Yamaha R15 V3 Test Ride রিভিউ - টিম বাইকবিডি
This page was last updated on 08-Jul-2024 05:43pm , By Saleh Bangla
ইয়ামাহা হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম প্রিমিয়াম মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড। ১৫০সিসি সেগমেন্টে ইয়ামাহা আমাদের কিছু দারুন সব স্পোর্টস মোটরসাইকেল উপহার দিয়েছে। যেমন Yamaha R15, Yamaha R15 V2, Yamaha M Slaz এবং সম্প্রতি লঞ্চ হওয়া বহুল প্রতিক্ষিত Yamaha R15 V3। অনেক প্রশ্ন জমে আছে মানুষের মনে এই বাইকটি নিয়ে, কারণ R15 v2 এর ৫ বছর পর এই বাইকটি লঞ্চ করা হল। তাই আজ টিম বাইকবিডি আপনাদের জন্য নিয়ে এসছি Yamaha R15 V3 Test Ride রিভিউ। চলুন শুরু করা যাক।
Yamaha R15 V3 Test Ride রিভিউ - টিম বাইকবিডি
গত কয়েক বছর ধরে Yamaha R15 V2 বাংলাদেশী বাইকপ্রেমীদের মাঝে স্পোর্টস বাইক হিসেবে অনেক বেশি জনপ্রিয়। যদিও Honda CBR150R (Indian Version) ছিল কিন্তু এর সৌন্দর্যে কিছুটা কমতি ছিল। এরপর ২০১৬ সালে হোন্ডা তাদের নতুন Honda CBR150R (Twin Headlight) নিয়ে আসে যা অনেক R15 প্রেমীদের দৃষ্টি আকর্ষন করে, এরপর ই Suzuki নিয়ে আসি তাদের Suzuki GSX-R150। যার এক্সেলারেশন হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম দ্রুত গতির বাইক। তাই ইয়ামাহার জন্য জরুরী ছিল যে তারা R15 সিরিজের নতুন বাইকটি বাংলাদেশের বাজারে লঞ্চ করা। আর ফাইনালি তারা এই বছরের জানুয়ারিতে R15 V3 লঞ্চ করে।
Yamaha R15 V3 Test Ride – ইঞ্জিন ও ট্রান্সমিশনঃ
Yamaha ভার্সন ৩.০ বাইকটির জন্য সম্পূর্ন নতুন ধরনের ইঞ্জিন তৈরি করেছে। Yamaha R15 V3 বাইকটিতে ১৫৫ সিসির লিকুইড কুল ইঞ্জিন দেয়া হয়েছে। ইঞ্জিনটি সিঙ্গেল সিলিন্ডার ৪টি ভালব এবং SOHC যুক্ত। এই ইঞ্জিনটি 19.1BHP @10,000RPM এবং 14.7NM টর্ক @85,00RPM ক্ষমতা উতপন্ন করতে সক্ষম। যদি R15 V2 এর ১৪৯সিসি ইঞ্জিনে 16.8BHP এবং 15NM টর্ক উতপন্ন হতো।
Yamaha R15 V3 এর ইঞ্জিনে এখন যুক্ত করা হয়েছে VVA প্রযুক্তি, যা ম্যাক্সিমাম ক্ষমতা উতপন্ন করতে সাহায্য করে। VVA প্রযুক্তি 74000RPM এরপর ক্ষমতা দেখাতে শুরু করে। ইঞ্জিনটির সাথে ৬ স্পিড গিয়ার বক্স যুক্ত করা হয়েছে। এর সাথে আছে স্লিপার ও এসিস্ট ক্লাচ যুক্ত করা হয়েছে, যাতে গিয়ার চেঞ্জ স্মুথ ও দ্রুততর হয়ে উঠেছে।
Yamaha R15 V3 Test Ride – ডিজাইন ও ফিচারঃ
