসিডি ক্লাস্টারটি খুবই ছোট এবং বর্গাকৃতির। ফুয়েল লেভেল, একাধিক ট্রিপ মিটার, স্পিডোমিটার, ট্যাকোমিটার, গিয়ার, সার্ভিস ইন্ডিকেটর, ঘড়ি ইত্যাদি ইনফরমেশন ক্লাস্টারটিতে লক্ষ্য করা যায়।

লো-ডাউন ফ্ল্যাট সিট- বাইকটিতে লো-ডাউন ফ্ল্যাট সিট থাকার কারনে অফরোডিং এর ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেকে এডজাস্ট করে নেওয়া যেমন রাইডারের জন্য সহজ অপরদিকে সিটটি আরামদায়ক ও বটে।  

এক্সটেন্ডেড আপার পজিশনড মাডগার্ড- যেহেতু ডার্ট বাইক ব্যাবহারের উদ্দেশ্য প্রতিকূল পরিবেশে বাইকটি রাইড করা, সুতরাং পানি বা কাদা ছিটকে আসবে এটাই স্বাভাবিক। এই কারণে বাইকটিতে এক্সটেন্ডেড মাডগার্ড ব্যাবহার করা হয়েছে যা আপার পজিশনড। 

আপসোয়েপ্ট এক্সহস্ট প্লেসমেন্ট: একদম চেসিস ফ্রেমের সাথে এক্সহস্ট প্লেসমেন্ট হওয়ার কারনে অফ রোডিং এর ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে, সেটা কর্দমাক্ত কিংবা জলাবদ্ধ এলাকা যাই হোক না কেন! 

টিউবলেস টায়ার: বাইকটির টায়ার সাইজ- সামনের টায়ার 80/90-21, পিছনের টায়ার: 110/80-18. বাইকটিতে বড় সাইজের এলয় রিমের সাথে উচ্চমানের IRC Trais GP 22 অফরোডিং টায়ার ব্যাবহার করা হয়েছে যা বেটার কনফিডেন্স এর সাথে যে কোন ধরনের রাস্তায় রাইড করা সম্ভব।

ব্রেক: ব্রেকিং এর জন্য সামনে ২৪০ মিমি ও পিছনে ২২০ মিমি এর পেটাল ডিস্ক ব্রেক রয়েছে। 

সাসপেনশন সিস্টেম: বাইকটির সামনে KYB ব্র্যান্ডের স্পোর্টিং টেলিস্কোপিক হাইড্রোলিক শক অ্যাবজর্বার ও পিছনে মাল্টি এডজাস্টেবল প্রিলোড মনোশক অ্যাবজর্বার ব্যাবহার করা হয়েছে যা রাইডিং কে আরামদায়ক করার পাশাপশি অফরোডে ভাল কমফোর্ট নিশ্চিত করে তুলবে। 

মাইলেজঃ ইয়ামাহা ইন্দোনেশিয়ার তথ্য অনুযায়ী ৮.১ লিটারের ফুয়েল ক্যাপাসিটির সাথে প্রতি লিটার জ্বালানী তেলে বাইকটি ৩৫-৪০ কিলোমিটারের মাইলেজ দিতে সক্ষম। যদিও ১৫৫ সিসি বিবেচনায় ফুয়েল ট্যাংক সাইজ এবং মাইলেজ কিছুটা কম তবে এর বাড়তি ওজন হ্রাস সহ হাই টর্ক আউটপুট এবং অফরোডিং ক্যাপাবিলিটির জন্য এই বাড়তি ফুয়েল কনজিউমিং স্বাভাবিক। অনরোডে কিছুটা বেটার মাইলেজ দেওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ, জ্বালানীর মান এবং রাইডিং স্টাইলের উপর সার্বিক মাইলেজ কম-বেশী হতে পারে। 

Yamaha WR 155 – ভাল ও মন্দ দিক

প্রত্যেক বাইকের মত WR155 বাইকটিতেও  ভাল এবং খারাপ দিক রয়েছে। বাইকটির ভাল দিকের মধ্যে যেমন এর অফরোডিং ক্যাপাবিলিটি, R15 সিরিজের সেম ইঞ্জিন হওয়াতে সহজ মেইনটেইনেন্স এবং এর লাইট ওয়েট বডি উল্লেখযোগ্য তেমনি ভাবে মন্দ দিক হচ্ছে বাইকটি রেগুলার ইউজের জন্য মোটেও না। 

বাইকটির সিট হাইট ও গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বাড়তি হওয়ার কারনে কম হাইটের বাইকার রা এটি রাইড এবং ব্যালান্স করতে সমস্যার সম্মুখীন হন। পাশাপাশি এর ফুয়েল ট্যাংক সাইজ কম হওয়ার কারনে ঘন ঘন রিফুয়েলিং ও বাড়তি ফুয়েল সাথে করে বহন করতে হয়। 

যেহেতু এটি একটি অফরোডিং বাইক, অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি এড়াতে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাইকটিতে টিউবলেস চাকা ব্যাবহার করলে আরো ভাল হতে পারতো। সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে বাইকটি অফিশিয়ালি বাংলাদেশে এভেইলেবল না ফলে আন-অফিশয়াল ভাবে বাইকটি পাওয়া গেলেও এর অথেনটিক পার্টস এবং মেইনটেইনেন্স এর সাথে রিজনেবল প্রাইসের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ থেকেই যায়। 


 তো, এই ছিল Yamaha WR 155 এর বিস্তারিত। বাংলাদেশের অফরোড লাভারদের দীর্ঘদিনের চাহিদা এরকম একটি পাওয়ারফুল ডার্ট বাইক। এই ধরনের বাইকগুলো দেশে আসলে একদিকে যেমন সম্প্রতি আয়োজন হওয়া রেসিং চ্যাম্পিয়নশীপে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বাড়বে অপর দিকে পাহাড়ি ও দূর্গম এলাকার বাইকারদের জন্য ও এটি রেগুলার ইউসেজ এর হিসাবে হতে পারে ভাল একটি চয়েস। 

আশা করা যায় শীঘ্রই সাধারণ বাইকারদের আকাঙ্ক্ষা ও অনুরোধের বিষয়টি মাথায় রেখে ডার্ট এন্থুজিয়াস্টদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই ইয়ামাহা বাংলাদেশ তথা এসিআই মোটরস লিমিটেড বাইকটি বাজারজাত করবে। 


বাইক ও বাইকিং বিষয়ক সকল তথ্য সবসময় পেতে বাইকবিডির সাথেই থাকুন।