Yamaha FZS V3 ৫০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - নাজমুন হাসান

This page was last updated on 09-Jan-2025 05:12pm , By Shuvo Bangla

আমি নাজমুন হাসান নিপুন। আমার বাড়ি মূলত বাগেরহাট । কিন্তু চাকরির সুবাদে বর্তমানে চৌমুহনী, নোয়াখালী থাকা হয় । এখন আমি আপনাদের সাথে আমার ব্যবহার করা Yamaha FZS V3 মডেলের বাইকটি নিয়ে ৫০০০ কিলোমিটার রাইড করার পর কিছু কথা শেয়ার করবো ।

বাইকের প্রতি আমার আগ্রহের শুরুটা খুব ছোটবেলা থেকেই। ছোটবেলাতে যখন আমার প্রতি ক্লাসে গ্রীষ্মের ছুটি এবং বার্ষিক পরীক্ষার পর খুলনা আমার খালার বাড়িতে বেড়াতে আসার সুযোগ হতো । আমাকে আমার খালু তার Hero Honda CB 100 মোটরসাইকেলে করে বাগেরহাট থেকে খুলনা নিয়ে আসতো । ছোটবেলাতে ঐ জার্নিটা আমার কাছে পুরো থ্রিলিং ছিলো । দিন যতই বাড়তে লাগলো বাইকের প্রতি আমার আগ্রহ ততই বাড়তে লাগলো । রাস্তা দিয়ে যখন কেউ বাইক চালিয়ে যেত আমি তখন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখতাম । আমার একটু ইগো বেশি কখনো কারো কাছে চালানো শেখার জন্য বাইক চাইনি। আমার জীবনে প্রথম বাইক হাতে নেই ২০১২ সালে আমার এক মেসের ছোট ভাইয়ের বাইক । সেটি ছিলো TVS Apache RTR 150। মাঠের ভিতর জীবনে প্রথম সেলফ দিয়ে স্টার্ট দিলাম । ক্লাচ চেপে ধরে বাইকটি নিউট্রাল গিয়ার থেকে প্রথম গিয়ারে দিলাম । ধীরে ধীরে ক্লাচ ছাড়লাম আর থ্রটল বাড়ালাম এবং বাইক চলতে শুরু করলো । সে এক অসাধারন অনুভুতি যা বলে বুঝানো সম্ভব না । 

নিজের বাইকের স্বপ্ন ছিলো কিন্তু নিম্ন মধ্যবিত্তের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। ধীরে ধীরে অনেক সময় কেটে গেলো । চাকরি জীবনে প্রবেশ কর‌লাম কিন্তু আমার বাইকের প্রতি আগ্রহ বিন্দুমাত্র কমেনি। উপ-সহকারী প্রকৌশলী হবার সুবাদে একটি সরকারি বাইক পেলাম । হোন্ডা সিডিআই, টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন । সেটি আমি পরম মমতায় চালাতাম । কিন্তু সেটি ছিলো ১৯৮৩ সালের তৈরি, সপ্তাহে দুই-তিনবার করে নষ্ট হতো । তখনই চিন্তা করলাম নিজে একটি বাইক কিনবো। আমার স্ত্রী আমার বাইকের প্রতি আগ্রহ দেখে তার জীবনের সকল সঞ্চয় বের করে দিয়ে বললো চলো বাইক কিনে ফেলি । তখন হোন্ডা লিভো ২০১৯ কিনলাম এবং দীর্ঘ চার বছর সেই বাইকটি ব্যবহার করলাম। পরবর্তীতে একটি দুর্ঘটনার পর বাইক পরিবর্তন করে হাইয়ার সিসি বাইক কেনার জন্য মনস্থির করি। 

তখন আমি ঠিক করি ইয়াহামা এর বাইক কিনবো, কারণ ইয়াহামা যে আফটার সেলস সার্ভিসে যে দেশ সেরা তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। আমার বাজেটের ভিতরে ইয়াহামা এর FZS V3 বাইকটি পছন্দ হয়। বাইকটির কমিউটার টাইপ লুক আমার বেশ পছন্দ হয়। পরবর্তীতে আমি বাইকটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বাইক বিডি এর কামরুজ্জামান শুভ মিয়া ভাই এর কাছে ফোন দেই। উনি বলেন বাইকটি আমার জন্য ভালো হবে এবং এর আফটার সেলস সিার্ভিসও বেশ ভালো। তখন আমি শোরুমে যেয়ে FZS V3 এর ব্লাক কালার এডিশনটি পছন্দ করি। 