ইয়ামাহা শুধু বাইকটির ইঞ্জিনের ডিজাইন পরিবর্তন করেনি তারা বাইরে দিকের বডির ডিজাইনেও অনেক পরিবর্তন এনেছে। এখন আপনি যদি বাইকটির দিকে তাকান তখন আপনি দেখবেন বাইকটির একটি বড়সড় শরীর। এছাড়া অন্যান্য বাইকের তুলনায় বাইকের বডির গঠে যেমন বড় ও এর সাথে নতুন কিছু ফিচার যুক্ত করা হয়ে যা অন্যান্য বাইক থেকে একে আলাদা করেছে। Yamaha R15 V3 সম্পূর্ন নতুন ধরনের হেড লাইট দেয়া হয়েছে। এছাড়া ফ্রন্ট ফেন্ডার ও নতুন সাইড বডি কিট দেয়া হয়েছ। তবে ইন্ডিকেটর গুলো আগের R15 V2 এর ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা হয়েছে। স্পিডোমিটারটি সম্পূর্ন নতুন, যা সম্পূর্ন এলইডি স্ক্রিন। স্পিডো মিটারটিতে স্পিড, রেভ কাউন্টার, গিয়ার চেঞ্জ, ঘড়ি মাইলেজ ক্যালকুলেটর, শিফট টাইমিং লাইট, ফুয়েল গেজ এবং অন্যান্য ওয়ার্নিং লাইটস দেখা যায়।
সুইচ গিয়ার গুলো নতুন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। হেড লাইট সুইচ বিম নতুন এবং পাস লাইট নিচের বিমে অবস্থান করছে না। এছাড়া একটি হ্যাজার্ড ইন্ডিকেটর লাইট দেয়া হয়েছে, যা জরুরী মুহুর্তে অনেক সাহায্য করে থাকে। R15 V3 তে AHO(Automatic Headlight On System) ফ্যাসিলিটি দেয়া হয়েছে। যদিও সিটিং পজিশন একটু হাই, আর ফুয়েল ট্যাঙ্ক অনেক বড় কিন্তু সেখানে ১১ লিটারের মত ফুয়েল ধরে। ভার্সন ৩.০ এর সিট স্লিট সিট। সিট গুলো প্রশস্থ ও আরামদায়ক। এছাড়া সবচেয়ে আনন্দের কথা হচ্ছে তারা পিলিয়নের জন্য গ্রেইব রেইল যুক্ত করেছে। বাইকটির টেল লাইট হচ্ছে এলইডি। তারা একদম নতুন ধরনের এক্স হস্ট ব্যবহার করেছে, যদিও তা আমার ভালো লাগেনি। বাইকটির স্যাডেল হাইট একটু উচু। এটি ৮১৫মিমি যা শর্ট বাইকারদের জন্য একটু কষ্টকর হবে সিটির মধ্যে বাইকটি হ্যান্ডেল করার ক্ষেত্রে। অন্য দিকে গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স তেমন একটা ভালো নয়। যদি আপনি ভারী পিলিয়ন নিয়ে রাইড করে থাকেন। তবে কাকড় বা নুড়ি অথবা উচুনিচু রাস্তায় আপনাকে ঝামেলায় পরতে হবে।
>> Click To See The First Impression Of Yamaha R15 V3.0 Review <<
Yamaha R15 V3 Test Ride – ব্রেক, সাসপেনশন ও টায়ারঃ
R15 V3 তে ডেলটা বক্স ফ্রেম, রেয়ার সুইং আর্ম যা এলুমিনিয়ামের তৈরি এবং নতুন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে শুধু মাত্র এই বাইকটির জন্য। ব্রেকস গুলো বাইব্র। ফ্রন্ট ডিস্ক ব্রেক ২৮২মিমি সাইজের অপর দিকে রেয়ার ডিস্ক কনভেনশনাল। হুইল গুলো ১৭ ইঞ্চির এলয় হুইল। ফ্রন্ট টায়ার ১০০ স্পেসিফিকেশনের যেখানে রেয়ার টায়ার ১৪০সেকশনের। যাতে করে বাইকের স্ট্যাবিলিটি ব্যালেন্সড হয়। ফ্রন্ট সাসপেনশন হচ্ছে আপ সাইড ডাউন USD সাসপেনশন যা এর আগে ইয়ামাহা এম স্ল্যাজ বাইকটিতে ব্যবহাকরা হয়েছে। এই ফিচারটি বাইকটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। আর রেয়ার সাসপেনশন হচ্ছে লিংক মনোশক।
Yamaha R15 V3 Test Ride – রাইডিং অভিজ্ঞতাঃ
প্রথমত আমার মত একজন ছোটখাটো মানুষ এই রকম একটি বড় বাইকে! অভারঅল ডাইমেনশনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানে স্যাডেল হাইট থেকে সিট সব কিছু মিলিয়ে আমাকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছে। কিন্তু আস্তে আস্তে আমি বাইকটি হ্যান্ডেল করার কনফিডেন্স পেয়েছি। হ্যা আমি জানি যে সিটি ট্রাফিকে আপনি বাইকটি নিয়ে ছোট গ্যাপে প্রবেশ করতে পারবেন না। যা আপনি Suzuki GSX-R150 বা Honda CBR150R বাইক এর মাধ্যমে পার হতে পারবেন। প্রথম কিছু দিন আপনি বাইকটি হ্যান্ডেল করার সময় কিছুটা অসেস্তিতে পরতে পারেন। কারণ এর রাইডিং পজিশন কিছুটা এগ্রেসিভ। এর কারনে কজ্বি ও কনুই এ একটু ব্যথা অনুভব করতে পারেন। কিন্তু আস্তে আস্তে যখন আপনি সপ্তাহ পার করে ফেলবেন আপনি কোন ব্যাক পেইন বা কনুই ও কজ্বির ব্যথা অনুভব করবেন না সিটি বা হাইওয়েতে। যদি আপনি একদম পিওর ট্র্যাকে রাইড করে থাকেন।
Yamaha R15 V3 এর সাসপেনশন হাইওয়ে বা ট্যাকে ফিডব্যাক ভালো। কিন্তু আমার মনে হয় আপসাইড ডাউন সাসপেনশন ভাঙ্গা রাস্তা বা বাংলাদেশের রাস্তার জন্য বেস্ট নয়। রেয়ার সাসপেনশন উচুনিচু রাস্তাতেও ভালো ফিডব্যাক দেয়। পিলিয়ন সিট ও রাইডার সিট দুটোই অনেক বেশি আরামদায়ক লং রাইডের জন্য কারণ সিট গুলো অনেক বড়। এছাড়া পিছনে গ্রেইব রেইল থাকার কারনে পিলিয়ন আরো বেশি কনফিডেন্স পাবে রাইড করার সময়। যখন ভার্সন ৩.০ হাইওয়তে আসে তখন এটি নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দিতে পরিনত হয়।
আমি মনে করি এটি স্পোর্টস বাইকের চেয়ে ট্যুরিং বাইক হিসেবে বেশি পছন্দের। আমি বাইকটি নিয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়েতে অনেক বার রাইড করেছি। আমার মনে হয় বাইকটি হাইওয়ের জন্যই প্ল্যান করে তৈরি করা। যেহেতু রেয়ার টায়ার ১৪০ সেকশনের, তাই আপনি ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে অনেক বেশি কনফিডেন্স পাবেন, এমন কি কর্নারিং এর ক্ষেত্রেও। ব্রেকিং এর কথা আসলে, এটা সত্যিকার অর্থে খুব কষ্টকর Yamaha এর খারাপ ব্রেকিং খুজে পাওয়া। FZS, Fazer, R15 V2, M Slaz এই বাইক গুলোর ব্রেকিং সন্মদ্ধে সবাই জানে। তাই নতুন করে বলার কিছু নেই। R15 V3 ও ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে ইতিহাস ধরে রেখেছে। আপনি যত স্পিডেই থাকুন না কেন। ব্রেকিং এ আপনি কনফিডেন্স পাবেনই।