কিন্তু আমার স্ত্রী এর ডিলাক্স গ্রে কালার এডিশনটা বেশি পছন্দ হওয়াতে সেটি কিনতে আগ্রহী হই। আমি ইয়াহামা এর শোরুম ‘বাইক স্কোয়াড’ থেকে বাইকটি ক্রয় করি। তখন বাইকটির দাম ছিল ২,৭৩,০০০ টাকা। আমি বাইক এক্সচেঞ্জ অফারে ১৫০০ টাকা এবং ডিলার মামুন ভাইয়ের থেকে আরো কিছু টাকা ছাড় পাই। মামুন ভাইকে আমি এই লেখার মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার বড় মেয়েকে নিয়ে বাইকটি চালিয়ে বাসায় ফিরে আসি। 

বাইকটি ক্রয়ের  শুরু থেকেই আমি ব্রেক ইন পিরিয়ড মেনে চলেছি দুই হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত। এই সময়ে আমি মোট তিন বার ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করেছি। অনেক এ প্রশ্ন করে বাংলাদেশের টপ-স্পিড বাইক, স্পোর্ট বাইক থাকতেও কেনো আমি FZs v3 নিলাম । আমার বাইকটি আগে  থেকেই পছন্দ ছিলো, এবং বাইকটির নানান ফিচার যেটা আমাকে বিস্মিত করে এবং বর্তমান সময়ের কমফোর্ট একটা বাইক আমার মনে হয় কালার ও মানান সই । 

বাইকটি আমি এখন পর্যন্ত ১০,০০০ কিলোমিটার রাইড করেছি। এখন পর্যন্ত আমি কোন সমস্য ফেস করি নাই। বাইকটির সাসপেনশন আমাকে কখনো নিরাশ করে নাই। এই বাইকটিতে আমি ৯৭ কিলোমিটার / ঘণ্টা স্পিড তুলতে পেরেছি যদিও আমি স্পিডে চলানো পছন্দ করি না। তবে চেষ্টা করলে এই বাইকে ১১০+ গতি উঠানো সম্ভব। বাইকটি দিয়ে আমি অফিসে যাওয়া আসা সহ আমার প্রতিদিনের কাজগুলা সহজেই করতে পারি। আমার বাইক ৪ বার ফ্রি সার্ভিস করাই। আমি ইয়ামাহা ফুল সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করি। মাইলেজ ৫০+ যা ১৪৯ সিসি ইঞ্জিন হিসাবে অনেক ভালো। ৫ ফিট ৪" এর থেকে ৫ ফিট ১০" মানুষের জন্য এটি পারফেক্ট।Yamaha Fzs V3 বাইকটির কিছু খারাপ দিক -

  • বাইকটির দাম তুলনামূক কিছুটা বেশি।
  • পার্টসের দাম বেশি।
  • মাত্র তিন হাজার কিলোমিটার পরপরই ট্যাপেট এডজাস্টের প্রয়োজন পড়ে।
  • হেডলাইটের আলো কম।
  • এক্সিলারেশন কম ।

Yamaha Fzs V3 বাইকটির কিছু খারাপ দিক -

  • মাইলেজ খুবই ভালো । আমি ১০ হাজার কিলোমিটার চালিয়ে গড়ে ৫৩+ মাইলেজ পেয়েছি।
  • লং রাইডে কোন প্রকার সমস্যা হয় না ।
  • বাইকের সাসপেনশন একদম সেরা এবং পিলিয়ন নিয়ে রাইড করলে কোন সমস্যা হয় না ।
  • সামনের চাকায় এবিএস থাকায় ব্রেকিং এ বাড়তি কনফিডেন্স পাওয়া যায়।
  • মোটা টায়ার এর কারনে কন্ট্রোলিং ও কর্ণারিং করা সহজসাধ্য।

১০ হাজার কিলোমিটারে আমার যেসব পার্টস পরিবর্তন করতে হয়েছে - 

  • সামনের ব্রেক প্যাড -০১ টি
  • ক্লাচ ক্যাবল – ০১ টি
  • এয়ার ফিল্টার – ০১ টি
  • ড্রাম রাবার – ০১ টি

বাইকটিতে আমি শুধুমাত্র একটি সাইলেন্সর গার্ড ও শাড়ি গার্ড ব্যাতীত কোন প্রকার মডিফিকেশন করি নাই। বাইকটি দিয়ে বেশ কয়েকটি ট্যুর দেওয়া হয়েছিলো। একদিনে প্রায় ৩৩০ কিলোমিটার এর মতো চালানো হয়েছে। সেই ট্যুরে কোনো ধরনের ঝামেলা হয় নি এবং সবকিছুই ভালো ছিলো মাইলেজ ও ভালো পেয়েছি। বাইকটি নিয়ে আমার চূড়ান্ত মতামত ও পরামর্শ হলো যদি আপনি শুধুমাত্র কুইক এক্সিলারেশন এর ফ্যান না হন সেক্ষেত্রে এই বাইকটি নিতে পারেন। সর্বদা হেলমেট পড়ে বাইক রাইড করবেন, ধন্যবাদ ।

লিখেছেনঃ নাজমুন হাসান নিপুন

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।