অনেক বাইকে ৬ নাম্বার গিয়ারটি দেয়া হয় অতিরিক্ত ক্ষমতা ও স্পিডের জন্য। আপনি VVA এর ক্ষমতা তখন ই অনুভব করবেন যখন 7400 RPM ক্রস করবেন। আপনি অনুভব করবেন EFI এর সিস্টেম ক্যালকুলেটিং এবং ম্যাক্সিমাম পাওয়ার ডেলিভারি। যখন কর্নারিং এর ব্যাপার আসে তখন এর বড়সর হুইলবেস ও ইউএসডি সাসপেনশন এবং ১৪০ সেকশন টায়ার আপনাকে কর্নারিং এর আনন্দ দেবে। এই বাইকটি তৈরি করাই হয়েছে কর্নারিঙ্গের জন্য। আপনি লো অথবা হাই স্পিডে কর্নারিং এর আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া এর সিটিং পজিশন আপনাকে কর্নারিং এ সাহায্য করবে। R15 V3 এর হেড লাইট ভালো কিন্তু বেস্ট নয়। পাস লাইটের পজিশন ও সঠিকভাবে করা হয়নি। আমার কাছে স্পিডোমিটারটি ভালো লেগেছে। আমার কাছে বাইকটির ওজন ব্যালন্সেড মনে হয়েছে। ইয়ামাহা সিলিন্ডার ও পিস্টন অনেক হালকা করে তৈরি করেছে।
Yamaha R15 V3 Test Ride কিছু ভালো দিকঃ
- সম্পূর্ন নতুন মোটরসাইকালে এবং অনেক ফিচার সমৃদ্ধ
- লুকস অনেক পেশীবহুল
- স্লিপার ক্ল্যাচ এবং VVA ইঞ্জিন
- হাইওয়ের জন্য গুড ক্রজিং বাইক
- ব্রেকিং স্ট্যাবিলিটি ও ব্যালেন্সড
- বাইকটির ওজন ১৩৭ কেজি
Yamaha R15 V3 Test Ride কিছু খারাপ দিকঃ
- বাইকটি সিটি রাইডের জন্য একটু বড়
- প্রথম দিকে হাতের কজ্বিতে ও কনুই এ কিছুটা পেইন হতে পারে
- হেড লাইট বেশি পাওয়ার ফুল নয়
- ফ্রন্ট সাসপেনশের ফিডব্যাক তেমন ভালো নয়।
- আফটার মার্কেট পার্টস অনেক দামী
- পাস লাইটের পজিশন একটু বিরক্তিকর
- কোন ABS দেয়া নেই
- মাত্র ১১ লিটারের ফুয়েল ট্যাঙ্ক এত বড় বাইকের জন্য একটু কম
Yamaha R15 V3 Test Ride পারফর্মেন্সঃ
মাইলেজঃ সিটিতে ৩৫-৩৮ কিমি/লিটার; হাইওয়েতে ৪০ কিমি/লিটার টপস্পিডঃ ১৫০কিমি/ঘন্টা বর্তমান মুল্যঃ
Yamaha R15 V3 Test Ride - সার সংক্ষেপ
যখন সুজুকি ও হোন্ডা GSX-R150 ও CBR150R বাইক দুটি লঞ্চ করল তখন ইয়ামাহা নিয়ে এল তাদের এই বিষ্ট । যা অন্য দুটি জাপানী কোম্পানি কে অনেকটা চাপের মুখেই ফেলে দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে পাওয়ারফুল বাইক হচ্ছে yamaha r15 v3 . আশা করছি আমাদের টেস্ট রাইড রিভিউটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ইয়ামাহার এমন ইউজার রিভিউ এবং r15 v3 price in bangladesh এর সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে আমাদের ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক গ্রুপ ঘুরে দেখুন। তাছাড়া বাইক সম্পর্কিত যেকোন তথ্য পাবেন আমাদের ওয়েবসাইটে। আপনাদের মূল্যবান বক্তব্য এবং r15 v3 ভালো বা খারাপ দিক আপনার কাছে কোনটা মনে হয় সেগুলো আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন । ধন্যবাদ, ভালো থাকুন।